পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) আজ এক নীরব সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে—অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে জনসাধারণের Public Libraries। একসময় শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ভিত্তি হিসেবে দাঁড়ানো এই Public Libraries আজ জরাজীর্ণ, জনবল শূন্য, অবকাঠামোগত অবনতিতে ভুগছে। অনেক জায়গায় ইঁদুরের উপদ্রব, অনেক জায়গায় নিস্তব্ধতা। প্রতিটি বন্ধ দরজার আড়ালে রয়েছে এক ভাঙা প্রতিশ্রুতি—শিক্ষার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাওয়া।

📌 Story Highlights (READ BOX)

  • পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)-এ বর্তমানে ২,৪৮০টি Public Libraries, যার মধ্যে মাত্র ১৩টি পুরোপুরি সরকার পরিচালিত।

  • কলকাতায় প্রায় ১৬ মিলিয়ন মানুষের জন্য সরকার পরিচালিত Public Libraries মাত্র ২টি।

  • ২০২৪ সালে স্কুলে ভর্তি হারের পতন: ছেলে ৮৬.৪%, মেয়ে ৮৯.৪%।

  • স্ট্যান্ডার্ড III–VIII-এর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সক্ষমতা এখনও কম।

  • ২০২৪ সালে ৪৭% স্কুলে কোনো লাইব্রেরি নেই।

  • ডিজিটাল ব্যবহারে শহর–গ্রাম, ছেলে–মেয়ে ও ধনী–দরিদ্র ব্যবধান বাড়ছে।

  • ১৯৭৯ সালের পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক লাইব্রেরিস অ্যাক্টের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি।

  • এপ্রিল ২০২৫-এ সুপ্রিম কোর্ট গ্রামীণ Public Libraries স্থাপনের নির্দেশ দেয়।

এই সংকটকে কেবল নস্টালজিয়া হিসেবে দেখা যাবে না। এটি শিক্ষা, সমতা ও গণতন্ত্রের সাংবিধানিক অঙ্গীকারের ক্ষয়। অনুচ্ছেদ ২১ অনুযায়ী মর্যাদাপূর্ণ জীবনের অধিকার শিক্ষার সুযোগকে অন্তর্ভুক্ত করে। ২০০২ সালের ৮৬তম সংশোধনী প্রাথমিক শিক্ষা সাংবিধানিকভাবে বাধ্যতামূলক করেছে। তবু আজ পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)-এ ১০ কোটির বেশি মানুষের জন্য মাত্র ১৩টি পূর্ণ সরকার পরিচালিত Public Libraries রয়েছে।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের ভাষায়—
“গ্রন্থাগার কেবল বই ধার নেওয়ার স্থান নয়, এটি একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার মাধ্যম,” — এক শিক্ষাবিদ বলেন।
“Public Libraries বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে শিক্ষার সমান সুযোগ কেড়ে নেওয়া,” — আরেকজন গবেষক মন্তব্য করেন।

পোস্ট–প্যান্ডেমিক সময়ে স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত বার্ষিক শিক্ষা প্রতিবেদন এই বাস্তবতাকে স্পষ্ট করেছে।

সংখ্যা বলছে, ২০২৪ সালে ক্লাস I–V-এ ভর্তি হার ছেলেদের ক্ষেত্রে ৮৭.৪% (২০১৮) থেকে ৯১.৭% (২০২২) হয়ে আবার নেমেছে ৮৬.৪%-এ, মেয়েদের ক্ষেত্রে ৮৮.৭% (২০১৮) থেকে ৯৩.১% (২০২২) হয়ে নেমেছে ৮৯.৪%-এ। পড়াশোনার সক্ষমতায়ও উন্নতি সীমিত; স্ট্যান্ডার্ড III, V ও VIII-এর শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য অংশ এখনও স্ট্যান্ডার্ড II-এর উপযোগী লেখা পড়তে পারছে না।

২০২৪ সালে ৪৭% স্কুলে Public Libraries নেই—২০১৮ সালে যেখানে ছিল ৩৩.৯%। ডিজিটাল ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বৈষম্য স্পষ্ট; ১৪–১৬ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে শিক্ষার জন্য মোবাইল ব্যবহারের হার কম, অথচ সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়তা অনেক বেশি। মোবাইলের মালিকানায়ও ছেলে–মেয়ের মধ্যে বড় ফারাক।

একজন শিক্ষক বলেন, “ডিজিটাল শিক্ষা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেলে Public Libraries-ই শিক্ষার শূন্যতা পূরণ করতে পারত।” কিন্তু তারা নেই।

সংবিধান সমান সুযোগের নিশ্চয়তা দেয়। মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্রের নীতি নির্দেশমূলক অংশ জনগণের কল্যাণে ও বৈষম্য দূর করতে রাজ্যকে বাধ্য করেছে। Public Libraries সম্পর্কিত আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাজ্যের। এই উদ্দেশ্যে ১৯৭৯ সালের পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক লাইব্রেরিস অ্যাক্ট গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি।

রাজ্যের নিজস্ব Public Libraries দফতরের ওয়েবসাইটও চার বছরের বেশি সময় ধরে আপডেট হয়নি। এক বিশেষজ্ঞ বলেন, “এই ওয়েবসাইটের অবস্থা পুরো ব্যবস্থার অবহেলার প্রতীক।”

এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। এপ্রিল ২০২৫-এ সুপ্রিম কোর্ট পঞ্চায়েত স্তরে Public Libraries স্থাপনের নির্দেশ দিয়ে বলেছে—
“স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানীয় জল ও অন্যান্য মৌলিক সুযোগের পাশাপাশি Public Libraries গড়ে তোলা সামাজিক ন্যায়বিচারের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।”
আদালত আরও বলেছে, “Corporate Social Responsibility ফান্ড ব্যবহার করে ই–লাইব্রেরি তৈরি করা জরুরি।”

সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলো হতে পারে—
(১) একটি একক ডিজিটাল কার্ডের মাধ্যমে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)-এর Public Libraries ব্যবহারযোগ্য করা, যা ব্যবহারকারীর তথ্য ও বই ধার নেওয়ার নথি সংরক্ষণ করবে।
(২) বিদ্যমান Public Libraries পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন, সঠিকভাবে staffed, ও মৌলিক সুবিধাসহ পাঠকবান্ধব করা।
(৩) ধাপে ধাপে ডিজিটাল সংযুক্তিকরণ, অবকাঠামো উন্নতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা।
(৪) ব্রেইল সংস্করণের বই সরবরাহ করে বিশেষভাবে সক্ষম নাগরিকদের সুযোগ বাড়ানো।
(৫) স্কুল, এনজিও, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে Public Libraries যুক্ত করে কমিউনিটি লার্নিং হাব হিসেবে ব্যবহার করা।

উদাহরণও রয়েছে—কর্ণাটকের ‘ওদুভা বেলাকু’ কর্মসূচি, মাদুরাইয়ের কালাইনগর সেন্টেনারি লাইব্রেরি, প্রয়াগরাজের ৪০০ গ্রামের ডিজিটাল Public Libraries প্রকল্প ইত্যাদি।

একজন শিক্ষাপ্রেমী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) যেন পিছিয়ে না পড়ে, এখনই এগিয়ে আসতে হবে।”

নতুন ভারত যেন হয় অন্তর্ভুক্তিমূলক ভারত যেখানে জ্ঞান ও যুক্তিবোধ সর্বোচ্চ—Public Libraries সেই পথের সেতু।

Public Libraries in West Bengal শুধু বই ধার দেওয়ার স্থান নয়, এগুলোই জ্ঞান, শিক্ষা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ভিত্তি। আজ যখন ডিজিটাল বিভাজন, শহর–গ্রাম বৈষম্য এবং শিক্ষার সুযোগের সংকট বাড়ছে, তখন Public Libraries in West Bengal শিক্ষার সমান সুযোগ তৈরি করতে পারে। ১৯৭৯ সালের আইন হোক বা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ—সবকিছুই দেখায় এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যদি অবকাঠামো, জনবল ও ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে Public Libraries in West Bengal পুনরুজ্জীবিত করা যায়, তবে তা শুধু অতীতের ঐতিহ্য রক্ষা নয়, ভবিষ্যতের শিক্ষিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের পথও খুলে দেবে।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply