হাওড়া জেলা সংশোধনাগারে সেলিম আনসারির মৃত্যু: রহস্য ঘনাচ্ছে, প্রশ্ন উঠছে একাধিক
রবিবার ভোররাতে হাওড়া জেলা সংশোধনাগার-এর একটি নির্জন সেলে এক বিচারাধীন বন্দির মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় প্রশাসনিক স্তরে নড়েচড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ। মৃত ব্যক্তি সেলিম আনসারি। বয়স ৩৫। প্রাথমিকভাবে ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও, একাধিক তথ্য ও ঘটনার ক্রমপর্যায়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। নিচে বিষয়টি ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করা হল—
সকালের অস্বাভাবিক শুরু: মৃতদেহ আবিষ্কার
রবিবার সকাল সাতটা নাগাদ হাওড়া জেলা সংশোধনাগার-এর একটি সেলের ভিতরে গামছা দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় সেলিম আনসারিকে উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকারী কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান।
চিকিৎসকরা তাঁকে “brought dead” ঘোষণা করেন।
এই সময়কাল ও ঘটনার ধরন অনুযায়ী সংশয় তৈরি হয়—ঘটনাটি কীভাবে এত নিরিবিলি ও অজান্তে ঘটল?
সেলিম আনসারির পরিচয় ও অতীত মামলা
সেলিম আনসারি পেশায় ছিলেন টোটো চালক।
তাঁকে ৪ বছর আগে শিবপুর বি গার্ডেন থানার পুলিশ গ্রেফতার করে।
অভিযোগ ছিল: শালিমার স্টেশনের কাছে ভোলা রায় নামে এক ব্যক্তিকে খুনের চেষ্টার পাশাপাশি অস্ত্র আইনের ধারায় মামলা।
এই সময়কাল ধরে হাওড়া জেলা সংশোধনাগার-এ বিচারাধীন অবস্থায় ছিলেন তিনি।
একজন দীর্ঘদিন ধরে আটক বিচারাধীন বন্দির আচমকা মৃত্যু কি শুধুই ‘সাইকোলজিকাল ব্রেকডাউন’? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
গামছা দিয়ে ফাঁস: কতটা সম্ভব?
পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে, সেলিম আনসারি একটি সাধারণ গামছা দিয়ে সেলের জানালার গ্রিল থেকে ঝুলে পড়েছিলেন।
সংশোধনাগারের নীতিমালায় বন্দিদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত হলেও, গামছা সরবরাহ করা হয় পরিচ্ছন্নতার জন্য।
তবে সেলিম আনসারির মত দীর্ঘদিনের বন্দির হঠাৎ এমন পদক্ষেপ প্রশাসনিক পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট প্রশ্নের উদ্রেক করে।
অভ্যন্তরীণ নজরদারি, সিসিটিভি কাভারেজ—এসব নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
পরিবারের অভিযোগ: স্বতঃস্ফূর্ত না পরিকল্পিত?
সেলিম আনসারির পরিবার স্পষ্ট ভাষায় দাবি করেছে, “ওর কোনও মানসিক চাপ ছিল না। আত্মহত্যার প্রশ্নই ওঠে না।”
তাঁরা জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে ফোনে মৃত্যুর খবর পান—সকালে।
পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ‘স্বতন্ত্র তদন্ত’ চাওয়া হয়েছে।
তাঁদের বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে শব্দ: ‘খুন’, ‘ষড়যন্ত্র’, ‘মুখ বন্ধ করার চেষ্টা’।
হাওড়া জেলা সংশোধনাগার-এ অতীত ঘটনার নজির
হাওড়া জেলা সংশোধনাগার পূর্বে কিছু বিতর্কিত ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে।
২০২১ সালে এক বন্দির মৃত্যু হয়েছিল ‘সুডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ বলে দাবি করা হয়। পরে পরিবারের দাবি ছিল ভিন্ন।
২০১8-2024 সময়কালে এই সংশোধনাগারে অন্তত ৭টি অস্বাভাবিক মৃত্যু রেকর্ড হয়েছে, যার মধ্যে ৩টি নিয়ে তদন্ত হয়েছিল CID-এর মাধ্যমে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সেলিম আনসারির মৃত্যু হাওড়া জেলা সংশোধনাগার-এর একটি নতুন ‘হাই-রিস্ক ফাইল’ হয়ে উঠছে।
প্রশাসনিক অবস্থান ও তদন্তের অগ্রগতি
হাওড়া জেলা সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা হিসেবেই চিহ্নিত করেছে।
হাওড়া থানা একটি ইউডি (Unnatural Death) মামলা রুজু করেছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরেই নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে—এমনটাই সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে।
এখনো পর্যন্ত জেল কর্মীদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সরিয়ে রাখা হয়নি।
বন্দিদের মনস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা: একটি বড় প্রশ্ন
দীর্ঘমেয়াদি বিচারাধীন বন্দিদের ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই।
সেলিম আনসারির মতো বন্দিদের সঙ্গে ন্যূনতম মনোসামাজিক কাউন্সেলিং করা হয়েছিল কিনা, তারও কোনও রেকর্ড সামনে আসেনি।
সংশোধনাগারে আত্মহত্যা ঠেকাতে জেল কোড অনুযায়ী কিছু প্রটোকল থাকলেও, সেগুলি কতটা কার্যকর তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
সেলিম আনসারির মৃত্যু, হাওড়া জেলা সংশোধনাগার-এর বর্তমান নিরাপত্তা ও নজরদারি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে একাধিক প্রশ্ন তুলছে। পরিবার যা বলছে, তা একদিকে; এবং প্রশাসন যা বলছে, তা অন্যদিকে। ঘটনা তদন্তাধীন, কিন্তু তথ্য প্রতিটি স্তরে গভীর মনোযোগ দাবি করছে। সময়ের অপেক্ষা—এই মুহূর্তে এটাই বলার।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো