উত্তরাখণ্ডে প্রবল বর্ষণে ধ্বংস নেমে এসেছে দারালি গ্রামে। হঠাৎ মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে শুরু হয় ভয়ানক উত্তরাখণ্ড ফ্ল্যাশ ফ্লাডস, যা গ্রাস করে বহু ঘরবাড়ি, রাস্তা ও জনজীবন। সেনা-জওয়ান সহ বহু পর্যটক নিখোঁজ, মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। নদীর বুকে গড়ে ওঠা ধর্মস্থলও বাদ যায়নি ধ্বংসের তালিকা থেকে। প্রশাসনের টানা উদ্ধারকাজ, মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর নজর—সব মিলিয়ে ভয় ও উদ্বেগের বাতাবরণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নাকি উন্নয়নের বিপর্যয়—এই প্রশ্নেই দুলছে পাহাড়ি রাজ্য। উত্তরের আকাশে ঝুলছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ছায়া।

❖ এক ভয়াল দুপুরের শুরু

২০২৫ সালের ৫ই আগস্ট, মঙ্গলবার দুপুরের পরে, হঠাৎই উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার দারালি গ্রামের আকাশ যেন ফেটে পড়ল। মেঘভাঙা বৃষ্টি শুরু হতেই কহির গঙ্গা নদী যেন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। কাঁপিয়ে দেয় গোটা অঞ্চল। পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা ঘরবাড়ি, হোটেল, রাস্তা—সবই মুহূর্তে গড়িয়ে যায় বিশাল স্রোতে। এলাকার মানুষ জনমনে আতঙ্কের ছায়া। স্থানীয় বাসিন্দাদের মোবাইল ফোনে তোলা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে জলস্রোত গ্রাস করছে মানুষ, গৃহ, গাছ, এমনকি পাথরকেও।

❖ সরকার ও প্রশাসনের তাৎক্ষণিক তৎপরতা

বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী সরাসরি জরুরি ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ তদারকি করতে পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে। সেনাবাহিনী, আইটিবিপি, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় এক উচ্চমাত্রার উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ১৩০ জনকে নিরাপদ স্থানে সরানো সম্ভব হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়,
“আমরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছি। রাস্তা, সেতু সবকিছু ভেঙে পড়েছে। তা সত্ত্বেও আমাদের দল জীবন বাজি রেখে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।”

❖ নিখোঁজ সেনা ও পর্যটক দল

এই দুঃসময়ে নিখোঁজ হয়ে গেছেন সেনাবাহিনীর ১১ জন জওয়ান। পাশাপাশি, কেরালার ২৮ জনের একটি পর্যটক দল যাঁদের অনেকে মহারাষ্ট্রে বসবাস করেন, তাঁদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা গঙ্গোত্রী যাওয়ার পথে দারালি অতিক্রম করছিলেন সেই সময়ই। এক আত্মীয় বলেন,
“সকাল ৮.৩০ নাগাদ তাঁরা রওনা হয়েছিলেন, তারপর থেকেই আমরা যোগাযোগ করতে পারিনি।”

❖ দ্বিতীয় মেঘভাঙা, পরিস্থিতি আরও জটিল

একই দিনে আরও একটি মেঘভাঙা বৃষ্টি হয় সুখি টপ এলাকায়। যদিও সেখানে প্রাণহানির খবর নেই, কিন্তু নদীর জলস্তর আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ভ্রমণপথে পাথর গড়িয়ে পড়ার কারণে বহু পথ যাত্রীও আটকে পড়েন।

❖ রেলপথ বন্ধ, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা

হরিদ্বার-মোতিচূরের মাঝে রেল লাইনে পাথর এসে পড়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ এবং টেলিফোন যোগাযোগও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। মুখ্যমন্ত্রী জানান,
“বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধার আমাদের অগ্রাধিকার। ইন্টারনেট, ফোন পরিষেবা চালু করতেও চেষ্টা চলছে।”

❖ ধর্মীয় স্থানের ধ্বংস

একটি প্রাচীন শিবমন্দির—‘কাল্প কেদার’—ও চাপা পড়ে যায় কাদা ও ধ্বংসাবশেষে। দীর্ঘকাল ধরে ভূমির নিচে চাপা পড়ে থাকা এই মন্দিরের স্থাপত্য কেদারনাথ ধামের মতোই।

❖ প্রশাসনের পর্যালোচনা ও প্রধানমন্ত্রীর বার্তা

দারালির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুখ্যমন্ত্রী ধামীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন এবং সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেন।
“যতদূর সম্ভব সাহায্য করা হবে, কোনও প্রচেষ্টা বাকি থাকবে না,” বলেন তিনি।

❖ পরিবেশবাদীদের তোপ

পরিবেশবিদ হরজিত সিং বলেন,
“এই দুর্যোগ প্রাকৃতিক নয়, মানুষের তৈরি। অবৈজ্ঞানিক নির্মাণ, নদীকে রুদ্ধ করা এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নই আমাদের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ধ্বংস করেছে।”

❖ রাজনৈতিক বার্তা ও সংবেদনশীলতা

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও বিরোধী দলনেতা অখিলেশ যাদব দুইই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
“এই ধ্বংস প্রকৃতির অবমাননার ফল,” মন্তব্য করেন অখিলেশ।

❖ উদ্ধার ও ভবিষ্যৎ সতর্কতা

এনডিআরএফের ডিআইজি মোহসেন শাহেদি বলেন,
“৪০-৫০টি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, ৫০ জনের বেশি নিখোঁজ। বিশাল উদ্ধার কাজ দরকার।”

ভারী বৃষ্টির সতর্কতা এখনও জারি রয়েছে। গঙ্গার জলস্তর হরিদ্বারে বিপদসীমার কাছাকাছি। স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে চাম্পাওয়াত, পাউরি এবং উদ্যম সিং নগর জেলায়।

🔍 কী বার্তা দিচ্ছে উত্তরাখণ্ড ফ্ল্যাশ ফ্লাডস?

২০১৩-র কেদারনাথ দুর্যোগের মতোই আবারও একটি বড় দুঃস্বপ্নের মুখে দাঁড়িয়ে উত্তরাখণ্ড। প্রকৃতির সঙ্গে অসংলগ্ন লড়াই কি আমাদের আরও বিপদে ফেলছে? উত্তরের পাহাড়ি রাজ্য যেন সতর্ক করে দিচ্ছে গোটা দেশের উন্নয়ন নীতিকে—যেখানে পরিকল্পনা হোক প্রকৃতি ও মানবতার সহাবস্থানে।

উত্তরাখণ্ড ফ্ল্যাশ ফ্লাডস আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে মানুষ কতটা অসহায়। পাহাড়ি অঞ্চলের অব্যবস্থাপনা ও অপরিকল্পিত নির্মাণ প্রকৃতির রোষ ডেকে আনছে বারবার। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির নেতৃত্বে উদ্ধার তৎপরতা জোরদার হলেও, এই বিপর্যয় ভাবিয়ে তুলেছে গোটা দেশকে। শুধুমাত্র তৎকালীন পদক্ষেপ নয়, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়নই পারে ভবিষ্যতের ‘উত্তরাখণ্ড ফ্ল্যাশ ফ্লাডস’-এর আশঙ্কা কমাতে। সময় এসেছে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই নয়, সহাবস্থানের পথ খুঁজে নেওয়ার।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply