উত্তরাখণ্ডের দেহরাদুনে মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যে তামসা নদী ফুলেফেঁপে ওঠে। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (IMD) সকাল ৯টা পর্যন্ত দেহরাদুন ও তেহরি গড়ওয়াল জেলার জন্য Red Alert জারি করে। আবহাওয়ার এই হঠাৎ পরিবর্তন শহরজুড়ে আতঙ্ক তৈরি করেছে। ভারি বর্ষণে ঐতিহাসিক Tapkeshwar Mahadev temple-এর প্রাঙ্গণ সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়ে যায়।
📌 Story Highlights (Read Box)
দেহরাদুনে তামসা নদীর ভয়ঙ্কর স্রোত
Tapkeshwar Mahadev temple প্লাবিত
Red Alert জারি করেছে IMD
SDRF ও পুলিশ উদ্ধারকাজে ব্যস্ত
এখনো কোনো প্রাণহানির খবর নেই
স্থানীয় মানুষজন জানিয়েছেন, ভারি বর্ষণের কারণে ভোরের দিকে তামসা নদী প্রবল বেগে বইতে শুরু করে। নদীর পানি মন্দিরের গর্ভগৃহ পর্যন্ত পৌঁছায়নি, কিন্তু চারদিকের প্রাঙ্গণ ও শিবলিঙ্গ কমপ্লেক্স ধ্বংসাবশেষে ঢেকে গেছে।
মন্দিরের পুরোহিত আচার্য বিপিন জোশি ANI-কে বলেন,
“এই ধরনের পরিস্থিতি বহুদিন দেখা যায়নি। বহু স্থানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মানুষকে এই সময়ে নদীর ধারে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।”
তিনি আরও জানান,
“ভোর ৫টা নাগাদ থেকেই তামসা নদীর জলধারা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। মন্দিরের গর্ভগৃহ আপাতত নিরাপদ রয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর নেই।”
ANI সূত্রে জানা গেছে, নদীর তীব্র স্রোতে মন্দিরের প্রাঙ্গণে ধ্বংসাবশেষ জমেছে এবং শিবলিঙ্গ কমপ্লেক্সে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
শুধু মন্দিরই নয়, অবিরাম বৃষ্টিতে দেহরাদুনের বেশ কিছু দোকানও ধসে পড়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, SDRF ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত উদ্ধার ও ত্রাণকাজ শুরু করেছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তবে প্রশাসনের তৎপরতায় অনেক মানুষ নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া গেছে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী ‘X’ (সাবেক টুইটার)-এ হিন্দিতে লিখেছেন,
“দেহরাদুনে ভারি বর্ষণে কয়েকটি দোকানের ক্ষতির দুঃখজনক সংবাদ পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসন, SDRF ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। আমি প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি ও ব্যক্তিগতভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সকলের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করছি।”
IMD জানিয়েছে, Red Alert চলাকালীন দেহরাদুনে ঘণ্টায় ১৫ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। সঙ্গে থাকবে বজ্রঝড় এবং ঘণ্টায় ৬২-৮৭ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া।
মনসুনকালে পাহাড়ি এলাকায় cloudburst বা হঠাৎ বৃষ্টিপাতের ঘটনা নতুন নয়। হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুর জেলার নামহোলে সম্প্রতি cloudburst-এ অন্তত ১০টি গাড়ি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে এবং ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
অগস্ট মাসে উত্তরাখণ্ডের ধারালি গ্রামে এক ভয়াবহ cloudburst-এর ফলে খীর গঙ্গা নদীতে হঠাৎ বন্যা নেমে আসে। সেই ঘটনায় বড়সড় ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও কর্মকর্তারা এই ঘটনার সঙ্গে ২০২১ সালের চামোলি বিপর্যয়ের তুলনা করেছেন, যেখানে ২০০-রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে দেহরাদুনের মানুষ ও পর্যটকদের জন্য প্রশাসনের স্পষ্ট বার্তা—ভারি বর্ষণ, Red Alert আর তামসা নদীর ভয়ঙ্কর রূপের মধ্যে নিরাপদে থাকা ও নদীর ধারে না যাওয়া অত্যন্ত জরুরি। SDRF ও প্রশাসন একযোগে কাজ করছে, তবে আবহাওয়ার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সতর্কতা অবলম্বনই একমাত্র উপায়।
উত্তরাখণ্ডের দেহরাদুনে তামসা নদীর রুদ্ররূপ ও Tapkeshwar Mahadev temple-এর প্লাবনের এই পরিস্থিতি পাহাড়ি অঞ্চলে হঠাৎ বৃষ্টিপাত ও cloudburst-এর ভয়াবহতা আবারও মনে করিয়ে দিল। ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের দেওয়া Red Alert সতর্কবার্তা স্পষ্ট করে জানাচ্ছে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন সবচেয়ে জরুরি। প্রশাসন, পুলিশ ও SDRF একযোগে কাজ করে যাচ্ছে, তবে সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদেরও এই সময় নদীর ধারে না গিয়ে সতর্ক থাকা আবশ্যক। শুধু ত্রাণ ও উদ্ধার নয়, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্যোগের মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও এখন অপরিহার্য।