সরকারের পদক্ষেপ: “ভাতার ছলনা, না ন্যায়ের দায়বদ্ধতা?”
‘Livelihood Scheme’ – ক্ষত ঢাকতে উপশম নাকি কৌশলী বিভ্রান্তি?
🔹 “West Bengal Livelihood and Social Security Interim Scheme” – এক নজরে
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন, গ্রুপ C ও D পদে থাকা ৮৪২ জন চাকরি হারানো প্রার্থীকে মাসিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
প্রতিজনের জন্য ₹৫,০০০-₹১০,০০০ ভাতা, প্রকৃতপক্ষে একরকম “চাকরী চুরি”-র ব্যথায় ব্যান্ডেজ।
নামেই ‘interim’ অর্থাৎ এই স্কিম অস্থায়ী—মানে, ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা নেই।
🔹 কৌশল কোথায়?
এই স্কিম মূলত এসএসসি প্রতিবাদকে “তাত্ক্ষণিক নিয়ন্ত্রণে” রাখার কৌশল, যাতে চাকরী চুরি-র বিরুদ্ধে জনমত ফেটে না পড়ে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এখানে মানবিক মুখ তুলে ধরলেও, চাকরী ফেরতের বাস্তব গ্যারান্টি নেই।
এই স্কিম আদালতের রায়ে চাকরি বাতিল হওয়া প্রার্থীদের ‘ভুল বিচার’ প্রতিস্থাপন নয়, বরং ‘মানবিক সহানুভূতির’ মোড়কে একধরনের রাজনৈতিক সান্ত্বনা-বাক্য।
🔍 অপ্রচলিত তথ্য:
এই স্কিমে আবেদন করতে গেলে প্রার্থীকে বিচারাধীন মামলার অবস্থা, আয়কর নথি ও কর্মসংস্থান প্রমাণ দিতে হয়—মানে এটি পুরোপুরি এক বহুস্তরীয় স্ক্রুটিনি-মডেল।
অভিযোগ উঠেছে, যাঁরা এসএসসি প্রতিবাদ করেছেন, তাঁদের মধ্যেও অনেকেই এই স্কিম থেকে বঞ্চিত।
⚖️ রিভিউ পিটিশন – আইনের গলিপথে ন্যায়, না ধোঁয়াশা?
🔹 রিভিউ পিটিশনের দাবি
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে, যাতে প্রমাণ করতে চায়—
“সব প্রার্থীই চাকরী চুরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, কিছু নির্দোষও আছেন।”
এই পদক্ষেপ একদিকে আইনগত দায়বদ্ধতা, আবার অন্যদিকে জনমতের চাপে প্রশাসনিক পলিসি ব্যাকফুট।
🔹 বাস্তব সংকট:
রিভিউ পিটিশন মানে রায় পুনর্বিবেচনা—কিন্তু এই পিটিশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাকরি ফেরত দেয় না।
আদালতের ভাষ্য স্পষ্ট: নিয়োগ পদ্ধতিই যখন জালিয়াতিতে ভরা, তখন আলাদা করে নির্দোষকে শনাক্ত করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ।
ফলে চাকরী চুরি যাঁরা করেননি, তাঁরাও এসএসসি প্রতিবাদ করতে করতে চাকরি হারিয়ে “জাস্টিস ডিলেইড”-এর শিকার।
🧨 সরকারি বক্তব্য বনাম মাটির দাবি – দুই পৃথিবীর বাস্তবতা
🔹 সরকার কী বলছে?
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন—
“নিষ্পাপদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হবে, কিন্তু আদালতের নির্দেশ মানতেই হবে।”
তবে এসএসসি প্রতিবাদ করা চাকরি-প্রত্যাশীরা বলছেন—
“আদালতের দোহাই দিয়ে সরকার চাকরী চুরির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের আরেকবার বঞ্চিত করছে।”
🔹 মূল সমস্যা কী?
যারা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, তাঁরা অনেকেই এখনো চাকরিরত, অথচ এসএসসি প্রতিবাদকারী নির্দোষরা রাস্তায় বসে আছেন।
এই বৈষম্য জনমানসে গভীর ক্ষোভ জন্ম দিচ্ছে এবং আন্দোলন গ্রামীণ অঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে।
চাকরী চুরি বন্ধে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা যতই ‘নীতিনির্ভর’ মনে হোক, বাস্তবে তা বিভ্রান্তিকর, ধোঁয়াশাচ্ছন্ন এবং আংশিক দায়মুক্তির কৌশল।এসএসসি প্রতিবাদ চলছেই, কারণ যারা চাকরি চেয়েছিল, তারা সহানুভূতি নয়—ন্যায়বিচার চায়।আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ‘সমাধানের আশ্বাস’ যদি বিশ্বাসযোগ্য না হয়, তবে একটাই কথা বলতেই হয়—
“চাকরী চুরি শুধু নৈতিক অপরাধ নয়, প্রশাসনিক বিশ্বাসঘাতকতা।”