চোখ ধাঁধানো পর্দার আড়ালে এক নিঃশব্দ পদক্ষেপে আলোচনায় উঠে এসেছেন প্রীতি জিনতা। যেখানে অধিকাংশ তারকা জন্মদিনে পার্টি বা প্রচারের খবরে থাকেন, সেখানে প্রীতি জিনতা ২০০৯ সালে নিজের ৩৪তম জন্মদিনে ৩৪ জন অনাথ কন্যা শিশুকে দত্তক নিয়ে সকলকে নিঃশব্দে চমকে দিয়েছিলেন। রিশিকেশের এক অনাথ আশ্রম থেকে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ ও প্রচারবিমুখ। আজ আইপিএল ২০২৫-এ পাঞ্জাব কিংস ফাইনালে উঠেছে বলে নাম উঠে এলেও, প্রীতি জিনতা-র এই নীরব মানবিক অধ্যায়টি রয়ে গিয়েছে আলোর বাইরে।

➤ ঘটনা ও স্থান নির্দিষ্ট তথ্য

২০০৯ সালে নিজের ৩৪তম জন্মদিনে প্রীতি ৩৪ জন অনাথ কন্যা শিশু দত্তক নিয়ে সকলকে অবাক করেন। এই শিশুগুলি রিশিকেশের একটি অনাথ আশ্রম থেকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল, এবং এটি ছিল প্রীতির জন্য একটি বিশেষ সিদ্ধান্ত। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “এটি আমার জন্য এক অমূল্য অভিজ্ঞতা ছিল। আমি এই শিশুদের দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলাম।”
প্রীতি প্রতি বছর দু’বার রিশিকেশে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতেন এবং তাদের পড়াশোনার দায়িত্ব পুরোদমে পালন করতেন।

কোনও প্রেস কনফারেন্স ছিল না, ছিল না কোনও মিডিয়া প্রচার।তিনি স্পষ্ট করে জানান, দত্তক নেওয়া মানে শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ গঠনের পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়া

বছরে দু’বার রিশিকেশ যেতেন প্রীতি জিনতা, কোনও মিডিয়া কাভারেজ ছাড়াই।স্কুল ফি, পোশাক, চিকিৎসা খরচ — সবটাই নিয়মিত ব্যয় বহন করেছেন প্রীতি জিনতা নিজে।বাচ্চাগুলোর মধ্যে কয়েকজন বর্তমানে কলেজে পড়ছে; কিছু স্বাস্থ্যকর্মী, কিছু শিক্ষিকা হওয়ার পথে।

এই ঘটনা প্রীতি জিনতা’র IMDb বা উইকিপিডিয়া প্রোফাইলে পর্যন্ত উল্লিখিত নেই।বলিউডের অন্য তারকাদের মধ্যে কোনও তুলনামূলক পদক্ষেপ এরকম নিঃশব্দভাবে সামনে আসেনি।রিশিকেশ আশ্রমের এক কর্মী পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন—“ওনাকে আমরা প্রীতি দিদি বলি। বাচ্চারা ওনার গাড়ির শব্দ শুনেই ছুটে আসে।”

Preity Zinta shares pics of kids Jai and Gia's first temple visit, poses  with 'pati parmeshwar' Gene Goodenough in Shimla | Bollywood News - The  Indian Express

১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন 

প্রীতি জিনটার বাবা, দুর্গানন্দ জিনটা, ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন মেজর। ১৯৮৮ সালে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। সেই দুর্ঘটনায় প্রীতির মা নীলপ্রভা জিনটাও গুরুতর আহত হন এবং প্রায় দুই বছর বিছানায় শুয়ে কাটান।

অনেকের মতে, সেই মানসিক স্মৃতি থেকেই জন্মদিনকে মানবিক রূপে পরিণত করার প্রয়াস ছিল এই পদক্ষেপ।দত্তক নেওয়া শিশুর সংখ্যা এবং তার বয়স (৩৪ বছর) ছিল পুরোপুরি প্রতীকী।

Inside Preity Zinta's Weekend With Husband Gene Goodenough And Family

উজ্জ্বল কেরিয়ারের সূচনা 

প্রীতি জিনতা প্রথম নজরে আসেন পার্ক অ্যাভিনিউ এবং লিরিল সাবানের বিজ্ঞাপন–এর মাধ্যমে।চমৎকার উচ্চারণ, চোখে আত্মবিশ্বাস—এই দু’টি উপাদানই তাকে বিজ্ঞাপন জগতের পরিচিত মুখ করে তোলে।সেই সময় বলিউডে “মিষ্টি কিন্তু আধুনিক” মুখের অভাব ছিল, যেখানে প্রীতি জিনতা-র আবেদন ছিল নতুন।

১৯৯৮ সালে মণি রত্নম পরিচালিত ‘দিল সে’ ছবিতে শাহরুখ খানের বিপরীতে প্রথম বড়পর্দায় দেখা যায় প্রীতি জিনতা-কে।চরিত্র ছিল পার্শ্ব, পর্দায় উপস্থিতি ছিল সীমিত—তবু ‘pre-marital pregnancy’-র সংলাপ ও সাবলীল অভিনয় তাকে নজরে আনে।ছবির রঙিন গান *‘জিয়া জলে’*তেও ছিল তার স্মরণীয় উপস্থিতি।

২০০০ সালে কুণাল কোহলি পরিচালিত ‘ক্যা কেহনা’ সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন প্রীতি জিনতা।বিষয়বস্তু ছিল বিতর্কিত—এক কিশোরীর অবিবাহিত মাতৃত্ব।বলিউডের মূল ধারার বাইরে গিয়ে এমন চরিত্রে অভিনয় করার ঝুঁকি নিয়েছিলেন প্রীতি জিনতা।সিনেমার গান যেমন ‘পাপা কেহতে হ্যায়’, তেমনই সংলাপ—সবই হয়ে ওঠে ঘরে ঘরে পরিচিত।

প্রীতি জিনতা-র কেরিয়ার নাটকীয় না হলেও সুনির্দিষ্ট।‘সোলজার’ (১৯৯৮), ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে’ (২০০১), ‘দিল চাহতা হ্যায়’ (২০০1)—সবগুলিতেই ছিল দৃঢ় উপস্থিতি।‘কল হো না হো’ (২০০৩)–এ নিখুঁত সংযম ও আবেগপ্রবণ অভিনয় তাকে জাত অভিনেত্রী হিসেবে চিহ্নিত করে।‘বীর-জারা’ (২০০৪)–এ একজন পাকিস্তানি আইনজীবীর চরিত্রে ছিলেন সংযত ও ভারসাম্যপূর্ণ।‘কভি আলবিদা না কেহনা’ (২০০৬)–তেও প্রীতি জিনতা নিজের ‘ম্যাচিউরড’ পর্বে প্রবেশ করেন।

Preity Zinta shares heartwarming family pics from her Diwali celebrations

আইপিএল ও ব্যক্তিগত জীবন

চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে গিয়ে, প্রীতি জিনতা এখন নিজের ব্যক্তিগত জীবন এবং ক্রীড়া সংস্থাপনায় নিযুক্ত। তবে আড়ালে থেকেও সংবাদে উঠে আসছেন বিভিন্ন কারণেই—বিশেষ করে তার আইপিএল দল পাঞ্জাব কিংস-এর সাম্প্রতিক সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে।

২০১৬ সালে প্রীতি জিনতা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন জিন গুডএনাফ নামক এক মার্কিন ব্যবসায়ীর সঙ্গে।এই সম্পর্ক মিডিয়া-চর্চার কেন্দ্রবিন্দু না হলেও, আন্তর্জাতিক জীবনধারা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রতি তার নিরব জোর ছিল পরিলক্ষিত।২০২১ সালে প্রীতি জিনতা ইনস্টাগ্রামে ঘোষণা করেন যে, তিনি সারোগেসির মাধ্যমে যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন—নাম: জয় ও জিয়া

উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রীতি জিনতা সন্তানদের পরিচয় গোপন রেখে ধীরে সুস্থে সামাজিক মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করেন।

আইপিএল ২০২৫-এ পাঞ্জাব কিংস দীর্ঘ ১১ বছর পর ফাইনালে উঠে আসে, অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ারের নেতৃত্বে।এই সাফল্যের পেছনে প্রীতি জিনতা-র দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ, নিয়মিত মাঠে উপস্থিতি এবং কৌশলগত দৃষ্টি বারবার উঠে এসেছে বিশ্লেষণে।প্রীতি জিনতা-র ‘পাঞ্জাবি আ গয়ে ওয়ে!’ টুইট ভাইরাল হয়ে ওঠে সামাজিক মাধ্যমে—উল্লাস ও উদ্দীপনার প্রতীক হয়ে।

প্রীতি জিনতা-ই প্রথম বলিউড অভিনেত্রী যিনি আইপিএল দল মালিকানা পেয়েছিলেন এবং মাঠে নিজে সরাসরি যুক্ত থেকেছেন।আইপিএল-এর ম্যাচ চলাকালীন প্রীতি জিনতা মাঠের সীমানার গেট পেরিয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন—যা অনেক ক্ষেত্রেই দলীয় উৎসাহ বাড়াতে সাহায্য করেছে।২০২৪-এ দলের স্পন্সর নিয়ে সংঘাতের সময় প্রীতি জিনতা ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্লেয়ারদের পারিশ্রমিক মেটানোর দৃষ্টান্ত রেখেছেন।

প্রীতি জিনতা বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাস করলেও, ভারতীয় ক্রিকেটে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ অব্যাহত।ব্যবসা, পরিবার, ক্রিকেট—তিনটি স্তম্ভকে একত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে কার্যকর সময় ব্যবস্থাপনা।ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে প্রতিটি ম্যাচে সক্রিয় থাকার নজির রেখেছেন প্রীতি জিনতা

অভিনয়জগৎ থেকে ধীরে সরে আসার পরও প্রীতি জিনতা নিজের উপস্থিতিকে সক্রিয় রেখেছেন একাধিক পরিসরে—চলচ্চিত্র, সমাজসেবা, মাতৃত্ব এবং ক্রীড়া-সংগঠনের মধ্য দিয়ে। ৩৪ জন অনাথ কন্যাকে দত্তক নেওয়া থেকে শুরু করে আইপিএল ২০২৫-এ পাঞ্জাব কিংস-এর ফাইনালে ওঠা পর্যন্ত, প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রীতি জিনতা নিঃশব্দে একটি বিকল্প পরিচয় নির্মাণ করেছেন—যেখানে প্রচারের আলো না থাকলেও কার্যকর দৃষ্টান্ত স্পষ্ট।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply