বাংলার জনপরিসরে জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ে, প্রায়শই রাজনৈতিক বিরোধিতা ও বিতর্কের কেন্দ্রে অবস্থান করে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আঞ্চলিক রাজনৈতিক চাপ, সাংবাদিকতার সীমাবদ্ধতা ও জনমতের সহনশীলতা—সব মিলিয়ে গঠিত হয়েছে এমন এক পরিবেশ, যেখানে জাতীয়তার ভাবনা প্রায়শই বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হয়। বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয়তাবাদ বনাম আঞ্চলিকতার দ্বন্দ্ব, বাঙালি মতাদর্শের বিভাজন এবং বিভাজনমূলক শক্তির উত্থান এই আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই প্রবন্ধ সেই সংবেদনশীল স্তরগুলিকে স্পর্শ করে, যেখানে কণ্ঠস্বর বেছে নিতে গিয়েই বিভাজন শুরু হয়।

সূচিপত্র

জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ মানেই কি বিজেপি সমর্থক?

এই প্রশ্নটা আজকাল এতটাই ঘন ঘন উঠে আসছে যে মনে হয় জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ বলতে বোঝানো হচ্ছে শুধু একটাই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক রঙকে। অথচ বাস্তবটা কি এতটা সরল? বাংলার রাজনৈতিক আলোচনায় জাতীয়তাবাদ শব্দটি যেন নিজের গভীরতা হারিয়ে ফেলেছে। নিচে একে একে ব্যাখ্যা করা হলো এই বিভ্রান্তির স্তরগুলো — ধারালো যুক্তি, ইতিহাসের আলোক, এবং সমাজের বাস্তবতা দিয়ে।

জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ: একটি আদর্শ, কোনো দলের শাখা নয়

🟠 ‌জাতীয়তাবাদ মানে কী?

  • জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ মূলত এমন এক চিন্তা যা দেশের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য, এবং সাংস্কৃতিক গৌরবকে গুরুত্ব দেয়।

  • এটি রাজনৈতিক মতাদর্শ হতে পারে, কিন্তু এটি শুধুমাত্র বিজেপি বা কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের একচেটিয়া সম্পত্তি নয়।

🟠 ইতিহাস কী বলে?

  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতীয়তাবাদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, আবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয়তাবাদকে বিপ্লবের হাতিয়ার করেছেন।

  • তাহলে, একজন জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ কি শুধুই হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতিনিধি? একেবারেই নয়।

মতাদর্শে গোঁড়ামি: যেখানে বিতর্ক মানে প্রতিক্রিয়া

🟣 রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া – অন্তত ১৫ বার উঠে আসে এই শব্দটি

  • যেই মুহূর্তে কেউ জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ তুলে ধরেন, সঙ্গে সঙ্গে ওঠে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

  • এই রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া প্রায়শই মারাত্মক—চরিত্রহনন, সোশ্যাল মিডিয়া ট্রোল, এমনকি ক্যাম্পাসে হেনস্থা পর্যন্ত ঘটে।

🟣 সাংবাদিকতা ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা

  • যারা প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্রের উন্নতির কথা বলেন, তাঁদেরও বিজেপি সমর্থক হিসেবে ট্যাগ করে ফেলা হয়।

  • সাংবাদিকতার স্বাধীনতা যখন শুধু একপাক্ষিক কথা প্রচার করে, তখন জাতীয়তাবাদ যেন হয়ে ওঠে অপরাধ।

বিশ্ববিদ্যালয় ও শহুরে বুদ্ধিজীবীরা: জাতীয়তাবাদ বনাম আঞ্চলিকতা

🟢 বিশ্ববিদ্যালয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা

  • কলকাতার নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ তুললে, সেটা যেন “প্রতিবিপ্লবী” কণ্ঠ হয়ে দাঁড়ায়।

  • এই পরিমণ্ডলে জাতীয়তা বনাম আঞ্চলিকতা দ্বন্দ্ব প্রকট।

🟢 বাঙালি সমাজে মতাদর্শ ও বিভাজনমূলক শক্তি

  • বাঙালি সমাজে “বুদ্ধিজীবী” শব্দটির আড়ালে এমন এক মেরুকরণ হয়েছে, যেখানে জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ মানেই রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি।

  • এই ধারণা ছড়ানোর পেছনে রয়েছে এক শ্রেণির বিভাজনমূলক শক্তি, যারা আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও জাতীয় ঐক্যকে আলাদা করে দেখতে চায়।

Targeted before polls, betrayed afterwards | Heinrich Böll Stiftung |  Regional Office New Delhi

বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক চাপ

🔵 রাজনীতিতে ব্র্যান্ডিংয়ের কৌশল

  • বঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমনভাবে গড়ে উঠেছে, যেখানে যেকোনও দেশকেন্দ্রিক ভাবনা মানেই শাসকদলের প্রতি সমর্থন—এই সহজীকরণ মারাত্মক।

  • বিরোধী রাজনীতির অন্যতম অস্ত্র হল রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া, যা প্রতিটি জাতীয়তাবাদী কণ্ঠকে একঘরে করে দেয়।

🔵 আঞ্চলিক রাজনৈতিক চাপ

  • পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়শই জাতীয়তাবাদকে “বহিরাগত” ভাবনা বলে চালিয়ে দেয়।

  • অথচ ঐতিহাসিকভাবে বাঙালির জাতীয়তাবাদই ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম চালিকা শক্তি।

সচেতন নাগরিক ও বিজ্ঞানীদেরও নিশানা করা হয়

🔴 বিজ্ঞানী এবং নাগরিক কণ্ঠ

  • সমাজে যখন কোনো বিজ্ঞানী অথবা সচেতন নাগরিক রাষ্ট্রের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন, তখন তাঁকে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া-র মুখে পড়তে হয়।

  • তাঁদের যুক্তিকে খণ্ডন করার পরিবর্তে তাঁদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

জনমতের সহনশীলতা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে

🔶 সহনশীলতা নামক মূল্যবোধ কোথায়?

  • আজকের বাংলায় জনমতের বহুত্ব থাকলেও, জাতীয়তাবাদী কণ্ঠের প্রতি সহনশীলতা তলানিতে ঠেকেছে।

  • যুক্তি বা তথ্য নয়, বরং বিশ্বাস ও দলের প্রতি আনুগত্যে চলে বিতর্ক।

🔶 সামাজিক মিডিয়ার বিভ্রান্তি

  • ফেসবুক-টুইটারে যাঁরা জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ তুলে ধরেন, তাঁদের চুপ করাতে উঠে আসে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া—মেমে, ট্রোল, এমনকি হুমকি।

 একপেশে শব্দচর্চার বিপদ

জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ কোনো দলীয় মশাল নয়, বরং এটা এক জাতির স্বর, ইতিহাস ও ভবিষ্যতের আলোচনার অংশ। যখন বাংলার মতো সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চলে এই কণ্ঠ স্তব্ধ করা হয় শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার ভয়ে, তখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আঘাত পায় গণতন্ত্র।

Stifling Dissent: The Criminalization of Peaceful Expression in India | HRW

বাঙালি সমাজে মতাদর্শের সংঘাত: জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ বনাম আঞ্চলিক বিশ্বাস

বাংলার সমাজে আদর্শগত চেতনার ভেতরেই একটা সূক্ষ্ম কিন্তু তীক্ষ্ণ দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। একদিকে আছে জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ, যারা দেশকে বৃহত্তর স্বার্থে দেখতে চায়। অন্যদিকে, একটা অংশ শুধু আঞ্চলিক রাজনৈতিক চাপ এবং স্থানীয় ইতিহাসের সীমানায় নিজেদের আবদ্ধ রাখতে চায়। এই সংঘাত শুধু রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে না, বরং বাঙালির মনন ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিকনির্দেশনাকেও বাঁকিয়ে দিচ্ছে।

🔍  বাঙালির মননের ঐতিহাসিক বৈপরীত্য

▪️ একদিকে রবীন্দ্রনাথ, অন্যদিকে সুভাষ

  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন; তাঁর মতে, অতিরিক্ত জাতীয়তা মানেই সংকীর্ণতা।

  • আবার সুভাষচন্দ্র বসু একেবারে বিপরীত, তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদের বাস্তবায়ক।

  • এই দ্বৈত ধারা আজও বাঙালি সমাজে মতাদর্শ বিভাজনের বীজ বপন করেছে।

▪️ বাঙালির শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি বিভক্ত

  • একাংশ আন্তর্জাতিক চেতনায় বিশ্বাসী, যারা জাতীয়তা বনাম আঞ্চলিকতা প্রশ্নে বরং ‘বিশ্বনাগরিক’ হতে চায়।

  • অন্য অংশ বলছে, ‘আমরা বাঙালি—আমরা ভারতীয়’– এই দ্বৈত পরিচয়েই গর্বের কিছু নেই।

🔥 বিভাজনমূলক শক্তির সাংস্কৃতিক কৌশল

▪️ “জাতীয়তাবাদ মানেই বিজেপি” এই ধারণা কার সৃষ্টি?

  • ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করা হয়েছে এক সাংস্কৃতিক ফ্রেম, যেখানে জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ মানেই বিজেপি-ঘেঁষা মতবাদ।

  • কিন্তু সত্যি কি তাই? যে কেউ রাষ্ট্রচিন্তায় বিশ্বাস করলেই সে রাজনৈতিকভাবে একরঙা হয়ে যাবে?

▪️ বুদ্ধিজীবীদের কৌশলী নীরবতা

  • একদল বিজ্ঞানী এবং নাগরিক কণ্ঠ যখন রাষ্ট্রের পক্ষে যুক্তি দেন, তখন তাদেরও আক্রমণের শিকার হতে হয়।

  • এই আক্রমণ আসে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার রূপে — ‘তুই মোদি-ভক্ত’ বা ‘তুই গদ্দার’।

🧨 জনমতের সহনশীলতা কোথায় হারালো?

▪️ যুক্তির জায়গায় আসে আবেগপ্রবণ দলবাজি

  • বাঙালি সমাজে মতাদর্শ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে কেউ জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ তুললেই তাকে দলীয় চশমায় দেখা হয়।

  • বিতর্কের জায়গায় আসে ব্লক, আনফলো, এবং সর্বশেষে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

▪️ “তুই ফ্যাসিস্ট” – এই ট্যাগ লাগাতে সময় লাগে না

  • যুক্তি দিয়ে না পেরে, জাতীয়তাবাদী কণ্ঠকে “ফ্যাসিস্ট”, “গোদি মিডিয়া” বা “সংঘী” বলেই দমিয়ে দেওয়া হয়।

🏛 বিশ্ববিদ্যালয় ও সাহিত্যচর্চায় মতাদর্শের রণক্ষেত্র

▪️ শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

  • বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমেও কিছুটা আড়ালে ঢুকে গেছে বিভাজনমূলক শক্তি

  • যেমন: ইতিহাসের বইতে একদম উল্লেখ নেই ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বাঙালি অবদান—খগেন্দ্রনাথ, হেমচন্দ্র, ক্ষুদিরামদের নাম হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।

▪️ সাহিত্যিক বৃত্তেও জাতীয়তাবাদ এক প্রকার নিষিদ্ধ

  • সাহিত্য ফেস্টিভ্যালে বা বুদ্ধিজীবী চক্রে কেউ যদি জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ তোলে, তাকে “পেইড বক্তা” বলেই একঘরে করে দেওয়া হয়।

  • অথচ সাহিত্যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকার কথা ছিল।

 একরৈখিকতা মানেই নিরাপদ নয়

বাঙালি সমাজে মতাদর্শ আজ দ্বিধান্বিত। একদিকে জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ যারা বৃহত্তর রাষ্ট্রচিন্তায় বিশ্বাস করে, অন্যদিকে তারা যাদের মতে এটা একধরনের আক্রমণাত্মক রাষ্ট্রভক্তি। এই সংঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যুক্তিভিত্তিক সমাজচিন্তা। যেদিন আমরা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া বাদ দিয়ে যুক্তিকে জায়গা দেব, সেদিনই এই দ্বন্দ্বের সুরাহা সম্ভব।

INDIAN HISTORY COLLECTIVE

বিশ্ববিদ্যালয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা: আদর্শ না অজুহাত?

বিশ্ববিদ্যালয়—যেখানে মুক্ত চিন্তা, মতের স্বাধীনতা আর যুক্তিবাদী আলোচনা হওয়ার কথা। অথচ আজ বাংলার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এক গভীর সংকট চলছে। জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ এখানে প্রায়শই সন্দেহ, বিদ্বেষ এবং আক্রমণের মুখোমুখি। এর পিছনে রয়েছে একাধিক রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া, যা এই শিক্ষাঙ্গনকে আদর্শের চর্চার পরিবর্তে বিভাজনের ক্ষেত্র করে তুলেছে।

 ছাত্ররাজনীতি ও আদর্শের অপচয়

▪️ একসময় যেখানে ‘চিন্তার স্বাধীনতা’ ছিল—

  • স্বাধীনতা-পূর্ব কালে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বিপ্লবী চেতনার আঁতুড়ঘর। ক্ষুদিরাম, নেতাজি, দীনেশ গুপ্তর মতো জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ সেখান থেকেই উঠে এসেছিল।

  • কিন্তু আজ, যদি কেউ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সেনাবাহিনী বা জাতীয় ঐক্যের পক্ষে কথা বলেন, তখন তাকে ডানপন্থী বলে ‘ট্যাগ’ দিয়ে দেওয়া হয়।

▪️ মতপ্রকাশ মানেই এখন রাজনীতি

  • ছাত্ররা কোনো মতামত দিলে, সেই মত কতটা যৌক্তিক তা বিচার হয় না—তা বিচার হয় সে কোন দলের ঘনিষ্ঠ তার ভিত্তিতে।

  • ফলাফল? একরৈখিক চিন্তা, যেখানে জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ শব্দই যেন বিপজ্জনক।

 গবেষণা ও পাঠ্যক্রমে পক্ষপাতিত্ব

▪️ ইতিহাস বা রাজনীতির পাঠ্যক্রমে গোপনীয় এডিটিং

  • আজ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানী এবং নাগরিক কণ্ঠ মৃদু স্বরে বলছেন: “বাঙালির অবদানকে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে তুলে ধরার চেষ্টা থাকলেও, জাতীয়তাবাদের স্বর বাদ পড়ে যাচ্ছে।”

  • পাঠ্যবইতে ১৯৪৭-এর পর ভারতীয় রাষ্ট্র নির্মাণে জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ যেমন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির ভূমিকা, অনেক সময় উহ্য রাখা হচ্ছে।

▪️ গবেষণার রাস্তায় অবরোধ

  • যে কোনও গবেষণা যেখানে জাতীয়তা বনাম আঞ্চলিকতা নিয়ে নীতিনির্ধারণের উপযোগী হতে পারে, তা পৃষ্ঠপোষকতা পায় না।

  • ফান্ডিং বা গবেষণা অনুমোদন অনেক সময় নির্ভর করে গবেষক কতটা ‘ঠিক কথা’ বলেন তার ওপর।

 শিক্ষক সমাজের আত্মরক্ষামূলক নীরবতা

▪️ “চাকরি থাকবে তো?” প্রশ্নের পেছনে ভয়

  • বহু শিক্ষকই মনে করেন, জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ প্রকাশ করলে প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া আসবে।

  • তাই, তারা হয় মৌন থাকেন, নয়তো নরমপন্থী ‘নিরপেক্ষতা’র ছায়ায় নিজেদের ঢেকে রাখেন।

▪️ প্রফেসরদের বিরুদ্ধে রাজনীতিকরণ

  • যেই শিক্ষক ‘ভারত মাতার জয়’ বললেন, বা রাষ্ট্রের পক্ষে যুক্তি রাখলেন, তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এসে যায়—মাঝেমধ্যেই হয় সোশ্যাল মিডিয়া ট্রোল, আবার কখনও ছাত্র সংগঠনের ঘেরাও।

 গণমাধ্যম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগসাজশ

▪️ ‘নিউজ হেডলাইন’ বানানোর জন্য ছাত্র আন্দোলন

  • অনেক সংবাদমাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ককে ব্যবহার করে “স্বাধীনতা বনাম ফ্যাসিজম” মিথ তৈরির জন্য।

  • এতে জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ নানাভাবে বিকৃত ও উপহাসের শিকার হয়।

▪️ একতরফা বিশ্লেষণ এবং প্রোপাগান্ডা

  • টকশো বা কলেজ-সেমিনারে ‘বাম বনাম ডান’ যুদ্ধ চিত্রিত হলেও, প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া একপাক্ষিক।

  • যেমন, কেউ যদি সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে, তাহলে বলা হয় সে ‘ক্ষমতাসীনদের এজেন্ট’।

 বিদেশি প্রভাব ও ফান্ডেড আদর্শ

▪️ আন্তর্জাতিক এনজিও-র প্রভাব

  • কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক তহবিল পায় এমন সংস্থার থেকে, যাদের মতাদর্শ বেশিরভাগ সময়েই জাতীয়তাবাদী কণ্ঠর বিপরীতে।

  • এই তহবিলভিত্তিক প্রকল্পগুলো মূলত মানবাধিকার, জাতিসত্ত্বা, জাতি-পরিচয় নিয়ে কাজ করলেও, ভারতীয় জাতীয় ঐক্য বিষয়ে নীরব থাকে।

▪️ গবেষণায় ‘নতুন উপনিবেশবাদ’

  • পশ্চিমা গবেষণার কিছু ধারা বাঙালি ছাত্রদের শেখায়—”তোমার ভাষা, সংস্কৃতি বড় না; গ্লোবাল ভাবো।”

  • এর ফল, বাঙালি ঐক্যবদ্ধতা আর জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ হয়ে পড়ে অপ্রাসঙ্গিক।

 স্বাধীনতা না সুবিধাভোগিতা?

বাংলার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আদৌ কতটা আছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ। যারা জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ তোলে, তাদের স্বাধীনতা রক্ষা হয় না, বরং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়। এই প্রবণতা শুধু চিন্তার গলা টিপে ধরছে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একতরফা, সংকীর্ণ ও বিভাজিত সমাজের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

The Politics of Citizenship: The National Register for Citizens (NRC) in  Assam - The Hindu Centre

Leave a Reply