কলকাতার রাস্তায় ক্রমবর্ধমান “অবৈধ বসবাস” এবং “বাংলাদেশী অভিবাসী” গোষ্ঠীর উপস্থিতি নতুন উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। রাশ ড্রাইভিং-এর মতো ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ শহরের শান্তিকে বিঘ্নিত করছে, যেখানে নিয়মের ছলনায় নিরাপত্তা সংকট অবধারিত। এক প্রান্ত থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর থাকলেও, অপর প্রান্তে অবৈধ বসবাসের ছলনায় শহর যেন হারাচ্ছে নিয়ন্ত্রণ। এই ঘটনার পেছনে লুকিয়ে থাকা বাস্তবতা এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।
🔍 এক নজরে ঘটনাক্রম
২০২৫ সালের মে মাস। সকালবেলা কলকাতার ব্যস্ত কালীঘাট মোড়ে ঘটে যায় এক চাঞ্চল্যকর দুর্ঘটনা—যেখানে রাশ ড্রাইভিং-এর শিকার হন কলকাতা পুলিশের সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর (ASI) সুশেন দাস। এই ঘটনার নেপথ্যে উঠে আসে এক বাংলাদেশী অভিবাসী-র নাম: আজাদ শেখ।গাড়িটি চালাচ্ছিলেন ৪১ বছর বয়সী আজাদ শেখ, যিনি এক বাংলাদেশী অভিবাসী এবং কলকাতায় অবৈধ বসবাস করছিলেন অক্টোবর ২০২৩ থেকে ।
⚖️ অবৈধ বসবাসের চোরাপথে আজাদ শেখ
➤ সীমান্ত পেরিয়ে ছদ্মবেশে প্রবেশ
ফরিদপুর, বাংলাদেশ থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন আজাদ শেখ।
কোনও বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়াই কলকাতায় দীর্ঘদিন অবৈধ বসবাস করছিলেন তিনি।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ধরা পড়ে যে তিনি জাল পরিচয়পত্র দেখিয়ে শহরে ঠিকানা বানিয়ে নিয়েছিলেন।
➤ বাংলাদেশী অভিবাসী পরিচয় গোপন রেখে নাগরিক সুবিধা ভোগ
আধার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স—সব কিছুই জাল।
এই ধরনের বাংলাদেশী অভিবাসী-রা শহরের পরিকাঠামো ও নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।
আজাদ শেখ ছিলেন তার জলজ্যান্ত প্রমাণ।
🚨 রাশ ড্রাইভিং: শহরের রাস্তায় মৃত্যু ফাঁদ
➤ দুর্ঘটনার বিবরণ
কালীঘাট এলাকায় আজাদ শেখ রাশ ড্রাইভিং-এর সময় এক বাইক আরোহীকে ধাক্কা মারেন।
বাইকে ছিলেন ASI সুশেন দাস, যিনি পায়ে ভাঙা, মুখে কেটে যাওয়া এবং কোমরে চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
প্রথমে নেওয়া হয় SSKM ট্রমা কেয়ার সেন্টারে, পরে স্থানান্তর করা হয় কঠারী মেডিক্যালে।
➤ রাশ ড্রাইভিং ও অবৈধ বসবাসের যোগসূত্র
রাশ ড্রাইভিং কেবলমাত্র চালকের অসাবধানতা নয়, এর পেছনে রয়েছে অপরাধমূলক উদাসীনতা।
একজন বাংলাদেশী অভিবাসী যিনি অবৈধ বসবাস করেন, তার পক্ষে ট্রাফিক আইন মানা অলীক কল্পনা।
আজাদ শেখের মতো অবৈধ বসবাসকারী চালকদের হাতে শহর যেন অনিরাপদ।
🛑 আইনি দিক: কঠোর ধারা ও অপরাধের সাজা
➤ বহু ধারায় মামলা রুজু
আজাদ শেখের বিরুদ্ধে ভারতীয় Foreigners Act-এর 14A(b) ধারা এবং Bharatiya Nyaya Sanhita-এর 212 ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের হয়েছে।
উপরন্তু, রাশ ড্রাইভিং ও আহত করার কারণে লাগু হয়েছে BNS-এর 281, 125(b), 324(4), এবং 110 ধারাগুলি।
➤ অবৈধ বসবাস রোধে নজরদারি জরুরি
পুলিশের একাধিক বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, শহরে বাংলাদেশী অভিবাসী-দের চোরাপথে প্রবেশ এবং অবৈধ বসবাস আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় হুমকি।
তাদের বিরুদ্ধে তৎপরভাবে পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এমন রাশ ড্রাইভিং-এর ঘটনা আরও ঘটবে।
🧭 ➤ বাংলাদেশী অভিবাসী কীভাবে পাচ্ছে শহরে ঠাঁই?
🔹 সীমান্ত পেরোনোর ছিদ্রপথ – এক অঘোষিত ইন্ডাস্ট্রি
বাংলাদেশী অভিবাসী-দের জন্য ভারতীয় সীমান্ত এখন যেন “ওপেন ইনভিটেশন”।
সীমান্তে নজরদারি থাকলেও, কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত এজেন্ট ও স্থানীয় দালাল মিলে এই অবৈধ বসবাস-এর কারবারকে করেছে ‘পয়সা ইন কামিয়ে দেওয়া মেশিন’।
মালদা, উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া—এই জেলাগুলিতে চলছে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ প্রবেশের রুটিন রুট।
📝 চমকপ্রদ তথ্য:
এক একটি বাংলাদেশী অভিবাসী-কে ভারতীয় ভূখণ্ডে পাচার করতে স্থানীয় দালালরা ৮,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে।
🔹 জাল কাগজের ঝুড়ি – আধার, রেশন কার্ড, এমনকি ‘সৎ নাগরিক সনদ’
একবার ঢুকতে পারলেই, অবৈধ বসবাসকারী হয়ে পড়ছে “নিয়মিত নাগরিক”!
ভোটার তালিকায় নাম তোলা, জাল আধার বানানো, এমনকি স্কুলে ছেলেমেয়েকে ভর্তি করা—সব কিছুতেই সাহায্য করে এক শ্রেণির অসৎ দালাল।
এদের জন্য অবৈধ বসবাস এখন যেন “লোকাল অ্যাডজাস্টমেন্ট”-এর সহজ সমাধান।
📌 ঘোর বাস্তবতা:
একাধিক বাংলাদেশী অভিবাসী বর্তমানে কলকাতার হাইরাইজ ফ্ল্যাটেও থাকছেন—ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ-এ দালালদের বিজ্ঞাপন দেখে ঠিকানা খুঁজে নিচ্ছেন।
অবৈধ বসবাস ও রাশ ড্রাইভিং – একে অপরের পরিপূরক
যার কাগজ নেই, তার মাথায় দায়িত্বও নেই—তাই রাশ ড্রাইভিং যেন একটা ‘খেলা’।
আজাদ শেখের মতো বাংলাদেশী অভিবাসী-রা যারা অবৈধ বসবাস করছেন, তারা অনেকেই চুরি, ছিনতাই, ড্রাগ পাচার এবং এমনকি অবৈধ গাড়ি চালানোয় জড়িত।
চালকের লাইসেন্স জাল, গাড়ি ভাড়ায় নেওয়া, ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য—সবই রুটিন।
🎯 দৃষ্টান্তমূলক নজির:
আজাদ শেখের গাড়িতে কোনও ট্রাফিক স্টিকার ছিল না, রেজিস্ট্রেশন ছিল সন্দেহজনক, এবং সে নিজেই কোনও বৈধ লাইসেন্স দেখাতে পারেনি।
🔥 ➤ প্রশাসনের সক্রিয়তা এখন সময়ের দাবি
🔹 রাজনৈতিক পক্ষপাত ভুলে কড়া পদক্ষেপ জরুরি
বাংলাদেশী অভিবাসী-দের নিয়ে এক শ্রেণির রাজনৈতিক পক্ষপাত আজ অবৈধ বসবাস-কে প্রশ্রয় দিচ্ছে।
প্রশাসনের চোখের সামনে রাশ ড্রাইভিং করে পুলিশের গায়ে গাড়ি তুলে দিচ্ছে কেউ, আর তবুও ধরপাকড়ে গতি নেই—এটা শুধুই অবহেলা নয়, চরম ব্যর্থতা।
📣 সতর্ক বার্তা:
আজকের আজাদ শেখ, কালকের আরও বড় দুর্নীতির নাম হতে পারে। সময় থাকতে থামানো না গেলে, অবৈধ বসবাস হয়ে উঠবে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসের এক রূপ।
🔹 চিহ্নিতকরণ ও ডাটাবেস – এখনই না হলে কখন?
প্রত্যেক পৌরসভা ও থানা এলাকায় অবৈধ বসবাসকারী-দের তালিকা তৈরি জরুরি।
আধার-ভোটার ডেটা যাচাই, বাড়িভাড়া দেওয়ার রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করতে হবে।
ট্যাক্স রিটার্ন বা গাড়ির কাগজে সন্দেহজনক নাম দেখলেই তদন্ত শুরু করতে হবে।
📊 গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব:
একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেস যেখানে বাংলাদেশী অভিবাসী হিসেবে সন্দেহভাজনদের তথ্য সংরক্ষণ করা হবে—এই ব্যবস্থা এখন অতি জরুরি।
🔹 মিডিয়া ও নাগরিকদের ভূমিকা – শুধুই দর্শক নয়, সক্রিয় সেনা হওয়া দরকার
পাড়ার দালালদের চিনে প্রশাসনকে জানানো এখন নাগরিক দায়িত্ব।
কোনও রাশ ড্রাইভিং-এর ঘটনা দেখলে বা সন্দেহজনক ব্যক্তির গতিবিধি নজরে এলে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় না ছড়িয়ে সরাসরি থানায় জানানো হোক।
মিডিয়ার উচিত ঘটনাকে হাইলাইট করে প্রশাসনকে চাপের মুখে ফেলা।
গাফিলতি নয়, এখন চাই গণ-সতর্কতা ও প্রশাসনিক শুদ্ধি অভিযান
এই ঘটনা স্পষ্ট করে দেয়, একদিকে প্রশাসনের গা-ছাড়া মনোভাব, আর অন্যদিকে বাংলাদেশী অভিবাসী-দের শানদার অবৈধ বসবাস—দুইয়ে মিলে তৈরি হয়েছে এক নাগরিক নিরাপত্তার দুঃস্বপ্ন।
রাশ ড্রাইভিং যেন এখন অপরাধীদের পছন্দের খেলা, আর প্রশাসন যেন নিছক রেফারি!
এই ছবির ফ্রেমটা পাল্টাতে হলে এখনই চাই ‘কড়া পদক্ষেপ’, ‘অচেনা চেহারার ডেটাবেস’ আর সবজান্তা নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো