চলন্ত লোকাল ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু চার যাত্রীর, রেল ব্যবস্থাপনায় উঠল প্রশ্ন
মহারাষ্ট্রের থানে জেলায় মুম্ব্রা ও দিবা স্টেশনের মাঝে সোমবার সকালে এক ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন চারজন যাত্রী, আহত হয়েছেন নয়জন। ব্যস্ত সময়ে বিপরীতমুখী দুই ট্রেনের পাদানিতে দাঁড়ানো যাত্রীদের ব্যাগ পরস্পর ঘষে গেলে ঘটে যায় এই দুর্ঘটনা। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন এক পুলিশ কর্মীও। গুরুতর আহত দু’জনকে উন্নত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে। যাত্রী সংগঠন থেকে দায় চাপানো হয়েছে DRM-এর উপর। রেল বোর্ড জানিয়েছে, ২০২৬ থেকে আসছে নিরাপদ নতুন নন-এসি লোকাল ট্রেন।
📌 STORY HIGHLIGHTS
📍 দুর্ঘটনা ঘটে সকাল ৯:৩০টা নাগাদ মুম্ব্রা ও দিবার মধ্যে
📍 চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে ৪ জনের মৃত্যু, ৯ জন আহত
📍 এক পুলিশ কর্মী সহ ৪ জন নিহত: কেতন সরোজ (২৩), রাহুল গুপ্ত, ময়ূর শাহ (৫০), বিকি মুখেদাল (৩৪)
📍 গুরুতর আহত: শিবা গাওয়ালি ও অনিল মোরে
📍 যাত্রীদের অভিযোগ: “রুটটি বহুবার ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে জানানো হয়েছে”
📍 রেল বোর্ড ঘোষণা: জানুয়ারি ২০২৬ থেকে নতুন নিরাপদ ট্রেন আসছে
মহারাষ্ট্রের থানে জেলায় সোমবার সকালে দুটি লোকাল ট্রেন থেকে পড়ে চারজন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে এবং নয়জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনাটি ঘটে সকাল ৯:৩০টা নাগাদ, মুম্ব্রা ও দিবা স্টেশনের মধ্যবর্তী এলাকায়। বিপরীতমুখী দুটি ট্রেনের পাদপীঠে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের ব্যাগ একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সেন্ট্রাল রেলওয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপনিল নিলা।
দুর্ঘটনার খবর রেল কর্তৃপক্ষকে জানান ট্রেনের এক গার্ড। তখন ট্রেন দু’টি ব্যস্ত সময়ে চলছিল। থানে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন জানিয়েছে, মোট ১৩ জন যাত্রী ট্রেন থেকে পড়ে যান।
মৃতদের নাম:
১. কেতন দিলীপ সারোজ (২৩)
২. রাহুল সন্তোষ গুপ্ত
৩. ময়ূর শাহ (৫০)
৪. বিকি বাবাসাহেব মুখেদাল (৩৪), পুলিস কর্মী
৫. একজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি
আহতদের অবস্থা ও চিকিৎসা:
নয়জন আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শিবা গাওলি (২৩) এবং অনিল মোরে (৪০)-কে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকিরা থানের কালওয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সরকারের অবস্থান:
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস ঘটনাটিকে “দুর্ভাগ্যজনক” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, রেল দপ্তর এই দুর্ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে। আহতদের চিকিৎসা চলছে ছত্রপতি শিবাজী হাসপাতাল ও থানে জেনারেল হাসপাতালে।
মুম্বই রেলওয়ে প্যাসেঞ্জারস অ্যাসোসিয়েশন সোমবারের দুর্ঘটনার পর বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপক (DRM)-এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে। তারা জানায়, দিবা-কালওয়া রুটের ঝুঁকি নিয়ে দুইবার রেলবোর্ডে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। এই রুটে অতীতেও বহু যাত্রীর প্রাণহানি ঘটেছে।
অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ,
“কল্যাণ ও থানে রুটে দুটি নতুন লাইন যুক্ত হওয়ার পর প্রত্যাশা ছিল আরও লোকাল পরিষেবা মিলবে। কিন্তু DRM ওই রুটে মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনকে অগ্রাধিকার দেন।”
সমিতির প্রতিক্রিয়া:
মুম্বই রেলযাত্রী সমিতির সভাপতি মধু কোটিয়ান বলেন,
“এই দুর্ঘটনার জন্য DRM-এর দায় নিতে হবে। রেলবোর্ড যেন মুম্বই লোকাল রেল পরিচালনায় হস্তক্ষেপ না করে। একটি স্বাধীন মুম্বই লোকাল প্রশাসন গঠন করা হোক।”
তিনি আরও দাবি করেন, কল্যাণ থেকে কুরলা পর্যন্ত চারটি রুট কেবলমাত্র লোকাল ট্রেনের জন্য সংরক্ষিত হোক এবং ব্যস্ত সময়ে মেল-এক্সপ্রেস ট্রেন যেন না চলে।
রেল বোর্ডের ঘোষণা:
দুর্ঘটনার পর রেলবোর্ড জানায়, ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে নতুন ডিজাইনের নন-এসি ট্রেন চালু করা হবে, যেখানে যাত্রীদের আরাম ও নিরাপত্তা আরও উন্নত হবে। পাশাপাশি, মুম্বই সাবারবান রেলের জন্য ২৩৮টি এসি ট্রেনসেট তৈরি হচ্ছে।
নতুন নন-এসি ট্রেনের বৈশিষ্ট্য:
দরজায় থাকবে লুভর (হাওয়া চলাচলের জন্য স্ল্যাটস)
ছাদের ওপর ভেন্টিলেশন ইউনিট থাকবে
কোচের মধ্যে যাত্রী চলাচলের জন্য ভেস্টিবিউল থাকবে
আহত যাত্রীদের তালিকা:
১. শিবা গাওলি (২৩) – আশঙ্কাজনক, জুপিটার হাসপাতালে স্থানান্তরিত
২. আদেশ ভইর (২৬) – স্থিতিশীল
৩. রিয়ান শেখ (২৬) – স্থিতিশীল
৪. অনিল মোরে (৪০) – আশঙ্কাজনক, জুপিটার হাসপাতালে স্থানান্তরিত
৫. তুষার ভগত (২২) – স্থিতিশীল
৬. মানিশ সারোজ (২৬) – স্থিতিশীল
৭. মাছিন্দ্র গোটার্নে (৩৯) – স্থিতিশীল
৮. স্নেহা ধোন্ডে (২১) – স্থিতিশীল
৯. প্রিয়াঙ্কা ভাটিয়া (২৬) – স্থিতিশীল
দূরবর্তী এলাকার বহু যাত্রী প্রতিদিন কর্মস্থলে পৌঁছতে এই রুটে লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করেন। উলহাসনগর, আম্বারনাথ, কল্যাণ, বাসিন্দ, খারদি, আসানগাঁও এবং টিটওয়ালা থেকে আসা যাত্রীরাই মূলত এই রুট ব্যবহার করেন।
দুর্ঘটনার যাত্রী বললেন — “এটাই আমাদের রোজকার ঘটনা”
উলহাসনগরের বাসিন্দা দীপক ওয়ালভে, যিনি দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের একজন যাত্রী ছিলেন, বলেন, “এটা আমাদের কাছে রোজকার ব্যাপার। মানুষ এখন খেয়াল করছে কারণ কেউ মারা গেছে। সরকার শুধু নতুন ট্রেন চালু করতেই ব্যস্ত, এক্সপ্রেস আর মেল ট্রেন চালাচ্ছে লোকাল লাইনে, কিন্তু কোচ বা লোকাল ট্রেন বাড়াচ্ছে না।” তিনি থানে যাচ্ছিলেন।
পুলিশকর্মীর মৃত্যুর পর আত্মীয়ের ক্ষোভ
দুর্ঘটনায় নিহত পুলিশকর্মী বিকি মুখেদালের আত্মীয় মালন (৪৫) বলেন,
“তিনি ক্রাইম ব্রাঞ্চে কর্মরত ছিলেন এবং সম্প্রতি থানেতে বদলি হয়েছিলেন। প্রশাসনের অবহেলায় ওঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর স্ত্রী ও তিন বছরের সন্তানকে নিয়ে কী হবে?”
📌 প্রতিক্রিয়া | KEY RESPONSES:
যাত্রী বলছে: ট্রেন সংখ্যা না বাড়িয়ে এক্সপ্রেস চালানো হচ্ছে
মৃত পুলিশকর্মীর আত্মীয়ের প্রশ্ন: পরিবারের দায় কে নেবে?
বিরোধী দল: রেলমন্ত্রী ও রাজ্য সরকার দায় এড়াতে পারে না
বিরোধীদের তীব্র সমালোচনা: “মন্ত্রী দায়ী”
শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) নেতা আদিত্য ঠাকরে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে আক্রমণ করে বলেন,
“তিনি ‘রিল মন্ত্রী’ হয়ে গেছেন, ভিডিও বানাতে ব্যস্ত, রেলওয়ের দায়িত্ব নিচ্ছেন না। গত দুই বছরে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, বহু মানুষ মারা গেছেন, কিন্তু কাউকে দায়ী করা হয়নি।”
কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া:
কংগ্রেস নেতা বিজয় ওয়াডেট্টিওয়ার বলেন,
“সরকার কবে সাধারণ মানুষের যন্ত্রণা বুঝবে? এটা কেবল দুর্ঘটনা নয়, প্রশাসনিক অবহেলার দৃষ্টান্ত। সরকার জানে হাজার হাজার কোটি খরচ করে বন্দে ভারত ট্রেন চালাচ্ছে, কিন্তু এই ট্রেনে সাধারণ গরিব মানুষ কী যেতে পারছেন?”