চীনের কুইংডাও শহরে অনুষ্ঠিত শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) বৈঠকে নজিরবিহীন কূটনৈতিক দৃঢ়তা দেখাল ভারত। ২৬ এপ্রিল পাহালগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ প্রাণ হারানোর পরও, সেই ঘটনা যৌথ বিবৃতিতে না থাকায় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং তাতে সই করতে স্পষ্ট অস্বীকৃতি জানান। যেখানে বালোচিস্তানের প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে, সেখানে পাহালগামের অনুল্লেখ ভারতের অবস্থানকে ‘নরম’ দেখাত—এমনটাই আশঙ্কা। ফলে এই পত্রে সই না করেই, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের জঙ্গি বিরোধী অবস্থানকে আবারও অনড় ও জ্বলন্ত করে তুললেন তিনি।

📌 স্টোরি হাইলাইটস (Story Highlights)

  • যৌথ বিবৃতিতে পাহালগাম হামলার অনুপস্থিতিতে ভারতের আপত্তি

  • বালোচিস্তানের প্রসঙ্গ উল্লেখ থাকায় ভারত সরব

  • রাজনাথ সিংয়ের স্পষ্ট মন্তব্য: সন্ত্রাসবাদ রুখতে আপোষ নয়

  • ২৬ এপ্রিল হামলায় নিহত ২৬ জন নিরীহ পর্যটক, পরিচয় দেখে গুলি

  • ৭ মে ‘অপারেশন সিন্ধুর’-এ জবাব দেয় ভারত

  • SCO-র বর্তমান চেয়ার চীন, পাকিস্তানও উপস্থিত

  • SCO-র র‌্যাডিকালাইজেশন বিরোধী ভূমিকা নিয়ে সিংয়ের আশাবাদ

শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO)-এর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং একটি অত্যন্ত স্পষ্ট ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের অবস্থান আপোষহীন, এবং সেই অবস্থানকেই সমুন্নত রাখতে তিনি যৌথ বিবৃতিতে সই করেননি। মূল কারণ ছিল, ২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে কাশ্মীরের পাহালগামে ঘটে যাওয়া নির্মম সন্ত্রাসী হামলার কোনো উল্লেখ ওই বিবৃতিতে ছিল না। অথচ একইসঙ্গে, ওই বিবৃতিতে পাকিস্তানের বালোচিস্তানে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির উল্লেখ ছিল, যা কার্যত ভারতকে অভিযুক্ত করার সামিল।

এই প্রসঙ্গে সরকারি সূত্রে প্রকাশ, “ভারত যৌথ বিবৃতির ভাষায় সন্তুষ্ট নয়। সেখানে পাহালগামের ভয়াবহ হামলার কোনো উল্লেখ ছিল না, কিন্তু পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার উল্লেখ ছিল। ফলে এই ধরনের অসম্পূর্ণ ও পক্ষপাতদুষ্ট দলিলের সঙ্গে ভারত নিজেকে যুক্ত রাখতে চায়নি।”

ভারত বারবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে জোর দিয়ে বলে এসেছে যে, সন্ত্রাসবাদ কোনওভাবেই যুক্তিসম্পন্ন হতে পারে না। এই বার্তাই আরও একবার দৃঢ়ভাবে তুলে ধরেন রাজনাথ সিং। SCO বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন:

“আমরা আবারও জোর দিয়ে বলি—যে সমস্ত ব্যক্তি, সংগঠন বা দেশ সন্ত্রাসের পেছনে রয়েছে, তাদের দায়বদ্ধ করতে হবে এবং ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে হবে। সময়, স্থান বা উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন—সন্ত্রাস সর্বত্রই অন্যায় ও অপরাধ।”

এই বক্তব্যের আগে রাজনাথ সিং পাহালগামের ওই দুঃস্বপ্নের দিনের উল্লেখ করেন, যেখানে নিরীহ পর্যটকদের শুধুমাত্র তাঁদের ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। TRF (The Resistance Front), একটি পাকিস্তান-সমর্থিত সংগঠন, যার পেছনে UN-স্বীকৃত জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবা (LeT)-এর ছায়া রয়েছে, সেই হামলার দায় স্বীকার করে।

“২২ এপ্রিল ২০২৫-এ, TRF পাহালগামে নির্মম ও কাপুরুষোচিত হামলা চালায়। ২৬ জন নিরীহ পর্যটক নিহত হন, যাঁদের মধ্যে একজন নেপালি নাগরিকও ছিলেন। ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে তাঁদের গুলি করা হয়।”

এই হামলার পর ভারত যে বসে থাকেনি, সে কথাও সভায় স্পষ্ট করে জানানো হয়। হামলার পর ৭ মে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘অপারেশন সিন্ধুর’ শুরু করে, যার লক্ষ্য ছিল সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো ধ্বংস করা।

“পাহালগামের হামলার ধরন লস্কর-ই-তৈবার পুরনো কৌশলের সঙ্গেই মিলে। তাই আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে ভারত ৭ মে সফলভাবে সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো গুঁড়িয়ে দেয়।”

একইসঙ্গে, রাজনাথ সিং জোর দেন যুবসমাজের মধ্যে চরমপন্থা ছড়িয়ে পড়া রোধের উপর। তাঁর মতে, এটি এখন শুধু একটি দেশের নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন—

“এই হুমকিগুলি কোনো দেশের সীমান্ত মানে না, তাই এদের মোকাবিলায় স্বচ্ছতা, পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন।”

এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। তিনি SCO-র ‘রিজিওনাল অ্যান্টি-টেররিস্ট স্ট্রাকচার’ বা RATS মেকানিজমের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন—

“আমাদের উচিত সক্রিয়ভাবে র‌্যাডিকালাইজেশন রোধে পদক্ষেপ নেওয়া। RATS এই ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। ২০২৩ সালে ভারতের SCO চেয়ারম্যানশিপ চলাকালীন ‘চরমপন্থা ও সন্ত্রাস মোকাবিলায়’ যৌথ বিবৃতিই তার প্রমাণ।”

চীনের কুইংডাও শহরে অনুষ্ঠিত SCO প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের এই বৈঠকে অংশ নেয় ভারত, চীন, রাশিয়া, পাকিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার সদস্য রাষ্ট্রগুলি। ২০০১ সালে স্থাপিত এই সংস্থা মূলত আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে কাজ করে। ২০১৭ সালে ভারত এর পূর্ণ সদস্য হয়। এবছর ২০২৫ সালে চীন SCO-র সভাপতিত্ব করছে ‘উন্নয়নের পথে সাংহাই স্পিরিট’ থিমের অধীনে।

রাজনাথ সিংয়ের স্পষ্ট বার্তায় ভারতের অবস্থান পরিষ্কার: সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের জিরো টলারেন্স নীতিতে কোনও রকম ছাড় নেই। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পাশাপাশি ভারত তার স্বকীয় অবস্থান থেকেও চরম বার্তা দিতে প্রস্তুত, সেটা এবার SCO-র মঞ্চেই বিশ্ব দেখল।

চীনের কুইংডাও শহরে অনুষ্ঠিত SCO বৈঠকে ভারতের এই কঠোর ও অনমনীয় অবস্থান আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে এক স্পষ্ট বার্তা বহন করে। পাহালগামের নির্মম সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রতি সম্মান না দেখিয়ে যৌথ বিবৃতিতে বালোচিস্তানের উল্লেখ, ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়—এই বার্তাই জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখাই যে ভারতের অগ্রাধিকার, তা আবারও প্রমাণিত হলো। SCO-এর মতো মঞ্চেও যখন সত্য গলা টিপে ধরা হয়, তখন প্রতিবাদই হয়ে ওঠে শক্তির প্রকৃত ভাষা।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply