চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের উল্লাসে ছায়া ফেলল শোক; FIR-এ নাম RCB-র শীর্ষে

চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আইপিএল জয়োৎসবের মাঝে ঘটে গেল মর্মান্তিক পদদলন। প্রাণ হারালেন ১১ জন, আহত বহু। পুলিশের এফআইআরে স্পষ্ট অভিযোগ, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (RCB), ডিএনএ এন্টারটেইনমেন্ট ও কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থা (KSCA) নিরাপত্তা উপেক্ষা করে অনুষ্ঠান চালিয়ে যায়। জনস্রোতের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে বিশৃঙ্খলা, ফল—ত্রাস আর মৃত্যু। কর্তব্যে চ্যুতির অভিযোগে এবার প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে IPL জয়োৎসবের নায়কেরাই। কাকে দায়ী করা যায়—সেটিই এখন তদন্তের কেন্দ্রে।

🧠 Quick Read 

ঘটনা: বেঙ্গালুরুতে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পদদলিত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু

তারিখ: ৪ জুন, ২০২৫

আহত: ৬০-এর বেশি

এফআইআর অনুযায়ী অভিযুক্ত:

  • RCB ফ্র্যাঞ্চাইজি (প্রথম অভিযুক্ত)

  • DNA এন্টারটেইনমেন্ট (দ্বিতীয় অভিযুক্ত)

  • KSCA প্রশাসনিক কমিশনার (তৃতীয় অভিযুক্ত)

অভিযোগ: পুলিশের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে অপর্যাপ্ত প্রস্তুতির মধ্যেই অনুষ্ঠান আয়োজন

অভিযোগকারী: কাব্বন পার্ক থানার পুলিশ ইনস্পেক্টর

IPL 2025 News | IPL Latest News | Indian Premier League 2025 Breaking News  - Moneycontrol

❖ পুলিশের নজরে কে কোথায় দাঁড়িয়ে

বুধবার বেঙ্গালুরুতে সংঘটিত ভয়াবহ পদদলনের ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ৬০ জনের বেশি আহত হওয়ার পর, এই ঘটনার এফআইআরের কপি সংবাদমাধ্যম-এর হাতে এসেছে। এফআইআরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) ফ্র্যাঞ্চাইজিকে প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে নাম করা হয়েছে।

দ্বিতীয় অভিযুক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে DNA এন্টারটেইনমেন্ট, একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, এবং তৃতীয় অভিযুক্ত হিসেবে নাম উঠেছে কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (KSCA) প্রশাসনিক কমিশনারের।

এফআইআরের তথ্য অনুযায়ী, কিউবন পার্ক থানার পুলিশ ইন্সপেক্টর এই অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, আরসিবির আইপিএল জয় উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশাল জনসমাগমের ফলে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এই সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল কেএসসিএ।

১৮ বছর পর আইপিএল ট্রফি জয় করায় বেঙ্গালুরু শহরে আরসিবিকে ঘিরে ব্যাপক উন্মাদনার সৃষ্টি হয়। সেই আবেগঘন পরিবেশেই উন্মাদ জনতার ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, যার ফলস্বরূপ ঘটে মর্মান্তিক পদদলনের ঘটনা।

❖ ঘটনাপরম্পরা যেভাবে গড়িয়েছে

এফআইআরে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, বেঙ্গালুরু পুলিশ আরসিবি, কেএসসিএ এবং DNA এন্টারটেইনমেন্ট-কে দায়ী করছে পুলিশি পরামর্শ না মানার জন্য। পুলিশ বারবার অনুরোধ করেছিল যাতে সময় নিয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও জনসংযোগ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায়। কিন্তু এফআইআরে বলা হয়েছে, “কেএসসিএ, ডিএনএ এবং আরসিবি ফ্র্যাঞ্চাইজি পুলিশের প্রস্তাবে সম্মত না হয়ে ০৪.০৬.২০২৫ তারিখে সন্ধ্যাবেলায় অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।”

বেঙ্গালুরু পুলিশ সরাসরি আরসিবি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে দোষারোপ করে বলেছে, “চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের আসন সংখ্যা ৩০,০০০ থেকে ৩৫,০০০ হলেও, আয়োজক সংস্থা ডিএনএ, কেএসসিএ, ব্যবস্থাপনা বোর্ড এবং আরসিবি ফ্র্যাঞ্চাইজি কোনওরকম জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা বা প্রবেশ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশ জারি করেনি।”

এফআইআরে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, “DNA, কেএসসিএ এবং আরসিবি ফ্র্যাঞ্চাইজির পক্ষ থেকে জনসংযোগ ও প্রবেশ ব্যবস্থাপনায় চরম অব্যবস্থাপনা দেখা যায়, যা এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী।”

ঘটনার পটভূমিতে বলা হয়েছে, ০৩.০৬.২০২৫ তারিখে আইপিএল ফাইনাল ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB) গুজরাটের আহমেদাবাদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাঞ্জাব কিংসকে (PBKS) হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। এই জয়ের পরের দিনই বেঙ্গালুরুতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে ঘিরে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ঘটে এই মর্মান্তিক পদদলনের ঘটনা।

Bengaluru Stampede: Crowd Control Lapses, Political Blame Game, And Many  Questions - News18

❖ কার ব্যর্থতা, কীভাবে

FIR স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করে:

“Stadium management, DNA Entertainment, and RCB franchise failed to implement a crowd management plan or issue clear instructions on entry protocols.”

অর্থাৎ, নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও রূপরেখা দেওয়া হয়নি, ছিল না কোনো নিয়ন্ত্রণ বা দিকনির্দেশ। গেট কোথায় খোলা, কোথা দিয়ে ঢুকতে হবে—এসব নিয়ে জনতার কাছে স্পষ্ট কোনও বার্তা ছিল না। আর তাতেই ছড়িয়ে পড়ে বিশৃঙ্খলা। ধাক্কাধাক্কি, হুড়োহুড়ির মধ্যেই কেউ পড়ে যান, কেউ পিষে যান পায়ের নিচে।

❖ সারা রাত ডিউটিতে পুলিশ

আইপিএলে আরসিবির জয় ঘোষণার পর, শহরজুড়ে উদযাপনের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার ক্রিকেটপ্রেমী সমবেত হন এম চিন্নাস্বামী ক্রিকেট স্টেডিয়ামের চারপাশে, যা কিউবন পার্ক থানার আওতাভুক্ত এলাকা।

শুধু স্টেডিয়াম নয়, শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিও ভিড়ে উপচে পড়ে। এমজি রোড, চার্চ স্ট্রিট, ইউবি সিটি এবং ভিত্তল মাল্য রোড—প্রত্যেকটি এলাকায় জমায়েত হয় বিশাল সংখ্যক সমর্থক, যারা বিজয় উৎসবে অংশ নেন।

এই পরিস্থিতিতে কিউবন পার্ক থানার সমস্ত অফিসার ও কর্মীরা, সহ সাব-ডিভিশনের পুলিশ ফোর্স, রাতভর দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ০৪.০৬.২০২৫ তারিখে সকাল ৫:৩০ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে সক্রিয়ভাবে নজরদারি চালিয়ে গিয়েছিল পুলিশ বাহিনী।

❖ কে নেবে দায়?

এই প্রশ্ন এখন ঘুরছে রাজ্য প্রশাসনের মাথার ওপরে। যেখানে উৎসব নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, সেখানে দায় কে নেবে? FIR-এ অভিযুক্ত হিসেবে নাম থাকলেও এখনও অবধি কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
বেঙ্গালুরুর বহু নাগরিক সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ জানাচ্ছেন—“উৎসব হলে কি জীবনের দাম কমে যায়?”

১৮ বছরের প্রতীক্ষার পর জয় আসে, শহর আনন্দে মাতোয়ারা হয়—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই আনন্দ উদ্‌যাপনকেই যদি গাফিলতি, অসাবধানতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন পরিকল্পনা প্রাণঘাতী করে তোলে, তবে সেই আনন্দ আর গর্বের মধ্যে শুধুই থেকে যায় শোকের ছায়া। এখন দেখার বিষয়, FIR অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, নাকি সবটাই চাপে পড়ে ধামাচাপা পড়ে যাবে?

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply