দেশীয় পণ্যের প্রতি অনুরাগ, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কঠোর বার্তা ও আমেরিকার শুল্কচাপের প্রেক্ষাপটে আত্মনির্ভরতার দৃঢ় সংকল্প—এই ত্রিবেণী বার্তা নিয়ে বারাণসীর বানাউলি গ্রামে জনসভায় বক্তব্য রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘স্বদেশি’ শব্দটিকে জাতীয় চেতনার কেন্দ্রে স্থাপন করে তিনি আহ্বান জানালেন স্থানীয় উৎপাদনের পক্ষে জাগরণে। অপরদিকে, ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষা শক্তির প্রদর্শন ঘটিয়ে সন্ত্রাসের মূলে কড়া আঘাতের সংকেত দিলেন তিনি। বিশ্ব বাজারে ভারতের অবস্থান ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে মোদীর এই বক্তব্য দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে।
📰 STORY HIGHLIGHTS
বারাণসীতে মোদীর ভাষণে স্বদেশি পণ্যের প্রতি আহ্বান
আমেরিকার নতুন শুল্ক নীতির প্রেক্ষিতে দেশের স্বার্থ রক্ষার কথা
‘অপারেশন সিন্দুর’-এর মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জাহির
ব্রহ্মোস মিসাইল এখন তৈরি হবে লখনউতে
কংগ্রেস ও এসপি-র তীব্র সমালোচনা
“শিব কল্যাণকারী, কিন্তু অন্যায় দেখলে রুদ্র রূপ নেন”
বর্ষাকালের মেঘলা আকাশের নিচে বারাণসীর বানাউলি গ্রামের খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক দৃঢ়তাময় ভাষণে দেশের সামনে তুলে ধরলেন নতুন ভারতের আত্মবিশ্বাসী চেহারা। তাঁর কণ্ঠে ফুটে উঠল একদিকে স্বদেশি ভাবনার আবেদন, অন্যদিকে দেশবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে নির্ভীক প্রতিরোধের প্রত্যয়। এই বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক প্রচার ছিল না, বরং এক গভীর বার্তা বহন করল—ভারত এখন আর আত্মরক্ষায় পিছু হটে না, বরং নিজস্ব শক্তিতে গড়ে তুলছে উন্নয়নের এক নতুন দিগন্ত।
প্রধানমন্ত্রী এদিন ₹২,২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধির ২০তম কিস্তির ₹২০,৫০০ কোটি টাকার অনুদান ৯.৭ কোটি কৃষকের কাছে সরাসরি পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে কৃষি-ভিত্তিক ভারতের প্রতি সরকারের অঙ্গীকার তুলে ধরেন।
স্বদেশি পণ্যের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতার পথে আহ্বান
মঞ্চে দাঁড়িয়ে মোদী বলেন,
“বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা যদি আমাদের দেশের পণ্যকে অবহেলা করি, তবে উন্নয়নের মূলধারায় পিছিয়ে পড়ব। দেশের প্রতিটি নাগরিককে জিজ্ঞেস করতে হবে—যা কিনছি, তা কি কোনও ভারতীয়র ঘামে তৈরি?”
তিনি আরও বলেন,
“দেশীয় পণ্যে ভরসা করা কেবল অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, এটি আমাদের জাতীয় চরিত্রেরও প্রতিচ্ছবি। স্বাধীনতা সংগ্রামে যেমন চরকা ছিল এক প্রতিরোধের প্রতীক, তেমনি আজ ‘ভোকাল ফর লোকাল’ আমাদের আত্মনির্ভর ভারতের চালিকাশক্তি।”
মোদী জানিয়েছেন, বিশ্বে যখন প্রতিটি দেশ নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যস্ত, তখন ভারতকেও তার নিজস্ব অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের প্রতি সজাগ থাকতে হবে। এই প্রেক্ষিতে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ঘোষণা—ভারতের রপ্তানি পণ্যের উপর ২৫% আমদানি শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত—ভারতীয় বাজারের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ।
‘সিন্দুর’ কখনও তামাশা হতে পারে না
ভারতের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের প্রতীক হিসেবে তিনি তুলে ধরেন ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সাফল্য। তিনি বলেন,
“পাহালগামের জঙ্গি হামলায় যারা শহিদ হয়েছেন, তাঁদের প্রতি প্রতিশোধ ছিল এ অভিযান। এটা কোনও রাজনৈতিক প্রতিশোধ নয়, এটা আমাদের মা-বোনদের সিন্দুর রক্ষার লড়াই।”
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের ব্যাখ্যায় প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন,
“শিব মানে কল্যাণ, কিন্তু যখন অন্যায় মাথা তোলে, তখন মহাদেব রুদ্র রূপ ধারণ করেন। অপারেশন সিন্দুরে ভারত সেই রুদ্ররূপই ধারণ করেছে।”
তাঁর কথায় ছিল পাকিস্তানকে সতর্কবার্তা:
“যদি পাকিস্তান আবার আগ্রাসন করে, তবে উত্তরপ্রদেশে তৈরি ব্রহ্মোস মিসাইল দিয়ে জবাব দেওয়া হবে।”
প্রতিরক্ষায় স্থানীয় উৎপাদনের গর্ব
মোদী জানান, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও ভারত এখন স্বনির্ভরতার পথে।
“লখনউতে ব্রহ্মোস মিসাইল তৈরি শুরু হয়েছে। এটা কেবল একটি অস্ত্র নয়, ভারতের প্রযুক্তিগত স্বপ্ন ও সক্ষমতার প্রতীক।”
তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন,
“এই মাটিতে তৈরি অস্ত্রই এবার দেশের শত্রুদের জবাব দেবে। আত্মনির্ভরতার এই চিত্র কেবল প্রতিরক্ষার নয়, আত্মবিশ্বাসেরও প্রতীক।”
বিরোধীদের উদ্দেশে তীব্র কটাক্ষ
মোদী এদিন কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির দিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানান। তিনি অভিযোগ করেন, বিরোধীরা সেনাবাহিনীর বীরত্ব ও অপারেশন সিন্দুরকে ‘তামাশা’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
“যখন সারা দেশ জঙ্গি দমন অভিযান নিয়ে গর্ব করছে, তখন কিছু মানুষ তা মেনে নিতে পারছে না। পাকিস্তানের কষ্ট তো বোঝা যায়, কিন্তু আমাদের দেশের কিছু নেতার কষ্ট দেখে অবাক লাগে।”
সমাজবাদী পার্টির এক নেতার সংসদে প্রশ্ন—“জঙ্গিদের কেন এখন মারা হল?”—এর জবাবে মোদী তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান,
“আমার কি ওদের জিজ্ঞেস করে অভিযান চালাতে হবে? এটাই কি তাঁদের দেশপ্রেম?”
নতুন ভারতের নতুন চেতনা
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে উঠে আসে ‘নয়া ভারত’-এর আত্মবিশ্বাস।
“এটা সেই ভারত, যা মহাদেবকে পূজো করে, কিন্তু প্রয়োজনে শত্রুর বিরুদ্ধে কালভৈরব হয়ে ওঠে।”
বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন,
“আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে আমাদের আজকের পদক্ষেপ। স্বদেশি পণ্যের ব্যবহার, দেশীয় শিল্পের উন্নয়ন, এবং প্রতিরক্ষায় আত্মনির্ভরতা—এই তিনটি স্তম্ভেই দাঁড়িয়ে থাকবে নতুন ভারতের ভিত।”
এই ঐতিহাসিক সভায় উপস্থিত ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য ও ব্রজেশ পাঠক এবং বিজেপি রাজ্য সভাপতি ভূপেন্দ্র সিং চৌধুরীসহ বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের উপস্থিতি আরও একবার রাজনৈতিক বার্তাকে দৃঢ়তা দেয় যে, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার একই লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করছে—এক আত্মনির্ভর, আত্মবিশ্বাসী ভারতের নির্মাণে।
বারাণসীর জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্য একদিকে যেমন ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থে স্বদেশি পণ্যের প্রতি নতুন করে আস্থা গড়ে তুলতে আহ্বান জানায়, অন্যদিকে দেশের প্রতিরক্ষা শক্তি ও নিরাপত্তা নীতির ক্ষেত্রে একটি আত্মবিশ্বাসী অবস্থান তুলে ধরে। বিশ্ব বাণিজ্যের চাপ, আমেরিকার শুল্ক নীতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রেক্ষিতে মোদীর এই ভাষণ ছিল কৌশলী, স্পষ্ট এবং প্রতীকী। ‘ভোকাল ফর লোকাল’ ও ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর মাধ্যমে তিনি এক নতুন ভারতের দিশা দেখালেন—যেখানে দেশীয় উৎপাদন ও জাতীয় নিরাপত্তা সমান গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো