QS World University Rankings 2026-এ ভারতের ৫৪টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে—যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ১২টি আইআইটি-সহ ৮টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিষেক ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীনের পর চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। IIT দিল্লি সর্বোচ্চ স্থান পেয়ে দেশকে গর্বিত করেছে। র‍্যাঙ্কিংয়ে গবেষণা, নিয়োগযোগ্যতা ও আন্তর্জাতিক পরিচিতির বিচারে ভারতের উত্থান এখন বিশ্বমঞ্চে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শিক্ষা, উন্নয়ন ও বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতার এই গল্পে লুকিয়ে আছে এক অভূতপূর্ব অগ্রগতির ছাপ।

📌 Story Highlights

  • QS World University Rankings 2026-এ ভারতের ৫৪টি বিশ্ববিদ্যালয় তালিকাভুক্ত

  • ৮টি নতুন ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিংয়ে অভিষেক

  • ১২টি আইআইটি-র শক্তিশালী উপস্থিতি

  • IIT দিল্লি ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান, বিশ্বে ১২৩তম স্থান

  • ৫টি প্রতিষ্ঠান Employer Reputation ক্যাটাগরিতে শীর্ষ ১০০-তে

  • ৮টি ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ‘Citations per Faculty’-তে বিশ্বসেরা

  • ভারত এখন QS র‍্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বে চতুর্থ সর্বাধিক প্রতিনিধিত্বকারী দেশ

দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য ২০২৫ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখটি একটি স্মরণীয় দিন হয়ে উঠল। কারণ, এই দিন কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে যে, QS World University Rankings 2026-এ ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলির অবস্থান ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এত উচ্চে পৌঁছেছে।

ব্রিটেনের প্রভাবশালী র‍্যাঙ্কিং সংস্থা Quacquarelli Symonds (QS) দ্বারা প্রকাশিত এই তালিকায় ভারতের মোট ৫৪টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ১২টি হল খ্যাতনামা ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বা আইআইটি। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এ বছর প্রথমবারের মতো র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রবেশ করেছে ৮টি নতুন ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্বে উচ্চশিক্ষার র‍্যাঙ্কিংয়ে এত বিশাল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ভারতীয় উপস্থিতি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং মূল ভূখণ্ড চীনের পরেই ভারত এখন চতুর্থ অবস্থানে উঠে এসেছে—এটি নিঃসন্দেহে দেশের শিক্ষাখাতের একটি বড় অর্জন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই অর্জনের প্রশংসা করে সামাজিক মাধ্যমে এক বার্তায় বলেন—

“QS World University Rankings 2026 আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রের জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে। আমরা গবেষণা ও উদ্ভাবনের পরিবেশকে উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে ভারতের যুবসমাজ উপকৃত হয়।”

শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এই প্রসঙ্গে বলেন—

“২০১৪ সালে যেখানে QS র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারতের মাত্র ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, সেখানে আজকের দিনে ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি দেখিয়ে দিচ্ছে আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে কী পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে। এই পাঁচ গুণ বৃদ্ধি কোনও কাকতালীয় নয়, এটি জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-এর বাস্তবায়নের সরাসরি ফল।”

তিনি আরও বলেন,

“জাতীয় শিক্ষানীতি কেবল উচ্চশিক্ষার কাঠামো বদলাচ্ছে না, এটি একটি বিপ্লবের জন্ম দিয়েছে। ভারত এখন G-20 দেশগুলোর মধ্যে দ্রুততম হারে উন্নয়নশীল শিক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে উঠে এসেছে। এই গতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আরও অনেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের স্বীকৃতি অর্জন করবে।”

তালিকাভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে IIT দিল্লি এবার ভারতের সেরা স্থানে রয়েছে। ২০২৫ সালে বিশ্বর‍্যাঙ্কিংয়ে ১৫০তম স্থান থেকে এবার এটি উঠে এসেছে ১২৩তম স্থানে। এর পাশাপাশি, IIT মাদ্রাস ৪৭ ধাপ এগিয়ে ২২৭তম স্থান থেকে ১৮০তম স্থানে উঠে এসেছে। এই উত্থানগুলি কেবল পরিসংখ্যান নয়, বরং দেশের প্রযুক্তি শিক্ষার উন্নয়নের প্রমাণ।

মোট ১২টি আইআইটি এবার QS তালিকায় রয়েছে, যা বিশ্ব শিক্ষাক্ষেত্রে ভারতের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করছে। এছাড়াও, ভারতের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান Employer Reputation ক্যাটাগরিতে শীর্ষ ১০০-তে স্থান পেয়েছে। এটি পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বিশ্বব্যাপী শিল্প ও নিয়োগকারীরা ভারতীয় স্নাতকদের ওপর কতটা আস্থা রাখছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণামূলক কাজের মান বিচার করে ‘Citations per Faculty’ তালিকাতেও ভারতের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। QS-এর মতে, এই বিভাগে ভারতের আটটি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের সেরা ১০০-র মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। এদের গড় স্কোর ৪৩.৭—যা জার্মানি, যুক্তরাজ্য এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায়ও বেশি।

এবার QS র‍্যাঙ্কিং-এ ভারতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কেন্দ্র-চালিত বিশ্ববিদ্যালয়, স্ব-ঘোষিত বিশ্ববিদ্যালয়, ও প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও উল্লেখযোগ্য স্থান অর্জন করেছে।

নতুনভাবে যারা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে তারা হল:

IIT গাঁধীনগর, লাভলী প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটি (LPU), কালিঙ্গা ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি, অশোকা ইউনিভার্সিটি, গালগোটিয়াস ইউনিভার্সিটি, শিব নাদার ইউনিভার্সিটি, ক্রিস্ট ইউনিভার্সিটি এবং মানব রচনা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজ (MRIIRS)।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ বছর ভারতের তালিকাভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে ৪৮% তাদের আগের বছরের অবস্থান থেকে উন্নতি করেছে।

বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার এই ধারাবাহিকতা ভারতকে ভবিষ্যতের জ্ঞান-অর্থনীতির কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারে—এমনটাই মনে করছেন শিক্ষাবিদ ও নীতিনির্ধারকরা।

QS World University Rankings 2026-এ ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই উল্লেখযোগ্য সাফল্য শুধু পরিসংখ্যান নয়, বরং দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার ধৈর্য, নীতি ও দূরদর্শিতার ফল। সরকারি ও বেসরকারি মিলিত প্রচেষ্টায় যে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছনো সম্ভব, তা এই ফলাফল স্পষ্ট করে। গবেষণা, উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথে এগিয়ে চলা এই অগ্রযাত্রা ভবিষ্যতের জন্য এক আশাব্যঞ্জক ইঙ্গিত। বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থার স্বপ্ন এবার আর কল্পনা নয়, বাস্তবের দরজায় কড়া নাড়ছে।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply