বিস্ময় ও আতঙ্কের এক অভূতপূর্ব রাত পার করল ইউক্রেন। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত রাশিয়া চালাল যুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকাশ হামলা। ৭৪১টি ড্রোন ও মিসাইল দিয়ে ইউক্রেনের বহু অঞ্চল কেঁপে উঠল। মূল লক্ষ্য ছিল ভোলিন অঞ্চলের বিমানঘাঁটি ও লুতস্ক শহরের শিল্প এলাকা। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পরেই এই হামলা, যা রুশ আগ্রাসনের আরও এক স্পষ্ট বার্তা। ইউক্রেন জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে ৭১৮টি অস্ত্র। যুদ্ধক্ষেত্রে এবার আরও চড়ছে উত্তাপ।

🔴 স্টোরি হাইলাইটস:

  • রাশিয়ার হামলায় ব্যবহৃত ৭৪১টি ড্রোন ও মিসাইল, যা যুদ্ধের ইতিহাসে সর্বোচ্চ

  • ইউক্রেনের দাবি, ৭১৮টি নষ্ট করা গেছে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাহায্যে

  • হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ভোলিন অঞ্চলের বিমানঘাঁটি ও লুতস্ক শহরের শিল্প এলাকা

  • ট্রাম্পের ভাষ্য: “পুতিন অনেক ‘বুলশিট’ ছুড়ছে, মানুষ হত্যা করছে

  • অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে ট্রাম্প প্রশাসনের নরম অবস্থান

  • হামলার শিকার ১০টি অঞ্চল, যার মধ্যে রয়েছে কিয়েভ, খারকিভ, মাইকোলাইভ

বিশ্ব রাজনীতির উত্তাল আবহে ফের যেন তীব্র হল যুদ্ধের ঝাঁজ। রাশিয়া একরাশ বিস্ময় আর আতঙ্ক নামিয়ে আনল ইউক্রেনের আকাশে। মঙ্গলবার রাত পেরিয়ে বুধবার ভোররাতে ঘটে গেল যুদ্ধের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ আকাশ আক্রমণ। এক রাতেই ৭৪১টি ড্রোন ও মিসাইল ইউক্রেনের আকাশ চিরে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে।

এই হামলার প্রেক্ষাপটে রয়েছে আন্তর্জাতিক মঞ্চের আরও এক নাটকীয় মোড়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু কড়া এবং স্পষ্ট মন্তব্য সামনে আসতেই, যেন প্রত্যুত্তরে রাশিয়া এই নির্লজ্জ আগ্রাসনে মেতে ওঠে। ঘটনার সময়কাল, মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সংঘটিত হওয়া মন্তব্য ও হামলা—এই সমাপতন অনেক প্রশ্ন তোলে।

ঘটনার গভীরে ঢুকলে দেখা যাবে, ইউক্রেন এই আক্রমণ প্রতিহত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, ৭২৮টি ড্রোনের মধ্যে ২৯৬টি সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয় এবং ৪১৫টি ড্রোনকে ইলেকট্রনিক জ্যামিংয়ের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়। এছাড়া, সাতটি ক্রুজ মিসাইলকেও প্রতিহত করা হয়েছে।

এই অভাবনীয় প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে ব্যবহৃত হয়েছে যুদ্ধবিমান, ইন্টারসেপ্টর ড্রোন, মোবাইল ফায়ার টিম ও ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ার সিস্টেম। বলা বাহুল্য, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা এখন যুদ্ধের কেন্দ্রে।

তবে এই যুদ্ধ কেবল অস্ত্রের নয়, কূটনৈতিক ভাষ্যও এর চালিকা শক্তি।
মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্প এক ঘোষণায় বলেন,

পুতিন আমাদের অনেক ‘বুলশিট’ ছুড়ছে। সামনে ভদ্র, ভিতরে নিষ্ঠুর।
তিনি আরও বলেন,
সে মানুষ মারছে। আমরা তাই কিছু প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র পাঠাচ্ছি ইউক্রেনে।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের ভাষায় যতটা কড়া শোনাল, তাঁর কাজকর্মে ততটা কঠোরতা নেই। তার প্রমাণ মিলেছে আগেই। ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ কার্যত বন্ধ রেখেছে। ফলে রাশিয়ার আগ্রাসন আরও বাড়বেই—এই আশঙ্কা করেছিলেন ইউক্রেনীয় কূটনীতিকেরা আগেই।

গত সপ্তাহেও একই কায়দায়, ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাশিয়া হামলা চালিয়েছিল ৫৫০টি ড্রোন ও মিসাইল দিয়ে। যুদ্ধবিরতির নামে ট্রাম্প এখন পর্যন্ত তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন। ইউক্রেন সেগুলি গ্রহণ করলেও, রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করে এবং তাদের ‘সর্বগ্রাসী’ দাবি আরও শক্তভাবে জাহির করে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রধান উপদেষ্টা আন্দ্রেই ইয়ারমাক বলেন,

এই হামলা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অস্ত্র দেওয়ার ঘোষণা করেছিল।

তিনি এটিকেই রাশিয়ার ‘পরিকল্পিত প্রতিক্রিয়া’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

ইতিমধ্যেই রাশিয়া দাবি করেছে, এই “দীর্ঘ-পাল্লার ও নিখুঁত পরিকল্পিত” হামলায় সমস্ত নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করা হয়েছে। রাশিয়ার সামরিক বাহিনী আরও জানিয়েছে, পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের টলস্টয় গ্রাম তারা দখল করেছে।

হামলার পরে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন,

এই ভয়াবহ হামলা ফের প্রমাণ করে দেয়, রুশ তেল বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ সরাসরি যুদ্ধের জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন,

যারা রুশ তেল কিনছে, তারা এই হত্যাকাণ্ডে পরোক্ষভাবে সঙ্গ দিচ্ছে।
এবং যোগ করেন,
যারা শান্তি চায়, তাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

এদিকে, ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, মঙ্গলবার রাতের হামলায় ১০টি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ডনিপ্রো, কিয়েভ, কিরোভোহরাদ, মাইকোলাইভ, সুমি, খারকিভ, খমেলনিতস্কি, চেরকাসি ও চেরনিহিভ।

এই নিঃসীম আকাশ আগ্রাসন আবার মনে করিয়ে দিল, যে যুদ্ধ এখন শুধু মাটির লড়াই নয়, আকাশে প্রতিনিয়ত আঁকা হচ্ছে মৃত্যুর ছায়াচিত্র। বিশ্ব রাজনীতির প্রতিটি বিবৃতি এখন এই যুদ্ধকে কখনও ঠেলে দিচ্ছে গভীরে, আবার কখনও হাত বাড়াচ্ছে ক্ষণিকের শান্তির সম্ভাবনার দিকে।

রাশিয়ার এই আকাশপথে নজিরবিহীন আগ্রাসন শুধু ইউক্রেনের ভূখণ্ডে নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতির বুকে নতুন করে চাপের আবহ তৈরি করেছে। একদিকে ট্রাম্পের মন্তব্য, অন্যদিকে রাশিয়ার নিরলস হামলা—সব মিলিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল ও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। ইউক্রেন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাফল্য যতই থাক, এই ধরনের লাগাতার আক্রমণ বিশ্ববাসীকে আরও একবার ভাবিয়ে তুলেছে—শান্তির খোঁজ কি কেবল অলীক স্বপ্ন হয়েই থাকবে?

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply