আসলে কী হচ্ছে?
পশ্চিমবঙ্গে নাগরিক পরিষেবা আজ এমন এক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষের কাজ সরকারি নিয়মে নয়, দালালদের মাধ্যমে কাজ হওয়া যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। নিচে পর্যায়ক্রমে বিশ্লেষণ করা হলো এই জটিল সমস্যার নেপথ্যে কীভাবে চলছে সরকারি পরিষেবায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা, কেন সরকারি পরিষেবায় স্বচ্ছতা সংকট তৈরি হয়েছে এবং কীভাবে দালাল ছাড়া কাজ হয় না এমন এক প্রাতিষ্ঠানিক বাস্তবতায় পৌঁছে গিয়েছি আমরা।
সরকারি পরিষেবা মানেই দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতা
অনলাইনে আবেদন করেও দালাল লাগছে কেন?
সরকারি পোর্টাল থাকলেও প্রায়শই তা কাজ করে না, সার্ভার ডাউন, OTP না আসা, ফর্ম রিজেক্ট—এই ধরণের সমস্যার সমাধান দিতে এসে হাজির হয় দালাল।নথিপত্র তৈরি করতে দালাল দরকার
জন্মসার্টিফিকেট, আধার আপডেট, ভোটার কার্ড সংশোধন—সব ক্ষেত্রেই একটা “কানেকশন” ছাড়া ফাইল নাড়ে না।দুর্নীতিগ্রস্ত পরিষেবা ব্যবস্থা
সরকারি অফিসে এক শ্রেণির কর্মচারী ঘুষখোর অফিসার হিসেবে পরিচিত, যারা সরাসরি কিছু না বললেও, দালালের মাধ্যমেই “বার্তা” পাঠান।
দালালদের রমরমা ও চক্রের বিস্তার
সরকারি অফিসে দালালের চক্র
প্রতিটি বড় মিউনিসিপ্যালিটি, ব্লক অফিস বা নাগরিক সেবা কেন্দ্রে একাধিক “স্থায়ী” দালাল থাকেন, যাঁদের সঙ্গে অফিসের ভিতরের লোকজনের বোঝাপড়া থাকে।তহবিল বিলি দালালের মাধ্যমে
সরকারি অনুদান, ঘর তৈরির টাকা, রেশন কার্ডে নাম তোলার সুবিধা—সব কিছুতেই দালালদের ছায়া স্পষ্ট।দালালদের অবাধ বিচরণ
অফিস প্রাঙ্গণের বাইরে, চায়ের দোকানে বা গেটে দাঁড়িয়ে থাকা পরিচিত মুখগুলিই প্রকৃত সমস্যা। কাজ করতে এলে তারা নিজে থেকেই এগিয়ে আসে—“ভাই, আমি করিয়ে দেব, চেনা লোক আছে ভিতরে।”
নাগরিকদের নিরুপায়তা
পশ্চিমবঙ্গে নাগরিক পরিষেবা পেতে দালালের উপর নির্ভরতা
সাধারণ মানুষ নিয়ম জানেন না, ভয় পান ভুল হবে বলে—এই সুযোগটাই কাজে লাগায় দালাল।সরকারি পরিষেবা পেতে সাধারণ মানুষের দালালের শরণাপন্ন হওয়া
বহু ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, মানুষ নিজের কাজ করতে গিয়ে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং শেষমেশ টাকা দিয়ে দালালের শরণ নেন।দালালদের দৌরাত্ম্যে পরিষেবা পেতে বিলম্ব
ironic হলেও সত্যি, অনেক সময় সরকারি অফিসে দালাল ছাড়া কাজের গতি ধীর হয়। অথচ দালালের হাত ধরে ফাইল উড়ে চলে।
প্রযুক্তির উপস্থিতি, কিন্তু কার্যকারিতা কোথায়?
দুর্নীতিমুক্ত নাগরিক পরিষেবার দাবি পশ্চিমবঙ্গে
ডিজিটাল ইন্ডিয়া, ই-গভর্নেন্স—সবই চালু হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় নাগরিক পরিষেবা এখনো “ম্যানুয়াল মাফিয়া”র নিয়ন্ত্রণে।নাগরিক পরিষেবায় স্বচ্ছতা ও দালাল মুক্ত ব্যবস্থা
যে স্বচ্ছতা সরকারের মুখে শোভা পায়, তার বাস্তব রূপ আজ ধোঁয়াশা। নাগরিক পরিষেবায় স্বচ্ছতা সংকট এতটাই প্রবল যে মানুষ এটিকে নিয়ম ভেবে নিয়েছে।মধ্যস্থতাকারী ছাড়া পরিষেবা পাওয়া সম্ভব নয় কেন
একদিকে লোকবল ঘাটতি, অন্যদিকে জটিল নিয়ম-কানুন—এই দুইয়ের ফাঁক গলে মধ্যস্থতাকারীর জায়গা পাকা।
কীভাবে জন্ম নিচ্ছে এই দালালতন্ত্র?
সরকারি পরিষেবায় স্বচ্ছতা সংকটই মূল শিকড়।
নিয়মিত মনিটরিং-এর অভাব, অভিযোগ ব্যবস্থার অকার্যকারিতা এবং প্রশাসনিক সদিচ্ছার অভাব এই চক্রকে আরও শক্তিশালী করেছে।আধার, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ডে দালালের ভূমিকা
এগুলি মৌলিক নথি হলেও, সংশোধন বা আপডেট করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের হয়রানি হয়। এই ভোগান্তির মাঝেই জন্ম নেয় “পেড সার্ভিস” দালালদের।দালালদের দাপটে সাধারণ মানুষ বিপাকে
কাগজপত্রে একটুও ভুল থাকলে তা সংশোধন করতে গিয়ে মানুষকে দিনের পর দিন ছুটতে হয়, ফলত শেষমেষ “দালাল ছাড়া উপায় নেই”—এই মানসিকতা গেঁথে যায় মনে।
🔍 নজরে রাখতে হবে এই বাস্তবতাগুলো:
পশ্চিমবঙ্গে নাগরিক পরিষেবা পেতে দালালের উপর নির্ভরতা বেড়েই চলেছে।
সরকারি পরিষেবায় স্বচ্ছতা সংকট এখন এক চরম বাস্তবতা।
দুর্নীতিমুক্ত নাগরিক পরিষেবার দাবি পশ্চিমবঙ্গে কেবল স্লোগানে সীমাবদ্ধ।
মানুষ দালালদের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সরকারি দপ্তরগুলো এখন পরিষেবায় দালালের দাপট দ্বারা চালিত।