সকালের ব্যস্ততা যেন প্রতিদিনের এক নিরব যুদ্ধ। রান্নাঘরে সময়ের অভাবে অনেকেই পরিপূর্ণ পুষ্টি আর স্বাদের খাবার থেকে বঞ্চিত হন। তবে দক্ষিণ ভারতীয় টিফিন এখন আর দীর্ঘ প্রস্তুতির বিষয় নয়। “দক্ষিণ ভারতীয় টিফিন” এখন মাত্র ১৫ মিনিটেই তৈরি হওয়া সম্ভব—না আছে ফারমেন্টেশনের ঝামেলা, না আছে দীর্ঘ রান্নার অপেক্ষা। সহজ উপকরণে তৈরি এই সাতটি পদ স্বাদ, স্বাস্থ্য ও সময়—সবকিছুর সঙ্গেই আপোষহীন। নরম, সুগন্ধি আর ঝটপট রন্ধনপ্রণালির এই যাত্রা আজকের কর্মব্যস্ত জীবনের জন্য এক অনবদ্য প্রস্তাব।
সূচিপত্র
Toggle📌 স্টোরি হাইলাইটস
দ্রুত তৈরি হওয়া দক্ষিণ ভারতীয় রেসিপি
ফারমেন্টেশন ছাড়াই মাত্র ১৫ মিনিটে প্রস্তুত
স্কুল, কলেজ, অফিস—সব টিফিন বক্সে মানানসই
স্বাদ, পুষ্টি ও সময় বাঁচানোর সেরা সমন্বয়
সকালের ব্যস্ততা বাঙালি জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। ঘড়ির কাঁটা যেন ছুটছে পিছু ধাওয়া করে—ঘুম থেকে ওঠার তাড়াহুড়ো, পড়ার ব্যাগ গুছোনো, অফিস বা স্কুলের জন্য প্রস্তুতি, আর তার মধ্যেই রেঁধে ফেলার চ্যালেঞ্জ। অধিকাংশ বাড়িতেই সকালে রান্নাঘর হয়ে ওঠে এক যুদ্ধের ময়দান। এমন অবস্থায় যদি কাউকে বলা হয় দক্ষিণ ভারতীয় কোনও পদ বানাতে, অনেকেই হয়তো বলবেন—”সকালবেলা এত সময় কোথায়?”
আসলে দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের নাম শুনলেই অনেকের মনে পড়ে ইডলি-ডোসার মতো পদ, যেগুলোর জন্য আগের দিন রাতে ভিজিয়ে রাখতে হয় চাল-ডাল, আবার দীর্ঘ সময় ধরে ফারমেন্ট করতে হয়। তবে বাস্তব কিন্তু অনেক সহজ। আজকের দ্রুতগতির জীবনে আমরা এমন কিছু পদ বেছে নিতে পারি, যেগুলি দক্ষিণ ভারতীয় স্বাদ বজায় রেখেও খুব কম সময়ে রান্না করা যায়। আর ভালো খবর হলো—সেগুলি বানাতে লাগবে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময়, না থাকবে জটিল রেসিপির কোনো ঝক্কি।
এই প্রতিবেদনে আমরা এমন সাতটি দক্ষিণ ভারতীয় টিফিনের পদ তুলে ধরছি, যেগুলো খুব কম উপকরণে এবং মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই তৈরি করা যায়। স্কুল পড়ুয়া হোক বা কর্পোরেট অফিসার—এই পদগুলি সব ধরনের টিফিনের জন্য উপযুক্ত।
লেবু ভাত (এলুমিচাই সদম)
এই পদটির মূল শক্তি তার সরলতা আর টক-মিষ্টি স্বাদ। আগের রাতের রান্না করা ভাত থাকলেই কাজ অর্ধেক হয়ে যায়। সরষে, কারিপাতা, কাঁচা লঙ্কা, উড়দ ডাল, আর চিনেবাদাম ফোড়ন দিয়ে, হলুদ, নুন ও ভাত একসাথে ভালো করে মিশিয়ে দিন। শেষে দিন লেবুর রস। কোনও গ্যাসে গরম করতেও হবে না। শুধু মিশিয়ে ফেলুন আর প্যাক করে দিন।
রাভা উপমা
বাড়ির বড়রা যেটাকে বলেন ‘সুজির খিচুড়ি’, সেই রাভা উপমা হলো দক্ষিণ ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় জলখাবার। সময় বাঁচাতে সুজি আগে থেকেই ভাজা থাকলে ভালো। সরষে, কারিপাতা, কাঁচা লঙ্কা, পেঁয়াজ দিয়ে ফোড়ন দিন, জল ও নুন মিশিয়ে আস্তে আস্তে সুজি দিন। ঘন হয়ে এলে নামিয়ে ফেলুন। চাইলে পুষ্টি বাড়াতে কিছু সবজি যোগ করা যায়।
টমেটো পেসারাট্টু
মুগডাল দিয়ে বানানো এই পাতলা ডোসা যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিকর। আগের রাতে ডাল ভিজিয়ে রাখলে সকালে আর কিছুই করতে হয় না। টমেটো, আদা, কাঁচা লঙ্কা, জিরে দিয়ে ব্লেন্ড করে একটি ব্যাটার তৈরি করে গরম তাওয়ায় ঢেলে দিন। সাধারণ ডোসার তুলনায় এই পদটি অনেক দ্রুত তৈরি হয় এবং খুব সহজেই হজম হয়।
ইনস্ট্যান্ট রাগি ডোসা
যারা স্বাস্থ্য সচেতন, তাদের জন্য রাগি ডোসা আদর্শ। রাগি ও চালের গুঁড়ো, টক দই, জল ও কিছু মশলা একত্রে মিশিয়ে পাতলা ব্যাটার তৈরি করুন। এই ব্যাটার রাভা ডোসার মতোই তাওয়ায় ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে না আছে ফারমেন্টেশনের ঝামেলা, না আছে দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা।
সবজি সেভাই (চাল-সেমাই স্টার ফ্রাই)
চালের তৈরি সেমাই বা সেভাই দক্ষিণ ভারতীয় ঘরেও খুব জনপ্রিয়। বাজারে এখন পাওয়া যায় রেডি টু কুক সেভাই, যেটা গরম জলে ভিজিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যবহারযোগ্য। সরষে, উড়দ ডাল, পেঁয়াজ, কারিপাতা ফোড়ন দিয়ে কিছু সবজি ও সেভাই মেশালে তৈরি এই ঝটপট রেসিপি।
পডি ইডলি
অনেক সময় বাড়িতে ইডলি থেকে যায়। সেটাই যদি একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করা যায়, তাহলে ঝটপট একটি সুস্বাদু পদ তৈরি হয়ে যায়। ফ্রাইপ্যানে সামান্য ঘি বা তেল দিয়ে ফোড়ন দিন, তারপরে দিন কেটে রাখা ইডলি। ওপর থেকে ছিটিয়ে দিন ইডলি পডি। এই পদটি ঠান্ডা হলেও স্বাদে কোনও খামতি থাকে না।
দই ভাত (থায়ির সদম)
সবচেয়ে সহজ ও হালকা একটি পদ হলো দই ভাত। রান্না করা ভাতের সঙ্গে দই, সামান্য দুধ ও নুন মিশিয়ে নিন। সরষে, আদা, কারিপাতা ও কাঁচা লঙ্কার ফোড়ন দিন। কেউ কেউ একটু টুইস্ট আনতে দই ভাতে ডালিম বা আঙ্গুরও যোগ করেন।