জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মনিটরিং রিপোর্টে প্রথমবারের মতো ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF)-এর নাম উঠে এসেছে পহেলগাম হামলার প্রসঙ্গে, যেখানে নিহত হন ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক। TRF-কে পাকিস্তানভিত্তিক কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার (LeT)-এর সহযোগী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাকিস্তানের আপত্তি সত্ত্বেও রিপোর্টে TRF-এর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা ভারতের পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। চীনও এবার প্রতিবাদ জানায়নি। হামলার জবাবে ভারত চালায় ‘অপারেশন সিন্দুর’। রিপোর্টে উঠে এসেছে জঙ্গিদের নতুন মুখোশ ও কৌশলের নেপথ্যের চিত্র।

পাহাড়ি সৌন্দর্য ও পর্যটনের এক চিরচেনা চেহারার পহেলগাম, যা প্রকৃতির শান্তির প্রতীক, এবছরের ২২ এপ্রিল রক্তাক্ত হয়ে ওঠে। পাঁচ সশস্ত্র জঙ্গি হঠাৎই আক্রমণ করে বসে নিরীহ মানুষদের ওপর। প্রাণ হারান ২৬ জন নিরপরাধ বেসামরিক মানুষ। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে এই নারকীয় ঘটনার পিছনে যে অন্ধকার শিকড় রয়েছে, তা প্রকাশ্যে উঠে এসেছে।

এই রিপোর্টে উঠে এসেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF)-এর নাম, যারা পাকিস্তানভিত্তিক কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার (LeT) ছত্রছায়ায় পরিচালিত একটি ছদ্মবেশী ফ্রন্ট। এ যেন এক মুখোশ খুলে যাওয়া — আন্তর্জাতিক স্তরে প্রথমবার জাতিসংঘের কোনো নথিতে TRF-এর সরাসরি উল্লেখ ভারতীয় কূটনীতির নিরব জয়ের দিকেই ইঙ্গিত করে।

📌 STORY HIGHLIGHTS

* জাতিসংঘ রিপোর্টে পহেলগাম হামলার সঙ্গে TRF-এর সরাসরি যোগ

* TRF-এর সঙ্গে LeT-এর সম্পর্কের দাবি ভারত ও আমেরিকার

* পাকিস্তান রিপোর্ট থেকে TRF-এর নাম মুছতে ব্যর্থ

* চীন TRF/LeT-এর নাম বাধা দেয়নি, যা নজরকাড়া

* রিপোর্টে পাকিস্তানের ‘প্লসিবল ডিনায়ালিটি’ নীতি খণ্ডন

* ভারত TRF-এর বিরুদ্ধে UNOCT এবং CTED-কে তথ্য দেয়

* হামলার জবাবে ভারত চালায় অপারেশন সিন্দুর

রিপোর্টে বলা হয়েছে,

“২২ এপ্রিল, পাঁচ জঙ্গি পহেলগামে একটি পর্যটন কেন্দ্রে হামলা চালায়। ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ওই দিনই TRF এই হামলার দায় স্বীকার করে এবং হামলার স্থান থেকে তোলা একটি ছবি প্রকাশ করে।”

TRF-এর এই দায় স্বীকারের বিষয়টি পরের দিন পুনর্ব্যক্ত হলেও, ২৬ এপ্রিল তারা হঠাৎ করেই তাদের দাবি প্রত্যাহার করে নেয়। তারপর থেকেই TRF-সহ কোনো সংগঠন হামলার দায় নেয়নি। এটি যে সংগঠিত ও পরিকল্পিত অপারেশন ছিল, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ খুব কম।

রিপোর্ট আরও জানায়,

“এক সদস্য রাষ্ট্রের মতে, এই হামলা LeT-এর সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। TRF ও LeT-এর মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে বলে তাদের মত।”

অন্য এক সদস্য রাষ্ট্র জানায়,

“এই হামলা TRF দ্বারা পরিচালিত হয়েছে, এবং TRF মূলত LeT-এরই আরেক রূপ।”

এই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে একটি যে ভারত, তা সহজেই অনুমেয়। সূত্রমতে, অপরটি হলো যুক্তরাষ্ট্র — যারা ইতিমধ্যেই TRF-কে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

তবে রিপোর্টে এমন কথাও উঠে এসেছে যা পাকিস্তানের অবস্থানকে কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়।

একটি সদস্য রাষ্ট্র এই অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে বলে যে LeT বর্তমানে নিষ্ক্রিয়।”

এই রাষ্ট্র যে পাকিস্তান, তা নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই। যদিও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। LeT এখনও পাকিস্তানের একাধিক শহরে নিচু স্তরে সক্রিয় থেকে সংগঠন চালিয়ে যাচ্ছে — অর্থ সংগ্রহ, সদস্য নিয়োগ এবং অন্যান্য কার্যকলাপ অব্যাহত রয়েছে, যদিও সরকারিভাবে তারা নিষিদ্ধ।

রিপোর্টটি জাতিসংঘের ১২৬৭ স্যাংশনস কমিটির মনিটরিং টিম প্রকাশ করেছে, যারা আল-কায়েদা, ইসলামিক স্টেট ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর ওপর নজরদারি চালায়। LeT ও JeM-এর মতো সংগঠনকেও এই তালিকার আওতায় রাখা হয়েছে ১৯৯০-এর দশকে আল-কায়েদার সঙ্গে তাদের যোগাযোগের ভিত্তিতে।

এই রিপোর্টের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, পাকিস্তানের সমস্ত চেষ্টা সত্ত্বেও TRF-এর উল্লেখ ঠেকানো যায়নি। এপ্রিল মাসে যখন নিরাপত্তা পরিষদের প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল, তখন পাকিস্তান TRF ও পহেলগামের নাম রাখার বিরোধিতা করেছিল।

কিন্তু এবার সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। কারণ মনিটরিং রিপোর্ট গৃহীত হয় নিরাপত্তা পরিষদের সম্মতিতে। এক উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছেন,

“পাকিস্তান এখানে TRF-এর নাম বাদ দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে। এটা ভারতের পক্ষে এক বড় সাফল্য।”

আরেকটি চমকপ্রদ দিক হলো, অতীতে পাকিস্তানের পক্ষে বারবার দাঁড়ানো চীন এবার কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। JeM প্রধান মাসুদ আজহারের তালিকাভুক্তি আটকে দিতে যিনি এক দশক ধরে “টেকনিক্যাল হোল্ড”-এর আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই চীন TRF বা LeT-এর নাম অন্তর্ভুক্তিতে কোনও আপত্তি তোলেনি।

রিপোর্টে TRF-এর মতো আধুনিক নামধারী সংগঠন ব্যবহার করে পাকিস্তান যে ‘প্লসিবল ডিনায়ালিটি’-র কৌশল নিয়েছিল, সেটি এবার ভেঙে পড়েছে। ভারতীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের মতে,

“TRF ও People Against Fascist Front-এর মতো নাম দিয়ে LeT বা JeM-এর আসল পরিচয় আড়াল করার চেষ্টা হয়েছিল, যাতে এগুলোকে স্থানীয় প্রতিবাদের মুখোশে উপস্থাপন করা যায়। জাতিসংঘের রিপোর্ট সেই কৌশলকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।”

এই রিপোর্ট প্রকাশের আগে ভারত গত মে ও নভেম্বর মাসে মনিটরিং টিমের কাছে TRF-এর কার্যকলাপ ও LeT-এর সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জমা দেয়। এমনকি, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরেও ভারত TRF, LeT এবং JeM-এর কাশ্মীরে সক্রিয়তা নিয়ে জাতিসংঘকে তথ্য সরবরাহ করেছিল।

হামলার জবাবে ৭ মে ভারত “অপারেশন সিন্দুর” নামক সামরিক অভিযানে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলিতে আঘাত হানে। এরপর চার দিন ধরে দুই দেশ পাল্টাপাল্টি হামলা চালায় — ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং দীর্ঘ-পাল্লার অস্ত্র ব্যবহারে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সীমান্ত। অবশেষে ১০ মে এক অঘোষিত বোঝাপড়ায় সামরিক কার্যকলাপ বন্ধ হয়।

এই জাতিসংঘ রিপোর্ট শুধু একটি সংগঠনের নামমাত্র উল্লেখ নয় — বরং এটি সেই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দেয়, যে পাকিস্তানের ভূখণ্ড থেকে এখনও সক্রিয়ভাবে সন্ত্রাস ছড়ানো হচ্ছে, এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে সেই সত্য স্বীকৃত হতে শুরু করেছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মনিটরিং রিপোর্টে TRF-এর সরাসরি উল্লেখ এবং LeT-এর সঙ্গে যোগসূত্রের ইঙ্গিত শুধু একটি ঘটনার তদন্ত নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সন্ত্রাসের ছদ্মবেশী কৌশলকে আন্তর্জাতিকভাবে উন্মোচিত করার এক বড় পদক্ষেপ। পাকিস্তানের বারবার অস্বীকার এবং পরিচিত কৌশল এবার ভেস্তে গেছে এক বিশ্বমঞ্চে। এই রিপোর্ট যেমন ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সাফল্য, তেমনই এটি গোটা বিশ্বের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা—সন্ত্রাস যতই মুখোশ বদলাক, তার আসল রূপ ধরা পড়বেই। পহেলগাম হামলা তাই এখন শুধু একটি ঘটনা নয়, বরং এক আন্তর্জাতিক সত্যের প্রতিফলন।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply