যখন দিল্লির সংসদ ভবনে ‘অপারেশন সিন্দুর’ ঘিরে উত্তপ্ত আলোচনা চলছিল, তখন কাশ্মীরের এক গভীর জঙ্গলে চলছিল আরেকটি নিঃশব্দ কিন্তু দাহ্য অভিযান—‘অপারেশন মহাদেব’। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রশ্নে একের পর এক হামলার ছক ভেস্তে দিতে সচেষ্ট ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী আজ এক বড় জয় ছিনিয়ে আনল। শ্রীনগরের কাছেই, হারওয়ানের মুলনার অঞ্চলে এক গোপন গোপন অভিযানে তিন পাকিস্তানি জঙ্গিকে নিকেশ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে দুইজন পাহেলগাঁওর নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই অভিযানের কেন্দ্রে ছিলেন সুলেমান শাহ, এক কুখ্যাত লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি। সেনা সূত্র জানাচ্ছে, পাকিস্তান সেনার প্রাক্তন এই সদস্য, যার ছদ্মনাম ছিল হাশিম মুসা, পাহেলগাঁওর বেসরান উপত্যকায় ২২ এপ্রিলের হত্যাকাণ্ডের মূল ষড়যন্ত্রকারী। সেই হামলায় প্রাণ হারান ২৬ নিরপরাধ মানুষ—যাদের রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল উপত্যকার নিঃসঙ্গ পাহাড়ি রাস্তা।
“তিন জঙ্গিকে আজ সকালের সংঘর্ষে নিকেশ করা হয়েছে,” এক বিবৃতিতে জানায় চিনার কর্পস।
“অপারেশন মহাদেব চলছে লিডওয়াস অঞ্চলে। সংঘর্ষ ছিল অত্যন্ত তীব্র,” বলে জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।
কাশ্মীর পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন,
“সুলেমান শাহের খোঁজে আমরা বহুদিন ধরেই ছিলাম। এই অভিযানে তাঁর মৃত্যু আমাদের কাছে কৌশলগত সাফল্য।”
এদিনের অভিযানে সেনাবাহিনী, সিআরপিএফ ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের সদস্যরা একত্রে অংশ নেন। গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, রাতের অন্ধকারে ঘন জঙ্গলের বুক চিরে মুলনার অঞ্চলে অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে নিহত বাকি দুই জঙ্গি আবু হামজা ও ইয়াসির। নিরাপত্তা বাহিনীর ধারণা, ইয়াসিরও পাহেলগাঁও হামলার সক্রিয় অংশীদার ছিল। অভিযানের সময় দীর্ঘ গুলির লড়াই হয়। ঘন জঙ্গলের মাঝে সঙ্গোপনে থাকা জঙ্গিদের ঘাঁটি থেকে উদ্ধার হয়েছে শক্তিশালী অস্ত্রভাণ্ডার—অসংখ্য রাইফেল, কারবাইন, ১৭টি রাইফেল গ্রেনেড এবং বিস্ফোরক।
অভিযানের স্থান থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, একটি গোপন কাঠের ঘরের ভিতরে সাজানো রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। চিহ্নিত করা গেছে স্নাইপার রাইফেল ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গুলি, যা সাধারণত বড় হামলার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
এক নিরাপত্তা আধিকারিক NDTV-কে বলেন,
“তারা বড় ধরনের নাশকতার ছক কষছিল। সময়মতো তথ্য না পাওয়া গেলে ভয়াবহ কিছু ঘটতে পারত।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ সুলেমান শাহের খোঁজে আগে থেকেই ২০ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। আজ তাঁর মৃত্যুতে সেই পুরস্কারপ্রাপ্তির প্রশ্ন উঠে গেলেও, বড় কথা—একজন কুখ্যাত জঙ্গিকে রুখে দেওয়া গেল, আরও এক দফা।
যদিও ‘অপারেশন মহাদেব’ এখানেই শেষ নয়। সেনা সূত্রে খবর, ওই এলাকায় আরও জঙ্গির উপস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে চিরুনি তল্লাশি ও নজরদারি অব্যাহত। সংঘর্ষ-পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনও ফাঁক না থাকে।
কাশ্মীরের পাহাড়ি নিস্তব্ধতা আজও রক্তে ভিজে। কিন্তু সেই রক্তের প্রতিটি ফোঁটার বদলা যেন ধাপে ধাপে নিচ্ছে ভারত। আজকের অভিযান—তারই এক স্পষ্ট বার্তা।
মহাদেব শুধু একটি সফল সামরিক অভিযান নয়, বরং রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া—যেখানে হিংসা ও সন্ত্রাসের জবাব দেওয়া হয় কঠোর শৃঙ্খলা ও কৌশলের মাধ্যমে। পাহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের মূলচক্রী সুলেমান শাহ-সহ তিন জঙ্গির নিকেশ হওয়া দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য এক বড় বার্তা। এই অভিযান যেমন ভবিষ্যতের সম্ভাব্য নাশকতা রুখে দিল, তেমনি তুলে ধরল সেনা ও গোয়েন্দা বাহিনীর নিরবিচারে সজাগ উপস্থিতি। কাশ্মীরের পাহাড়ি নৈঃশব্দ্যে আজ একটি জবাব প্রতিধ্বনিত হল—ভারত সন্ত্রাসের কাছে নত হয় না।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো