নদিয়ার রানাঘাট পুলিশের এক বিশেষ উদ্যোগে প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পলাতক থাকা POCSO মামলার মূল অভিযুক্তকে অবশেষে গ্রেফতার করা হয়েছে। নাটকীয় এই অভিযানটি হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা–কাকদ্বীপ উপকূলের কাছে সমুদ্রের ১০ কিলোমিটার ভেতরে। পুলিশের বিশেষ দল জেলে সেজে নৌকায় চড়ে গিয়ে এই অভিযান চালায়।
📝 STORY HIGHLIGHTS
এক বছরের বেশি সময় পলাতক POCSO মামলার মূল অভিযুক্ত
জেলে সেজে রানাঘাট পুলিশের গোপন সমুদ্র অভিযান
নামখানা–কাকদ্বীপ উপকূলে লুকিয়ে থেকে জেলে হিসেবে কাজ করছিল অভিযুক্ত
প্রযুক্তিগত নজরদারিতে মিলল সঠিক তথ্য
আদালতে অভিযুক্তকে পেশ করে পুলিশ হেফাজতের আবেদন
২০২৪ সালে নদিয়ার হরিণঘাটা থানায় ১৭ বছরের এক কিশোরীর বাবা-মা অভিযোগ দায়ের করলে POCSO মামলার সূত্রপাত হয়। জুন মাসে কিশোরীকে উদ্ধার করা হয় এবং তার বয়ান অনুযায়ী POCSO আইনের ধারা ৯ যুক্ত হয়। আগস্টে পুলিশ চার্জশিট দাখিল করলেও মূল অভিযুক্ত তখনও অধরা ছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত নিয়মিতভাবে নিজের অবস্থান বদল করছিল এবং দীর্ঘদিন ধরে তার কোনো সুনির্দিষ্ট সূত্র পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে প্রযুক্তিগত নজরদারি ও গোপন সূত্র থেকে খবর মেলে যে সে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের কাছে নামখানা–কাকদ্বীপ উপকূলে জেলে হিসেবে কাজ শুরু করেছে।
এক পুলিশ আধিকারিক বলেন,
“আমরা তার মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান ও বিভিন্ন প্রযুক্তিগত পদ্ধতি ব্যবহার করে নিশ্চিত হই যে সে ওই উপকূলে লুকিয়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য পাই যে অভিযুক্ত সমুদ্রে মাছ ধরার ট্রলারে কয়েকদিন করে থাকে এবং পরে উপকূলে ফিরে আসে।”
এই তথ্যের ভিত্তিতে রানাঘাট পুলিশের বিশেষ দল কাকদ্বীপে পৌঁছে। তারা ইউনিফর্ম খুলে গামছা পরে স্থানীয় মাছধরা নৌকায় ওঠে। সমুদ্রের প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে সন্দেহভাজন ট্রলারটিকে চিহ্নিত করা হয়।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়,
“আমরা কয়েক ঘণ্টা ধরে ওই ট্রলারে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথাবার্তা বলি। তার পর অভিযুক্তকে নিশ্চিতভাবে সনাক্ত করি এবং গ্রেফতার করি। পরে তাকে নিজেদের ট্রলারে নিয়ে উপকূলে ফেরা হয়।”
রানাঘাটের এসপি আশীষ মौर্য আলাদা করে বলেন,
“আমরা দীর্ঘদিন ধরে তার সন্ধান করছিলাম। সে কোনো নির্দিষ্ট চিহ্ন রাখেনি। তবুও আমাদের দল চেষ্টা চালিয়ে গেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তদন্তের অগ্রগতি ও প্রতিটি সূত্র তদারকি করছিলাম। অবশেষে আমরা নিশ্চিত হই এবং বিশেষ দল পাঠিয়ে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।”
অভিযুক্তকে পরে স্থানীয় আদালতে পেশ করে পুলিশ হেফাজতের আবেদন করা হয়েছে। এই অভিযানে POCSO মামলার তদন্তে একটি বড় অগ্রগতি ঘটল বলে মনে করা হচ্ছে।
এই অভিযানের মাধ্যমে রানাঘাট পুলিশ প্রমাণ করল যে ধৈর্য ও কৌশল মিলে গেলে কতটা সফলভাবে একজন পলাতককে ধরা যায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলের মতো দুর্গম এলাকায় গিয়ে জেলে সেজে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা একটি বড় পদক্ষেপ। ২০২৪ সালে শুরু হওয়া এই POCSO মামলার তদন্তে এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় এসেছে। আদালতে অভিযুক্তকে পেশ করে পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানানো হয়েছে এবং এই গ্রেফতার নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতের POCSO মামলাগুলির তদন্তে পুলিশের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।