পরিসংখ্যানবিদ্যার পথপ্রদর্শক প্রফেসর প্রশান্ত চন্দ্র মহালানবিসের ১৩২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতীয় পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান (ISI), কলকাতায় আয়োজিত হল এক হৃদয়ছোঁয়া অনুষ্ঠান। জাতীয়ভাবে ‘স্ট্যাটিস্টিক্স ডে’ এবং প্রতিষ্ঠানে ‘ওয়ার্কার্স ডে’ হিসেবে পালিত এই দিনে কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল “ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে”-র ৭৫ বছর পূর্তি—এক ঐতিহাসিক প্রয়াস, যার ভিত গেঁথেছিলেন মহালানবিস নিজেই। অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে পরিসংখ্যানে ভারতের অগ্রগতি, সংকট ও সম্ভাবনার দিক। আত্মবিশ্লেষণ, সম্মাননা, স্মৃতিচারণা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার ছায়ায় অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে শ্রদ্ধা আর ভাবনার এক মধুর মেলবন্ধন।

📌 STORY HIGHLIGHTS:

  • ISI-তে মহালানবিসের জন্মজয়ন্তী পালিত

  • জাতীয়ভাবে দিনটি “স্ট্যাটিস্টিক্স ডে”

  • “ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে”-র ৭৫ বছরের দিশা

  • পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়

  • নেতৃত্ব, পরিকল্পনা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির স্মরণ

  • সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও জাতীয় সংগীতে সমাপ্তি

কলকাতার ভারতীয় পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান (ISI) রবিবার এক বিশেষ মুহূর্তের সাক্ষী রইল—প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর প্রশান্ত চন্দ্র মহালানবিসের ১৩২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান শুধু তাঁর জীবন ও কৃতিত্বকে স্মরণ করল না, বরং একটি দীর্ঘ পথচলার মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যতের দিশা নির্ধারণের মঞ্চ হয়ে উঠল। জাতীয় স্তরে দিনটি “স্ট্যাটিস্টিক্স ডে” হিসেবে পালন করা হয়, আর আইএসআই-র অভ্যন্তরে দিনটি দীর্ঘদিন ধরে “ওয়ার্কার্স ডে” হিসেবেই পরিচিত।

এ বছরের উদযাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষে কেন্দ্রীভূত ছিল—“ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে”-র ৭৫ বছর। ভারতের তথ্য-ভিত্তিক পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণে এই সমীক্ষা পদ্ধতির ভূমিকা অপরিসীম, এবং এর প্রবর্তক হিসেবে মহালানবিসের নাম আজও সমান প্রাসঙ্গিক।

অনুষ্ঠানের সূচনা হয় এক শ্রদ্ধার্ঘ্য দিয়ে—প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রে অবস্থিত আম্রপালি লনে প্রফেসর মহালানবিসের বক্ষমূর্তিতে মাল্যদান ও এক বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে। এই প্রতীকী কাজ যেন একদিকে তাঁর স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানানো, আবার অন্যদিকে ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টিপাত।

ডঃ পরমিতা দাস তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন, কীভাবে পরিসংখ্যানকে একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে প্রফেসর মহালানবিসকে প্রথম দিকে প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। স্যার রোনাল্ড ফিশারের উদ্ধৃতি টেনে তিনি বোঝাতে চান—যদিও শুরুটা কঠিন ছিল, আজকের দিনে সেই বিজ্ঞানই দেশের নীতিনির্ধারণে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তবে তিনি একইসাথে বর্তমানের পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতাগুলিকেও এড়িয়ে যাননি।

প্রতিষ্ঠানের বর্তমান পরিচালক প্রফেসর সঙ্গমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি আত্মমূল্যায়নের আহ্বান জানান। তাঁর মতে, প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে বাস্তবভাবে বিচার করাও জরুরি। তথ্যবিজ্ঞানে ISI-র অবদান শুধুই অতীত গৌরব নয়, বর্তমান সময়ে তার প্রভাব বিশ্বব্যাপী। তিনি বলেন, “প্রফেসর মহালানবিস কেবল একজন পরিসংখ্যানবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন ভবিষ্যতের দিশারী।”

অধ্যয়ন বিভাগের ডিন ডঃ বিশ্বব্রত প্রধান গুরুত্ব দেন অর্থায়ন সংক্রান্ত ঘাটতির দিকটি তুলে ধরতে। তাঁর মতে, গবেষণার গতি বাড়াতে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করতে হলে অর্থনৈতিক পরিকাঠামো আরও শক্তিশালী করতে হবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ গোপালরাও দানি, শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কারে সম্মানিত গণিতবিদ। তিনি তাঁর বক্তৃতায় মহালানবিসকে তুলনা করেন ‘বিশ্বকর্মা’র সঙ্গে—একজন নির্মাতা, যিনি ভবিষ্যতের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করেছিলেন। তিনি ISI-র আত্মসমালোচনার মানসিকতাকেও প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানের আবেগঘন পর্বে, প্রাক্তন অধ্যাপক প্রফেসর মনোরঞ্জন পাল স্মরণ করেন তাঁর শিক্ষকেরূপে মহালানবিসকে—যিনি কঠোর, কিন্তু সহানুভূতিশীল এবং দূরদর্শী একজন গাইড ছিলেন। তিনি বলেন, “একজন প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে তিনি যেমন সুশৃঙ্খল, তেমনি একজন মানুষ হিসেবেও গভীর প্রভাব বিস্তারকারী।”

অনুষ্ঠানের শেষাংশে ছিল আইএসআই ক্লাবের সদস্যদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা—যা একে এক অন্তরঙ্গ ও উদযাপনমুখর পরিবেশে পরিণত করে। শেষে জাতীয় সংগীতের সমবেত পরিবেশনা দিনটিকে একটি সংহতির চিহ্ন হিসেবে সম্পূর্ণ করে তোলে।

সবশেষে বক্তারা একমত হন যে, প্রফেসর মহালানবিসের আদর্শ—যেখানে বৈজ্ঞানিক মনোভাব, সামাজিক সমতা এবং জাতীয় উন্নয়ন পরস্পর সমান্তরালভাবে চলে—সেই দর্শনকেই আইএসআই-র ভবিষ্যৎ পথচলার মূল দিশা হিসেবে ধরে রাখতে হবে।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply