পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউ, পশ্চিমবঙ্গের রিষড়ার গর্ব, আজ সাহস ও দেশভক্তির জীবন্ত প্রতিমা। সীমান্ত ভুলে শত্রুপক্ষের কবলে পড়েও যিনি মাথা নত করেননি, বরং চিত্তের দৃঢ়তায় প্রমাণ করেছেন—সীমান্ত শুধু মানচিত্রে নয়, মনেও হয় অতিক্রম। ২২ দিন ধরে পাকিস্তানের অমানবিক জেরা, নিদ্রাহীন নির্যাতন, পরিবার-সমাজের উদ্বেগ—সব ছাপিয়ে ফিরে আসা এই বিজয়, আমাদের জাতীয় গর্বের অনন্য অধ্যায়। এ গল্প শুধু পূর্ণম কুমার সাউয়ের নয়, প্রতিটি দেশপ্রেমিক হৃদয়ের অহঙ্কারের প্রতিধ্বনি।

সূচিপত্র

দুর্ঘটনাবশত সীমান্ত অতিক্রম — শুধু ভুল, না গভীর ষড়যন্ত্র?

‌ ঘটনার সূচনা

২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল, পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সেক্টরে নিয়মিত টহলের সময়, বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউ এক অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হন। সীমান্তের জটিল ভৌগোলিক গঠনের কারণে, তিনি ভুলবশত সীমান্ত রেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানি ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন।

 প্রযুক্তিগত ত্রুটি না গোপন ফাঁদ?

এখানে প্রশ্ন উঠছে—সীমান্তে এত নজরদারি সত্ত্বেও, কীভাবে একজন প্রশিক্ষিত বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউ এভাবে প্রবেশ করলেন? অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এটি পাকিস্তানের রেঞ্জার্সদের পরিকল্পিত ‘ক্যাচ-এন্ড-গ্রিল’ কৌশলেরই অংশ।

 পাকিস্তানের অবিলম্বে প্রতিক্রিয়া

পূর্ণম কুমার সাউকে মুহূর্তেই আটক করে পাকিস্তান রেঞ্জার্স। এরপরই তাঁকে তুলে দেওয়া হয় আইএসআই ও সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের হাতে—যেখানে শুরু হয় স্নায়ু-ভাঙার মানসিক খেলা।

২২ দিনের বন্দিদশা — এক মানসিক যুদ্ধের সূক্ষ্ম বিবরণ

 প্রতিদিন রাতের জেরা

পূর্ণম কুমার সাউকে প্রতিদিন রাতে নিদ্রাহীন রেখে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ঘূর্ণায়মান প্রশ্নে জর্জরিত করে তোলে। অদ্ভুতভাবে একই প্রশ্ন বারবার করা হয়—“তুমি কি গুপ্তচর?” “তোমার মিশন কী?” — একপ্রকার মানসিক সন্ত্রাস চালানো হয় তাঁর উপর।

 মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন

22 দিনের বন্দিদশার প্রতিটি রাত যেন ছিল নির্যাতনের আরেক নাম। যদিও পূর্ণম কুমার সাউ-এর উপর শারীরিক নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি, তবু তাঁকে নিয়মিতভাবে ঘুম থেকে বঞ্চিত করা হয়—যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

 পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল ভারতীয় বাহিনীর গোপন তথ্য

সূত্র বলছে, জেরা ছিল মূলত বিএসএফের কৌশলগত অবস্থান, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ, এবং সীমান্তবর্তী ইনফ্রাস্ট্রাকচারের দিকেই। পাকিস্তান এ ঘটনাকে শুধুই “অনুপ্রবেশ” হিসেবে চালাতে চাইলেও পূর্ণম কুমার সাউ-এর সাহসিকতা তাতে ফাটল ধরিয়েছে।

সাহসিকতার সাক্ষাৎ রূপ: পূর্ণম কুমার সাউ

 মানসিক দৃঢ়তা ও রাষ্ট্রপ্রেম

যেখানে এক পেশাদার সৈনিক ভেঙে পড়তে পারেন, সেখানে পূর্ণম কুমার সাউ ছিলেন অটল। তাঁর দেশভক্তি, সংযম, এবং স্বচ্ছ বিবেক তাঁকে রক্ষা করে। পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁর প্রথম মন্তব্য ছিল—“আমি আবার ফিরে যাব দেশের সেবায়।”

 ‘আসল যুদ্ধ লড়েছি মাথার ভেতর’

এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, পাকিস্তানি বন্দিদশা ছিল কেবল বাহ্যিক নয়, এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। যেখানে জয় করেছেন একমাত্র পূর্ণম কুমার সাউ

Pakistan returns BSF jawan Purnam Kumar Shaw to India at Attari-Wagah border | Today News

পূর্ণম কুমার সাউ – শুধু একজন বিএসএফ জওয়ান নন, ভারতের আত্মার প্রতীক

 রিষড়ার গর্ব

পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার রিষড়ার এই তরুণ যেন জাতীয়তাবাদের এক জীবন্ত কাব্য। পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে, যখন তিনি ঘরে ফিরলেন—তাঁকে স্বাগত জানাল গোটা শহর।

 জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বার্তা

পূর্ণম কুমার সাউ-এর ঘটনাটি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়; এটি পাকিস্তানের তথাকথিত “শান্তি বার্তা”-র আসল চেহারার উন্মোচন। ভারতের প্রতিটি সৎ নাগরিকের মনে আজ এই প্রশ্ন—সীমান্তের ওপারে মানবতা কোথায়?

পূর্ণম কুমার সাউ নামটি আজ সাহস, ধৈর্য ও দেশপ্রেমের প্রতীক। পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত বিজয় নয়, ভারতের প্রতিরক্ষা মনোবলের এক অসামান্য নিদর্শন। পাকিস্তান তার পুরনো ছায়াযুদ্ধ চালালেও, পূর্ণম কুমার সাউ-এর মত জওয়ানরা তাদের ব্যর্থ প্রমাণ করছে, আবারো আবারো।

👨‍👩‍👦 পরিবারের উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া

স্ত্রীর গর্ভকালীন সংগ্রাম — নিঃসঙ্গ যুদ্ধ এক সাহসিনীর

 গর্ভাবস্থায় চরম অনিশ্চয়তা

যখন স্বামী পূর্ণম কুমার সাউ পাকিস্তানি বন্দিদশায় দিন কাটাচ্ছেন, তখন তাঁর স্ত্রী রজনী সাউ গর্ভবতী অবস্থায় লড়ছেন এক অদৃশ্য যুদ্ধ। পাক রেঞ্জার্সের হাতে স্বামীর আটকের খবর শুনেই তিনি কোনও সময় নষ্ট না করে রওনা দেন পঠানকোটের বিএসএফ হেডকোয়ার্টারে।

 প্রশাসনিক দ্বারে দ্বারে — এক গর্ভবতীর অসীম ধৈর্য

রজনী সাউ প্রতিদিন পঠানকোটে বিএসএফ কমান্ড্যান্ট, জেলা প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি বারবার বলেন, “আমি সব শুনব, সব জানব, কারণ ও (পূর্ণম কুমার সাউ) আমার স্বামী এবং একজন বিএসএফ জওয়ান।”

 মাতৃত্বের আগে স্ত্রীর দেশপ্রেম

এই ঘটনায় জাতি দেখল—পূর্ণম কুমার সাউ-এর পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই সাহসিকতার প্রতীক। রজনীর অবিচল মনোভাব প্রমাণ করে দেয়, কেবল জওয়ান নয়, তাঁদের পরিবারও প্রতিরক্ষার অন্তর্গত একটি স্তম্ভ।

পিতার জেদ — দৃঢ়তা নয়, এক আদর্শিক বারুদের জবাব

 ভোলানাথ সাউ: নির্লিপ্ত নয়, নির্ভীক

পূর্ণম কুমার সাউ-এর পিতা ভোলানাথ সাউ সংবাদমাধ্যমে স্পষ্ট জানান, “আমার ছেলে পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছে, কিন্তু ও আবার সীমান্তে যাবে। দেশের সেবা থেকে কিছুই ওকে বিরত রাখতে পারবে না।”

এই বক্তব্য শুধু এক পিতার নয়, এক জাতীয়তাবাদী মননের প্রতিধ্বনি।

 রাজনৈতিক বার্তা লুকিয়ে রয়েছে উত্তরে

এই বক্তব্য একরকম কূটনৈতিক বার্তাও দেয়—পাকিস্তানের বন্দিদশা ও নির্যাতন পূর্ণম কুমার সাউ-এর মনোবলে বিন্দুমাত্র চিড় ধরাতে পারেনি। বরং তাঁর পরিবার এক অদৃশ্য বার্তা দিল: ভারতের প্রতিটি বিএসএফ জওয়ান যদি এক একটি তলোয়ার হয়, তবে তাঁদের পরিবারই সেই মাটির হাতল, যা জাতিকে ধরে রাখে।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া — প্রতিবেশীরা কী বললেন?

 রিষড়ার রাস্তায় ত্রিবর্ণ পতাকার ঢেউ

পূর্ণম কুমার সাউ পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলে, রিষড়ার গলিতে শুরু হয় বিজয়োৎসব। প্রতিটি ঘরে পতাকা, প্রতিটি গলিতে তাঁর নামে পোস্টার—এই আবেগ কোনও রাজনৈতিক প্রচারের ফল নয়, বরং নিঃস্বার্থ দেশভক্তির পরিণতি।

 স্থানীয়দের কণ্ঠে গর্ব

অনেক প্রতিবেশী জানান, “ও আমাদের রিষড়ার ছেলে, কিন্তু এখন ও ভারতের গর্ব। পাকিস্তান যা খুশি করুক, ওঁর মত বিএসএফ জওয়ানদের মনোবল ভাঙতে পারবে না।”

গণমাধ্যমে বর্ণিত পারিবারিক মনোবল — একটি দেশপ্রেমিক কাহিনির দৃষ্টান্ত

 সংবাদপত্র ও মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া

পূর্ণম কুমার সাউ-এর পরিবার নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিশেষ কভারেজ হয়। Times of India, Ananda Bazar, সহ বহু মাধ্যম বারবার উল্লেখ করে তাঁর স্ত্রী ও পিতার ধৈর্য ও দেশপ্রেমের কথা—যা প্রমাণ করে, শুধু সৈনিক নয়, সৈনিকের ঘরও একটি যুদ্ধক্ষেত্র।

 পাকিস্তানকে এক নীরব অথচ নির্মম কূটনৈতিক চাবুক

পূর্ণম কুমার সাউ-এর পরিবার, বিশেষত স্ত্রী ও পিতার বক্তব্য, ভারতের নাগরিক মনোভাবের প্রতিচ্ছবি। পাকিস্তান যেভাবে কূটনৈতিক রীতি ভেঙে একজন বিএসএফ জওয়ানকে বন্দি করেছিল, সেই অমানবিকতার জবাব এদেশ দিয়েছে সংযম ও গর্বের মাধ্যমে।

পূর্ণম কুমার সাউ শুধু একজন বিএসএফ জওয়ান নন, তাঁর পরিবারও ভারতের আত্মার প্রতিচ্ছবি। পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তির পর এই পরিবার যেভাবে ধৈর্য, আত্মসম্মান এবং দেশের প্রতি বিশ্বাস ধরে রেখেছে, তা ইতিহাসে এক নতুন নজির। আজ তাঁরা শুধু রিষড়ার গর্ব নন, সমগ্র জাতির অহঙ্কার।

Efforts Intensify For Safe Return Of BSF Constable Purnam Kumar Shaw After Accidental Border Crossing

🏛 সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকায় কূটনৈতিক চতুরতা

মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ — নীরব নয়, নির্দ্বিধা পদক্ষেপ

 রাজনৈতিক স্তরে মানবিক চাপ

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যক্তিগতভাবে পূর্ণম কুমার সাউ-এর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিষয়টি পৌঁছে দিতে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি দেন। এই হস্তক্ষেপ ছিল ‘soft pressure diplomacy’-এর নিদর্শন—যেখানে রাজ্য প্রশাসনের সদিচ্ছা কেন্দ্রকে বাধ্য করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে।

 মিডিয়া প্রভাব ও প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিবৃতিতে বলেন, “একজন বিএসএফ জওয়ান যদি সীমান্তে দেশের জন্য প্রাণ বাজি রাখতে পারেন, তবে আমরা প্রশাসনিকভাবে চুপ থাকব কেন?” এই কথাই প্রমাণ করে, রাজ্য রাজনীতি শুধু উন্নয়ন কেন্দ্রিক নয়, জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান পরিষ্কার।

 প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা — কূটনৈতিক দাবার চাল

 সাউথ ব্লক থেকে করাচি পর্যন্ত বার্তা

পূর্ণম কুমার সাউ যখন পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান, তখন তা ছিল শুধু কূটনৈতিক জয় নয়—বরং এক কৌশলগত চাবুক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-র সরকার তীব্রভাবে পাকিস্তান হাই কমিশনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করে এবং পূর্ণম কুমার সাউ-এর বন্দিত্বের অজুহাত খণ্ডন করে।

 ‘Track-II Diplomacy’-র নেপথ্য কাহিনি

সূত্র মতে, এই মুক্তির পেছনে শুধুমাত্র আন্তঃরাষ্ট্রীয় চাপ নয়, বরং কিছু Track-II যোগাযোগ (গোপনীয় রাজনৈতিক বার্তা ও মিডিয়া চাপ) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিজেপি সূত্র মতে, পূর্ণম কুমার সাউ-এর বিষয়টি সেনা ও RAW পর্যায়ে বিশেষ নজর পায়।

 সংসদীয় স্তরে আওয়াজ — এক জওয়ানের ইস্যু, জাতীয় গর্বে রূপান্তর

 সাংসদদের প্রশ্ন ও সংসদে উত্তাল বিতর্ক

হুগলি জেলার সাংসদ এবং তৃণমূল ও বিজেপি উভয় দলের প্রতিনিধিরা সংসদে বিষয়টি তোলেন। প্রশ্ন তোলা হয়, কীভাবে একজন বিএসএফ জওয়ান সীমান্ত পেরিয়ে শত্রু রাষ্ট্রে আটক হলেন, এবং কেন প্রথমিক প্রতিক্রিয়ায় দেরি হল।

 সংসদীয় দলগুলির একত্মতা

প্রতিপক্ষ হলেও এই ইস্যুতে সর্বদলীয় ঐক্য দেখা যায়। কংগ্রেস, বাম ও অন্যান্য দল পূর্ণম কুমার সাউ-এর মুক্তিকে ‘সেনাদের আত্মবলের বিজয়’ বলে ব্যাখ্যা করে, যা পাকিস্তানের প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা।

 পরিবারকেন্দ্রিক প্রশাসনিক সহায়তা — শুধুই রাজনৈতিক নয়, মানবিকও

 জেলা প্রশাসনের সক্রিয়তা

পূর্ণম কুমার সাউ-এর পরিবার যাতে কোনওভাবেই আইনি বা প্রোটোকল সংক্রান্ত সমস্যায় না পড়ে, তার জন্য হুগলি জেলা প্রশাসন তাঁদের সর্বক্ষণের সাপোর্ট দেয়। তাঁদের জন্য একটি হেল্পলাইন চালু করা হয় এবং একজন লিয়াজোঁ অফিসার নিয়োগ করা হয়।

 স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও যোগাযোগ সহায়তা

রজনী সাউ-এর জন্য রাজ্য সরকার স্থানীয় হাসপাতালে বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। একই সঙ্গে, পূর্ণম কুমার সাউ-এর পরিবারের উপর কোনও চাপ যাতে না পড়ে, তার জন্য পুলিশ প্রশাসন মনিটরিং রাখে। এমনকি তাঁদের মোবাইল ফোনে আন্তর্জাতিক কল ট্র্যাকিং সুরক্ষিত করা হয়েছিল।

পূর্ণম কুমার সাউ, একজন বিএসএফ জওয়ান, যিনি পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ভারতের বীরত্বের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন, তাঁর পেছনে কাজ করেছে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনের এক বিরল সহযোগিতা। যেখানে রাজনীতি থেকেও উপরে উঠে গেছে দেশপ্রেম এবং জাতীয় গর্ব।

🏠 রিষড়ায় উচ্ছ্বাস: গর্বে আপ্লুত জনতা ও পারিবারিক আবেগের জোয়ার

আবেগে ভেসে উঠল রিষড়ার রাস্তাঘাট

 স্বাগত মিছিলে অংশ নিল হাজারের বেশি মানুষ

পূর্ণম কুমার সাউ যখন পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে নিজের শহর রিষড়ায় ফিরে এলেন, তখন তা শুধুই একটি জওয়ানের প্রত্যাবর্তন নয়, বরং এক গণউচ্ছ্বাসের মহোৎসব। শহরের সর্বত্র তেরঙা পতাকা, ঢাকের শব্দ, মিষ্টির হাঁড়ি আর ফুলের মালা—একটি বিজয় উৎসবের ছবি।

👉 তথ্যসূত্র: স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, প্রায় ১২টি ক্লাব এবং ৬টি স্কুল এই বিজয়ী বিএসএফ জওয়ান-কে বরণ করে নিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে।

 পারিবারিক আবেগ ও মা-বাবার অশ্রুসজল শ্রদ্ধা

 মা বললেন: “আমার ছেলে ফিরে এসেছে, ঈশ্বরের কৃপায়”

পূর্ণম কুমার সাউ-এর মা নিজের হাতে পায়ে আলতা দিয়ে সন্তানের আগমন উদযাপন করেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তানি হিংস্রতার মধ্যে থেকেও ঈশ্বর ও দেশের আশীর্বাদ ওকে ফিরিয়ে দিয়েছে।” তাঁর চোখে অশ্রু, গলায় গর্ব—এ যেন এক সশস্ত্র মায়ের পুনর্জন্ম।

 বাবার গর্বে দৃপ্ত উচ্চারণ

রামচন্দ্র সাউ বলেন, “আমার ছেলে ফের সীমান্তে যেতে চায়—ও বিএসএফ জওয়ান হতে গর্ববোধ করে। পাকিস্তান যতই ভয় দেখাক, ওকে থামাতে পারবে না।” এই বক্তব্যে গোটা জনপদের গর্ব একত্রিত হয়ে ওঠে।

 প্রতিবেশী ও শিশুদের চোখে নায়ক

 পাড়ার ছেলেরা বলছে, “ওই তো আমাদের ভাই”

স্থানীয় কিশোর-কিশোরীরা হাতে পতাকা ও ‘Welcome Back Hero’ লেখা ব্যানার নিয়ে অভ্যর্থনা জানায়। শিশুদের কেউ কেউ বলে, “পূর্ণম কুমার সাউ দাদার মতো হতে চাই।” এই আবেগ শুধু একজন বিএসএফ জওয়ান-এর নয়, বরং এক জাতীয় আইকনের প্রতি শ্রদ্ধা।

 এলাকার স্কুলে বিশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি সভা

রিষড়ার দুটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণম কুমার সাউ-এর পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়, যেখানে জাতীয় সংগীত, দেশাত্মবোধক গান এবং ছাত্রদের হাতের তৈরি কার্ড তুলে দেওয়া হয় সাউ পরিবারকে।

 মিডিয়া ও রাজনৈতিক নেতাদের আগমন

 রাজনৈতিক সংহতি: সব দলের নেতারা পাশে

তৃণমূল থেকে বিজেপি, সিপিএম থেকে কংগ্রেস—সব দলের স্থানীয় নেতারা পূর্ণম কুমার সাউ-এর বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এতে বোঝা যায়, বিএসএফ জওয়ান-এর সাহসিকতা দলনিরপেক্ষ।

 সংবাদমাধ্যমের নজর: হিরো নয়, লেজেন্ড

একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল ও জাতীয় সংবাদপত্র পূর্ণম কুমার সাউ-এর রিষড়া প্রত্যাবর্তনকে শিরোনামে তোলে। “পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি”-র এই গল্প আজকের দিনে ভারতীয় সুরক্ষা ইতিহাসের অন্যতম উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

 এক অদৃশ্য বার্তা: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠা

 সাধারণ মানুষের তীব্র প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় জনগণের মন্তব্য, “পাকিস্তানকে বুঝে নিতে হবে, ভারতীয় সেনার হৃদয় কোনও কারাগারে আটকে রাখা যায় না।” এই প্রতিক্রিয়াই বলে দেয়, পূর্ণম কুমার সাউ শুধু একজন বিএসএফ জওয়ান নন, বরং একটি প্রতিরোধের প্রতীক।

 সামাজিক মাধ্যমে সমর্থনের ঢল

#WelcomeBackPurnamSao ও #BSFHero ট্রেন্ড করে একাধিক সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে। লক্ষাধিক মানুষ তাঁর পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তির গল্প শেয়ার করে দেশপ্রেমের বার্তা ছড়িয়ে দেন।

Bsf Constable Purnam Kumar Shaw Returns To India From Pakistan After Operation Sindoor - Amar Ujala Hindi News Live - Bsf Constable Returns:21 दिन बाद भारत लौटे बीएसएफ जवान पूर्णम साव, ऑपरेशन

পূর্ণম কুমার সাউ-এর রিষড়ায় প্রত্যাবর্তন কোনও ব্যক্তিগত বিষয় নয়—এ এক ঐতিহাসিক ক্ষণ, যেখানে বিএসএফ জওয়ান-এর পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি গোটা দেশের গর্বে পরিণত হয়। পাকিস্তানের কূটচাল ব্যর্থ হয়েছে, কারণ ভারতীয় হৃদয় রক্ত নয়—জবাব দেয় প্রত্যাবর্তনের গর্জনে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা: জাতীয় সেবার পথে পূর্ণম কুমার সাউ-এর দৃপ্ত সংকল্প

আবারও সীমান্তে ফেরার শপথ: এক নিঃশব্দ গর্জন

 পূর্ণম কুমার সাউ-এর অঙ্গীকার

পূর্ণম কুমার সাউ নিজেই ঘোষণা করেছেন, “আমি আবারও ইউনিফর্ম পড়ে বিএসএফ জওয়ান হিসেবে সীমান্তে ফিরব।” এই কথা শুধু এক ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়—এটা পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এক নির্ভীক ভারতীয়ের জাতীয় স্বপ্নকে আবার জাগ্রত করার অঙ্গীকার।

✒️ এই ঘোষণার তাৎপর্য? — পাকিস্তানের কারাগার ভাঙার পরও তাঁর আত্মবিশ্বাসে এতটুকু চিড় নেই; বরং আরও দৃঢ়।

 প্রশিক্ষণে ফেরার প্রস্তুতি: আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার যাত্রাপথ

 মানসিক দৃঢ়তা গড়ে তোলার কাজ চলছে

পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মানসিক চাপ থাকাটাই স্বাভাবিক, কিন্তু পূর্ণম কুমার সাউ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। চিকিৎসক ও সাইকোলজিস্টদের সহায়তায় তিনি আবারও মনোবল গঠন করছেন। এ যেন যুদ্ধের আগের নিঃশব্দ প্রশিক্ষণ।

 ফিটনেস রুটিনে শৃঙ্খলা

তিনি বর্তমানে একটি কঠোর শরীরচর্চার রুটিনে রয়েছেন। সকালের ৫টা থেকে শুরু হয় দৌড়, পুশ-আপ, অস্ত্র ব্যবহারের রিফ্রেশার ট্রেনিং। কারণ তাঁর লক্ষ্য—বিএসএফ জওয়ান হিসেবে ফের সীমান্তে শত্রুর চোখে চোখ রাখার মতো ক্ষমতা অর্জন।

 নতুন জেনারেশনের জন্য বার্তা: অনুপ্রেরণা নয়, আগুন জ্বালানো

 যুবসমাজের কাছে অনুকরণীয় চিত্র

বর্তমানে বহু তরুণ পূর্ণম কুমার সাউ-এর ভিডিও ও বক্তব্য শুনে বিএসএফ জওয়ান হওয়ার অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন। “দেশের জন্য প্রাণ দিতেই হবে”—এই মন্ত্র আজ অনেকের হৃদয়ে বেজে উঠেছে।

 প্রশিক্ষণ একাডেমির পরিকল্পনা

সূত্র জানাচ্ছে, ভবিষ্যতে পূর্ণম কুমার সাউ নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে একটি ‘Young Patriots Training Cell’ খুলতে চান, যেখানে বন্দিদশা, মনোবল ও সীমান্ত কৌশল নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান হবে।

 পাকিস্তানকে ‘সফট রেসপন্স’-এ পরাস্ত করার কৌশল

 বন্দিদশার অভিজ্ঞতা ব্যবহার হবে অস্ত্র হিসেবে

পূর্ণম কুমার সাউ জানান, পাকিস্তানি জেলখানায় থাকার সময়ে যা যা কৌশলিক দুর্বলতা বুঝেছেন, সেগুলি ভবিষ্যতের নিরাপত্তা কৌশলে কাজে লাগাতে চান। এটি শুধু প্রতিশোধ নয়—এই তথ্য হতে পারে ভারতের পরবর্তী সীমান্ত প্রতিরক্ষার মডেল।

 সফট পাওয়ার: আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ভারতীয় গর্ব

একাধিক আন্তর্জাতিক জার্নালে পূর্ণম কুমার সাউ-এর পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ফলে তাঁর ভবিষ্যত পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে UN Peacekeeping forums-এ অংশগ্রহণ করে বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরা।

 জাতীয় নিরাপত্তায় এক নতুন মুখ

 সরকার চাইছে তাঁকে বিশেষ টাস্ক ফোর্সে অন্তর্ভুক্ত করতে

সূত্র অনুযায়ী, ভারত সরকারের তরফে তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি বিশেষ সেল গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে। যেখানে পূর্ণম কুমার সাউ-এর বিএসএফ জওয়ান হিসেবের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি সংক্রান্ত তথ্য, গোয়েন্দা রিপোর্টে মূল্যবান হয়ে উঠবে।

 সন্ত্রাস বিরোধী প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

মন্ত্রকের এক অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, আগামী দিনে তাঁকে সন্ত্রাস বিরোধী নীতিতে মুখপাত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাবও উঠেছে।পূর্ণম কুমার সাউ কেবল বিএসএফ জওয়ান হিসেবেই সীমাবদ্ধ নন—তিনি আজ এক চলমান রাষ্ট্রনায়ক, যিনি পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে আবার সীমান্তে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করে জাতিকে জানান দিলেন—একবার সাহসী, চিরকাল সৈনিক।

পূর্ণম কুমার সাউ, এক সাহসী বিএসএফ জওয়ান, যিনি পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে আবারও জাতির সেবায় ফিরতে প্রস্তুত—এই ঘটনাই প্রমাণ করে, দেশপ্রেম কখনও কারাগারে বন্দি হয় না। শত্রু রাষ্ট্রের অমানবিক আচরণও তাঁর আত্মবিশ্বাসে এক ফাটল ফেলতে পারেনি। বরং এই যোদ্ধার প্রত্যাবর্তন আজ ভারতের সীমান্ত সুরক্ষার প্রতীক, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। এ শুধু এক ব্যক্তির ফিরে আসা নয়—এ এক জাতীয় গর্বের জয়গাথা।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply