এসএসসি প্রতিবাদ আজ শুধু একটি নিয়োগ সংক্রান্ত আন্দোলন নয়, এটি এক অনিবার্য সামাজিক অস্থিরতার প্রতিচ্ছবি, যেখানে চাকরী চুরি নামক গভীর কেলেঙ্কারি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থার শুদ্ধতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যখন “লক্ষ্মণরেখা”-র প্রসঙ্গ তোলেন, তখন আন্দোলনকারীদের দৃঢ় কণ্ঠ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সুপ্রিম কোর্টের রায়, বিতর্কিত তালিকা, আন্দোলনের ভাঙন ও সরকার পক্ষের কৌশলী নীরবতা—সব মিলিয়ে এই প্রতিবাদ আজ এক সাংঘাতিক বাস্তবতা। এই প্রবন্ধ সেই বাস্তবতার এক শাণিত, গর্বিত বিশ্লেষণ।

সূচিপত্র

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট — এক গভীর চিত্রপট

চাকরী চুরি ও এসএসসি দুর্নীতি – এক নিষ্কলুষ নিয়োগের স্বপ্নভঙ্গ

  • মূল সূত্র:
    ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) মাধ্যমে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়ায় চাকরী চুরি ও দুর্নীতির বিস্তৃত অভিযোগ ওঠে।

  • আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু:

    • সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, নিয়োগের তালিকায় থাকা প্রায় ২৫,৭৫৩ প্রার্থীর মধ্যে অনেকেই বেআইনি সুবিধা পেয়েছেন বলে প্রমাণিত হয়।

    • বহু পরীক্ষার্থী নিজেদের untainted, অর্থাৎ নিষ্কলুষ দাবি করলেও, সকলকেই একযোগে চাকরি হারাতে হয়।

  • অপ্রচলিত তথ্য:

    • অভিযোগ ওঠে, “ওএমআর শিট”-এর পরিবর্তন ও বিষয়ভিত্তিক স্কোরিং-এ কারচুপি হয়েছে SSC-র ভিতর থেকেই।

    • কমিশনের একাধিক প্রাক্তন কর্মকর্তা এখন আইনি জিজ্ঞাসাবাদআর্থিক তদন্তের মুখোমুখি।

এসএসসি প্রতিবাদ – শুধু চাকরি নয়, সম্মানের লড়াই

  • প্রতিবাদের আগুন:
    এসএসসি প্রতিবাদ মূলত শুরু হয় বিকাশ ভবনের সামনে, যেখানে একের পর এক চাকরি চুরি-র শিকার শিক্ষক ও কর্মচারীরা টানা অনশন ও ধর্না শুরু করেন।

  • আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি:

    • চাকরি ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছাড়াও, এই আন্দোলনে আছে সামাজিক সম্মান ও আত্মপরিচয়ের সংগ্রাম।

    • এসএসসি প্রতিবাদ শুধু অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ রক্ষা নয়, একটি প্রজন্মের ন্যায্য প্রাপ্তির দাবিকে সামনে নিয়ে এসেছে।

  • অভিনব কৌশল:

    • আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন সময়ে RTI আবেদন, সামাজিক মাধ্যমে লাইভ প্রচার এবং আদালতের পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করে সরকারকে চাপ দিতে থাকেন।

Bengal School Job Scam | 'Lakshman Rekha' appeal from CM: Can't detain  people or block roads, says Mamata Banerjee - Telegraph India

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও ‘লক্ষ্মণরেখা’র ব্যাখ্যা

  • মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা:
    পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলন নিয়ে বলেন, ‘‘প্রতিটি আন্দোলনের একটি লক্ষ্মণরেখা থাকা উচিত।’’

  • প্রতিক্রিয়ার ছায়া:

    • এই বক্তব্যে অনেকের মতে, আন্দোলনকে সীমার মধ্যে আটকে রাখার এক কৌশলী প্রচেষ্টা ছিল।

    • আবার কেউ কেউ মনে করেন, সরকার চাইছে আইনি রাস্তায় সমাধান করতে, কিন্তু আন্দোলনকারীরা এসএসসি প্রতিবাদ-কে রাজনৈতিক মাত্রা দিচ্ছেন।

  • চতুর রাজনৈতিক পদক্ষেপ:
    মুখ্যমন্ত্রী একদিকে সহানুভূতির কথা বলছেন, অন্যদিকে আউটসাইডার থিওরি তুলে ধরে আন্দোলনের নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন।

 যখন প্রতিবাদ হয়ে ওঠে প্রতিরোধ

  • এসএসসি প্রতিবাদ আর নিছক একটা নিয়োগ ইস্যু নয়, এটি এখন ব্যবস্থাগত স্বচ্ছতার দাবিতে এক গণআন্দোলন

  • যেখানে চাকরী চুরি শুধু একটি বেআইনি কাজ নয়, তা আজ একটি প্রজন্মের আত্মমর্যাদার প্রশ্ন

  • পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসন যদি সময়মতো স্পষ্ট অবস্থান না নেন, তবে এই প্রতিবাদ ভবিষ্যতে আরও বড় রাজনৈতিক দাবানলে রূপ নিতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া — লক্ষ্য ‘লক্ষ্মণরেখা’, উদ্দেশ্য কী?

“লক্ষ্মণরেখা” — এক কূটনৈতিক শব্দচয়ন

  • পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বলেন, “প্রতিটি আন্দোলনের একটা লক্ষ্মণরেখা থাকা উচিত,” তখন তা শুধু নীতিগত নির্দেশ নয়, বরং এক ছদ্ম হুঁশিয়ারি

  • এই শব্দটি রাজনীতিতে কৌশলগতভাবে ব্যবহৃত হয় যখন সরকার নৈতিক দায়বদ্ধতার ছায়া রেখে আইনত কঠোরতা চালাতে চায়।

  • এখানে এসএসসি প্রতিবাদকে একপ্রকার সীমার বাইরে গিয়ে প্রভাব বিস্তারকারী প্রয়াস হিসেবে তুলে ধরা হয়।

    🔍 অপ্রচলিত বিশ্লেষণ:

    • “লক্ষ্মণরেখা” শব্দটি হিন্দু পুরাণের এক প্রতীক, যা নারীকে বাড়ির গণ্ডিতে বেঁধে রাখার রূপকেও নির্দেশ করে।

    • বর্তমান প্রেক্ষিতে, এই শব্দ প্রয়োগ করে একপ্রকার নৈতিক গণ্ডি টানার প্রচেষ্টা করা হয়েছে, যাতে এসএসসি প্রতিবাদ সীমিত থাকে এবং সরকারের মুখ রক্ষা হয়।

“আউটসাইডার” প্রসঙ্গ — আন্দোলনের চরিত্র হরণ?

  • পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেন যে, এসএসসি প্রতিবাদ-এ বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

  • এই ‘আউটসাইডার’ শব্দ ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে হেয় করা হয়।

    🧩 চালাকি কোথায়?

    • এখানে ‘আউটসাইডার’ শব্দটি রাজনৈতিকভাবে লোডেড—এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, কিছু ব্যক্তি আন্দোলনে ঢুকে পড়ে চাকরী চুরি নিয়ে প্রকৃত ক্ষোভকে রাজনৈতিক অস্ত্রে রূপান্তর করছেন।

    • যদিও আন্দোলনকারীরা বলেন, তারাই এসএসসি প্রতিবাদ শুরু করেছেন, এবং বাইরে থেকে কেউ তাদের দিশা নির্ধারণ করছে না।

  • সরকারি দৃষ্টিকোণ:

    • আন্দোলন যেন আর কোনওভাবেই আদালতের আদেশ কিংবা প্রশাসনের অবস্থানকে প্রশ্ন না করে, তাই “আউটসাইডার” শব্দে সন্দেহের আবরণ চাপানো হয়।

আন্তঃরাজনৈতিক ইঙ্গিত – কৌশল না চাপা ভয়?

  • চাকরী চুরি নিয়ে যখন তীব্র ক্ষোভ জমছে, তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নিজের অবস্থান থেকে বলেন—আইনের বাইরে কিছু করা সম্ভব নয়।

  • কিন্তু প্রশ্ন জাগে—

    • যদি আদালতের নির্দেশ বাধ্যতামূলকই হয়, তবে সরকার কেন নিজস্ব তদন্ত করে দোষী ও নির্দোষদের আলাদা করছে না?

    • এসএসসি প্রতিবাদ যদি এতটাই সীমা লঙ্ঘন করে, তাহলে প্রশাসন প্রতিনিয়ত আলোচনার আহ্বান কেন করছে?

🧠 একটি ট্রিকি বাস্তবতা:
এসএসসি আন্দোলনের প্রভাব শহরের সীমানা ছাড়িয়ে গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গেও পৌঁছে গিয়েছে। এই মুহূর্তে এই আন্দোলনকে “আউটসাইডার” তত্ত্বে আচ্ছাদিত করা মানে, জনবিক্ষোভকে কৌশলে নিরুৎসাহিত করা।

Everyone has the right to protest, but protests should not be given  political colour', says Mamata

মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ কি নৈতিকতা, না রাজনৈতিক প্রটোকল?

  • পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে “লক্ষ্মণরেখা” টানার চেষ্টা করছেন, তা একদিকে প্রশাসনিক সতর্কতা, অন্যদিকে এসএসসি প্রতিবাদ-এর ক্রমবর্ধমান চাপকে আটকে রাখার একটি সূক্ষ্ম উপায়।

  • চাকরী চুরি কাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রজন্ম যখন ন্যায়বিচারের দাবি তোলে, তখন তাদের মুখ বন্ধ করার জন্য “বহিরাগত” ট্যাগ দেওয়াটা একরকম সাংবাদিক-রাজনৈতিক গেমপ্লে

আন্দোলনের বর্তমান চিত্র: আগুনের আঁচে গনগনে সত্য

🔷  বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ: রাস্তায় রক্ত, ব্যানারে ন্যায়

  • বিকাশ ভবন এখন আর কেবল শিক্ষা ভবন নয়, একেবারে “চাকরী চুরি”-র বিরুদ্ধে জনরোষের প্রতীক

  • এসএসসি প্রতিবাদ চলাকালীন পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে বারবার সংঘর্ষ বাধে।

    🔻 নিয়মিত প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ—পুলিশ আচরণ ছিল “অত্যন্ত আক্রমণাত্মক” ও “নির্বিচার”।

  • বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা আহত, যাঁরা নিজেদের দাবি জানাতে এসে লাঠিপেটা ও টিয়ার গ্যাসের শিকার হন

  • পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনের “সহনশীলতা” নিয়ে মুখ খুললেও বাস্তবে রাজপথে ক্ষোভের আগুনই বেশি দহন করছে।

🧩 অপ্রচলিত তথ্য:

  • একটি RTI অনুযায়ী, গত ৬ মাসে এসএসসি আন্দোলনের জেরে ৯৭ জনকে সাময়িকভাবে আটক করা হয়েছে এবং অন্তত ১৪টি FIR দায়ের করা হয়েছে।

  • এই ধরনের পুলিশের “over-policing” কে অনেকে ব্যাখ্যা করছেন সরকারি অসহিষ্ণুতার চূড়ান্ত উদাহরণ হিসেবে।

🔷 আন্দোলনের বিভাজন: একই যন্ত্রণার দুই সুর?

  • এসএসসি প্রতিবাদ এখন আর একক স্বর নয়—দুইটি আলাদা ব্যানারে বিভক্ত

    1. প্রথাগত আন্দোলনকারী দল:

      • মূলত রাস্তায় অবস্থানকারী অংশ, যারা সরাসরি চাকরী চুরির বিরুদ্ধে আন্দোলনে জড়িত।

      • তাঁদের বক্তব্য—“চাকরি না পেলে ভাতা নয়, সম্মান ফেরত চাই”।

    2. West Bengal Untainted Teachers Association (WBUTA):

      • এই নতুন সংগঠনটি সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার পথ খুঁজতে চায়

      • এদের অবস্থান তুলনামূলকভাবে “সমঝোতামূলক ও বাস্তবধর্মী”—কিন্তু এতে আন্দোলনের তীব্রতা কমে যাচ্ছে বলেও সমালোচনা চলছে।

🧩 গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

  • WBUTA-র সঙ্গে প্রশাসনের দুটি বৈঠক ইতিমধ্যেই হয়েছে, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নিজে উপস্থিত ছিলেন।

  • কিন্তু মূল আন্দোলনকারী গোষ্ঠীর দাবি—এটি “চাকরী চুরি”র মূল ইস্যুকে ন্যায্য পথে না নিয়ে গিয়ে বিভ্রান্তির কৌশল।

🔷 মিডিয়া ও সাইবার যুদ্ধ: তথ্যের লড়াই

  • একদিকে সরকারপন্থী সংবাদমাধ্যমে এসএসসি প্রতিবাদ-কে “রাজনৈতিক চক্রান্ত” বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

  • অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক লাইভ, টুইটার ট্রেন্ডিং-এর মাধ্যমে ‘চাকরী চুরি’ ও দুর্নীতির তথ্যভিত্তিক নথি সামনে আনছেন।

West Bengal SSC scam: Aspirants protest overnight outside Commission's  office, gherao chairman- The Week

🎯 অপ্রচলিত তথ্য:

  • আন্দোলনকারীদের একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে ২ লক্ষের বেশি সদস্য যুক্ত, যেখানে নিয়মিত কোর্ট অর্ডার, নিয়োগের তালিকা ও দুর্নীতির প্রমাণ আপলোড হচ্ছে।

  • বেশ কিছু “ফেক নিউজ” ঘিরেও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, যার ফলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসন সাইবার সেল অ্যাক্টিভ করেছে

এসএসসি প্রতিবাদ আজ শুধুই নিয়োগ-সংক্রান্ত ইস্যু নয়—এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক এবং রাজনৈতিক ন্যায়ের লড়াই।সংঘর্ষ, বিভাজন ও মিডিয়া দখলের এই বহুমাত্রিক যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেই শিক্ষকরা—যাঁরা চাকরী চুরির শিকার হলেও এখন প্রশাসনিক বঞ্চনা ও প্রতিরোধের মাঝখানে পড়ে রয়েছেন।পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা এখানেই প্রশ্নবিদ্ধ, কারণ শুধু ভাতা বা আলোচনার প্রস্তাব নয়, দরকার নিষ্পাপদের কর্ম-সম্মানের পুনরুদ্ধার।

সরকারের পদক্ষেপ: “ভাতার ছলনা, না ন্যায়ের দায়বদ্ধতা?”

‘Livelihood Scheme’ – ক্ষত ঢাকতে উপশম নাকি কৌশলী বিভ্রান্তি?

🔹  “West Bengal Livelihood and Social Security Interim Scheme” – এক নজরে

  • পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন, গ্রুপ C ও D পদে থাকা ৮৪২ জন চাকরি হারানো প্রার্থীকে মাসিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।

  • প্রতিজনের জন্য ₹৫,০০০-₹১০,০০০ ভাতা, প্রকৃতপক্ষে একরকম “চাকরী চুরি”-র ব্যথায় ব্যান্ডেজ

  • নামেই ‘interim’ অর্থাৎ এই স্কিম অস্থায়ী—মানে, ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা নেই।

🔹 কৌশল কোথায়?

  • এই স্কিম মূলত এসএসসি প্রতিবাদকে “তাত্ক্ষণিক নিয়ন্ত্রণে” রাখার কৌশল, যাতে চাকরী চুরি-র বিরুদ্ধে জনমত ফেটে না পড়ে

  • পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এখানে মানবিক মুখ তুলে ধরলেও, চাকরী ফেরতের বাস্তব গ্যারান্টি নেই

  • এই স্কিম আদালতের রায়ে চাকরি বাতিল হওয়া প্রার্থীদের ‘ভুল বিচার’ প্রতিস্থাপন নয়, বরং ‘মানবিক সহানুভূতির’ মোড়কে একধরনের রাজনৈতিক সান্ত্বনা-বাক্য

🔍 অপ্রচলিত তথ্য:

  • এই স্কিমে আবেদন করতে গেলে প্রার্থীকে বিচারাধীন মামলার অবস্থা, আয়কর নথি ও কর্মসংস্থান প্রমাণ দিতে হয়—মানে এটি পুরোপুরি এক বহুস্তরীয় স্ক্রুটিনি-মডেল

  • অভিযোগ উঠেছে, যাঁরা এসএসসি প্রতিবাদ করেছেন, তাঁদের মধ্যেও অনেকেই এই স্কিম থেকে বঞ্চিত

⚖️ রিভিউ পিটিশন – আইনের গলিপথে ন্যায়, না ধোঁয়াশা?

🔹 রিভিউ পিটিশনের দাবি

  • পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে, যাতে প্রমাণ করতে চায়—

    “সব প্রার্থীই চাকরী চুরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, কিছু নির্দোষও আছেন।”

  • এই পদক্ষেপ একদিকে আইনগত দায়বদ্ধতা, আবার অন্যদিকে জনমতের চাপে প্রশাসনিক পলিসি ব্যাকফুট

🔹 বাস্তব সংকট:

  • রিভিউ পিটিশন মানে রায় পুনর্বিবেচনা—কিন্তু এই পিটিশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাকরি ফেরত দেয় না

  • আদালতের ভাষ্য স্পষ্ট: নিয়োগ পদ্ধতিই যখন জালিয়াতিতে ভরা, তখন আলাদা করে নির্দোষকে শনাক্ত করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ

  • ফলে চাকরী চুরি যাঁরা করেননি, তাঁরাও এসএসসি প্রতিবাদ করতে করতে চাকরি হারিয়ে “জাস্টিস ডিলেইড”-এর শিকার

🧨 সরকারি বক্তব্য বনাম মাটির দাবি – দুই পৃথিবীর বাস্তবতা

🔹  সরকার কী বলছে?

  • পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন—

    “নিষ্পাপদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হবে, কিন্তু আদালতের নির্দেশ মানতেই হবে।”

  • তবে এসএসসি প্রতিবাদ করা চাকরি-প্রত্যাশীরা বলছেন—

    “আদালতের দোহাই দিয়ে সরকার চাকরী চুরির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের আরেকবার বঞ্চিত করছে।”

🔹  মূল সমস্যা কী?

  • যারা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, তাঁরা অনেকেই এখনো চাকরিরত, অথচ এসএসসি প্রতিবাদকারী নির্দোষরা রাস্তায় বসে আছেন।

  • এই বৈষম্য জনমানসে গভীর ক্ষোভ জন্ম দিচ্ছে এবং আন্দোলন গ্রামীণ অঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে

Give Us Back Our Jobs!' West Bengal Teachers on Streets Amid SSC Scam  Protests | Dynamite News

চাকরী চুরি বন্ধে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা যতই ‘নীতিনির্ভর’ মনে হোক, বাস্তবে তা বিভ্রান্তিকর, ধোঁয়াশাচ্ছন্ন এবং আংশিক দায়মুক্তির কৌশলএসএসসি প্রতিবাদ চলছেই, কারণ যারা চাকরি চেয়েছিল, তারা সহানুভূতি নয়—ন্যায়বিচার চায়।আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ‘সমাধানের আশ্বাস’ যদি বিশ্বাসযোগ্য না হয়, তবে একটাই কথা বলতেই হয়—
“চাকরী চুরি শুধু নৈতিক অপরাধ নয়, প্রশাসনিক বিশ্বাসঘাতকতা।”

এসএসসি প্রতিবাদ আজ শুধু একটি নিয়োগ-দুর্নীতির প্রতিবাদ নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক ন্যায়বোধ, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সামাজিক স্বচ্ছতার প্রতিচ্ছবি। একদিকে চাকরী চুরি নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর নীরবতা, অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে—এই আন্দোলন এক সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো, যার বিস্ফোরণ আর দূরে নয়। যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল চাকরির দাবিতে, তা আজ রূপ নিচ্ছে এক বৃহত্তর ন্যায়বিচারের সংগ্রামে, যেখানে প্রতিটি কণ্ঠ বলছে—”আমরা ন্যায় ছাড়া মাথা নোয়াবো না।”

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply