শিক্ষক মানে শুধু পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান দেওয়া নয়, বরং জীবনের পথচলার দিশা দেখানো। Teachers’ Day-এর দিনে কলকাতার শিল্পী, সংগীতশিল্পী ও কনটেন্ট নির্মাতারা ফিরে গেলেন তাঁদের অতীতের সেই শিক্ষক-গুরুজনদের কাছে, যাঁরা তাঁদের যাত্রাপথকে নতুন দিশা দেখিয়েছিলেন। শৃঙ্খলা, মূল্যবোধ, আত্মবিশ্বাস কিংবা সৃজনশীলতার বীজ—সবকিছুর পেছনেই রয়েছে শিক্ষকদের ছোঁয়া।
সূচিপত্র
Toggle📌 Story Highlights
Teachers’ Day উপলক্ষে অভিনেতা, সংগীতশিল্পী ও নির্মাতাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
জীবনের পথে শিক্ষকদের শিক্ষা ও প্রভাব
আত্মবিশ্বাস, কৌতূহল, শিল্পের প্রতি আত্মসমর্পণ—সবকিছুই শিক্ষকদের দান
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আজীবন সম্পর্ক ও বিশ্বাসের উদযাপন
‘শিক্ষকরা শুধু পড়ান না, তাঁরা মানুষ গড়ে তোলেন’
অভিনেতা গৌরব চট্টোপাধ্যায় তাঁর স্মৃতিচারণায় জানান,
“সেন্ট পলস স্কুল, দার্জিলিং-এ আমাদের শিক্ষকরা ছিলেন অভিভাবকের মতো। তাঁরা শুধু পড়াতেন না, জীবনবোধ শেখাতেন। একবার রেভারেন্ড ডেভিড হাওয়ার্ড আমাকে শাস্তি দেওয়ার পর পরে ডেকে ক্ষমা চান এবং বোঝান যে তিনি আগে থেকেই বিরক্ত ছিলেন। ওই মুহূর্তে বুঝলাম, শিক্ষকরা শুধু শিক্ষাদান করেন না, তাঁরা মানুষ হিসেবেও গড়ে তোলেন।”
এই অভিজ্ঞতা তাঁকে উপলব্ধি করিয়েছে যে শিক্ষকদের ছোট ছোট আচরণও ছাত্রদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।
‘আমরা তাঁকে অভিভাবক মনে করতাম’
সংগীতজুটি সৌরেন্দ্র মল্লিক ও সৌম্যজিৎ দাস তাঁদের কেরিয়ারের প্রথম বড় মোড়ের কথা স্মরণ করলেন।
“২০০৫ সালে জার্মানিতে প্রথম ট্যুরের আমন্ত্রণ পাই, তখনও আমরা কলেজের শেষ বর্ষে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার তারিখ মিলে যায় সেই ট্যুরের সঙ্গে। সবাই নিরুৎসাহিত করেছিল। তখন আমরা ফাদার ম্যাথিউসের কাছে যাই (সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ)। তিনি আমাদের অভিভাবকই ছিলেন। অবাক করে দিয়ে তিনি বললেন, ‘সৌম্য, আমি তোমাকে একজন শিল্পী হিসেবে দেখি। তোমার সমাজসেবা হবে সংগীত। সুযোগ হাতছাড়া করো না। পরীক্ষা আবার হবে।’ বুঝলাম, আমাদের কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল সেটাই।”
আজ তাঁদের আন্তর্জাতিক পরিচিতি সেই শিক্ষকের দূরদর্শী পরামর্শের ফলেই।
‘শুধু বাজানো নয়, জীবনও শিখেছি’
যুব সংগীতশিল্পী বোধিসত্ত্ব ঘোষ তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন এই Teachers’ Day-এ।
“আমি দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে অমিতদা (অমিত দত্ত) থেকে সংগীত শিখেছি। ওঁর দৃষ্টিভঙ্গি আমার জীবনকে বদলে দিয়েছে। তিনি আমাকে শিখিয়েছেন স্থিতধী থাকা, শৃঙ্খলা আর দৃষ্টিভঙ্গি। তাঁর থেকে শুধু বাজানো নয়, জীবনও শিখেছি। আমার বিশ্বদৃষ্টিকে তিনি এমনভাবে গড়েছেন, যা আজও আমার সংগীত ও জীবনকে পরিচালিত করে।”
সংগীতের বাইরে জীবনের দর্শনও কিভাবে একজন শিক্ষক ছাত্রকে দিতে পারেন, এই অভিজ্ঞতাই তার প্রমাণ।
‘আমার মধ্যে কৌতূহল আর সচেতনতার অভ্যাস গড়ে তুলেছিলেন’
কনটেন্ট নির্মাতা প্রিয়ম ঘোষ তাঁর স্কুল জীবনের স্মৃতি ভাগ করে নেন।
“সেন্ট অগাস্টিনস ডে স্কুলের দুজন শিক্ষক আমার জীবন পাল্টে দেন। জেসন হার্ডি স্যার অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিলেন। সেই সাহসই আমাকে পারফর্ম করতে শিখিয়েছে, যা পরে স্ট্যান্ড-আপ কমেডি ও কনটেন্ট ক্রিয়েশনে পৌঁছে দেয়। নিল ফ্রেঞ্চ স্যার আমাকে সংবাদপত্র পড়তে দেখে ক্লাস ৫-এ কুইজিং শুরু করতে উৎসাহিত করেছিলেন। তাঁর সেশন আমার মধ্যে আজীবন কৌতূহল আর সচেতনতার অভ্যাস গড়ে তোলে।”
আজ তাঁর ডিজিটাল যাত্রাপথের ভিত্তি সেই শিক্ষকদের শিক্ষা।
‘শিল্পের প্রকৃতিকে আত্মসমর্পণেই খুঁজে পেয়েছি’
তবলা শিল্পী তন্ময় বসু তাঁর গুরু সম্পর্কে আবেগ প্রকাশ করলেন।
“আমার গুরু পণ্ডিত শঙ্কর ঘোষ শুধু শিক্ষক নন, তিনি ছিলেন পিতৃতুল্য। তাঁর দর্শন আর ব্যক্তিত্ব গভীরভাবে আমাকে প্রভাবিত করেছে। তিনি বুঝিয়েছিলেন, প্রকৃত শিল্প আত্মসমর্পণ ও নিঃস্বার্থ নিবেদনে নিহিত। তাঁর দিশা না পেলে হয়তো কখনো শাস্ত্রীয় সংগীতের পথে হাঁটতাম না। তাঁর শিক্ষা আজও আমাকে অনুপ্রাণিত করে, যেন শিল্প থেকে নেওয়ার চেয়ে শিল্পকে বেশি দিতে পারি।”
এই Teachers’ Day-এ তাঁর স্মৃতিই প্রমাণ করে কিভাবে একজন গুরু শিল্পের প্রতি নিবেদনের আসল অর্থ শেখান।
‘বিশ্বাস ও দিশার সম্পর্ক’
অভিনেত্রী অঙ্গনা রায় তাঁর স্কুল জীবনের বিশেষ মুহূর্ত স্মরণ করলেন।
“সাউথ পয়েন্টে পড়ার সময় আমার ভূগোল শিক্ষিকা বন্ধুর মতো ছিলেন। আমার সমস্যাগুলি শুনে পরামর্শ দিতেন, যা আজও মনে আছে। একবার শিক্ষক দিবসে তিনি আমাকে Tuesdays with Morrie উপহার দেন। আজও সেটি আমার জীবনের অন্যতম মূল্যবান উপহার। আমার কাছে Teachers’ Day মানে এই বিশ্বাস আর দিশার সম্পর্ক উদযাপন।”
তাঁর মতে, শিক্ষকের উপহার মানে শুধু বই নয়, বরং আজীবনের সঙ্গী হয়ে থাকা এক অমূল্য শিক্ষা।
Teachers’ Day-এর এই স্মৃতিচারণ প্রমাণ করে যে শিক্ষকরা শুধু পাঠ্যপুস্তক পড়ান না, তাঁরা জীবনের পথে অনুপ্রেরণা, দিশা এবং আত্মবিশ্বাস জোগান। তাঁদের ছোট্ট পরামর্শ বা আচরণও ছাত্রের ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে পারে। এই সম্পর্কই Teachers’ Day-কে বারবার স্মরণীয় করে তোলে।Teachers’ Day আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শিক্ষকরা শুধু বইয়ের জ্ঞান দেন না, বরং জীবনের প্রতিটি মোড়ে আলো দেখান। অভিনেতা থেকে সংগীতশিল্পী, কনটেন্ট নির্মাতা থেকে শিল্পী—সবার জীবনে তাঁদের শিক্ষকদের ছোঁয়া রয়েছে। আত্মবিশ্বাস, শৃঙ্খলা, কৌতূহল, সৃজনশীলতা এবং আত্মসমর্পণের শিক্ষা তাঁরা দিয়ে গেছেন, যা প্রতিটি মানুষের পথচলায় আজও দিশা দেখায়। তাই Teachers’ Day শুধু শ্রদ্ধা নিবেদনের দিন নয়, বরং সেই অমূল্য সম্পর্কের উদযাপন, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বন্ধন সারাজীবন অটুট থাকে।