ভারতে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু: ইন্টারনেট দুনিয়ায় নতুন উড়ান
ভারতের স্যাটেলাইট যোগাযোগ পরিসরে এবার পা রাখল এলন মাস্কের স্টারলিংক, যা বিশ্বজুড়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ছড়াতে পরিচিত। সরকার সম্প্রতি স্টারলিংককে GMPCS লাইসেন্স মঞ্জুর করেছে, যা সেবার পথে এক বড় পদক্ষেপ। রিলায়েন্স জিও ও ভারতীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ এই সংস্থা এবার ভারতের আকাশে ইন্টারনেটের নতুন মানচিত্র আঁকতে চলেছে। অপেক্ষা শুধু IN-SPACe ও স্পেকট্রাম অনুমোদনের। অরণ্য থেকে অরণ্যের পার — এবার ইন্টারনেট পৌঁছবে সবখানে। তবে কত খরচ? কতটা লাভজনক? সেই উত্তরের জন্য চোখ রাখতে হবে সামনের খবরে।
স্টোরি হাইলাইটস:
স্টারলিংক পেয়েছে ভারতের স্যাটেলাইট যোগাযোগের লাইসেন্স
এটি DoT-এর তৃতীয় লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানি, ওয়ানওয়েব ও রিলায়েন্স জিওয়ের পরে
১৫-২০ দিনের মধ্যে ট্রায়াল স্পেকট্রাম বরাদ্দ পাবে স্টারলিংক
IN-SPACe থেকে অনুমোদন ও সরকার থেকে স্পেকট্রাম বরাদ্দ প্রয়োজন সেবার জন্য
রিলায়েন্স জিও ও ভারতীর সঙ্গে স্টারলিংকের অংশীদারিত্ব স্থাপিত
মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি হতে পারে ৩,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা
স্টারলিংক কিটের দাম প্রায় ২০,০০০ থেকে ৩৫,০০০ টাকা
প্রাথমিক প্রমোশনাল অফারে আনলিমিটেড ডেটা $১০-এর নিচে আসতে পারে
আধুনিক যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম ইন্টারনেট। কিন্তু দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও অনেকেই উচ্চগতির এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই প্রেক্ষাপটে এলন মাস্কের মালিকানাধীন স্টারলিংক নতুন দিগন্ত খুলতে যাচ্ছে। সম্প্রতি, পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে জানা গেছে যে, স্টারলিংককে ভারতের স্যাটেলাইট যোগাযোগ পরিষেবার জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স মঞ্জুর করা হয়েছে। এটি টেলিকম বিভাগ থেকে দেওয়া তৃতীয় লাইসেন্স, যা পূর্বে পেয়েছে ইউটেলস্যাটের ওয়ানওয়েব এবং রিলায়েন্স জিও।
সরকারি সূত্রের খবর, এই লাইসেন্স পাওয়ার পর আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে স্টারলিংককে ট্রায়াল স্পেকট্রাম বরাদ্দ দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে তারা সীমিত পরিসরে তাদের সেবা চালু করতে পারবে। এই স্পেকট্রাম বরাদ্দের মাধ্যমে স্টারলিংক প্রমাণ করতে পারবে তাদের প্রযুক্তি ও নেটওয়ার্ক ভারতের পরিবেশে কতটা কার্যকরী। তবে, সেবার পূর্ণাঙ্গ চালু করার জন্য স্টারলিংককে অবশ্যই ভারতীয় ন্যাশনাল স্পেস প্রোমোশন অ্যান্ড অথরাইজেশন সেন্টার (IN-SPACe) থেকে অনুমোদন নিতে হবে এবং সরকার থেকে প্রয়োজনীয় স্পেকট্রাম বরাদ্দ পেতে হবে।
গত মাসেই ভারত সরকার স্টারলিংককে লেটার অফ ইন্টেন্ট (LoI) জারি করেছিল। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা নির্দেশ করে যে কোম্পানিটি দেশীয় নিরাপত্তা এবং নিয়মনীতি মেনে চলছে। ইতোমধ্যেই স্টারলিংক রিলায়েন্স জিও ও ভারতীর সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে, যারা দেশের টেলিকম খাতে বিশাল ভূমিকা পালন করে। এই চুক্তির ফলে স্টারলিংকের সেবা দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ টেলিকম বাজারে পৌঁছাতে পারবে।
স্টারলিংক হল এলন মাস্কের স্পেসএক্সের একটি শাখা, যা পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (Low Earth Orbit – LEO) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। এই স্যাটেলাইটগুলি মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে, যা সাধারণ জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের থেকে অনেক নীচে। এর ফলে ইন্টারনেটের গতি অনেক বেশি এবং লেটেন্সি অনেক কম হয়, যা ব্যবহারকারীদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। স্পেসএক্স ইতিমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৭,০০০ এর বেশি LEO স্যাটেলাইট মোতায়েন করেছে এবং এর পরিমাণ আরও বাড়িয়ে ৪০,০০০-এরও বেশি করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে এমন জায়গাগুলোতেও ইন্টারনেট পৌঁছানো সম্ভব হবে, যেখানে এখনও ব্রডব্যান্ডের সুবিধা দুরূহ বা অনুপলব্ধ। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকা, সঙ্কটপূর্ণ অঞ্চল বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়া জায়গাগুলোতে এই সেবা অত্যন্ত কার্যকর হবে।
স্টারলিংকের সেবার খরচ কত হতে পারে?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্টারলিংকের এই আধুনিক সেবা ভারতীয় ব্যবহারকারীদের জন্য কতটা সাশ্রয়ী হবে? বিভিন্ন প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি ৩,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে, যা নির্ভর করবে সেবার ধরণ এবং ভৌগলিক অবস্থানের উপর। ব্যবহারকারীদের প্রথমে একটি স্টারলিংক কিট কিনতেও হবে, যেখানে থাকবে স্যাটেলাইট ডিশ ও ওয়াই-ফাই রাউটার, যার দাম হতে পারে ২০,০০০ থেকে ৩৫,০০০ টাকা।
তবে, ইকোনমিক টাইমসের একটি রিপোর্ট বলছে, স্টারলিংক ভারতীয় বাজারে প্রবেশের সময় একটি বিশেষ প্রমোশনাল অফার নিয়ে আসতে পারে। এই অফারে মাসিক আনলিমিটেড ডেটা প্ল্যানের দাম হবে ১০ ডলারের নিচে, যা প্রায় ৮৫৭ টাকার কাছাকাছি। যদিও এখনও এসব মূল্য কেবল অনুমান, চূড়ান্ত দাম স্টারলিংকের সেবা চালু হওয়ার পর জানা যাবে।
এই দাম এবং পরিষেবার প্রতিযোগিতামূলক অফার দেশের দূরদূরান্তে থাকা মানুষদের জন্য একটি বড় সুযোগ হতে পারে, যারা এখনও সঠিক এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট থেকে বঞ্চিত।
বর্তমানে ভারতের ডিজিটাল ইকোনমি ও অনলাইন শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। স্টারলিংকের মতো সেবা দেশের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি প্রসারে এক নতুন অধ্যায় যোগ করবে বলেই আশা করা হচ্ছে।