পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্য রাজ্যে কাজের জন্য অভিবাসন করা শ্রমিকদের জীবন কঠিনতার মুখোমুখি। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৭,৫০০-এর বেশি অভিবাসী পরিবারের মধ্যে ১৫.৯৪% মানুষ বাসস্থানে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন এবং ১৪.০৯% ভাষার কারণে হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।
গবেষণাটি করেছে কলকাতা ভিত্তিক সাবর ইনস্টিটিউট। পুরুবা মেদিনীপুরের পাঁসকুড়া শহরের শহুরে ও গ্রামীণ এলাকায় প্রায় ১০০ জন পাঁসকুড়া বনমালি কলেজের ছাত্ররা জুলাই ২৭ থেকে আগস্ট ১০, ২০২৫ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
গবেষণার প্রধান তথ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ৬২.৮৭% মানুষ উল্লেখ করেছেন যে ভালো চাকরিই তাদের অভিবাসনের মূল কারণ।
Story Highlights:
১৫.৯৪% West Bengal migrant workers বাসস্থানে বৈষম্যের শিকার।
১৪.০৯% ভাষার কারণে হয়রানি।
৬২.৮৭% অভিবাসনের মূল কারণ ভালো চাকরি।
৬০.২৩% ছাত্র অভিবাসনের আগে, উচ্চশিক্ষা ত্যাগের প্রবণতা।
রেমিট্যান্স মূলত খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহার।
২২.৪০ লাখ West Bengal migrant workers অন্য রাজ্যে কাজ করছে।
‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে মাসিক ৫,০০০ টাকা প্রদান।
শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রভাব
গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসন শিক্ষার উপর প্রভাব ফেলেছে। প্রায় ৬০.২৩% রেসপন্ডেন্ট ছিলেন ছাত্র অভিবাসনের আগে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, “এটি নির্দেশ করে যে অভিবাসন পশ্চিমবঙ্গে উচ্চশিক্ষা ত্যাগের একটি বড় কারণ। প্রায় ৫১% রেসপন্ডেন্ট কেবল ক্লাস ১০ এবং ১২ পর্যন্ত শিক্ষিত। অনেকে শিক্ষার পথ ছেড়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্য রাজ্যে গিয়েছেন—এটি স্পষ্ট করে যে অভিবাসন অনেক ক্ষেত্রেই সংকটজনক।”
রেমিট্যান্সের ব্যবহার
অভিবাসীরা পাঠানো অর্থের ব্যবহারেও তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২৫% পরিবার খাদ্যবস্তু কেনার জন্য এবং ১৮% স্বাস্থ্যসেবার জন্য রেমিট্যান্স ব্যবহার করছেন। গবেষকরা বলেন, “এটি দেখায় যে অভিবাসন মূলত মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিলাসবহুল ব্যয় নয়।”
তথ্যের অভাব এবং প্রয়োজনীয়তা
সাবর ইনস্টিটিউটের সাবির আহমেদ বলেন, “মাইগ্রেশন সম্পর্কিত প্রকৃত তথ্য নেই। আমরা যদি সঠিক তথ্য পাই, তবে অভিবাসী শ্রমিকদের সমস্যা চিহ্নিত এবং সমাধান করা সহজ হবে।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বর্তমান পরিস্থিতি
পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানিয়েছে, অন্য রাজ্যে কাজ করা মোট অভিবাসী শ্রমিক প্রায় ২২.৪০ লাখ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অনেক শ্রমিককে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে হয়রানির শিকার হতে দেখা গেছে। কিছু শ্রমিককে আটক করা হয়েছে এবং পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য করা হয়েছে। আবার অনেকে ‘বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া’ হয়েছে।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, “এই অভিবাসী সংকট বাংলা আস্মিতা বা সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পরিচয় নিয়ে রাজনীতিতে তর্ক-উত্তরাধিক্য সৃষ্টি করেছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং আইনি অধিকার সংরক্ষণের প্রয়োজন আজ প্রয়োজনীয়।”
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগ
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঘোষণা করেছে ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্প, যার মাধ্যমে ফিরে আসা অভিবাসী শ্রমিকরা প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা পাবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ২৪,০০০ শ্রমিক পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এসেছেন।
গবেষণায় স্পষ্টভাবে দেখা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের অভিবাসী শ্রমিকরা শুধু চাকরির খোঁজে অন্য রাজ্যে যাচ্ছেন না, বরং তারা বৈষম্য, ভাষার হয়রানি এবং শিক্ষাগত ত্যাগের মতো নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। বাসস্থান ও সামাজিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করতে করতে, তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স মূলত মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যবহার হচ্ছে। এই পরিস্থিতি বোঝার জন্য সঠিক তথ্য এবং নীতি প্রণয়ন অপরিহার্য। সরকারী উদ্যোগ যেমন ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্প কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে, তবে পশ্চিমবঙ্গের অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা, অধিকার এবং সুযোগ নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো