নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রার্থী জোহারান মামদানির অগ্রগতি ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।

নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে পিছনে ফেলে জয় দাবি করেছেন ৩৩ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট জোহারান মামদানি। তাঁর এই উত্থান নিয়ে ভারতে কংগ্রেস ও বিজেপি একযোগে কটাক্ষ করেছে। কংগ্রেস নেতা সিংভি তাঁকে ‘পাকিস্তানের PR’ আখ্যা দেন, আর বিজেপি সাংসদ কঙ্গনা রানাউত তাঁর ভারতীয় পরিচয় নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। রাজনৈতিক ও পারিবারিক পরিচয়কে ঘিরে মামদানির এই আলোচনা শুধু নির্বাচনী লড়াই নয়, হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক বিতর্কের এক রসালো অধ্যায়।

📌 STORY HIGHLIGHTS:

  • কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংভির কটাক্ষ: “মামদানির বক্তব্যে পাকিস্তান PR ছুটি নেয়”

  • কঙ্গনা রানাউতের মন্তব্য: “নাম ও অবস্থানে পাকিস্তানির মতো শোনান মামদানি”

  • প্রাইমারিতে প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর বিরুদ্ধে মামদানির সম্ভাব্য জয়

  • সাধারণ নির্বাচনে লড়াই: এরিক অ্যাডামস, রেপাবলিকান প্রার্থী এবং সম্ভবত কুয়োমোর বিরুদ্ধে

  • মামদানির বামঘেঁষা অবস্থান নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যেই প্রশ্ন

নিউ ইয়র্ক সিটির আসন্ন মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে ভারতের বংশোদ্ভূত এক তরুণ প্রার্থী জোহারান মামদানি হঠাৎ করেই উঠে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। একদিকে যেমন তিনি তার অগ্রগতির জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, অন্যদিকে ভারতের রাজনৈতিক মহলে তাঁর কিছু বক্তব্য এবং অবস্থান ঘিরে তৈরি হয়েছে বিস্তর বিতর্ক।

ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট পরিচয়ধারী ৩৩ বছর বয়সী মামদানি নিউ ইয়র্কের রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই নিজস্ব ছাপ রেখে চলেছেন। তবে ভারতীয় রাজনীতির মঞ্চে তাঁর নাম উঠে আসে যখন কংগ্রেসের বরিষ্ঠ নেতা ও সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি তাঁর বক্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করেন। সিংভি বলেন,

“যখন জোহারান মামদানি কথা বলেন, পাকিস্তানের জনসংযোগ টিম এক দিনের ছুটি নিয়ে ফেলে।”

এরপর তিনি আরও যোগ করেন,

“ভারতের শত্রুর আর প্রয়োজন নেই যদি এই ধরনের ‘মিত্র’রা নিউ ইয়র্ক থেকে দাঁড়িয়ে এই ধরনের কল্পনার কথা বলেন।”

সিংভির এই মন্তব্য যে ভারতীয় রাজনীতির একাংশে মামদানির অবস্থানকে গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক পরিসরে শুধুই কংগ্রেস নয়, বিজেপির তরফ থেকেও এসেছে কঠোর সমালোচনা। অভিনেত্রী থেকে রাজনীতিক হওয়া কঙ্গনা রানাউতও মামদানিকে আক্রমণ করেছেন তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয়কে ঘিরে। তিনি বলেন,

“জোহারান মামদানি পাকিস্তানিদের মতো বেশি শোনান, ভারতীয়দের মতো নয়।”

তিনি তাঁর বক্তব্যে মামদানির পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড তুলে ধরেন এবং বলেন,

“জোহারানের মা মীরা নায়ার, যিনি একজন খ্যাতিমান পরিচালক ও পদ্মশ্রী সম্মানপ্রাপ্ত, ভারতেরই কন্যা। তিনি গুজরাতি বংশোদ্ভূত লেখক মেহমুদ মামদানিকে বিয়ে করেন। তাদের ছেলে জোহারান — নাম ও অবস্থান দুটোই দেখে ভারতীয় বলার উপায় নেই। বরং তাঁর অবস্থান বারবার পাকিস্তান ঘেঁষা বলে মনে হয়।”

এই ব্যক্তিগত পরিচয় ও অবস্থান নিয়ে বিতর্ক তখনই আরও জোরদার হয় যখন মামদানি নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করার দাবি তোলেন।

যদিও নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল এখনো ঘোষণা হয়নি, নিউ ইয়র্কের র‍্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং সিস্টেম অনুযায়ী মামদানির প্রাপ্ত লিড এতটাই বেশি যে কুয়োমোর পক্ষে সেই ব্যবধান পূরণ করা প্রায় অসম্ভব বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।

এই পরিস্থিতিতে মামদানি মুখোমুখি হতে চলেছেন আরও বড় চ্যালেঞ্জের। আগামী সাধারণ নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবেন বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস, একজন রেপাবলিকান প্রার্থী, এবং সম্ভবত আবারও কুয়োমো।

এছাড়াও, তাঁর বিরুদ্ধে দলের মধ্যেই একটি সমালোচনার সুর উঠেছে — অনেকেই মনে করছেন, মামদানি দলের মূলধারার তুলনায় অনেকটাই বামঘেঁষা, যা সাধারণ ভোটারদের বিচারে ‘অত্যধিক প্রগতিশীল’। তবে রাজনৈতিক জলঘোলা সত্ত্বেও মামদানির উত্থান এক নতুন ধারার ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেখানে অভিবাসী পরিচয় এবং সোশ্যালিস্ট দৃষ্টিভঙ্গিও নিউ ইয়র্কের মতো বড় শহরে জনসমর্থন পেতে শুরু করেছে।

জোহারান মামদানি নিউ ইয়র্কের রাজনৈতিক ময়দানে এগিয়ে থাকলেও, তাঁর অবস্থান নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বিতর্কের ঝড় উঠেছে, তা স্পষ্টভাবে দেখায়—প্রবাসী ভারতীয়দের বক্তব্য কেবল বিদেশের মঞ্চে নয়, দেশের রাজনীতিতেও প্রবল প্রতিধ্বনি তোলে। কংগ্রেস ও বিজেপির একযোগে কটাক্ষ একটি বিরল রাজনৈতিক দৃশ্যপট সৃষ্টি করেছে। মামদানির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথ যেমন কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে, তেমনই তাঁর পরিচয় ও মতাদর্শ ঘিরে আন্তর্জাতিক আলোচনার আগুনও এখনও নিভে যায়নি। এই প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের চেয়েও বড় হয়ে উঠছে তাঁর চারপাশে জমে ওঠা বিতর্কের ছায়া।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply