টলিউডে কাজের পরিবেশ নিয়ে চলতে থাকা টানাপোড়েনের মাঝেই শিল্পীসত্ত্বার স্বাধীনতায় জোরালো আওয়াজ তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যের অভিযোগ ঘিরে আদালত জানিয়ে দিল—কারও জীবিকা বন্ধ করা চলে না, কাজের পথে বাধা দেওয়া আইনবিরুদ্ধ। পরিচালক ও টেকনিশিয়ানদের সংগঠনের পুরনো বিবাদ ফের আইনের কাঠগড়ায়। বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশে ইঙ্গিত—চলচ্চিত্রজগতে সৃজনশীলতার জগৎ যেন না থামে কোনও প্রভাবের চাপে। রাজ্যকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলেছে আদালত। ফলে, ফের আলোচনায় টলিউডের কাজের স্বাধীনতা ও শিল্পীদের নিরাপত্তা।
📌 স্টোরি হাইলাইটস (Story Highlights)
“শিল্পীদের জীবিকার পথে বাধা দেওয়া যাবে না”—রায় বিচারপতি অমৃতা সিনহার
কাজ থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তোলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য
পরিচালকদের সঙ্গে ফেডারেশনের পুরনো বিবাদের ফলেই বাড়ছে জটিলতা
আদালতের মতে, কোনও দ্বন্দ্ব হলে পুলিশের শরণ নেওয়া উচিত
আগের নির্দেশ মানা না হওয়ায় ফের আদালতের দ্বারস্থ অভিনেতারা
রাজ্যকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে নির্দেশ আদালতের
কাজের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কড়া আইনি বার্তা
টলিউডে কাজের পরিবেশ ঘিরে একাধিকবার বিতর্ক ও সংঘাতের সাক্ষী থেকেছে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। বহু পরিচালক, কলাকুশলী ও অভিনেতার দাবি, চিত্রনাট্যের বাইরে আরও একটি অদৃশ্য নাটক চলছে পর্দার আড়ালে—যেখানে বাধা পাচ্ছে সৃজনশীলতার স্বাধীনতা, আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিল্পীরা। ঠিক সেই প্রেক্ষাপটে, সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন—টলিউডে কোনও শিল্পী বা কর্মীকে কাজ করতে বাধা দেওয়া চলবে না। কেউ কোনও ব্যক্তির পেশাগত জীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। যদি কোনও সমস্যা বা দ্বন্দ্ব থাকে, তার জন্য আইনত পথ খোলা রয়েছে, স্থানীয় থানার দ্বারস্থ হওয়া উচিত। আদালতের কথায়, “রাজ্য নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারে না।”
এই নির্দেশ আসে এমন এক সময়ে, যখন জনপ্রিয় অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্য আদালতে অভিযোগ জানান, তাঁদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজ থেকে দূরে রাখা হচ্ছে। এই অভিযোগের পেছনে রয়েছে বহুদিন ধরে চলে আসা টলিউডের পরিচালকদের সঙ্গে ইস্টার্ন ইন্ডিয়া ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স-এর টানাপোড়েন।
আদালতের সামনে, আইনজীবী আবহরতোষ মজুমদার বলেন, আগেও আদালত নির্দেশ দিলেও, এখনও কাজের পরিবেশে হস্তক্ষেপ চলছে। শ্যুটিং বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, কিছু শিল্পীকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে। তিনি আদালতের কাছে আর্জি জানান, যেন ফেডারেশনকে কোনও শিল্পীর কাজের মধ্যে হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করা হয়।
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “কারও জীবিকার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা যায় না। কেউ কাজ করতে চাইলে তাঁকে আটকানো যাবে না। আইনের শাসনের বাইরে গিয়ে ফেডারেশন কিংবা অন্য কোনও সংগঠন এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে না।”
এই রায়কে ঘিরে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন অনেক কলাকুশলী। তবে এর পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, বারবার হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও কেন বারংবার এই ধরনের ঘটনা ঘটছে? এই রায়ে হয়তো তাৎক্ষণিক স্বস্তি মিলবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ইন্ডাস্ট্রির কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া সমাধান মিলবে কি?
টলিউডে কাজের পরিবেশ ও শিল্পীদের স্বাধীনতা নিয়ে চলতে থাকা জটিল পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশ এক নতুন দিশা দেখাল। আদালতের সাফ বার্তা—কোনওভাবেই শিল্পীদের জীবিকার পথে বাধা দেওয়া যাবে না। এই রায় শুধু একটি মামলার নিষ্পত্তি নয়, বরং গোটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পেশাগত স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতার পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এখন দেখার, বাস্তবে কতটা কার্যকর হয় এই নির্দেশ এবং রাজ্য প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলি কতটা দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করে শিল্পীদের অধিকার রক্ষায়।