সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস এখন আর শুধু নিন্দার বিষয় নয়—এ এক মানবতা-বিরোধী অপরাধ। বেইজিংয়ে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO)-এর বৈঠকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল স্পষ্ট বার্তা দিলেন—সন্ত্রাসের হোতা, সংগঠক, অর্থদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের বিচারের মুখোমুখি করতেই হবে। তিনি জোর দিলেন UN-নিষিদ্ধ লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মোহাম্মদ, আল-কায়েদা ও ISIS-এর মতো সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে একযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর। ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের উপর পহেলগাম হামলার প্রেক্ষিতে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রসঙ্গ তুলে সন্ত্রাস দমনে সক্রিয় পদক্ষেপের দৃষ্টান্তও তুলে ধরেন তিনি।
STORY HIGHLIGHTS
NSA ডোভাল SCO বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে দ্বিচারিতার প্রতিবাদ জানান
UN নিষিদ্ধ সংগঠন LeT, JeM, ISIS এবং তাদের সহযোগীদের কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বেগ
পহেলগাম হামলার পর ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালু করেছে
TRF-এর হামলায় নিহত হন ভারতীয় ও নেপালি তীর্থযাত্রী
উগ্রবাদ প্রতিরোধে যৌথ তথ্যাভিযান ও সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং যাচ্ছেন SCO প্রতিরক্ষা সম্মেলনে
বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO)-এর নিরাপত্তা কাউন্সিল সচিবদের বৈঠকে ভারত একটি শক্ত অবস্থান নিল। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল সন্ত্রাসবাদ দমনে দ্বিচারিতা বা “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড” নিয়ে তীব্র আপত্তি জানান। তাঁর মতে, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে এখনও যে দ্বিমুখী মনোভাব বিরাজ করছে, তা না বদলালে আন্তর্জাতিক স্তরে এই বিপদ কখনোই নির্মূল হবে না।
এই গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বৈঠকে ডোভাল শুধু উদ্বেগই জানাননি, বরং বেশ কিছু কঠোর বার্তাও দিয়েছেন। বক্তব্যে তিনি এ কথাও তুলে ধরেন যে, জাতিসংঘ দ্বারা নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি এখনও সক্রিয় এবং নিরাপদ আশ্রয়ে রয়ে গেছে। বিষয়টি যে শুধু ভারতের নয়, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি, সেটাও স্পষ্ট করেন তিনি।
“Any act of terrorism, including cross-border terror, is a crime against humanity,” – NSA Ajit Doval
তিনি সোজাসুজি নাম না করে পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস চালানো এবং তারপর তাকে অস্বীকার করা এখন একটা পুরনো কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের পক্ষে এটি দীর্ঘদিন ধরে এক বৃহৎ চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে, এবং আন্তর্জাতিক মহলকে এ বিষয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে একত্রিত হতে হবে বলে ডোভালের বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়।
বৈঠকে NSA আরও বলেন, সম্প্রতি পহেলগামে ঘটে যাওয়া বর্বর হামলা এই চ্যালেঞ্জকে আরও প্রকট করে তুলেছে। TRF, যা LeT-এর একটি প্রক্সি সংগঠন, ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে ভারতীয় ও নেপালি তীর্থযাত্রীদের বেছে বেছে হত্যা করে। হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারান, বহু মানুষ আহত হন। এ ঘটনার পর ভারত শুরু করে অপারেশন সিঁদুর – যার মূল উদ্দেশ্য হল দেশের অভ্যন্তরে ও সীমান্তে সক্রিয় সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো ধ্বংস করা।
“India’s response has been measured and non-escalatory,” – NSA Ajit Doval
তিনি জানান, ভারতের পদক্ষেপ উত্তেজনা না বাড়িয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কৌশলগত ও নির্ধারিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে তিনি এটাও উল্লেখ করেন যে, জাতিসংঘের নিষিদ্ধ তালিকায় থাকা সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে SCO-কে আরও সক্রিয় হতে হবে। বিশেষ করে যারা প্রক্সি সংগঠনের আড়ালে থেকে সন্ত্রাসবাদ চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
“We must hold the perpetrators, organisers, financiers and sponsors of cross-border terror accountable and bring them to justice.” – NSA Ajit Doval
ডোভাল এই বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্টতই SCO-এর কিছু সদস্য রাষ্ট্রকে পরোক্ষভাবে বার্তা দেন, যারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও বাস্তবে সহযোগিতা করছে বা নীরব থেকেছে। তাঁর মতে, এই দ্বিচারিতার ফল ভোগ করছে গোটা দক্ষিণ এশিয়া।
এছাড়াও, NSA ডোভাল সন্ত্রাস, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে “যৌথ তথ্য অভিযান” ও “চরমপন্থার বিরুদ্ধে সচেতনতা” বাড়ানোর জন্য একটি সম্মিলিত রূপরেখা প্রস্তাব করেন। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় একটি “algorithm of joint actions” গড়ে তোলার প্রস্তাবও রাখেন তিনি, যা বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে তথ্য, কৌশল ও পদক্ষেপ ভাগ করে নেওয়ার একটি কাঠামো তৈরি করতে পারে।
এদিকে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও যাচ্ছেন চীনের কুইংদাও শহরে, যেখানে বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে SCO-র প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠক। সূত্রের খবর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার প্রতি দায়বদ্ধতা তুলে ধরবেন।
“India remains committed to SCO’s core principles and expects collective, consistent actions to curb terrorism and extremism.” – Official Statement on Defence Minister’s Visit
বিশেষজ্ঞদের মতে, SCO-এর মতো একটি বৃহৎ আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মে ভারতের এই অবস্থান শুধু কূটনৈতিক বার্তা নয়, বরং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নীতিতে দিশা দেখাবে। ডোভালের বক্তব্য ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতি – উভয় মিলিয়ে ভারত এবার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্তপোক্ত আন্তর্জাতিক বার্তা দিতে প্রস্তুত।
চীনে অনুষ্ঠিত SCO বৈঠকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের বক্তব্য কেবল কূটনৈতিক বার্তা নয়, বরং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থান। সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি SCO সদস্য দেশগুলিকে আহ্বান জানান দ্বিমুখী নীতি পরিহার করে একযোগে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মতো পদক্ষেপ এবং সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকদের বিচারের আওতায় আনার দাবি ভারতের নিরাপত্তা নীতিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এবার দেখার বিষয়, SCO এই বার্তাকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।