যুক্তরাষ্ট্রের ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এর মাধ্যমে ইরানের ফোর্ডো, নাটাঞ্জ ও ইসফাহানে পরমাণু কেন্দ্রে হামলার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, নতুন বিতর্কে আগুন জ্বালাল পাকিস্তানের এক ঘোষণায়। দেশটি ২০২৬ সালের শান্তির নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনোনয়ন দিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে AIMIM নেতা আসাদউদ্দিন ওবেইসি প্রশ্ন তোলেন—এই মনোনয়ন কী ইরানের ওপর হামলার জন্য পুরস্কার? রাজনৈতিক মহলে জোরালো প্রতিক্রিয়া—নিরব প্রশ্ন, ন্যায়বিচার কোথায়?
📌 স্টোরি হাইলাইটস
যুক্তরাষ্ট্রের ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ অভিযানে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা
পাকিস্তানের তরফে ট্রাম্পকে ২০২৬ সালের শান্তির নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন
ওবেইসির কটাক্ষ: “এই হামলার জন্যই নোবেল?”
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ হলে ভারতের কোটি ভারতীয়র নিরাপত্তা সংকটে পড়ার আশঙ্কা
আমেরিকার ভূমিকাকে ‘অসৎ এবং পক্ষপাতদুষ্ট’ বলেও মন্তব্য AIMIM প্রধানের
‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’—এই কোডনামেই সম্প্রতি তিনটি ইরানি পারমাণবিক কেন্দ্রে বিস্ফোরক হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ঘটনার পরই এক নতুন বিতর্কের জন্ম দেয় AIMIM প্রধান আসাদউদ্দিন ওবেইসির বিস্ফোরক মন্তব্য। বিষয়টি ঘিরে শুধু আন্তর্জাতিক রাজনীতির মহলে নয়, উপমহাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনার ঝড় উঠেছে।
পাকিস্তান সরকারের তরফে সম্প্রতি প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মনোনয়নের পেছনে যুক্তি হিসেবে পাকিস্তান উল্লেখ করেছে ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক উত্তেজনার সময় ট্রাম্পের ‘কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ’ ও ‘নেতৃত্বদানের ভূমিকা’।
তবে এই মনোনয়নের প্রসঙ্গেই নতুন করে বিতর্ক উসকে দেন ওবেইসি। তাঁর মতে, এই মনোনয়ন একাধিক প্রশ্নের জন্ম দেয়, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন ইরানে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক শান্তি পরিস্থিতিকেই ঘোর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে আমেরিকা।
“আমাদের জিজ্ঞেস করা উচিত পাকিস্তানকে—তারা কি চায় যে ট্রাম্প এই হামলার জন্যই নোবেল পুরস্কার পান?”—এই প্রশ্ন ছুড়ে দেন ওবেইসি, যার মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানের কূটনৈতিক অবস্থান ও যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠতা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, “ইরানের ফোর্ডো, নাটাঞ্জ ও ইসফাহানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালানো হয়েছে। একদিকে এই ধরনের আগ্রাসী পদক্ষেপ, আর অন্যদিকে সেই রাষ্ট্রনায়ককে শান্তির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা—এই দ্বিচারিতা কি মেনে নেওয়া যায়?”
ওবেইসি কটাক্ষ করে আরও বলেন,
“পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির কি এই হামলার আগে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক বা মধ্যাহ্নভোজ করেছিলেন? এখন সময় এসেছে সবকিছু জনসমক্ষে আনার।”
AIMIM নেতার আশঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্য যদি এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তবে তার চরম প্রভাব পড়বে ভারতের ওপর।
“গালফ ও মধ্যপ্রাচ্যে অন্তত ১.৬ কোটির বেশি ভারতীয় নাগরিক বসবাস করেন। যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলে সেই বিপুল জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ কী হবে?”—জানান ওবেইসি।
তিনি বলেন, “ভারত সরকারকেও এই সম্ভাব্য সংকটের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যুদ্ধ শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না—তার প্রতিক্রিয়া বহু দূর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। ভারত তার নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এখন থেকেই কূটনৈতিক স্তরে কাজ শুরু করুক।”
একই সঙ্গে ওবেইসি যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। তাঁর মতে,
“যুক্তরাষ্ট্র কখনোই কোনো আন্তর্জাতিক ইস্যুতে নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়নি। ইরাক, লিবিয়া থেকে শুরু করে ফিলিস্তিন—প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তাদের পদক্ষেপ একতরফা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
তিনি বলেন, “ইরাকে যখন বলা হলো সেখানে গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি হচ্ছে, তখন সেই দাবি প্রমাণিত হয়নি। গাদ্দাফি, সাদ্দাম হুসেন—এদের সরিয়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক স্থিতাবস্থাকে ভেঙে ফেলেছে। আর এখন গাজায় যে জাতিগত নিধন চলছে, তার বিরুদ্ধেও তারা সম্পূর্ণ নিরব।”
শেষে AIMIM প্রধান বলেন,
“এই আক্রমণ শুধু ইরানের নয়, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার ওপর বড় হুমকি। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে শান্তির নোবেল মনোনয়নের সিদ্ধান্ত শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, পরিহাসও।”
এদিকে, পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইসহাক ডার এই হামলার তীব্র নিন্দা করে এক্সে (প্রাক্তন টুইটার) একটি বিবৃতি পোস্ট করেছেন। তবে এখনও পাকিস্তান সরকার তাদের নোবেল মনোনয়নের অবস্থান থেকে সরে আসেনি।
আন্তর্জাতিক মহল এখন তাকিয়ে, এই কূটনৈতিক টানাপোড়েন মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতিকে কোন পথে নিয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা ও তার পরপরই পাকিস্তানের তরফে ট্রাম্পকে শান্তির নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের সিদ্ধান্ত এক বিতর্কিত অধ্যায়ের সূচনা করেছে। AIMIM প্রধান আসাদউদ্দিন ওবেইসির তীব্র প্রতিক্রিয়া এই ঘটনার রাজনৈতিক গুরুত্ব ও কূটনৈতিক জটিলতাকে সামনে এনেছে। মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য অস্থিরতা ও ভারতের নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গও আলোচনায় উঠে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল—শান্তির নামে আগ্রাসনকে স্বীকৃতি দেওয়া না হয়।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো