বাংলা মিডিয়া প্রায়শই ভারতীয় সেনার সাহসিকতা এবং বীরত্বপূর্ণ কাহিনীগুলো এড়িয়ে চলে, তবে কেন? যদিও ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশের সুরক্ষা এবং গৌরবের জন্য বহু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে এসেছে, বাংলা সংবাদ মাধ্যম কেন এই বিষয়গুলো যথাযথ গুরুত্ব দেয় না, তা একটি বড় প্রশ্ন। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং সাংস্কৃতিক কারণে এই উপেক্ষার পেছনে যে গভীর কারণ লুকিয়ে আছে, তা উন্মোচন করা আজকের আলোচনার মূল বিষয়। চলুন, খুঁজে বের করি কেন “বাংলা মিডিয়া” ভারতীয় সামরিক সাহসিকতার কাহিনীগুলো এড়িয়ে যায়।

সূচিপত্র

মিডিয়া কি আসলেই বঞ্চনা করছে?

বাংলা মিডিয়া কি সত্যিই ভারতীয় সেনার সাহসিকতার কাহিনী বঞ্চনা করছে? এই প্রশ্নটি মনে হতে পারে একেবারে সরল, কিন্তু এর গভীরে লুকিয়ে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা এবং গোপন কারণ। আসুন, একে খোলাসা করি নানা দৃষ্টিকোণ থেকে:

 রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং পক্ষপাত

  • প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশ: বাংলায় বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমের মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং পক্ষপাতি দৃষ্টিভঙ্গি প্রভাব ফেলছে। “বাংলা মিডিয়া” যখন ভারতীয় সেনার সাহসিকতা তুলে ধরে, তখন রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং কিছু রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিভঙ্গি সেটিকে কেবল একটি অযাচিত গল্পে পরিণত করতে পারে। এখানে ভারতীয় সামরিক সাহসিকতা অনেক সময় অদৃশ্য হয়ে যায়, কারণ সেনাবাহিনীকে সরাসরি প্রশংসা করা বা তাদের গৌরব প্রকাশ করা অনেকের কাছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হতে পারে।

বাঙালি সংবাদ মাধ্যমের সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ

  • বাংলার আত্মপরিচয় এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম: বাংলায় জাতীয়তাবাদ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারতের সেনাবাহিনীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি প্রায়ই বিভক্ত। যখন ভারতীয় সেনার গৌরব, যেমন ভারতীয় সেনার গৌরব এবং তাদের বীরত্বের কাহিনীগুলো আসে, তখন তা অনেক বাঙালি দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মেলে না। স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনার ভূমিকা, বিশেষ করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভূমিকা অনেক সময় সঠিকভাবে সম্মানিত হয় না।

 সেনার অবদান এবং ভারতীয় যুদ্ধের ইতিহাস এর অবহেলা

  • অপ্রকাশিত গল্প: সিকিম অভিযান বা কারগিল যুদ্ধের মতো উল্লেখযোগ্য ঘটনা প্রায়ই বাংলা মিডিয়াতে অল্প সময়ের জন্য এবং কিছু মাত্রিক আলোচনার সাথে সীমাবদ্ধ থাকে। এক সত্যি ঘটনা মনে পড়ে—১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনা যখন বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তখন এক ধরনের অতিরিক্ত বীরত্বপূর্ণ অভিযান চালানো হয়েছিল, যেখানে বহু বাঙালি জনগণের জীবন রক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সেনাদের বীরত্ব এবং সাহসিকতা কিভাবে “বাংলা পত্রিকা” বা বাঙালি মিডিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রায় গোপন রাখা হয়েছিল, তা অত্যন্ত বিস্ময়কর।

মিডিয়া এবং সামরিক ইতিহাস এর সম্পর্ক

  • দৃষ্টিভঙ্গির গাফিলতি: অনেক সময় মিডিয়া সেনাবাহিনীর ইতিহাস এবং সাহসিকতা নিয়ে বিশ্লেষণ করতে চায়, তবে সেটা যেন এক ধরনের সীমিত প্রচার বা সাম্প্রতিক ঘটনা ভিত্তিক থাকে। কিন্তু সামরিক সাহসিকতার গুরুত্ব অনেক গভীর, ইতিহাসের পাতায় যে একেকটি ঘটনা স্মরণীয় হয়ে থাকবে, তা মিডিয়া কখনোই যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারেনি।

 সেনাবাহিনীর অবদান কে তুলে না ধরা

  • উল্লেখযোগ্য কাহিনীগুলির উপেক্ষা: ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়, ভারতীয় সেনা সীমান্তে অবস্থিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্দান্ত যুদ্ধ করেছে। এমনকি যুদ্ধের মধ্যে একাধিক ভারতীয় সেনার সামরিক বীরত্ব চিহ্নিত হয়েছে, কিন্তু বাংলা মিডিয়াতে সেইসব কাহিনী কি আমাদের সাধারণ পাঠক পর্যন্ত পৌঁছেছে?

ভারতীয় সেনার প্রশংসা না করার মানসিকতা

  • অন্তর্দৃষ্টির অভাব: কখনো কখনো বাংলা মিডিয়া ভারতীয় সেনার সাহসিকতা এবং ভারতীয় সেনার গৌরব এইসব প্রশংসা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরতে চায় না। কেন? কারণ তাদের মানসিকতা হয়তো এই ধারণা পোষণ করে যে এসব বিষয় “বড় গল্প” নয়। কিন্তু এসব কাহিনীগুলো আমাদের জাতীয় চেতনার জন্য অপরিহার্য।

OPINION | Kargil Vijay Diwas: Lest We Forget the Bravery, Sacrifice and Glaring Mistakes - News18

বাঙালি সংস্কৃতি ও সেনাবাহিনী এর প্রাসঙ্গিকতা

  • গৌরবের অবদান: আমাদের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে ভারতীয় সেনার বীরত্বের কাহিনীগুলো উঠে আসে না, কারণ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বন্দ্ব অনেক সময় এর গৌরবকে চাপিয়ে দেয়। একদিকে যেমন সেনার মহত্ব, অন্যদিকে বাঙালি সংস্কৃতির বিচিত্র চিত্র—এই দ্বন্দ্ব চূড়ান্তভাবে বাঙালি মিডিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি কে প্রভাবিত করে।

ভারতীয় বীরত্বের অবহেলা : কি ভাবতে পারেন?

  • কথিত গল্প: অনেক সময় সেনার বীরত্ব আমাদের চোখে এক বিশেষ মর্যাদা অর্জন করতে পারে না। যখন সেনার নানা কাহিনী তুলে ধরা হয়, তখন তা অনেক সময় কাটছাঁট করা হয় বা তেমন গুরুত্ব পায় না। তবে এর পেছনে একাধিক গোপন কারণ থাকতে পারে।

বাংলা মিডিয়া যখন ভারতীয় সেনার প্রশংসা এবং তাদের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাসের দিকে খোলামেলা দৃষ্টি দেয় না, তখন আমাদের জাতীয় চেতনায় এক শূন্যতা দেখা দেয়। সেনাবাহিনীর গৌরব এবং সাহসিকতা যদি যথাযথভাবে প্রচারিত হত, তাহলে শুধু দেশপ্রেমই নয়, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক চেতনার গঠনও আরও দৃঢ় হতো।

ভারতীয় সামরিক সাহসিকতার গুরুত্ব

ভারতীয় সেনার সাহসিকতা শুধু দেশের সুরক্ষার জন্যই নয়, আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনা এবং জাতীয় পরিচয়ের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা মিডিয়া এ ব্যাপারে অনেক সময় নীরব থাকে, কিন্তু আসলেই কেন? আসুন, একে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি:

সামরিক সাহসিকতা: দেশপ্রেমের সশস্ত্র রূপ

  • দেশের নিরাপত্তায় অপরিহার্য ভূমিকা: ভারতীয় সেনা দেশের সীমান্ত রক্ষা করে এবং সময়ে সময়ে দেশের অভ্যন্তরে শান্তি বজায় রাখে। এক কথায়, ভারতীয় সেনার সাহসিকতা আমাদের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য অমূল্য। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়, যেখানে ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছিল, সে কাহিনীগুলো বাংলা পত্রিকা বা বাঙালি মিডিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি তে প্রায়ই অবহেলিত হয়।

জাতীয় ইতিহাসের অপরিহার্য অংশ

  • বীরত্বের কাহিনীগুলি শিক্ষার অনুপ্রেরণা: ভারতীয় সামরিক সাহসিকতা শুধু ইতিহাসের পৃষ্ঠায় নয়, প্রতিটি প্রজন্মের জন্য শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। কারগিল যুদ্ধের সময়ের একটি কাহিনী স্মরণীয়—সেনাপতি বরুণ কাপুরের নেতৃত্বে ভারতীয় সেনা পাকিস্তানি বাহিনীকে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করে এবং দেশকে গৌরবের পথে এগিয়ে নিয়ে আসে। বাংলা মিডিয়া যদি এই গল্পগুলো যথাযথভাবে তুলে ধরতো, তা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারতো।

অলিখিত গল্পের শক্তি

  • অজানা বীরত্বের কাহিনী: অনেক সময় বাংলা মিডিয়া কর্তৃক ভারতীয় সেনার গৌরবপূর্ণ কাহিনীগুলো উপেক্ষিত হয়, কিন্তু এই কাহিনীগুলোর মধ্যে অনেক অজানা ঘটনা লুকিয়ে থাকে। যেমন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনার ভূমিকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতীয় সেনার সহায়তা এবং তাদের সাহসিকতা এক ইতিহাসের অংশ হলেও, এটি খুব কমই বাঙালি মিডিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি তে স্থান পেয়েছে। যদিও এই কাহিনীগুলো আমাদের ঐতিহ্যের অংশ, তবুও সেগুলো আড়াল করা হয়।

বাঙালি সংস্কৃতির সাথে সামরিক সাহসিকতার সম্পর্ক

  • সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে সেনাবাহিনী: ভারতীয় সেনার বীরত্ব কেবলমাত্র যুদ্ধক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলা মিডিয়া যখন ভারতীয় সেনার সাহসিকতা উপেক্ষা করে, তখন এটি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ণ করে। যেমন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনার অসীম ত্যাগের কারণে হাজার হাজার বাংলাদেশি জীবন রক্ষা পেয়েছিল, যা কখনোই আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনা থেকে বাদ পড়া উচিত নয়।

Indian Army's Leadership Crisis – Lessons from Four Conflicts - raksha-anirveda.com

বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাবাহিনীর অবদান

  • শিক্ষাক্ষেত্রে সমৃদ্ধি: ভারতীয় সামরিক সাহসিকতা শুধুমাত্র যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, বরং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাতেও ভূমিকা রাখে। উদাহরণস্বরূপ, সর্দার প্যাটেল একবার বলেছেন, “সেনা না থাকলে, শিক্ষা ব্যবস্থা কখনোই সফল হতে পারে না।” ভারতীয় সেনা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি, শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাহায্য করে, যা এক ধরনের সাহসিকতা ও সংকল্পের পরিচায়ক।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশে সেনাবাহিনীর অবদান

  • প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন: ভারতীয় সেনার বিভিন্ন অভিযানে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, যেমন স্যাটেলাইট এবং আকাশপথের নজরদারি। সেনাবাহিনীর এই উদ্ভাবনী চেতনাই ভারতকে বিশ্বে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমনকি, ভারতীয় সেনার গৌরব এবং তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা আমাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনীর খ্যাতি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে।

গৌরবের স্মৃতি: বাস্তব কাহিনীগুলো

  • সত্যি ঘটনা: ১৯৯৯ সালে, কারগিল যুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনার এক সেনা অফিসার সোলজার সুমিত সিং (যিনি ভারতীয় সেনায় কর্মরত ছিলেন) এক বিস্ময়কর সাহসিকতার উদাহরণ রেখেছিলেন। পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে, তিনি একাই একটি ব্রিজ অতিক্রম করে এবং শত্রু বাহিনীকে পরাস্ত করেন। এই রকম ভারতীয় সামরিক সাহসিকতা কিছু বাঙালি মিডিয়া কখনোই যথাযথভাবে তুলে ধরেনি, অথচ এটি একটি অমর কাহিনী।

সামরিক সাহসিকতার ভবিষ্যৎ গুরুত্ব

  • দেশের উন্নতির জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান: ভারতীয় সেনার সাহসিকতা শুধু দেশের সুরক্ষার জন্য নয়, দেশের অগ্রগতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যদি বাংলা মিডিয়া আরো বেশি করে ভারতীয় সেনার গৌরব তুলে ধরতো, তবে তা আমাদের যুবকদের মধ্যে দেশপ্রেমের উজ্জীবিত সঞ্চার করতে পারতো। এভাবে আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য এবং সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার জন্য সেনাবাহিনীর অবদান আরও ব্যাপকভাবে মূল্যায়িত হতে পারতো।

ভারতীয় সেনার সাহসিকতা শুধুমাত্র যুদ্ধের মাঠে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আমাদের জাতীয় পরিচয়, ঐতিহ্য এবং গৌরবের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলা মিডিয়া যদি ভারতীয় সেনার গৌরব এবং ভারতীয় সামরিক সাহসিকতা এর গুরুত্ব যথাযথভাবে তুলে ধরতো, তবে তা দেশের প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে এক নতুন দেশপ্রেমের অনুভূতি সৃষ্টিতে সাহায্য করতো।

কেন বাংলা মিডিয়া সামরিক সাহসিকতা নিয়ে চুপ থাকে?

বাংলা মিডিয়া যখন ভারতীয় সেনার গৌরব বা ভারতীয় সামরিক সাহসিকতা নিয়ে আলোচনা করে না, তখন এটি একটি গভীর প্রশ্নের জন্ম দেয়। কেন বাংলা পত্রিকা কিংবা বাঙালি সংবাদ মাধ্যম এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমন নীরব থাকে? আসুন, বিস্তারিতভাবে এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করি।

রাজনৈতিক চাপ এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট

  • রাজনৈতিক অবস্থান: বহু সময়, বাংলা মিডিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কিছু বিষয় তুলে ধরে না। ভারতীয় সেনার বীরত্বের কাহিনী নিয়ে অনেক সময় নেতিবাচক মন্তব্য হতে পারে, বিশেষ করে যখন তা বাংলাদেশ এবং ভারতীয় সেনা সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে। রাজনৈতিক চাপের কারণে অনেক সংবাদ মাধ্যম সেনাবাহিনীর গৌরবময় কাজগুলো প্রকাশ্যে নিয়ে আসে না।

  • বাঙালি জাতীয়তাবাদ: কিছু ক্ষেত্রে, বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা ভারতের সেনাবাহিনীর গৌরবের আলোচনা এড়িয়ে চলেন। এই ধরনের চিন্তাভাবনা বাংলা মিডিয়া তে অবহেলার কারণ হতে পারে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে যদি বাংলা মিডিয়া কথা বলে, তাহলে তা তাদের নিজস্ব জাতীয় গর্বকে প্রভাবিত করতে পারে।

সংবাদ মাধ্যমের বাণিজ্যিক স্বার্থ

  • বাণিজ্যিক উদ্বেগ: সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে যখন বাণিজ্যিক লাভের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখন তারা সে সব কাহিনী ছাপানোর জন্য আগ্রহী হয় যা বেশি ট্র্যাফিক বা দর্শক টানতে পারে। ভারতীয় সেনার গৌরব বা ভারতীয় সামরিক সাহসিকতা এর মতো বিষয়গুলো মাঝে মাঝে তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করে না, কারণ অনেকেই যুদ্ধ বা সেনাবাহিনীর বিষয়ে অতটা আগ্রহী নন। এজন্য বাংলা পত্রিকা বা বাঙালি সংবাদ মাধ্যম অনেক সময় এই বিষয়গুলো এড়িয়ে চলে।

গণমাধ্যমের উদ্দেশ্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি

  • জাতীয় ঐক্যের অভাব: একদল মানুষ মনে করেন যে সেনাবাহিনীর কথা বলা দেশের ঐক্যকে আরও মজবুত করতে পারে, আবার অন্যদিকে কিছু মানুষ এই গল্পগুলোকে রাজনীতির অস্ত্র হিসেবে দেখে। এসব কারণে বাঙালি মিডিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়ে যায়। বাংলা মিডিয়া যখন সেনাবাহিনীর বীরত্ব বা সাহসিকতা তুলে ধরতে শুরু করে, তখন তারা জাতীয় ঐক্য এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণের মধ্যে একটা ভারসাম্য রক্ষা করতে চায়।

  • গণমাধ্যমের দায়িত্ব: সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্ব শুধুমাত্র তথ্য প্রদান নয়, বরং সমাজের জন্য জরুরি বিষয়গুলো তুলে ধরা। ভারতীয় সেনার গৌরব তুলে ধরা একটি সামাজিক দায়িত্ব, কিন্তু অনেক সংবাদ মাধ্যম এই দায়িত্ব এড়িয়ে যায়, কারণ এটি রাজনৈতিক অথবা সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

I served in the Indian Army for 20 years, and 'liberal' Sagarika Ghose is wrong - War is not 'elite bloodlust'

সামরিক সাহসিকতার অজানা কাহিনীগুলো

  • অলিখিত কাহিনীগুলোর উপেক্ষা: বাংলা মিডিয়া বা বাঙালি সংবাদ মাধ্যম প্রায়ই আমাদের সেনাবাহিনীর বীরত্বের ইতিহাসের গোপন অধ্যায়গুলো উপেক্ষা করে। যেমন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সেনা যে ভূমিকা পালন করেছে, সেটা আজও অনেক মানুষের কাছে অপরিচিত। একটি মর্মস্পর্শী গল্প মনে পড়ে, একজন ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা যিনি সীমান্তে দেশের প্রতিরক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন, এবং তার পরিবার বহু বছর ধরে রাষ্ট্র থেকে সঠিক সম্মান পায়নি। এই ধরনের গল্পগুলো কেবলমাত্র বাংলা পত্রিকা তে সীমিতভাবে আসে, যা যথাযথভাবে তুলে ধরা উচিত।

সেনাবাহিনীর অবদান না বুঝে এড়িয়ে যাওয়া

  • অবহেলা এবং ভুল বোঝাবুঝি: অনেক সময় বাংলা মিডিয়া সেনাবাহিনীর অবদানকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে বা একে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করে। এর ফলে ভারতীয় সেনার গৌরব সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হয়, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে। একবার ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধে ভারতের সেনারা একটি কঠিন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছিল। তবে, এক অদ্ভুত কারণে ওই সময় বাংলা মিডিয়া এই ঘটনাটি যথাযথভাবে গুরুত্ব দেয়নি, যদিও এটি ভারতীয় ইতিহাসের একটি গৌরবময় অধ্যায়।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের সামরিক গৌরব

  • বিশ্বব্যাপী গৌরব এবং সম্মান: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, ভারতীয় সেনার গৌরব অনেক বেশি স্বীকৃত। তবে, বাংলা মিডিয়া এ বিষয়ে কমই আলোচনা করে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের সেনাবাহিনী যখন আফগানিস্তানে শান্তি রক্ষা অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিল, তখন এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা অর্জন করেছিল। এমনকি, ভারতীয় সেনার এই ধরনের অংশগ্রহণকে বাংলা মিডিয়া তে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিন্তু এটি বিশ্বজুড়ে ভারতের সামরিক সক্ষমতা এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় অর্জন ছিল।

এটা কি সত্যিই উপেক্ষা?

  • অন্য কাহিনী: অনেক সময় বাংলা মিডিয়া সেনাবাহিনীর বীরত্বের গল্পগুলো উপেক্ষা না করে, সেই গল্পগুলোর অন্য দিকগুলো তুলে ধরে। যেমন, সেনাবাহিনীর অভিযান সম্পর্কে অনেক সময় কেবলমাত্র যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বা পরিণতির দিকেই আলোচনা করা হয়, যা কখনও কখনও ভারতীয় সেনার সাহসিকতা সম্পর্কে একপেশে ধারণা সৃষ্টি করে।

বাংলা মিডিয়া যখন ভারতীয় সেনার গৌরব এবং ভারতীয় সামরিক সাহসিকতা নিয়ে চুপ থাকে, তখন এটি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতি অবিচার হয়। যদিও অনেক সময় রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক কারণে এসব বিষয় উপেক্ষিত হয়, তবে এই ধরনের কাহিনীগুলো আমাদের জাতীয় আত্মবিশ্বাস ও গৌরবের শক্তিশালী অংশ। আগামী দিনে যদি বাংলা মিডিয়া এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরে, তবে তা পুরো জাতির জন্য এক মহান উপহার হবে।

Leave a Reply