পহেলগাম হামলায় কোয়াডের তীব্র নিন্দা, সমুদ্র সীমান্তে চীন-সংকেত; চার দেশের বার্তায় সন্ত্রাস ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একক স্বর

পহেলগামে রক্তাক্ত জঙ্গি হামলার পর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে কড়া বার্তা দিল কোয়াড। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরব হল ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা। বিবৃতিতে জোরালোভাবে দাবি উঠল—অপরাধীদের অবিলম্বে বিচারের মুখে আনতে হবে। পাশাপাশি দক্ষিণ ও পূর্ব চিন সাগরে বিপজ্জনক সামরিক তৎপরতা ও বলপ্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল জোট। সরাসরি নাম না করেও চীনের প্রতি কূটনৈতিক দৃষ্টিতে স্পষ্ট বার্তা দিল তারা। একইসঙ্গে নতুন মেরুকরণে কোয়াড চিহ্নিত করল চারটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র—নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও মানবিক সহায়তা।

🗞️ STORY HIGHLIGHTS

  • কোয়াডের বিবৃতি: পহেলগাম হামলার তীব্র নিন্দা

  • ২২ এপ্রিলের হামলায় নিহত ২৬ জন

  • আন্তর্জাতিক আইন ও UNSCR অনুযায়ী তদন্তে সহযোগিতার আহ্বান

  • চীনের নাম না নিয়ে সমুদ্র অঞ্চলে সামরিকীকরণ নিয়ে উদ্বেগ

  • নতুন চারটি ক্ষেত্রে কাজ করবে কোয়াড: সামুদ্রিক নিরাপত্তা, অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও মানবিক সহায়তা

  • কোয়াড সমুদ্র পর্যবেক্ষণ মিশন শুরু

  • অক্টোবর ২০২৫-এ মুম্বইয়ে হবে ‘পোর্টস অফ দ্য ফিউচার’ সম্মেলন

পূর্ব লাদাখ থেকে দক্ষিণ চিন সাগর—গত কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক রাজনীতির আবহে এই ভূখণ্ডগুলিকে কেন্দ্র করে অস্বস্তি বাড়ছে। ঠিক সেই আবহেই ওয়াশিংটনে মিলিত হলেন কোয়াডের চার সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ভারতের পহেলগামে গত ২২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ উঠে এল এই বৈঠকে, যা চার দেশের একত্রে গৃহীত যৌথ বিবৃতিতে ঠাঁই পেয়েছে।

এই বিবৃতিতে একদিকে যেমন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে পূর্ব চিন সাগর ও দক্ষিণ চিন সাগরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতের হয়ে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার পেনি ওয়ং, জাপানের ইওয়ায়া তাকেশি এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও এই বৈঠকে অংশ নেন।

“The Quad unequivocally condemns all acts of terrorism and violent extremism in all its forms and manifestations, including cross-border terrorism, and renews our commitment to counterterrorism cooperation.”
Quad Joint Statement, Washington DC

এই একাধিক ইস্যুতে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে পরবর্তী সম্মেলনের দিক নির্দেশও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নভেম্বর মাসে ভারতেই অনুষ্ঠিত হবে কোয়াড সামিট। তার আগে এই বৈঠক যেন একধরনের প্রস্তুতিমূলক পর্যালোচনার ছোঁয়া রেখেছে।

পহেলগাম হামলার প্রসঙ্গে চার দেশ যে কতটা স্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে, তা উঠে এসেছে তাদের পরবর্তী বার্তাতেও। হামলার মূল চক্রী, সংগঠক, অর্থদাতা—এদের প্রত্যেককেই আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এনে অবিলম্বে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়েছে।

“We call for the perpetrators, organisers, and financiers of this reprehensible act to be brought to justice without any delay and urge all UN Member States, in accordance with their obligations under international law and relevant UNSCRs, to cooperate actively with all relevant authorities in this regard.”
Quad Foreign Ministers’ Statement

এখানে বিশেষ লক্ষ্যণীয় যে, বিবৃতিতে ‘ভারতীয় কর্তৃপক্ষ’ নয়, বরং ‘প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষ’-র কথাই বলা হয়েছে। এপ্রিল ২০২৫-এর শেষভাগে গৃহীত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবেও এই একই ভাষা ব্যবহার করা হয়েছিল। এটি কূটনৈতিক ভাষায় একটি সূক্ষ্ম কিন্তু অর্থবহ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।

ভারতের তরফে বৈঠকের আগে এস. জয়শঙ্কর দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দেন, ভারতের নিজের নাগরিকদের রক্ষায় তারা যে কোনও পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

“I expect our Quad partners to understand and appreciate that India will exercise its right to defend its people against terrorism.”
S. Jaishankar, External Affairs Minister, India

এই সন্ত্রাসবিরোধী বার্তার পাশাপাশি কোয়াডের লক্ষ্য যে কেবল স্থলভাগেই সীমাবদ্ধ নয়, তাও স্পষ্ট করে তোলা হয়েছে। দক্ষিণ ও পূর্ব চিন সাগরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মঞ্চ। যদিও চীনের নাম সরাসরি ব্যবহার করা হয়নি, তবে তাদের সামরিক আচরণ ও সমুদ্রপথে আগ্রাসনের ইঙ্গিত স্পষ্ট।

“We express our serious concerns regarding dangerous and provocative actions, including interference with offshore resource development, repeated obstruction of the freedoms of navigation and overflight, and the dangerous manoeuvres by military aircraft and coast guard and maritime militia vessels, especially the unsafe use of water cannons and ramming or blocking actions in the South China Sea.”
Quad Foreign Ministers’ Joint Statement

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতাবস্থা বদলে দেওয়ার একতরফা চেষ্টার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছে কোয়াড। বলপ্রয়োগ বা কৌশলগত দমনমূলক আচরণ—এসব যেন আন্তর্জাতিক নিয়ম ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলেই বার্তা দিয়েছে তারা।

এই বৈঠকে ভবিষ্যতের কর্মপদ্ধতি ও দিক নির্ধারণে চারটি মূল ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে—সামুদ্রিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তি, এবং মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া।

নতুন মার্কিন প্রশাসনের অধীনে এটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক কোয়াড বৈঠক। যদিও জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে চার দেশের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়েছিলেন, এই বৈঠক আরও কাঠামোবদ্ধ ও আনুষ্ঠানিক স্তরে এগিয়েছে।

বিশেষ লক্ষণীয় যে, পূর্বতন মার্কিন প্রশাসনের সময় কোয়াড বিবৃতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইজরায়েল-গাজা সংঘাত নিয়েও অবস্থান নেওয়া হত। তবে এবার সেই আন্তর্জাতিক বিবৃতির পরিধি সঙ্কুচিত করে শুধু ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

“Through this renewed focus, we will sharpen the Quad’s ability to leverage our resources to address the region’s most pressing challenges.”
Joint Statement, Quad Foreign Ministers’ Meeting

বৈঠকের পর মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে একটি ফ্যাক্ট শিট প্রকাশিত হয়। এতে বেশ কিছু কার্যক্রমের ঘোষণা দেওয়া হয়—মুম্বইয়ে অক্টোবর ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘Quad Ports of the Future Partnership’ সম্মেলন, পালাউ থেকে গুয়াম পর্যন্ত মার্কিন কোস্ট গার্ড জাহাজে কোয়াড পর্যবেক্ষণ মিশন শুরু হয়েছে, এবং চলতি মাসেই দ্বিতীয় ‘মারিটাইম লিগ্যাল ডায়লগ’ অনুষ্ঠিত হবে।

সব মিলিয়ে এই বৈঠক সন্ত্রাসবিরোধী ও সমুদ্র নিরাপত্তা প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দিকটিকেই প্রাধান্য দিয়েছে। একদিকে যেমন ভারতীয় ভূখণ্ডে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবস্থান, অন্যদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা—এই দ্বিমুখী নীতি ভবিষ্যতের কোয়াড ভূমিকার দিশা দেখাচ্ছে।

পহেলগাম হামলার তীব্র নিন্দা করে কোয়াড যে বার্তা দিল, তা কেবল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া নয়—এ এক সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক ঐক্যের প্রকাশ। বিচারের দাবিতে চার দেশের একযোগে গর্জন, ভারতীয় অবস্থানকে যেমন শক্ত ভিত দেয়, তেমনই বৈশ্বিক নিরাপত্তা চিন্তার দিকেও ইঙ্গিত করে। পাশাপাশি দক্ষিণ ও পূর্ব চিন সাগর নিয়ে উদ্বেগ, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নতুন ভারসাম্য গঠনের ইঙ্গিতও স্পষ্ট করে তোলে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই সম্মিলিত কণ্ঠস্বর এক আশাব্যঞ্জক বার্তা—সন্ত্রাস আর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবার জোটবদ্ধ পদক্ষেপের সময়।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply