রেপো রেট কমলো, ইএমআই-এ হাসি ফোটাল রিজার্ভ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত

ঋণগ্রহীতাদের মুখে কিছুটা স্বস্তির ছায়া এনে, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ৫০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট হ্রাস করল। নতুন রেপো রেট এখন ৫.৫০ শতাংশ, যা আগের ৬ শতাংশ থেকে কম। এই পরিবর্তনে হোম লোন, পার্সোনাল লোন ও অটো লোনের ইএমআই-এ সরাসরি প্রভাব পড়বে। সুদের হারের এই নীরব নাচে ব্যাঙ্কগুলিও নড়েচড়ে বসেছে। রেট কমলেও, কতটা লাভ পাবেন গ্রাহকরা? লুকোনো অঙ্ক, সুদের হ্রাস, আর মাসিক সাশ্রয়ের সরল সমীকরণে জমে উঠছে নতুন আর্থিক নাটক।

🔹 স্টোরি হাইলাইটস (READ BOX)

  • রেপো রেট কমে ৫.৫০%

  • হোম লোনে ইএমআই কমবে প্রায় ₹১,৭৯০

  • ৫০ লক্ষ টাকার লোনে বাৎসরিক সাশ্রয় ₹২১,৪৮০

  • ৫ লক্ষ টাকার পার্সোনাল লোনে মাসে সাশ্রয় ₹১৫৯

  • পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কগুলি দ্রুত হারে সুদ কমাতে পারে

আরও কমলো আরবিআই-এর রেপো রেট, ইএমআই কমায় স্বস্তিতে ঋণগ্রহীতারা

অর্থনৈতিক চক্রের সূক্ষ্ম ওঠাপড়ার মাঝে, শুক্রবার এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিল রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI)। দেশের আর্থিক নীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে, এবং গ্রাহক ব্যয়কে উৎসাহিত করতে তারা রেপো রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে দিল। নতুন এই হারে এখন রেপো রেট দাঁড়াল ৫.৫০ শতাংশে, যা আগে ছিল ৬ শতাংশ। এই সিদ্ধান্ত যেমন ঋণগ্রহীতাদের স্বস্তির হাওয়া বইয়ে দিল, তেমনই ব্যাঙ্কগুলিও নড়েচড়ে বসেছে। কারণ এর প্রভাব সরাসরি ইএমআই এবং ঋণের জনপ্রিয়তার ওপর পড়বে।

মূলত, রেপো রেট হল সেই সুদের হার, যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে অর্থ ধার দেয়। এই হার কমলে, ব্যাঙ্কগুলিও তুলনামূলকভাবে কম সুদে গ্রাহকদের ঋণ দিতে পারে। আর তাতেই ইএমআই কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়, বিশেষত ভাসমান সুদের হারে ঋণ নেওয়া গ্রাহকদের জন্য।

যাঁরা ইতিমধ্যেই গৃহঋণের ইএমআই পরিশোধ করছেন, তাঁদের জন্য এই রেপো রেট হ্রাস একরকম অক্সিজেনের মতো। কারণ মাসের শেষে হাতে থাকা টাকার পরিমাণ একটু হলেও বাড়বে। যাঁরা আবার ঋণ নিতে চাইছিলেন কিন্তু সুদের হার বেশি দেখে পিছিয়ে আসছিলেন, তাঁদের মনেও আশার আলো জ্বলতে শুরু করেছে।

আগের রেকর্ড কী বলছে?

উল্লেখযোগ্য যে, ২০২০ সালের মে মাস থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত RBI রেপো রেট ৪ শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছিল, কোভিড পরিস্থিতির চাপে। এরপর, ধীরে ধীরে দেশের আর্থিক ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে, ২০২২-২৩ সালের মধ্যে এই হার ৬.৫ শতাংশে উন্নীত হয়। তা টানা দুই বছর অপরিবর্তিত ছিল। এবারে সেই ধারার মোড় ঘুরিয়ে RBI ফের হার কমানোর পথে হাঁটল।

RBI-এর এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র তাত্ত্বিক নয়, বাস্তব ক্ষেত্রে এর পরিষ্কার প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাঙ্কগুলি সাধারণত দ্রুত রেপো রেট কমানোর সুফল গ্রাহকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। এর ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে অন্যান্য বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিও সুদের হার কমাতে বাধ্য হয়। ফলে ঋণ নেওয়া আরও সহজ হয়ে ওঠে।

হোম লোনে কতটা সাশ্রয়?

ধরুন, একজন গ্রাহক ₹৫০ লক্ষ টাকার হোম লোন নিয়েছেন ৩০ বছরের জন্য। বর্তমানে যদি সুদের হার ৮.৭০ শতাংশ হয়, তাহলে তার মাসিক ইএমআই দাঁড়ায় ₹৩৯,১৩৬। রেপো রেট কমার পর সুদের হার যদি ৮.২০ শতাংশে নামে, তাহলে সেই একই ঋণের ইএমআই হবে ₹৩৭,৩৪৬। প্রতি মাসে ₹১,৭৯০ কমে যাওয়া ইএমআই বছরে সাশ্রয় দেবে ₹২১,৪৮০। আর ৩০ বছরে এই ছোট ছোট সাশ্রয় লক্ষাধিক টাকা হয়ে দাঁড়াবে।

পার্সোনাল লোনে পরিবর্তন কেমন?

একইভাবে, ₹৫ লক্ষ টাকার পার্সোনাল লোন ১২ শতাংশ হারে নেওয়া হলে ৫ বছরের জন্য ইএমআই হয় ₹১১,১২২। সুদের হার ১১.৫০ শতাংশে নেমে এলে এই ইএমআই কমে দাঁড়াবে ₹১০,৯৬৩। প্রতি মাসে ₹১৫৯ এবং বছরে ₹১,৯০৮ সাশ্রয়। যদিও এই পরিমাণ অল্প মনে হতে পারে, তবে যারা বহু ঋণের ভারে ক্লান্ত, তাদের জন্য এই ছোট সাশ্রয়ও মূল্যবান।

ব্যাঙ্কগুলির ভূমিকা কী?

তবে একটা বিষয় স্পষ্ট করে রাখা দরকার— এই সুবিধা যে সবাই সমানভাবে পাবেন, তা নয়। কারণ কোনও ঋণের সুদের হার গঠিত হয় দুটি অংশে— মার্জিনাল কস্ট অফ ফান্ডস বেসড লেন্ডিং রেট (MCLR) এবং ব্যাঙ্কের নির্ধারিত স্প্রেড। রেপো রেট কমলে MCLR সাধারণত কমে যায়, কিন্তু স্প্রেড ব্যাঙ্কভেদে ভিন্ন হতে পারে। ফলে কোন ব্যাঙ্ক কতটা রেপো রেট হ্রাসের সুবিধা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেবে, তা নির্ভর করে তাদের নিজস্ব নীতির ওপর।

অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে মানুষের খরচ করার প্রবণতা কমে যাওয়া এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, RBI-এর এই সুদের হার হ্রাস দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক গতি বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। ঋণের খরচ কমলে চাহিদাও বাড়বে, আর তাতে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও ভোক্তা ব্যয় বাড়বে। তবে বাস্তবে এই সুবিধা গ্রাহক পর্যন্ত কতটা পৌঁছবে, তার জন্য নজর রাখতে হবে ব্যাঙ্কগুলির বাস্তবায়নের গতির ওপর।

রিজার্ভ ব্যাংকের এই রেপো রেট হ্রাস নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক পদক্ষেপ, যা সাধারণ ঋণগ্রহীতাদের স্বস্তি দিতে পারে। ইএমআই কমার সম্ভাবনায় হোম ও পার্সোনাল লোনের বাজারে নতুন করে গতি আসবে বলেই আশা। তবে বাস্তবিক লাভ কতটা হবে, তা নির্ভর করবে ব্যাঙ্কগুলির সিদ্ধান্ত ও কার্যকর নীতির ওপর। সুদের হারে এই সূক্ষ্ম পরিবর্তন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখন সময়ই বলবে। তবুও, ঋণগ্রহীতাদের চোখে এই সিদ্ধান্ত এক নতুন আশার বার্তা।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply