পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষা জগতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিশ্চয়তার পর অবশেষে এসেছে বড়ো স্বস্তির খবর। সোমবার (৬ অক্টোবর, ২০২৫) ভারতের Supreme Court রাজ্যের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন Vice-Chancellors নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ—এখন আর কোনো আইনগত বা প্রশাসনিক বাধা নেই এই নিয়োগ কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে।
READ BOX | STORY HIGHLIGHTS
- Supreme Court-এর নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ সম্ভব
- প্রাক্তন Chief Justice of India U.U. Lalit–এর নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশে রাজ্য ও রাজ্যপালের ঐকমত্য
- Governor C.V. Ananda Bose ও রাজ্য সরকার উভয়ই রিপোর্টে স্বাক্ষর করেছেন
- মতবিরোধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিয়োগ চেম্বারে হবে
- রাজ্য সরকারের দাখিল করা পিটিশনের ভিত্তিতেই আদালতের শুনানি
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে বিচারপতি সুর্যকান্ত ও জয়মাল্য বাগচী জানিয়েছেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়, সাধু রাম চাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয় (ঝাড়গ্রাম), গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, Kazi Nazrul University, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে Vice-Chancellors নিয়োগের ক্ষেত্রে এখন আর কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।
বিচারপতিদ্বয় মন্তব্য করেন, “যেহেতু Governor C.V. Ananda Bose এবং রাজ্য সরকার দু’পক্ষই প্রাক্তন Chief Justice of India U.U. Lalit–এর নেতৃত্বাধীন search-cum-selection committee–র সুপারিশ মেনে নিয়েছেন, তাই এই আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে কোনো বাধা নেই।”
তবে আদালত স্পষ্ট করে দেয়, যেখানে এখনো মতানৈক্য রয়ে গেছে, যেমন কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রার্থীর নাম নিয়ে রাজ্য ও রাজ্যপালের মধ্যে মতবিরোধ আছে, সেগুলি chamber proceedings–এ আলাদাভাবে বিবেচিত হবে।
রাজ্য সরকারের পক্ষে বক্তব্য
এই মামলায় রাজ্য সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়দীপ গুপ্ত। তিনি আদালতকে জানান, “কমিটির সুপারিশের প্রায় সবকটি নামই রাজ্য মেনে নিয়েছে। কেবলমাত্র কয়েকটি প্রস্তাবে সামান্য আপত্তি রয়েছে।”
তবে বিচারপতি সুর্যকান্ত সরাসরি বলেন,
“যেহেতু Governor C.V. Ananda Bose ইতিমধ্যেই Chief Justice of India U.U. Lalit কমিটির রিপোর্টে সই করেছেন, রাজ্য সরকারেরও উচিত সেই মতামত অনুসরণ করা। এতে কোনো দেরি না করে নিয়োগ সম্পন্ন হওয়া উচিত।”
এর উত্তরে অ্যাডভোকেট গুপ্ত বলেন,
“আমরা এই বিতর্ককে বাড়াতে চাই না। যেখানে এক-দু’টি নাম নিয়ে সংশয় রয়েছে, সেগুলিতে মহামান্য আদালত সিদ্ধান্ত নিক। রাজ্যের উদ্দেশ্য শিক্ষাক্ষেত্রে স্থিতি ফিরিয়ে আনা।”
বিচারপতি সুর্যকান্ত আরও যোগ করেন,
“আমরা ব্যক্তিগত প্রার্থীর নাম নিয়ে খোলা আদালতে আলোচনা করতে চাই না। এই আলোচনাগুলি চেম্বারে হওয়াই যুক্তিযুক্ত। আপাতত যেগুলিতে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলি নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক।”
প্রেক্ষাপট: উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েন
এই মামলা শুরু হয়েছিল রাজ্য সরকারের দাখিল করা একটি পিটিশনের মাধ্যমে, যেখানে অভিযোগ করা হয়, Governor C.V. Ananda Bose তাঁর আচার্য পদে থেকে ৩৬টি রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের ফাইল ঝুলিয়ে রেখেছেন।
Chief Justice of India U.U. Lalit–এর নেতৃত্বে গঠিত স্বাধীন search-cum-selection committee–র হস্তক্ষেপে ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ অনুমোদিত হয়। তবে বাকি ১৭টি ক্ষেত্রে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়–এর প্রথম পছন্দের প্রার্থীদের অনুমোদন দিতে অস্বীকার করেন।
এই কমিটিতে ছিলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা। তারা প্রতিটি প্রার্থীর যোগ্যতা বিচার করে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেন। ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টির জন্য তারা সর্বসম্মত সুপারিশ দেন। বাকি তিনটির ক্ষেত্রে প্রথম তিন প্রার্থীর ক্রম নিয়ে কিছু মতভেদ ছিল।
আগস্ট ১ তারিখের আদেশে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, Chief Justice of India U.U. Lalit এবং তাঁর কমিটি মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ক্রম অনুসরণে বাধ্য নন, বরং আচার্যের পর্যবেক্ষণ ও মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশের কারণ বিবেচনা করে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেবেন।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক তাৎপর্য
এই সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার জন্য বড়ো দিকনির্দেশক বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য সরকার ও Governor C.V. Ananda Bose–এর মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বন্দ্ব চলছে—বিশেষত উপাচার্য নিয়োগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়ে।
গত বছরও রাজ্য সরকার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল আটটি বিল রাজ্যপালের দপ্তরে আটকে থাকার অভিযোগে। এর মধ্যে কয়েকটি বিল ২০২২ সাল থেকেই অনুমোদনের অপেক্ষায়।
শিক্ষাক্ষেত্রে স্থিতি ফেরাতে আদালতের এই নির্দেশ নতুন অধ্যায় খুলে দিল বলেই মনে করছেন শিক্ষাবিদেরা। তাদের মতে,
“উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এই রায় একটি ইতিবাচক মোড় এনে দিল। রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিকতা ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।”
সর্বশেষে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এখন যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে Governor C.V. Ananda Bose ও রাজ্য সরকার একমত, সেগুলিতে দ্রুত Vice-Chancellors নিয়োগ হবে। আর যেখানে মতবিরোধ রয়ে গেছে, সেগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত নিজে—চেম্বার আলোচনার মাধ্যমে।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষা প্রশাসনে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বহু মাস ধরে রাজ্য সরকার ও Governor C.V. Ananda Bose–এর মধ্যে চলা টানাপোড়েনের অবসান ঘটিয়ে আদালত পরিষ্কার করে দিয়েছে—আইন ও সংবিধানের কাঠামোর মধ্যেই সমাধান সম্ভব। প্রাক্তন Chief Justice of India U.U. Lalit–এর নেতৃত্বে গঠিত search-cum-selection committee–র সুপারিশ মেনে Vice-Chancellors নিয়োগের অনুমোদন রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে পুনরায় স্থিতি ফিরিয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই রায় কেবল প্রশাসনিক জট খুলল না, বরং ভবিষ্যতে রাজ্য ও রাজ্যপালের মধ্যে সহযোগিতার নতুন দিশা দেখাতে পারে। শিক্ষাবিদদের মতে, আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার হবে—যা পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো