বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর প্রস্তাবিত “ওয়ান বিগ বিউটিফুল ট্যাক্স” বিল। অভিবাসন নীতি থেকে শুরু করে রেমিট্যান্স কর—সবই যেন এক “সুন্দর” আবরণের আড়ালে ভারতীয়দের জন্য তীব্র অর্থনৈতিক ঝড়। ৫% অতিরিক্ত করের বোঝা, সীমান্ত নিরাপত্তায় বিপুল বরাদ্দ এবং আসাইলাম ফি’র নব সংযোজন—সব মিলিয়ে এই বিল এক অভিজ্ঞান হয়ে উঠছে ভারতীয় প্রবাসীদের জন্য। কিন্তু সত্যিই কি এই ‘বিউটিফুল’ বিল ভারতীয়দের ভাগ্যে ভয়াবহ এক মোড় আনবে? এই প্রবন্ধে সেই বাস্তবতাই খোলসা করা হবে নিখুঁত বিশ্লেষণে।
সূচিপত্র
Toggleবিলের মূল প্রস্তাবনা: “সুন্দর” আড়ালের নির্মম হিসেব-নিকেশ
আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্সে ৫% কর
প্রস্তাবিত মূলনীতি:
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত “ওয়ান বিগ বিউটিফুল ট্যাক্স” বিল অনুযায়ী, বিদেশে টাকা পাঠানো (রেমিট্যান্স) ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ট্যাক্স আরোপ হবে।প্রভাবিত শ্রেণি:
মূলত ভারতীয় H-1B ভিসাধারী, গ্রিন কার্ড হোল্ডার, স্টুডেন্ট ওয়ার্ক ভিসাধারী এবং নন-রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ানরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।“ভেরিফায়েড ইউএস সেন্ডার” ছাড়া সবাই এই করের আওতায় পড়বেন। অর্থাৎ, মার্কিন নাগরিক না হলে আপনি ছাড় পাচ্ছেন না।
🌀 এই কর শুধু বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স নয়, ছোট অঙ্কের পারিবারিক সাহায্যেও প্রযোজ্য হবে — ফলে মধ্যবিত্তের ঘুম উড়ে যাবে।
ট্যাক্সের ছায়ায় রেমিট্যান্স অর্থনীতির ভবিষ্যৎ
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতীয়রা আমেরিকা থেকে প্রায় $৩২ বিলিয়ন রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
এই ৫% ট্যাক্স বসলে, বছরে $১.৬ বিলিয়ন অতিরিক্ত কর দিতে হবে শুধু ভারতীয় প্রবাসীদের।
এতে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা ভারতীয় অর্থনীতির জন্য এক অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ।
অভিবাসন নীতির সূক্ষ্ম পরিবর্তন
“ওয়ান বিগ বিউটিফুল ট্যাক্স” বিল শুধুই অর্থনৈতিক নয়; এটি এক গোপন অভিবাসন-কঠোরতা নীতি হিসেবেও কাজ করছে।
এই প্রস্তাবে বর্ডার ওয়ালের জন্য $৪৬.৫ বিলিয়ন বরাদ্দ এবং বর্ডার পেট্রোল এজেন্ট নিয়োগে $৪ বিলিয়ন সংরক্ষিত হয়েছে।
উদ্দেশ্য স্পষ্ট: বৈধ ও অবৈধ অভিবাসন দুই ক্ষেত্রেই চাপ সৃষ্টি করে অভিবাসীদের সংখ্যায় রাশ টানা।
🔍 আপাতদৃষ্টিতে ট্যাক্স, কিন্তু অন্তর্নিহিত অর্থে এক “স্ট্র্যাটেজিক শাটডাউন”।
আসাইলাম প্রার্থীদের জন্য নতুন ফি
$১,০০০ আসাইলাম আবেদন ফি সংযোজন করা হয়েছে, যা আগে কখনও ছিল না।
এর ফলে শরণার্থী কিংবা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও আর্থিক বাধা তৈরি হবে, যা আন্তর্জাতিক মানবিক নীতির সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
স্লোগান বনাম বাস্তবতা
“ওয়ান বিগ বিউটিফুল ট্যাক্স” — নামটি যতটা মার্জিত, এর বাস্তবতা ততটাই নির্মম।
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর মাধ্যমে অর্থনীতির মোড় ঘোরানোর যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তা মূলত এক “আন্দারসন-একনমিক ফিল্টার” — যেখানে অভিবাসীদের অবদান নয়, বরং বাধা মুখ্য।
এই প্রস্তাবিত “ওয়ান বিগ বিউটিফুল ট্যাক্স” বিল নিছক করনীতি নয় — এটি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর রাজনীতিক দক্ষতায় মোড়ানো অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের নতুন ছক। ভারতীয় প্রবাসীদের অর্থনীতিক ভারসাম্য, স্বজন সহায়তা ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তা এতে তীব্রভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা। অতএব, এই বিলের প্রতিটি ধারা আমাদের সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন— কারণ এই ট্যাক্স, “বিউটিফুল” নামের হলেও, প্রবাসী ভারতীয়দের কাছে হতে পারে এক নিষ্ঠুর বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
ভারতীয়দের উপর প্রভাব: “সুন্দর” ট্যাক্সের অদৃশ্য থাবা
প্রবাসী ভারতীয়দের রেমিট্যান্স বিপর্যয়
করের ভারে পিষবে পরিবার
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক প্রস্তাবিত “ওয়ান বিগ বিউটিফুল ট্যাক্স” অনুসারে, যেকোনো রেমিট্যান্সের উপর ৫% ট্যাক্স বসানো হবে।
ভারতীয় H-1B, F-1 OPT, এবং L-1 ভিসাধারীরা যাঁরা দেশে বাবা-মাকে নিয়মিত অর্থ পাঠান, তাঁদের জন্য এটি একটি প্রতিদিনের অর্থনৈতিক শাস্তি হয়ে দাঁড়াবে।
🎯 উদাহরণ: কেউ যদি বছরে ₹১০ লক্ষ টাকা ভারতে পাঠান, তাঁকে অতিরিক্ত ₹৫০,০০০ দিতে হবে মার্কিন সরকারকে—কোনো অতিরিক্ত সুবিধা ছাড়াই।
নন-সিটিজেন স্ট্যাটাসের আর্থিক বৈষম্য
যারা “verified US sender” নন (অর্থাৎ গ্রিনকার্ড বা নাগরিকত্ব নেই), তাঁদের উপরেই এই কর আরোপিত হচ্ছে।
অথচ তাঁরা মার্কিন অর্থনীতিতে কর দেন, শ্রম দেন, প্রযুক্তি খাতে অবদান রাখেন—এখানে প্রশ্ন ওঠে, এ কি এক ধরনের “সিস্টেমিক ট্যাক্সড ডিসক্রিমিনেশন”?
🔍 একই মুদ্রা পাঠালেও, এক মার্কিন নাগরিকের ট্যাক্স শূন্য, কিন্তু ভারতীয় অভিবাসীর কাঁধে করের বোঝা—এ কি প্রান্তিকরণের নতুন সংজ্ঞা?
ভারতীয় অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহে সংকট
প্রতিবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে $৩০ বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স আসে।
“ওয়ান বিগ বিউটিফুল ট্যাক্স” কার্যকর হলে, শুধুমাত্র ট্যাক্স বাবদ প্রতি বছর $১.৫–২ বিলিয়ন হ্রাস পাবে ভারতের বৈদেশিক আয়।
মধ্যবিত্ত পরিবারের রোজগার হ্রাস
বহু পরিবার তাঁদের সন্তানের মার্কিন আয়ে চলেন। এই অতিরিক্ত করের ফলে মাসিক সহায়তা কমে যাবে।
ফলে উচ্চশিক্ষা, চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার মানে পড়বে সরাসরি প্রভাব।
📌 “ট্যাক্স আমেরিকায়, কিন্তু কষ্ট ভারতের ঘরে” — এই হল প্রকৃত প্রতিচ্ছবি।
H-1B এবং অভিবাসী কর্মীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা
মানসিক চাপ ও স্থানান্তরের ভাবনা
অতিরিক্ত করের কারণে অনেক ভারতীয় অভিবাসী বিকল্প দেশ (কানাডা, অস্ট্রেলিয়া) বেছে নিতে পারেন।
কর্মক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই হাই-স্কিল্ড ট্যালেন্টের ঘাটতি রয়েছে — এই বিল সেই ঘাটতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
অভিবাসীদের সামাজিক নিরাপত্তা শঙ্কা
কর দেওয়া সত্ত্বেও তাঁরা পাবেন না নাগরিক সুবিধা, ফলে “Taxed Without Rights” পরিস্থিতির উদ্ভব হবে।
এটি এক ধরনের “প্রফেশনাল এক্সপ্লয়টেশন” বলে গণ্য করা যায়।
প্রবাসী ভারতীয় সমাজে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ
অস্পষ্টতা ও জটিলতা
“ওয়ান বিগ বিউটিফুল ট্যাক্স” সংক্রান্ত খসড়ায় কারা এই কর দেবেন, তার কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।
এতে কর সংক্রান্ত বিভ্রান্তি বাড়ছে, এবং প্রবাসী সমাজের মধ্যে তৈরি হচ্ছে এক “ফিসফাস আতঙ্ক”।
প্রতিবাদের সুর
Indian American Impact ও অন্যান্য ভারতীয় ডায়াসপোরা গোষ্ঠীগুলি এর বিরুদ্ধে আইনি ও নীতিগত পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
তাঁদের দাবি: “আমরা কর দিই, অর্থনীতি গড়ি, তবু শাস্তি কেন?”
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত “ওয়ান বিগ বিউটিফুল ট্যাক্স” বিল ভারতীয়দের কাছে আর্থিকভাবে যেমন মারাত্মক, তেমনি রাজনৈতিকভাবে চূড়ান্ত বিভ্রান্তিকর। এটি কেবল ট্যাক্স নয়, এক নীরব অভিবাসন বিরোধী আন্দোলনের অস্ত্র। এই বিল যদি পাস হয়, তবে ভারতীয়দের অর্থনৈতিক ভিত্তি ও সামাজিক মর্যাদার উপর চেপে বসবে এক নিষ্ঠুর চাপ—যার প্রভাব শুধু আমেরিকা নয়, ভারতকেও দীর্ঘমেয়াদে নাড়া দিতে পারে।
❝ একটি ট্যাক্স, হাজার সংকট। “বিউটিফুল” নয়, এটি এক **ব্যবস্থাগত বৈষম্যের নাট্যরূপ।” ❞
অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন: ট্রাম্পের নতুন পটভূমিতে ভারতীয়দের জন্য এক শীতল বার্তা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের “বিউটিফুল” কৌশল: সুযোগ নাকি সংকোচন?
রাজনৈতিক সৌন্দর্যের অন্তর্গত অদৃশ্য লক্ষ্য
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিখ্যাত উক্তি “ওয়ান বিগ বিউটিফুল ট্যাক্স” দিয়ে অভিবাসন নীতির মধ্যে এক অদৃশ্য শ্রেণিবিভাগ তৈরি করতে চাইছেন।
এতে সাধারণ অভিবাসী বনাম নাগরিক অভিবাসী—এই বিভাজন আরও প্রবল হয়ে উঠছে।
H-1B এবং OPT ভিসার ‘Silent Squeeze’
যুক্তরাষ্ট্রে থাকা লক্ষাধিক ভারতীয় প্রযুক্তি-কর্মী, যারা এই দুই ভিসার উপর নির্ভরশীল, তাঁদের জন্য এই পরিবর্তন আইনি অনিশ্চয়তার কালো মেঘ ডেক%8