কল্পনা করুন, একসময় ট্রাঙ্ককলের জন্য অপেক্ষা করা দেশ আজ ৫জি যুগে প্রবেশ করেছে! রঙিন টিভির বিস্ময় থেকে স্মার্টফোনের জাদু—সবকিছু বদলে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা যত দ্রুত হচ্ছে, ভারতের অর্থনীতি কি সেই তালে তাল মেলাতে পারছে? নাকি ঝলমলে প্রযুক্তির আড়ালে অর্থনীতির ভিত এখনো নড়বড়ে?
ভারতের অর্থনীতির ইতিহাস, ভারতের প্রযুক্তির ইতিহাস, ভারতের অর্থনীতি এবং প্রযুক্তির মধ্যে সেতুবন্ধন খুঁজতে চলুন, এই উত্তরণের গল্প জানার এক রোমাঞ্চকর যাত্রায়!
ভারতের অর্থনীতি ও প্রযুক্তির বিপ্লব: এক নতুন যুগের শুরু!
ভারতের অর্থনীতি ও প্রযুক্তির ইতিহাস একে অপরের পরিপূরক। সময়ের প্রবাহে প্রযুক্তি যেমন দেশের অর্থনীতিকে গতি দিয়েছে, তেমনি অর্থনৈতিক বিকাশের প্রয়োজনেও প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত, ভারত কতটা বদলেছে?
অতীতের ভিত্তি: শিল্প ও কৃষির যুগ
স্বাধীনতার পর ভারতের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর ছিল। দেশের বেশিরভাগ মানুষ চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এবং শিল্পে বিনিয়োগ সীমিত ছিল।
অর্থনীতির ভিত্তিপ্রস্তর
- ১৯৫০-এর দশক: ভারী শিল্প ও রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি চালু হয়। বাঁধ, ইস্পাত কারখানা, ব্যাঙ্কের জাতীয়করণ ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থনীতির ভিত গড়ে তোলা হয়।
- ১৯৭০-এর দশক: সবুজ বিপ্লবের ফলে কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে। উন্নত বীজ, সার ও সেচ ব্যবস্থার প্রসার ঘটে।
- ১৯৯১-এর আর্থিক উদারীকরণ: বৈদেশিক বিনিয়োগের দরজা খোলে, বেসরকারিকরণ বাড়ে, আর্থিক খাতের সংস্কার শুরু হয়।
কিন্তু এই সময় প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত ছিল। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা ছিল, উৎপাদনশীলতা কম ছিল, এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার কেবলমাত্র সরকার ও বড় সংস্থাগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
প্রযুক্তির উত্থান ও অর্থনীতির নতুন দিগন্ত
১৯৯০-এর দশকের পর থেকে তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি ভারতের অর্থনীতিকে নতুন মাত্রা দেয়।
তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব
- ২০০০-এর দশক: সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির বিকাশ ঘটে। ব্যাঙ্গালোর, হায়দরাবাদ হয়ে ওঠে আইটি শিল্পের কেন্দ্রস্থল। TCS, Infosys, Wipro-র মতো সংস্থাগুলি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফটওয়্যার পরিষেবা দিতে শুরু করে।
- বিপিও ও কন্ট্যাক্ট সেন্টার শিল্প: ভারত তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর চাকরির ক্ষেত্রে একটি গ্লোবাল হাব হয়ে ওঠে। আমেরিকা ও ইউরোপের কোম্পানিগুলি ভারতের সস্তা ও দক্ষ শ্রমশক্তিকে কাজে লাগাতে শুরু করে।
ডিজিটাল বিপ্লব ও অর্থনীতির সংযোগ
- ২০১৬-এর নোটবন্দির পর ডিজিটাল পেমেন্টের উত্থান: নগদ টাকার ব্যবহার কমতে থাকে, এবং ডিজিটাল লেনদেন ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। Paytm, PhonePe, Google Pay-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
- UPI-এর প্রসার: ২০২৩ সালে ভারত প্রতিদিন প্রায় ১০০ কোটি UPI লেনদেন সম্পন্ন করে, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের তুলনায় অনেক এগিয়ে।
প্রযুক্তি ও শিল্পের আধুনিক রূপান্তর
ভারতের অর্থনীতি ও প্রযুক্তির মধ্যে সংযোগ এখন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।
স্টার্টআপ কালচার
একসময় যেখানে বড় শিল্প সংস্থাগুলির একাধিপত্য ছিল, এখন সেখানে স্টার্টআপ বিপ্লব ঘটেছে।
- ভারতে ১০০+ ইউনিকর্ন স্টার্টআপ: অর্থাৎ যেসব সংস্থার মূল্য ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যেমন Zerodha, Byju’s, Oyo ইত্যাদি।
- AI, ব্লকচেইন, এবং ক্লাউড কম্পিউটিং-এর প্রসার: ভারতীয় স্টার্টআপগুলি এই প্রযুক্তিগুলি কাজে লাগিয়ে নতুন ব্যবসার পথ খুলছে।
গ্রামীণ অর্থনীতি ও প্রযুক্তির সংযোগ
শহরেই শুধু নয়, গ্রামেও প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে।
- কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার: ড্রোন, মাটির গুণমান বিশ্লেষণ প্রযুক্তি, স্মার্ট ইরিগেশন ব্যবস্থার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
- গ্রামীণ ডিজিটাল পরিষেবা: মোবাইল ব্যাঙ্কিং, ই-কমার্স, টেলিমেডিসিন গ্রামীণ জনগণের জীবন সহজ করে তুলেছে।