দুর্ঘটনায় এক হাতে সবকিছু হারিয়েও হার মানেননি পার্বতী গোপকুমার। জীবনের চ্যালেঞ্জ তাঁর পথ আটকাতে পারেনি; বরং সেই চ্যালেঞ্জকেই পাথেয় করে তিনি হয়ে উঠেছেন এক গর্বিত আইএএস অফিসার। কেরালার সাধারণ ঘরের মেয়ে থেকে ভারতের শীর্ষ প্রশাসনিক দপ্তরে পৌঁছনোর এই লড়াই শুধু একক সাহসের নয়, এটা এক অধ্যবসায়ের শিল্প। বাঁ হাতে লেখা প্রতিটি অক্ষরে লুকিয়ে আছে অদম্য জেদের ইতিহাস। এই প্রতিবেদনে রইল সেই অনন্য অভিযাত্রার প্রতিচ্ছবি, যেখানে জীবন হারেনি, জিতেছে আশ্চর্য এক মানসিক দৃঢ়তা।

সূচিপত্র

শিক্ষাজীবন ও প্রস্তুতি: পার্বতী গোপকুমারের লক্ষ্যভেদী অধ্যায়

পার্বতী গোপকুমার – এই নামটি আজ শুধুই এক আইএএস অফিসার নন, বরং এক জীবনের চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে গড়ে ওঠা সাহসিকতার প্রতীক। তাঁর শিক্ষাজীবন ও প্রস্তুতি পর্বে প্রতিটি ধাপ ছিল সংগ্রামের, কিন্তু সেই সংগ্রামই তাঁকে করে তোলে অতুলনীয়। এবার দেখে নেওয়া যাক তাঁর প্রস্তুতির প্রতিটি সূক্ষ্ম পর্ব:

📚 প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা: বেঙ্গালুরু থেকে শুরু

  • পার্বতী গোপকুমার শিক্ষাজীবন শুরু করেন কেরালার স্থানীয় স্কুলে, কিন্তু তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষার সীমানা ছিল বিশাল।

  • বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ল’ স্কুল থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক হন, যেখানে প্রবেশের প্রতিযোগিতা নিজেই একটি যুদ্ধ।

  • তিনি ছিলেন একমাত্র ছাত্রী, যিনি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়েও পুরো কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করেন — যা ছিল শিক্ষাঙ্গনে এক বিরল নজির।

  • আইনের পড়াশোনার সময়ও পার্বতী গোপকুমার তাঁর নিজস্ব ছাপ রেখে যান বিতর্ক প্রতিযোগিতা, গবেষণা ও ছাত্র নেতৃত্বে।

🎓 পেশাগত দিশাবদল: আইনজীবী থেকে প্রশাসনিক যাত্রা

  • আইনের ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি আইনজীবী হিসেবে রেজিস্টার্ড হলেও, তাঁর অন্তরের লক্ষ্য ছিল একটাই — একজন আইএএস অফিসার হওয়া।

  • জীবনের চ্যালেঞ্জ ছিল তাঁর প্রতিনিয়ত সঙ্গী, কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জকেই তিনি রূপান্তর করেন অনুপ্রেরণায়।

  • আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সময়ই তিনি ঠিক করেন যে, আদালতের বাইরেও সমাজের জন্য কিছু করার আছে তাঁর।

🏫 পরিকল্পিত প্রস্তুতি: ফর্চুনস আইএএস একাডেমির অধ্যায়

  • তিরুবনন্তপুরমের ফর্চুনস আইএএস একাডেমি-তে তিনি ভর্তি হন, যা কেরালার অন্যতম সেরা UPSC কোচিং সংস্থা।

  • প্রতিদিন ৮–১০ ঘণ্টা পড়াশোনা, টেস্ট সিরিজ, গ্রুপ ডিসকাশন, মক ইন্টারভিউ—সবকিছুই ছিল তাঁর নিয়মিত রুটিনের অংশ।

  • তাঁর কোচিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষকরা জানান, “পার্বতী গোপকুমার ছিল ক্লাসরুমের সবচেয়ে একাগ্র ও দৃঢ়ছাত্রী।”

  • শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় নোট নেওয়া, উত্তর লেখা সবই ছিল বাম হাতে—তবুও ছিল না একটুও অভিযোগ।

📌 প্রথম ব্যর্থতা ও দ্বিতীয় সাফল্য

  • ২০২২ সালের প্রথম চেষ্টায় প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলেও, পার্বতী গোপকুমার হাল ছাড়েননি।

  • দ্বিতীয় চেষ্টায়, ২০২৪ সালে তিনি অর্জন করেন অল ইন্ডিয়া র‍্যাঙ্ক ২৮২—এবং হয়ে ওঠেন একজন গর্বিত আইএএস অফিসার

  • তাঁর আত্মবিশ্বাস ছিল এই: জীবনের চ্যালেঞ্জ যদি আমাকে আটকাতে না পারে, তাহলে UPSC তো কেবল এক ধাপ।

🌟 কিছু অজানা তথ্য: যা তাঁকে অনন্য করে তোলে

  • বাম হাতে লেখা রপ্ত করার জন্য তিনি শিশুপাঠ্য কার্সিভ রাইটিং বই ব্যবহার করতেন—এক অভিনব উদ্যোগ।

  • পরীক্ষায় অতিরিক্ত সময় পেলেও, তিনি সর্বদা নিয়ম মেনে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতেন নির্দিষ্ট সময়ে—যাতে নির্ভরতা না আসে।

  • ক্লাসে কখনোই ‘বিশেষ সুবিধা’ চাননি; নিজেকে কখনো “প্রতিবন্ধী” হিসেবে দেখতেই চাননি তিনি।

পার্বতী গোপকুমার শুধুই একজন আইএএস অফিসার নন, তিনি একটি সাহসিকতার সংজ্ঞা, যেখানে জীবনের চ্যালেঞ্জ ছিল সিঁড়ি, বাধা নয়। তাঁর শিক্ষাজীবন ও প্রস্তুতি এক গভীর অনুপ্রেরণা, যা আজকের প্রজন্মকে বলে—“দুর্বলতা নয়, জেদই শেষ কথা।”

🔁 এই নামটি মনে রাখুন — পার্বতী গোপকুমার, যিনি এক হাতে জাতির ভাগ্য লিখছেন!

Kerala UPSC Success: Parvathy Gopakumar Overcomes Disability to Become  Assistant Collector

জীবনের চ্যালেঞ্জ ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি: পার্বতী গোপকুমারের লৌহমানসিকতার প্রতিচ্ছবি

পার্বতী গোপকুমার—এই নামটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক তীব্র সংগ্রামের ইতিহাস, যেখানে জীবনের চ্যালেঞ্জ কখনোই তাঁকে দমাতে পারেনি। বরং এই চ্যালেঞ্জই তাঁকে গড়ে তোলে ভারতের অন্যতম শক্তিশালী প্রশাসনিক মুখ হিসেবে। এক নজরে দেখে নিই তাঁর জীবনের চ্যালেঞ্জ এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির সেই অনন্য উপাখ্যান।

🛣️ দুর্ঘটনার ধাক্কা: শরীর ভেঙেছিল, মন নয়

  • ২০১০ সাল, এক সাধারণ দিনের শেষ বিকেলে ঘটে যায় অস্বাভাবিক এক ঘটনা—এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় পার্বতী গোপকুমার হারান তাঁর ডান হাত

  • চিকিৎসকরা জানান, অস্ত্রোপচার করেও হাত বাঁচানো সম্ভব নয়; সেই মুহূর্তে অনেকেই ভেবেছিলেন, তাঁর স্বপ্ন বুঝি চিরতরে থেমে গেল।

  • কিন্তু পার্বতী গোপকুমার প্রমাণ করেন—শরীর ভাঙলে স্বপ্ন ভাঙে না, যদি মন থাকে অটুট।

✍️ বাম হাতে নতুন করে লেখা শুরু: কার্সিভে ইচ্ছেশক্তির অনুশীলন

  • ডান হাত হারানোর পরও পার্বতী গোপকুমার বেছে নেন এক অভিনব পথ—বাম হাতে লেখার নতুন অধ্যায়

  • অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি—তিনি শিশুদের জন্য তৈরি এলকেজি ক্লাসের কার্সিভ রাইটিং বই ব্যবহার করে রোজ অনুশীলন শুরু করেন।

  • প্রতিদিনের অনুশীলনে শুধু লেখা নয়, নিজের ধৈর্য, জেদ ও মানসিক শক্তিকেও শাণিত করেন তিনি।

  • তাঁর পরিবার জানিয়েছে, পার্বতী গোপকুমার ঘন্টার পর ঘন্টা নির্জনে বসে বাম হাতে ইংরেজি ও মালয়ালমে ক্যালিগ্রাফির মতো নিখুঁত লেখা অভ্যাস করতেন।

🧠 মানসিক প্রতিকূলতা জয়: নিজের ভিতরে নিজেই শক্তি

  • সমাজের চোখে তখন তিনি একজন শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি; কিন্তু নিজের চোখে তিনি ছিলেন একজন ভবিষ্যতের আইএএস অফিসার

  • আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে তিনি নিয়মিত ধ্যান ও যোগচর্চা করতেন, যা তাঁকে মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করে।

  • পার্বতী গোপকুমার বলেন, “প্রতিটি জীবনের চ্যালেঞ্জ আমাকে আরও নির্মম ও প্রস্তর কঠিন বানিয়েছে।”

🏁 সমাজ ও নিজেকে প্রমাণ: প্রতিবন্ধকতা নয়, প্রতিজ্ঞা মুখ্য

  • পরীক্ষাকেন্দ্রে বিশেষ সময়সীমা প্রাপ্ত হওয়ার অধিকার থাকলেও, পার্বতী গোপকুমার কখনওই সেই সুবিধার আশ্রয় নেননি।

  • তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন—আইএএস অফিসার হওয়ার যোগ্যতা কারও করুণা নয়, বরং প্রাপ্য।

  • শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ক্লাসে তিনিই ছিলেন সর্বদা প্রথম উত্তরদাতা, যাঁর লেখা ছিল বাঁ হাতেও ঝরঝরে ও স্পষ্ট।

💡 কিছু বিরল ও অজানা তথ্য: যা তাঁকে আলাদা করে

  • দুর্ঘটনার পরে তিনি নিজেই নিজের স্পিচ রেকর্ড করতেন ও শুনতেন, যাতে মস্তিষ্কের লিখনক্ষমতা উন্নত হয়।

  • পার্বতী গোপকুমার একমাত্র ছাত্রী হিসেবে পেন্সিলের বদলে কলমে লেখা রপ্ত করেছিলেন বাম হাতে, যাতে লিখন গতি উন্নত হয়।

  • তিনি UPSC প্রস্তুতির সময় প্রতিটি স্যাম্পল পেপার নিজে হাতে বাঁ হাতে বার বার লিখে উত্তর অনুশীলন করতেন।

পার্বতী গোপকুমার-এর জীবন কেবল এক আইএএস অফিসার হয়ে ওঠার গল্প নয়, এটি এক জীবনের চ্যালেঞ্জ-কে জয় করার ইতিহাস, যেখানে প্রতিটি বাঁকেই লুকিয়ে আছে জেদ, নিষ্ঠা ও মননের ছাপ। এক হাতে জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের এই সাহসিক গল্প আজ শুধু কেরালার নয়—সমগ্র ভারতের গর্ব।

📢 এক হাতে নয়, ইচ্ছাশক্তির হাত ধরেই গড়ে ওঠে ইতিহাস!

നഷ്ടപ്പെട്ടത് വലതുകൈ: മനോധൈര്യം കൈമുതലാക്കിയ പാർവതി ഇനി അസിസ്റ്റന്റ്  കലക്ടര്‍ - Deshabhimani

Leave a Reply