ভারত তার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৫০% এখন অ-জীবাশ্ম জ্বালানি উৎস থেকে পাচ্ছে—যা প্যারিস চুক্তির নির্ধারিত ২০৩০ সালের লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে পাঁচ বছর আগেই। সৌর ও বায়ু শক্তির রেকর্ড সংযোজন, কয়লা নির্ভরতার সামান্য পতন, আর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে হাইড্রোজেন ও ব্যাটারি প্রযুক্তির বিস্তার—এই সব মিলিয়ে দেশের শক্তি মানচিত্রে এক চমকপ্রদ পরিবর্তন স্পষ্ট। একদিকে উন্নয়নের গতি, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য—এই দুইয়ের মাঝেই পথ খুঁজছে ভারতের নব শক্তির কাব্য।

🟢 প্রধান তথ্য এক ঝলকে

  • ৫০% বিদ্যুৎ ক্ষমতা এখন অ-জীবাশ্ম উৎসনির্ভর

  • ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে নবায়নযোগ্য শক্তি বৃদ্ধির গতি সর্বোচ্চ

  • কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় ৩% হ্রাস

  • আগামী ২০৩২-র মধ্যে ৮০ গিগাওয়াট নতুন কয়লা প্রকল্প পরিকল্পিত

  • ২০২৪ সালে ২৮ গিগাওয়াট সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ সংযুক্ত

  • ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত নতুন করে যুক্ত হয়েছে ১৬.৩ গিগাওয়াট

  • বড় জলবিদ্যুৎ বাদে মোট নবায়নযোগ্য শক্তি ১৮৪.৬ গিগাওয়াট (জুন ২০২৫ পর্যন্ত)

বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক মোড় ঘুরল ভারত। বহু প্রতীক্ষিত সেই ঘোষণা এল সোমবার। সরকার জানিয়েছে—বর্তমানে দেশের মোট ইনস্টল্ড বিদ্যুৎ ক্ষমতার অর্ধেকই অ-জীবাশ্ম উৎস থেকে আসছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ২০৩০ সালের যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তার পাঁচ বছর আগেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেল ভারত।

এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা নয়, বরং এক দীর্ঘ যাত্রার প্রতিচ্ছবি। যেখানে একদিকে সৌর ও বায়ু যেমন ডানা মেলেছে, অন্যদিকে জীবাশ্ম জ্বালানির নির্ভরতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে।

সবুজের ছায়ায় শক্তির নতুন দিগন্ত

নির্বিকার গতিতে এগিয়ে চলেছে ভারতের নবায়নযোগ্য শক্তি যাত্রা। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যেই ১৬.৩ গিগাওয়াট সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প সংযুক্ত হয়েছে জাতীয় গ্রিডে। সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সংযোজন হয়েছে রেকর্ড ২৮ গিগাওয়াট।

কিন্তু এর মধ্যেও আছে বাস্তবের কঠিন ছবি। গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে পরিমাণ বৃদ্ধি ঘটেছে, তার দুই-তৃতীয়াংশ এখনও জীবাশ্ম জ্বালানির ঘাড়ে চেপে। একদিকে যখন সবুজ জ্বালানি তার ঝলক দেখাচ্ছে, তখনই ভারত ২০৩২ সালের মধ্যে ৮০ গিগাওয়াট নতুন কয়লা প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এই দ্বৈত নীতির জটিলতাই হয়তো ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।

“লক্ষ্য ছিল ২০৩০, পৌঁছে গেছি ২০২৫-এ”—সরকার

সরকারি তরফে জানানো হয়েছে, “এই অর্জন দেশের প্রতিশ্রুতি ও প্রচেষ্টার বহিঃপ্রকাশ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত এখন আরও দৃঢ়।”
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকও বলেছে, “অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে জলবায়ু দায়বদ্ধতা বজায় রাখা সম্ভব—এই তথ্যটাই আমরা প্রমাণ করেছি।”

রিনিউয়েবল থেকে হাইড্রোজেন—সবুজ ভবিষ্যতের খোঁজে

ভারতের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য শুধু সৌর ও বায়ু নয়। বড় আকারে জলবিদ্যুৎ, পারমাণবিক শক্তি এবং সবুজ হাইড্রোজেনকে সামনে রেখেই চলছে শক্তি পরিকল্পনার পুনর্গঠন। পাশাপাশি, ব্যাটারি স্টোরেজ ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তির ওপরও নজর বাড়ছে।

সৌর প্যানেল, বায়ু টারবাইন—এইসব উপকরণ ভবিষ্যতে যেন পরিবেশে বোঝা না হয়, সেই উদ্দেশ্যেই জোর দেওয়া হচ্ছে “সার্কুলার ইকোনমি”-তে। শক্তি যেমন চাই, তেমনই চাই তার টেকসই ব্যবহার।

পথচলা যত দীর্ঘ, সাফল্য ততই মধুর

২০২২ সালে নবায়নযোগ্য শক্তির ১৭৫ গিগাওয়াটের লক্ষ্য পূরণ না করতে পারলেও, সেই ব্যর্থতা যেন বদলে গিয়েছে নতুন উৎসাহে। আজ যখন দেশের ইনস্টল্ড ক্ষমতার অর্ধেকই অ-জীবাশ্ম উৎসনির্ভর, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে—এই গতি কি বজায় থাকবে?

উত্তর লুকিয়ে ভবিষ্যতের নীতিতে। তবে আজকের এই মাইলফলক নিঃসন্দেহে ভারতের শক্তি-পরিচয়ে এক গর্বের পালক।

ভারতের অ-জীবাশ্ম শক্তিতে এই অগ্রগতি শুধুমাত্র একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং দেশের শক্তি নীতির দৃষ্টিভঙ্গিতে এক ঐতিহাসিক মোড়। ২০৩০ সালের আগেই নির্ধারিত লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলা একদিকে যেমন ভবিষ্যতের আশ্বাস, তেমনই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথেও এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তবে এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে থাকা দ্বন্দ্ব—নতুন কয়লা প্রকল্পের পরিকল্পনা ও জীবাশ্ম জ্বালানির বিদ্যমান আধিপত্য—ভবিষ্যতের ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবেই। এখন দেখার, ভারতের সবুজ যাত্রা এই গতি ধরে রাখতে পারে কি না।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply