পাকিস্তানের অপারেশন বুনিয়ান আল-মার্সুসের মাধ্যমে ভারতকে চতুর্প্রহরে নাস্তানাবুদ করার কল্পনা কেবল স্বপ্নেই সীমাবদ্ধ ছিল। মাত্র আট ঘণ্টার মধ্যে প্রণীত আক্রমণ ভেঙে পড়ার পর পাকিস্তান যোগাযোগের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে পড়ল। প্রধান প্রতিরক্ষা সচিব জেনারেল অনিল চৌহানের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ভারতের সামরিক প্রতিক্রিয়া ছিল নিখুঁত এবং ফলাফল অতুলনীয়। সন্ত্রাসবাদ ও সামরিক উত্তেজনার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা, যেখানে ভারত স্থির সংকল্পে দাঁড়িয়ে থেকে দিয়েছে সুস্পষ্ট বার্তা—সহনশীলতার সীমানা অতিক্রম করা যাবে না।
পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল ৪৮ ঘণ্টায় ভারতকে পরাজিত করা: জেনারেল চৌহানের বিশ্লেষণ
সাবিত্রিবাঈ ফুলে পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভবিষ্যতের যুদ্ধ ও যুদ্ধকৌশল’ বিষয়ে একটি বক্তৃতায় প্রধান প্রতিরক্ষা সচিব জেনারেল অনিল চৌহান মঙ্গলবার পাকিস্তানের সাম্প্রতিক কার্যক্রমের পেছনের উদ্দেশ্য ও ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তার ভাষ্য থেকে পরিষ্কার হয়, পাকিস্তান ১০ মে “অপারেশন বুনিয়ান আল-মার্সুস” নামে একটি পরিকল্পনা নিয়ে ভারতকে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, পাকিস্তানের ওই প্রচেষ্টা মাত্র ৮ ঘণ্টার মধ্যেই ভেঙে পড়ে। এরপরই পাকিস্তান যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ফোন করে কথোপকথনের ইচ্ছা প্রকাশ করে।
জেনারেল চৌহান জানান, পাকিস্তানের অপারেশন বুনিয়ান আল-মার্সুস ১০ মে রাত ১টার দিকে শুরু হয় এবং মূল লক্ষ্য ছিল ভারতের সামরিক ও সন্ত্রাসবিরোধী সক্ষমতাকে দ্রুত বিধ্বস্ত করা। যদিও ভারত এই অভিযানে মূলত সন্ত্রাসবাদীদের লক্ষ্য করেছিল, পাকিস্তান তা সামরিক সংঘাতে রূপান্তরিত করে। এতে বহু জায়গায় একাধিক আক্রমণ চালানো হয়।
তিনি স্পষ্ট করেন, “সাধারণত সামরিক বাহিনী সংঘর্ষের সময় যুক্তির আলোকে কাজ করে। পাকিস্তান যখন দেখতে পায় এই ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে তাদের নিজস্ব ক্ষতি হবে, তখন তারা আলোচনার পথ খোঁজে। দ্বিতীয়ত, তারা তাদের আঘাতের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারেনি। তাই তারা বুঝেছিল, এখন আলোচনা ছাড়া ক্ষতি বেশি হবে।”
জেনারেল চৌহান আরও বলেন, “এক বা দুই দিনের মধ্যে পাকিস্তান বুঝতে পারে তাদের হামলা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ তাদের আক্রমণগুলি সুরক্ষিত ছিল না, যার কারণে তা সফল হয়নি।”
একজন শিক্ষার্থীর প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, “ক্ষতির হিসাব কত, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফলাফল এবং অভিযানের সফলতা সবচেয়ে বেশি জরুরি। যেমন ফুটবল ম্যাচে ৩-২ গোলে জয় মানেই কাছাকাছি ম্যাচ, কিন্তু ক্রিকেটে ইনিংসের মাধ্যমে বড় ব্যবধানে জয় মানে সম্পূর্ণ সফলতা। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই।”
তিনি জানান, শিগগিরই সরকারের পক্ষ থেকে অপারেশনের ফলাফল, পাকিস্তানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ভারতের কার্যক্রম ও সেগুলোর ক্ষতির পরিসংখ্যান তুলে ধরা হবে। এই তথ্য জনগণের জিজ্ঞাসার জবাব দেবে।
অপারেশন সিন্দুরের উদ্দেশ্য নিয়ে জেনারেল চৌহান বলেন, “সরকারের লক্ষ্য প্রতিশোধ নয়, বরং পাকিস্তানের সহনশীলতার সীমা নির্ধারণ করা। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ভারত কখনো সন্ত্রাস এবং পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলের ছায়ায় থাকতে রাজি নয়।”
দেশবাসীর আবেগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সবার মনেই ছিল প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা এবং দোষীদের বিচারের দাবি। এই মনস্তাত্ত্বিক আবেগ পুরো প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলেছিল। তবে শেষমেশ কিছুটা সন্তুষ্টি এবং একই সঙ্গে উদ্বেগও ছিল।”
সেনাবাহিনীর ঝুঁকি মোকাবেলা সম্পর্কে তিনি ব্যাখ্যা করেন, “সর্বদা পুরোপুরি প্রস্তুত থাকা সম্ভব নয়। সব তথ্য পাওয়া যায় না। তাই কিছুটা অজানার মধ্যেই কাজ করতে হয়। প্রত্যেক সামরিক অভিযানেই ঝুঁকি থাকে, তবে সেটা সুষ্ঠুভাবে হিসেব করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধের সময়ে ব্যর্থতা আসতেই পারে, কিন্তু তা থেকে শিখে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। একটি সফল সংগঠনকে সর্বদা আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে ঝুঁকি নিতে হবে।”
শেষে জেনারেল চৌহান একথা উল্লেখ করেন, “ক্ষতি কত হয়েছে তা নয়, বরং কি ফল হয়েছে, সেটাই মুখ্য। তাই অপারেশনের সাফল্যের দিকেই আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে।”
এই সামগ্রিক ঘটনার পরিসর আমাদের সামনে এক কঠোর বাস্তবতা তুলে ধরে—যেখানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ এবং সামরিক চক্রান্তের বিরুদ্ধে কৌশলী ও দৃঢ় অবস্থানই একমাত্র উত্তর। অপারেশন বুনিয়ান আল-মার্সুসের ব্যর্থতা এবং ভারতের অপারেশন সিন্দুরের সফলতা কেবল এক কৌশলগত জয় নয়, বরং এটি একটি বার্তা—যে ভারত সন্ত্রাসের ছায়া মেনে নেবে না এবং প্রতিটি আঘাতে সুপরিকল্পিত জবাব দিতে প্রস্তুত। জেনারেল চৌহানের বিবৃতি থেকে স্পষ্ট, আগামী দিনে যেকোনো আগ্রাসনের বিপরীতে ভারত প্রস্তুত, বিচক্ষণ এবং প্রতিক্রিয়াশীল—যা জাতীয় নিরাপত্তা ও নীতিগত অবস্থানের এক নিঃশব্দ অথচ দৃঢ় ঘোষণা।