“রাজনীতির রঙিন মঞ্চে নারীদের উপস্থিতি কি এখনও শুধুই ছায়াপথের আলোকবিন্দু? 🌑 নাকি সময় এসেছে তাঁদের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জ্বলে ওঠার?”
বাংলার রাজনৈতিক প্রাঙ্গণে নারীদের পদচারণা কখনও সংগ্রামের প্রতীক, কখনও বিজয়ের গৌরব। কিন্তু এখনও লিঙ্গ বৈষম্যের কঠিন প্রাচীর কি তাঁদের অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধক?

সূচিপত্র

ভূমিকা: রাজনীতিতে নারীদের অবস্থান – কতটা এগোলাম আমরা?

“রাজনীতির রক্তিম সূর্যোদয়ে নারীদের উপস্থিতি কি আজও শুধুই দুর্লভ আলোকরেখা?” 
ভারতে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে নারী ভোটারের হার ছিল ৪০%। অথচ এত দশক পেরিয়ে গেলেও নারী নেতৃত্ব এখনও বিরল দৃশ্য। পঞ্চায়েতের সংরক্ষিত আসনে তাঁদের পদচিহ্ন থাকলেও, বিধানসভা আর লোকসভায় সংখ্যাটা হাতে গোনা।

কেন এই বৈষম্য?
নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন আজও সামাজিক বাধার কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তাঁদের অংশগ্রহণ বাড়লেও, প্রার্থী হতে গেলে দলীয় সংকীর্ণতা ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার সামনে পড়তে হয় বাধার প্রাচীর।

তবে কি আলোর দিশা নেই?
না, আশার আলোও রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দৃঢ় নেতৃত্ব নারীদের রাজনৈতিক শক্তি জুগিয়েছে। প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল বা অন্যান্য তরুণী নেত্রীদের উপস্থিতি ভবিষ্যতের সম্ভাবনার কথা বলে।

তাহলে ভবিষ্যৎ পথ কী?
লিঙ্গ বৈষম্যের শেকল ছিঁড়ে নারী নেতৃত্বের পথে সামাজিক সচেতনতা, আইনি সংরক্ষণ এবং আর্থিক সহায়তা অপরিহার্য। রাজনীতির আকাশে নারীদের আরও উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে ওঠার সময় কি এসে গেল না?

Why so few women are in political leadership, and five actions to boost women's political participation | UN Women – Headquarters

নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

“একটি নদী কি কেবলমাত্র এক ধারার প্রবাহেই পূর্ণতা পায়?”
রাজনীতির স্রোতধারায় নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ জরুরি, নইলে গণতন্ত্রের মঞ্চ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন শুধু তাঁদের অধিকারের বিষয় নয়, এটি সমাজের ভারসাম্য ও উন্নতিরও প্রশ্ন।

নৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা:

রাজনীতি মানেই ক্ষমতার কূটচাল নয়, নীতি ও ন্যায়বোধের সমবয়সী প্রয়োগ। নারীরা নেতৃত্বে এলে সিদ্ধান্তগ্রহণে মানবিকতা ও সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

  • নারী নেতৃত্ব শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিশু কল্যাণে বেশি গুরুত্ব দেয়, কারণ তাঁরা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে সমস্যাগুলি বুঝতে পারেন।
  • গবেষণা বলে, নারী নেতৃত্বাধীন প্রকল্পের সাফল্যের হার পুরুষদের তুলনায় বেশি। কারণ তাঁরা দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক প্রভাবকে গুরুত্ব দেন।

সমাজকল্যাণমূলক নীতির প্রসার:

নারী নেতৃত্বে সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধি পায়।

  • নারী মুখ্যমন্ত্রীদের নেতৃত্বে নারী ও শিশু সুরক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধি পায়।
  • মহিলাদের অংশগ্রহণের ফলে পরিবারিক সহিংসতা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা ও লিঙ্গ সমতা সংক্রান্ত নীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।
  • উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প’ হাজার হাজার মেয়ের শিক্ষার আলো জ্বেলেছে।

সামাজিক সচেতনতা ও প্রেরণা:

নারীরা নেতৃত্বে এলে সমাজের চিন্তাধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।

  • নারী নেতৃত্ব নতুন প্রজন্মের মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।
  • তাঁদের উপস্থিতি দেখে আরও বেশি নারী রাজনীতিতে আসতে উৎসাহিত হন।
  • রাজনীতিতে নারীর দৃশ্যমান উপস্থিতি লিঙ্গভিত্তিক পূর্বধারণা ভাঙতে সাহায্য করে

গণতন্ত্রে সমান প্রতিনিধিত্ব:

গণতন্ত্রের প্রকৃত রূপ তখনই পূর্ণতা পায়, যখন সমস্ত শ্রেণি, সম্প্রদায় ও লিঙ্গের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।

  • নারীরা মোট ভোটারের অর্ধেক, অথচ সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্তরে তাঁদের সংখ্যা নগণ্য।
  • নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়লে সমাজের বিভিন্ন স্তরের চাহিদা ও সমস্যা আরও কার্যকরভাবে নীতিতে প্রতিফলিত হয়

নৈতিকতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি:

নারীরা রাজনীতিতে এলে দুর্নীতি কমে – এমন অনেক গবেষণা প্রমাণ করেছে।

  • কারণ নারীরা সাধারণত নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার প্রতি বেশি অঙ্গীকারবদ্ধ হন।
  • নারী নেতৃত্বে প্রশাসনিক কাজকর্মে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বজায় থাকে, যা জনগণের আস্থাও বৃদ্ধি করে।

👉 “অতএব, নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ মানে শুধুই সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, এটি সমাজের নীতিগত রূপান্তরের দিশা।”

Women's Participation in Politics

ভারতে নারীদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব: পরিসংখ্যান কী বলছে?

“সংখ্যার খেলায় পিছিয়ে থাকা নারীরা কি সত্যিই পিছিয়ে?”
ভারতে নারীদের ভোটার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়লেও, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে তাঁরা এখনও অনেক পিছিয়ে। ভোটার হিসেবে তাঁদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সিদ্ধান্তগ্রহণের মঞ্চে তাঁদের অংশগ্রহণ রয়ে গেছে নগণ্য।

লোকসভা ও রাজ্যসভায় নারীর সংখ্যা:

ভারতের সর্বোচ্চ আইনসভাতেই নারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।

  • ২০২৪ সালের নির্বাচনে লোকসভার মোট ৫৪৩টি আসনের মধ্যে মাত্র ৭৮টি আসনে নারী সদস্য রয়েছেন, যা মাত্র ১৪.৩৬%।
  • রাজ্যসভায় এই হার আরও কম—মাত্র ১৩.৩% নারী সদস্য
  • অথচ ভারতীয় জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব সংখ্যায় নগণ্য।

রাজ্য বিধানসভায় নারীর উপস্থিতি:

বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভায় নারীদের প্রতিনিধিত্বের চিত্রও খুব আশাব্যঞ্জক নয়।

  • পশ্চিমবঙ্গে যেখানে মুখ্যমন্ত্রী একজন নারী, সেখানে বিধানসভায় নারীর সংখ্যা মাত্র ১৫%
  • বিহার, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে এই হার ১০% এরও নিচে।
  • অথচ পঞ্চায়েত পর্যায়ে ৫০% সংরক্ষণ থাকা সত্ত্বেও বিধানসভায় এই সংখ্যা এত কম কেন?

স্থানীয় সরকারে নারীদের অংশগ্রহণ:

পঞ্চায়েত নির্বাচনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ফলে গ্রামীণ পরিসরে তাঁদের উপস্থিতি বেড়েছে।

  • বর্তমানে ভারতের ২৮টি রাজ্যের ২০টির বেশি রাজ্যে পঞ্চায়েত স্তরে ৫০% সংরক্ষণ কার্যকর রয়েছে।
  • পরিসংখ্যান বলছে, পঞ্চায়েতে ১৪ লক্ষেরও বেশি নারী প্রতিনিধি রয়েছেন, যা গ্রামীণ নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন এনেছে।
  • তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীরা প্রকৃত সিদ্ধান্তগ্রহণে নয়, বরং প্রতীকি মুখ হিসেবে ব্যবহৃত হন

বিশ্ব পরিসংখ্যানের তুলনায় ভারতের অবস্থান:

বিশ্ব রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের নিরিখে ভারত পিছিয়ে।

  • রুয়ান্ডা, নরওয়ে, সুইডেনের মতো দেশে সংসদে ৪০-৫০% নারী সদস্য থাকলেও, ভারতে এটি ১৫%-এরও কম।
  • গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ভারত ২০২৪ সালে ১৪৬টি দেশের মধ্যে ১২৭তম স্থানে রয়েছে।
  • এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে, ভারতের মতো বিশাল গণতন্ত্রে নারীদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব এখনও অত্যন্ত সীমিত।

পরিসংখ্যানের পর্দার আড়ালে বাস্তবতা:

সংখ্যাগুলি যদিও বর্তমান চিত্র তুলে ধরে, তবু বাস্তবতা আরও গভীর।

  • অনেক নারী প্রার্থী শুধু প্রতীকী মুখ হিসেবে মনোনীত হন, কার্যত তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতা সীমিত।
  • দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে নারীদের প্রার্থী করার প্রবণতা কম
  • রাজনৈতিক দলে নারীদের নেতৃত্বের সংখ্যা কম হওয়ায় নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকা প্রায় নেই বললেই চলে

“অতএব, ভোটের লাইনে নারীরা সমান কাঁধে দাঁড়ালেও, সিদ্ধান্তগ্রহণের আসনে তাঁদের উপস্থিতি এখনও ম্লান।”

Women and politics : a required change - iPleaders

রাজনীতিতে নারীদের প্রধান বাধা: অনন্ত পথের কাঁটা

“নারীদের রাজনৈতিক পথ কি শুধুই কাঁটায় ভরা?”
নেতৃত্বের আলোয় আসার পথে নারীকে পেরোতে হয় একের পর এক বাধা। সমাজের গণ্ডি, দলে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব এবং আর্থিক অসাম্য—সব মিলিয়ে নারীর রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা হয় রুদ্ধপ্রায়।

লিঙ্গ বৈষম্যের শেকল:

রাজনীতির অন্দরমহলে নারীরা আজও দ্বিতীয় সারির নাগরিক।

  • রাজনৈতিক দলগুলো নারী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও, নির্বাচনের টিকিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে নারীরা এখনও অবহেলিত।
  • প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের ‘জিতে আসার সম্ভাবনা কম’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়
  • দলীয় নেতৃত্বে তাঁদের ভূমিকা প্রায়শই সীমাবদ্ধ থাকে সংস্কৃতিক বা মহিলা শাখার প্রধানত্বে

সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা:

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এখনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষতান্ত্রিক।

  • নারী প্রার্থী হলে ভোটারদের অনেকেই মনে করেন, “নারীরা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না”
  • রাজনৈতিক মঞ্চে নারীদের কণ্ঠস্বরকে প্রায়শই “মৃদু” বা “অপ্রাসঙ্গিক” বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়।
  • তাঁদের নীতিনির্ধারণী ক্ষমতাকে শুধু নারী সংক্রান্ত ইস্যুতে সীমাবদ্ধ রাখা হয়, বৃহত্তর অর্থনৈতিক বা পররাষ্ট্রনীতির আলোচনায় তাঁদের অংশগ্রহণ কম থাকে।

আর্থিক বৈষম্য:

রাজনীতিতে টিকে থাকতে অর্থের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, আর এখানেই নারী প্রার্থীরা পিছিয়ে পড়েন।

  • পুরুষ প্রার্থীরা ব্যবসায়িক লবির কাছ থেকে অনায়াসে অর্থসাহায্য পান, কিন্তু নারীরা আর্থিক অনুদানে বঞ্চিত হন।
  • প্রচারাভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল না থাকায় নারী প্রার্থীদের ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ কমে যায়
  • রাজনৈতিক দলে তহবিল বরাদ্দের ক্ষেত্রেও নারী প্রার্থীদের প্রতি বৈষম্য করা হয়।

পারিবারিক ও সামাজিক চাপ:

রাজনীতির ময়দানে নারীদের লড়াই শুধু জনতার নয়, তাঁদের নিজস্ব পরিবারের সঙ্গেও।

  • সমাজে আজও অনেক পরিবার মনে করে, “রাজনীতি নারীদের জন্য নয়”
  • নারী নেত্রীদের বিয়ে, সন্তান পালন এবং ঘরোয়া দায়িত্ব নিয়ে সামাজিক কটাক্ষের মুখোমুখি হতে হয়
  • বক্তৃতা দেওয়া বা রাত-বিরেতে প্রচারসভায় অংশ নেওয়া নারীদের জন্য সহজ নয়, কারণ সমাজ তাঁদের মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

হিংসা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি:

নারী রাজনীতিকরা প্রায়শই হিংসা ও হুমকির শিকার হন, যা তাঁদের পথ চলাকে আরও কঠিন করে তোলে।

  • নারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে চরিত্রহননের প্রচার চালানো হয়, যা তাঁদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে।
  • নির্বাচনী প্রচারে তাঁরা অশ্লীল মন্তব্য বা ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হন
  • অনেক ক্ষেত্রেই নারী প্রার্থীদের নিরাপত্তার অভাব ভোটের ময়দান থেকে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করে।

“অতএব, নারীদের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা শুধু সংখ্যায় নয়, মানসিকতা, নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্নেও প্রকৃত সমতা চায়।”

Politics and sexism: What have parties really done on women empowerment? - India Today

বাংলার রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা: ইতিহাসের পাতা থেকে বর্তমানের মঞ্চে

“বাংলার রাজনীতির ইতিহাস কি নারীবিহীন? মোটেও নয়। বরং, ইতিহাসের অলিখিত অধ্যায়ে নারীর সংগ্রামই বারবার নতুন পথ দেখিয়েছে।”
প্রাক্-স্বাধীনতা যুগের বিপ্লবী আন্দোলন থেকে শুরু করে আজকের নির্বাচনী লড়াই—বাংলার রাজনৈতিক পরিসরে নারীদের অবদান উজ্জ্বল, যদিও ক্ষমতার কেন্দ্রে তাঁদের উপস্থিতি আজও সীমিত। তা সত্ত্বেও, তাঁদের লড়াই পথ দেখাচ্ছে নতুন প্রজন্মকে।

স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীদের অবদান:

বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের কথা উঠলেই নারী বিপ্লবীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা প্রথমেই মনে পড়ে।

  • বীণা দাস: ১৯৩২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলার তৎকালীন গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনের উপর গুলি চালিয়ে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেন। এই ঘটনায় তিনি গ্রেফতার হন এবং তাঁর সাহসিকতা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকে।
  • প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার: পাহাড়তলায় ব্রিটিশ ক্লাব আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়ে আত্মবলিদান করেন। তাঁর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তরুণ সমাজের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের আগুন জ্বলে ওঠে।
  • মাতঙ্গিনী হাজরা: ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নিয়ে তিরানব্বই বছর বয়সে ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। তাঁর “বন্দেমাতরম” ধ্বনি আজও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হয়ে রয়েছে।
  • স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীরা শুধু অস্ত্রধারণ করেই লড়াই করেননি, তাঁরা বিপ্লবীদের আশ্রয় দেওয়া, গোপনে বার্তা পৌঁছে দেওয়া ও সংগঠনের আর্থিক সহায়তা করার মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

পোস্ট-স্বাধীনতা বাংলায় নারী নেতৃত্ব:

স্বাধীনতার পরে বাংলার রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব এক নতুন দিশা দেখায়।

  • সুচেতা কৃপালিনী: স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ভারতের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হন। যদিও তিনি বাংলার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না, তবে তাঁর উত্থান নারীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
  • মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, যিনি একচেটিয়া শক্তিধর দল বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন।
  • তাঁর নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থান বাংলায় নারী নেতৃত্বের নতুন অধ্যায় রচনা করে।

বর্তমান রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা:

বর্তমান বাংলায় নারী শুধু ভোটার নন, তাঁরা প্রার্থী, নেতা এবং নীতিনির্ধারকও।

  • পঞ্চায়েত স্তরে নারীদের অংশগ্রহণ:
    • সংরক্ষণের ফলে গ্রামীণ বাংলায় নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
    • ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৫০% সংরক্ষণ কার্যকর হওয়ায় বহু মহিলা প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন, যা গ্রামোন্নয়ন এবং স্থানীয় প্রশাসনে নারীদের সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।
  • বিধানসভায় নারীদের উপস্থিতি:
    • ২০২১ সালের নির্বাচনে রাজ্যের বিধানসভায় মোট ২৯৪টি আসনের মধ্যে মাত্র ৪১ জন মহিলা বিধায়ক নির্বাচিত হন, যা মাত্র ১৪%।
    • যদিও এই হার কম, তবু এই সংখ্যা পূর্বের চেয়ে বেশি, যা নারীদের রাজনৈতিক অগ্রগতির ইঙ্গিত বহন করে।
  • মহিলা ভোটারদের প্রভাব:
    • নির্বাচনে নারীদের ভোট বড় ভূমিকা পালন করছে।
    • ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প নারীদের ভোট আকর্ষণে বড় হাতিয়ার হয়ে ওঠে, যা তাঁর দলের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
    • গ্রামীণ এলাকায় নারীদের ভোটদান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা বিভিন্ন দলের ভোট কৌশল বদলে দিচ্ছে।

Increasing Women's Participation in Politics: Solving the Problem or Veiling It? - Groundviews

রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণে নারীর ভূমিকা:

বিগত কয়েক বছরে রাজনীতিতে নারীদের উপস্থিতি বাড়লেও নীতিনির্ধারণের স্তরে তাঁদের অবস্থান এখনও পিছিয়ে।

  • দলীয় নেতৃত্বে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত:
    • বাংলার বেশিরভাগ বড় রাজনৈতিক দলে উচ্চপদে নারীদের সংখ্যা নগণ্য।
    • নীতিনির্ধারণী সভায় পুরুষরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকেন, নারীদের ভূমিকা এখনও তুলনামূলকভাবে কম।
  • ক্যাবিনেটে নারীর স্বল্প উপস্থিতি:
    • মন্ত্রিসভায় মহিলাদের সংখ্যা নগণ্য।
    • যদিও মুখ্যমন্ত্রী মহিলা, তবুও মন্ত্রিসভার উচ্চপদে নারীর সংখ্যা অত্যন্ত কম, যা রাজনীতিতে নারীদের সীমিত প্রতিনিধিত্বকেই প্রমাণ করে।

নারীদের জনআস্থায় ইতিবাচক প্রভাব:

বাংলার রাজনীতিতে নারীরা শুধুমাত্র ভোটার বা প্রার্থী নন, তাঁরা জনমতের দিকনির্দেশকও হয়ে উঠেছেন।

  • নারী আন্দোলনের প্রভাব:
    • সাম্প্রতিককালে নারীরা বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন।
    • ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, এবং সমাজবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নারীরা রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করছেন, যা রাজনৈতিক দলগুলিকে তাঁদের নীতি বদলাতে বাধ্য করছে।
  • গ্রামোন্নয়নে নারী নেতৃত্ব:
    • গ্রামীণ এলাকায় নির্বাচিত মহিলা পঞ্চায়েত প্রধানরা স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং স্থানীয় উন্নয়নমূলক প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
    • তাঁদের কার্যকলাপ গ্রামবাসীদের মধ্যে আস্থার জন্ম দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আরও বেশি নারী অংশগ্রহণের পথ খুলে দিচ্ছে।

“অতএব, বাংলার রাজনীতিতে নারীরা শুধুমাত্র নেপথ্যে নয়, এখন তাঁরা নেতৃত্বের মঞ্চে উঠে আসছেন। তবে, তাঁদের জন্য এই পথ এখনও কণ্টকাকীর্ণ।”

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ:

“বিশ্বজুড়ে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন কি প্রকৃতই বাস্তবায়িত? নাকি, সমতার দাবির আড়ালে রয়ে গেছে এক অব্যক্ত বৈষম্য?”—এই প্রশ্ন আজও রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

শিক্ষকতা করতে হার্ভার্ড যাচ্ছেন জেসিন্ডা আরডার্ন

নারী নেতৃত্বে বিশ্বের অগ্রগামী দেশগুলি:

বিশ্বের কিছু দেশ নারী নেতৃত্বের প্রশ্নে অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছে।

  • নিউজিল্যান্ড:
    • জেসিন্ডা আর্ডার্ন বিশ্বের অন্যতম সফল নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। তাঁর নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ড করোনা মহামারিকে দক্ষতার সঙ্গে সামলেছে।
    • তাঁর “সহানুভূতি-নির্ভর নেতৃত্ব” কৌশল আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে।
  • জার্মানি:
    • অ্যাঞ্জেলা মের্কেল টানা ১৬ বছর জার্মানির চ্যান্সেলর পদে থেকে দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখেন।
    • তাঁর দৃঢ় নেতৃত্ব ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিনির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • বাংলাদেশ:
    • শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্ব দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নারীদের ক্ষমতায়নের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
    • টানা তিনবার শেখ হাসিনার ক্ষমতা গ্রহণ বাংলাদেশের নারীদের রাজনৈতিক দৃঢ়তার দৃষ্টান্ত।

লিঙ্গ বৈষম্য ও রাজনৈতিক বাস্তবতা:

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রে নারীর সংখ্যা এখনো তুলনামূলকভাবে কম।

  • যুক্তরাষ্ট্র:
    • বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ হলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখনো কোনো নারী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হননি।
    • তবে ২০২০ সালে কমলা হ্যারিস প্রথম মহিলা, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় আমেরিকান হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট হন, যা নারীদের রাজনৈতিক অগ্রগতির পথে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
  • ভারত:
    • বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হলেও ভারতে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এখনো সীমিত।
    • ইন্দিরা গান্ধী প্রথম এবং একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী হলেও, পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের অনুপস্থিতি প্রকট।
  • মধ্যপ্রাচ্য:
    • কিছু দেশ এখনো নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধতা বজায় রেখেছে।
    • সৌদি আরবে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো নারীরা ভোটাধিকার লাভ করে।

পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে চিনের পছন্দ কি কমলা হ্যারিস?

নারী সংরক্ষণ আইন ও নীতি:

বিশ্বের বহু দেশে নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সংরক্ষণ আইন কার্যকর করা হয়েছে।

  • নরওয়ে:
    • দেশটির সংসদে ৪৫% সদস্যই নারী, যা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ হার।
    • সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৪০% নারী কোটা বাধ্যতামূলক।
  • রুয়ান্ডা:
    • আফ্রিকার এই দেশটি নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে পথপ্রদর্শক।
    • দেশটির সংসদে ৬১% সদস্যই নারী, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ।
  • ফ্রান্স:
    • ২০০০ সালে ফ্রান্সে “Parity Law” চালু হয়, যা রাজনৈতিক পদে নারী-পুরুষ সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।
    • এই আইন কার্যকর হওয়ার পর দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

আন্তর্জাতিক নারীবাদী আন্দোলনের ভূমিকা:

নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে আন্তর্জাতিক আন্দোলনও বড় ভূমিকা রেখেছে।

  • “MeToo” আন্দোলন:
    • যৌন হয়রানি ও নারীর প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া এই আন্দোলন বিশ্বব্যাপী নারীদের স্বরকে শক্তিশালী করেছে।
    • বহু নারী নেত্রী এই আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক জগতে আত্মপ্রকাশ করেছেন।
  • “Times Up” আন্দোলন:
    • ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন নারীদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে।
    • নির্বাচনী প্রচারে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠে আসে।

One year on, Time's Up movement has taken shape, but more to do - People - The Jakarta Post

বাংলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক তুলনা:

বাংলার রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিসরে এখনো পিছিয়ে।

  • সংরক্ষণের সীমাবদ্ধতা:
    • পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত স্তরে ৫০% সংরক্ষণ কার্যকর হলেও বিধানসভা ও সংসদে এই সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই, যা নারীর ক্ষমতায়নে বড় বাধা।
  • নীতিনির্ধারণী পদে নারীর স্বল্প উপস্থিতি:
    • আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলার নারী নেতাদের সংখ্যা নগণ্য।
    • বাংলাদেশের মতো পার্শ্ববর্তী দেশেও নারী প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেত্রী থাকলেও বাংলায় উচ্চ পর্যায়ে মহিলা নেতৃত্ব তুলনামূলকভাবে কম।

“বিশ্বের আলোয় নিজেকে তুলনা করলেই বোঝা যায়, বাংলার নারীরা আজও রাজনৈতিক ক্ষমতার মূলধারায় প্রবেশের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।”

নারী নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ:

“রাজনীতির মঞ্চে নারী কি কেবলমাত্র শোভা বৃদ্ধি করবে, নাকি নেতৃত্বের আসনে বসে দাপটের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেবে?”—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। নারীর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, যা সমাজের মানসিকতা বদলানোর পাশাপাশি প্রশাসনিক কাঠামোকেও নতুন পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি:

নারী নেতৃত্বের প্রথম শর্ত হল শিক্ষিত ও সচেতন নাগরিক গড়ে তোলা।

  • রাজনৈতিক শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ:
    • স্কুল ও কলেজের পাঠ্যক্রমে রাজনৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।
    • রাজনৈতিক সচেতনতার ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রী উভয়েই নারী নেতৃত্বের গুরুত্ব শিখবে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নারী ক্ষমতায়নের দিকে উদ্বুদ্ধ করবে।
  • রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে প্রচার:
    • গ্রামাঞ্চলে এখনো অনেক নারী তাঁদের ভোটাধিকার বা প্রার্থীতার অধিকার সম্পর্কে অবগত নন।
    • তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে প্রচারাভিযান চালানো দরকার।
    • স্থানীয় ভাষায় লেখা প্রচারপত্র, নাটক বা ছোট ভিডিওর মাধ্যমে সহজবোধ্য উপস্থাপনা করতে হবে।

আর্থিক সহায়তা ও রাজনৈতিক অনুদান:

নারীদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পথে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা বড় বাধা।

  • আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা:
    • নারী প্রার্থীদের জন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে আলাদা তহবিল গঠন করতে হবে।
    • নির্বাচনী প্রচার চালানোর জন্য নারী প্রার্থীদের জন্য বিশেষ ভর্তুকি বা সরকারি অনুদান চালু করা দরকার।
  • ব্যাঙ্ক ঋণ ও স্বনির্ভরতা:
    • নারী প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ নিতে সহজ শর্তে ব্যাঙ্ক ঋণ দেওয়া যেতে পারে।
    • এতে অর্থের অভাবে রাজনীতিতে নারীর প্রবেশের পথে প্রতিবন্ধকতা কমবে।

নারী সংরক্ষণের সম্প্রসারণ:

সংরক্ষণের মাধ্যমেই নারীদের রাজনৈতিক উপস্থিতি বাড়ানো সম্ভব।

  • বিধানসভা ও সংসদে সংরক্ষণ:
    • পঞ্চায়েতে সংরক্ষণ থাকলেও বিধানসভা বা সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষণ নেই।
    • সংসদে নারীদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষণের বিল দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
    • এই বিল দ্রুত কার্যকর করা জরুরি, যাতে উচ্চ পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ে।
  • রাজনৈতিক দলে সংরক্ষণ:
    • বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে অন্তত ৩০-৪০% নারী প্রার্থী মনোনীত করা বাধ্যতামূলক করা উচিত।
    • এতে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নারীরা সমান সুযোগ পাবে।

প্রশিক্ষণ ও নেতৃত্ব উন্নয়ন:

রাজনীতির কৌশল শিখতে নারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।

  • রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ শিবির:
    • রাজনৈতিক দলগুলি এবং সরকারি সংস্থাগুলিকে নারীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করতে হবে।
    • জনসংযোগ, বক্তৃতা, বিতর্ক এবং নীতি নির্ধারণে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার।
  • মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম:
    • অভিজ্ঞ নারী নেত্রীদের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের রাজনীতিকদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
    • এতে নবীন নারীরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন:

নারী নেতৃত্বের পথে অন্যতম বড় বাধা হল সমাজের রক্ষণশীল মানসিকতা।

  • লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের অবসান:
    • নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে অগ্রাহ্য না করে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে।
    • পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমকে এই বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে।
  • মিডিয়া ও নারীর উপস্থাপন:
    • সংবাদমাধ্যমে নারী রাজনীতিবিদদের ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা দরকার।
    • তাঁদের সাফল্যের গল্প জনসমক্ষে তুলে ধরা গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের প্রতি অনুপ্রাণিত হবে।

নিরাপত্তা ও আইনি সহায়তা:

রাজনীতির মাঠে নারীদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।

  • নির্বাচনী হিংসা প্রতিরোধ:
    • নির্বাচনের সময় নারী প্রার্থীদের হুমকি, অপপ্রচার বা হেনস্থার হাত থেকে রক্ষা করতে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো দরকার।
    • নারী প্রার্থীদের জন্য আলাদা হেল্পলাইন চালু করা যেতে পারে।
  • আইনি সহায়তা সহজলভ্য করা:
    • রাজনৈতিক লড়াইয়ে আইনি সহায়তা প্রয়োজন হলে দ্রুত বিচার ব্যবস্থা চালু করা দরকার।
    • বিশেষ করে নারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ বা অপপ্রচার রুখতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

“রাজনীতির মঞ্চে নারীরা শুধুমাত্র পটভূমিতে নয়, বরং আলোয় দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেবেন—এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে উপরের পদক্ষেপগুলি বাস্তবায়ন করা জরুরি।”

নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক অধিকার নয়, এটি সমাজের উন্নয়নের এক অপরিহার্য শর্ত। যুগে যুগে নারী নেতৃত্ব সমাজ পরিবর্তনের পথ দেখিয়েছে, অথচ আজও তাঁরা বৈষম্য আর প্রতিবন্ধকতার শিকার। রাজনীতির মঞ্চে নারীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা, সংরক্ষণ এবং সামাজিক মানসিকতার বদল প্রয়োজন। নারীদের কণ্ঠস্বর শক্তিশালী হলে, শুধু রাজনৈতিক সমতা নয়—সমাজও আরও মানবিক ও ন্যায়সঙ্গত হয়ে উঠবে।
“নারীর শক্তিই আগামী দিনের রাজনীতির রূপ নির্ধারণ করবে, যদি আমরা তাঁদের পথচলার সাহস যোগাই।”

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply