পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য বর্তমানে এক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ইস্যু হয়ে উঠেছে। একাকীত্ব, বিষণ্ণতা এবং পারিবারিক অবহেলার ফলে প্রবীণদের মানসিক সমস্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বয়স্ক নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি, উপযুক্ত কাউন্সেলিং, এবং সহায়তা কেন্দ্রের অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সামাজিক উদ্যোগ এই সংকট নিরসনে মূল ভূমিকা রাখতে পারে। এই প্রবন্ধে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের একাকীত্ব, মানসিক চাপ এবং তা মোকাবিলায় সম্ভাব্য সমাধান ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ নিয়ে।

সূচিপত্র

একাকীত্ব: প্রবীণদের নীরব সঙ্গী

একাকীত্ব—শব্দটা যতটা সহজ, প্রভাবটা ততটাই জটিল। প্রবীণদের একাকীত্ব যেন এক নিঃশব্দ আগুন, যা ধীরে ধীরে পোড়াতে থাকে মানসিক স্থিতি ও স্বাস্থ্যের ভিত। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যখন আলোচনা হয়, তখন এই একাকীত্বের প্রসঙ্গটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। চলুন, একটু গভীরভাবে দেখি—এই একাকীত্ব কীভাবে প্রবেশ করে, কী প্রভাব ফেলে এবং কেন এটি এখন উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

Mental Health Conditions Experienced by The Senior Citizens

 একাকীত্ব কিভাবে শুরু হয়?

  • পরিবারের পরিবর্তিত কাঠামো:
    যৌথ পরিবার আজ অতীত। নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে প্রবীণরা প্রায়শই “অপ্রয়োজনীয়” সদস্যে পরিণত হন।
    📌 উদাহরণ: দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা ৭৫ বছর বয়সি চন্দনা দেবী এক সময় চার প্রজন্মের সঙ্গে থাকতেন। এখন একাই থাকেন—সন্তান বিদেশে, প্রতিবেশীরা ব্যস্ত, আর ফোন বাজে কেবল চিকিৎসকের কনফার্মেশনের জন্য।

  • অবসরের পর সামাজিক বিচ্ছিন্নতা:
    কাজ থেকে অবসর মানে শুধু বেতন বন্ধ হওয়া নয়, বন্ধ হয়ে যায় দৈনিক মানুষের সঙ্গে মেলামেশাও।
    👉 পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা এই বিষয়ে সচেতন হলেও, প্রতিদিন বাড়ছে একা থাকা প্রবীণদের সংখ্যা।

 প্রবীণদের একাকীত্বের প্রভাব

  • বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ
    একাকীত্ব ও বিষণ্ণতা একে অপরের সঙ্গে জড়িত। যারা দীর্ঘদিন একা থাকেন, তাঁদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব, আত্মহত্যার প্রবণতা, এমনকি মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়।
    🎯 বৃদ্ধাবস্থায় মনোবল হারিয়ে ফেলেন অনেকেই।

  • স্মৃতিভ্রংশ ও Alzheimer’s-এর ঝুঁকি
    গবেষণায় দেখা গেছে, প্রবীণদের একাকীত্ব মস্তিষ্কের কোষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্মৃতি ক্ষয় ও অলীক চিন্তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
    ➤ এই অবস্থায় প্রবীণদের জন্য কাউন্সেলিং অপরিহার্য।

 কিছু অজানা অথচ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • একাকীত্ব মানে শুধু একা থাকা নয়
    অনেকে পরিবারের সঙ্গে থেকেও একা অনুভব করেন। এটি পরিবারের অবহেলা ও একাকীত্ব এর অন্যতম রূপ।
    ➤ মানসিক দূরত্ব, অনুভূতির অভাব এবং সম্মানের ঘাটতি এই অনুভূতির জন্ম দেয়।

  • ‘ইমোশনাল ইনহেরিট্যান্স’-এর ফাঁদে পড়া প্রবীণেরা
    পশ্চিমবঙ্গের অনেক প্রবীণ ব্যক্তি তাঁদের মানসিক চাপ নিজের সন্তানদের অসচেতন আচরণে “স্বাভাবিক” ধরে নেন। ফলে তারা কখনও নিজেদের সমস্যাকে গুরুত্ব দেন না।
    📌 এটি বয়স্কদের মানসিক সমস্যা চিহ্নিত করতে বাধা সৃষ্টি করে।

 বাস্তব কাহিনি: “হর্ষবর্ধনের নির্জন সন্ধ্যা”

হর্ষবর্ধন মিত্র, বয়স ৮২, বালিগঞ্জের এক বহুতলে থাকেন। স্ত্রী মারা গেছেন বছর পাঁচেক আগে। ছেলে-মেয়ে বিদেশে।
প্রতিদিন সকালে দোতলার বারান্দা থেকে নিচের রাস্তা দেখেন, যেন কারো অপেক্ষায়।
তাঁর কথায়,

“আসলে কারো সঙ্গে কথা বলার জন্য মন চায়। ফোন বাজে না, দরজা কেউ টানে না—শুধু দেয়ালগুলো চেয়ে থাকে।”

তিনি নিজেই বললেন, “আমার মনে হয়, পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কেউ যদি সিরিয়াসলি ভাবে, তবে আমাদের মতো অনেকেই বাঁচতে শিখবে।”

এই কাহিনি শুধু হর্ষবর্ধনের নয়, পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ সমাজ এর এক অন্ধকার প্রতিচ্ছবি।

 সমাধানের দিক

  • কমিউনিটি সংযোগ গড়ে তোলা
    🟢 ক্লাব, চায়ের আড্ডা, বয়স্কদের জন্য সাপ্তাহিক সভা—এইসব উদ্যোগ প্রবীণদের একাকীত্ব কমানোর সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে কাজ করতে পারে।

  • সার্বজনীন হেল্পলাইন ও সাপোর্ট গ্রুপ
    💡 বয়স্কদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা কেন্দ্র সহজে অ্যাক্সেসযোগ্য করা উচিত, যাতে কোনও প্রবীণ ব্যক্তি সমস্যায় পড়লে ফোন বা সামনাসামনি পরামর্শ নিতে পারেন।

  • সচেতনতা বৃদ্ধি ও পারিবারিক সংলাপ
    🎯 প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা অভিযান শুরু করা এখন সময়ের দাবি। স্কুল, মিডিয়া, হাউজিং কমপ্লেক্স—সর্বত্র এই বিষয়ে আলাপ-আলোচনা জরুরি।

প্রবীণদের একাকীত্বের অন্যতম কারণ: সন্তানদের অবহেলা

পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার এক বড় কারণ হলো তাদের সন্তানদের অবহেলা। বর্তমান সমাজে, যেখানে উন্নত জীবনযাত্রা এবং কর্মক্ষেত্রের চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে পারিবারিক বন্ধনও দুর্বল হচ্ছে, সেখানে অনেক বয়স্ক নাগরিক একাকীত্বের শিকার হচ্ছেন। সন্তানরা তাদের পিতামাতার প্রতি দায়িত্বহীন হয়ে পড়ছে, যার ফলে প্রবীণরা মানসিক চাপ ও একাকীত্বের শিকার হচ্ছেন। এই বিষয়ের মাধ্যমে, আমরা পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং সন্তানদের ভূমিকা নিয়ে আলোকপাত করব।

 পারিবারিক সম্পর্কের অবক্ষয়

  • আজকাল, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা কমে যাচ্ছে। বাচ্চারা নিজেদের ক্যারিয়ার এবং জীবনের অন্যান্য দিক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ফলে বয়স্করা একাকী হয়ে পড়েন।

  • পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম, তবে সন্তানরা যদি তাদের পিতামাতাকে প্রয়োজনীয় সময় বা মানসিক সমর্থন না দেয়, তবে সেই পিতামাতার মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত হতে পারে।

 নৈতিক এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার অভাব

  • অনেক ক্ষেত্রে, সন্তানরা তাদের বৃদ্ধ পিতামাতার প্রতি নৈতিক দায়িত্ব অনুভব না করে, শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সহায়তার দিকে মনোযোগ দেয়। তবে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সামাজিক এবং মানসিক সহায়তাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • এই অবহেলা পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একাকীত্বের ফলে প্রবীণরা বিষণ্নতায় ভুগে এবং তাদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়।

 স্বাস্থ্য সমস্যার অবহেলা

  • সন্তানরা যদি তাদের পিতামাতার স্বাস্থ্য সমস্যা উপেক্ষা করে, তাহলে তা মানসিক অবস্থা আরও খারাপ করে তুলতে পারে। অনেক প্রবীণ নাগরিকদের পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার সাথে শারীরিক সমস্যাও যুক্ত থাকে, কিন্তু এই বিষয়ে সঠিক মনোযোগ না পেলে তারা আরও একা ও নির্জন হয়ে পড়েন।

 পরিবার থেকে স্নেহের অভাব

  • একাকীত্বের আরেকটি কারণ হলো, যখন সন্তানরা তাদের পিতামাতার সাথে সময় কাটায় না বা তাদের অনুভূতিগুলি গুরুত্ব দেয় না। স্নেহের অভাব প্রবীণদের মধ্যে মানসিক অবসাদ তৈরি করতে পারে, যার প্রভাব সরাসরি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যতে পড়ে।

 প্রবীণদের জন্য মনস্তাত্ত্বিক সমর্থন

  • পরিবারের অবহেলা কেবলমাত্র শারীরিক একাকীত্বই সৃষ্টি করে না, বরং মানসিক ও আবেগিক ক্ষতিও সৃষ্টি করে। প্রবীণদের জন্য পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও কাউন্সেলিং এর অভাবে, তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন এবং তাদের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।

এই বিষয়টি সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন সংকেত দেয় যে, পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় শুধুমাত্র স্বাস্থ্যসেবা নয়, বরং পরিবারের সমর্থনও অপরিহার্য। সন্তানরা তাদের বৃদ্ধ পিতামাতার প্রতি যত্নশীল হলে, তাদের মানসিক চাপ ও একাকীত্ব অনেকটাই কমানো সম্ভব।

মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব

পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য এখন আর কেবল একটি ‘বিকল্প আলোচনার বিষয়’ নয়, এটি একান্ত অপরিহার্য বাস্তবতা। শারীরিক রোগ যেমন ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ, তেমনই প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা-ও হতে পারে প্রাণঘাতী—তবে সেটা ঘটে ধীরে ধীরে, নিঃশব্দে।

 মানসিক স্বাস্থ্য কীভাবে প্রভাব ফেলে প্রবীণ জীবনে?

📍  দৈনন্দিন কর্মক্ষমতা ও মনোযোগে প্রভাব
  • মানসিক ভারসাম্যহীনতা প্রবীণদের ক্ষেত্রে তাদের সাধারণ কাজ—যেমন রান্না, ওষুধ খাওয়া, বাজার করা—এই সবের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

  • পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা না থাকলে এসব সাধারণ কাজগুলোই জটিল হয়ে ওঠে।

📍  সামাজিক সম্পর্ক ও আত্মসম্মানে বিপর্যয়
  • মানসিক অবসাদ প্রবীণদের ভেতরে “নিজেকে বোঝা না পাওয়ার” অনুভব তৈরি করে।

  • এটি তাদের আত্মসম্মান ভেঙে দেয়, ফলে পরিবার থেকেও তারা স্বেচ্ছায় দূরে সরে যান।
    📌 এই ‘অদৃশ্য আত্মবিচ্ছিন্নতা’ পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 অবহেলিত বিষয়: মানসিক রোগ মানেই পাগল?

এই ভ্রান্ত ধারণা বহু প্রবীণকে চিকিৎসা থেকে দূরে রেখেছে।

  • বিষণ্ণতা, অ্যালঝেইমারস, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস, OCD —এই সব রোগ মানসিক হলেও মোটেই পাগলামি নয়।

  • পশ্চিমবঙ্গে বহু প্রবীণ এখনো মনে করেন, “মন খারাপ হলে একটু ঘুরলেই ঠিক হয়ে যাবে”—এ ধারণা বদলাতে হবে।

🎯 তাই প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

 এক সত্য ঘটনা: “রাধারানীর নীরব যুদ্ধ”

রাধারানী বসু, মেদিনীপুরের ৭৮ বছরের প্রাক্তন স্কুল শিক্ষিকা। স্বামী মারা গেছেন ১২ বছর আগে, ছেলে চাকরিসূত্রে বেঙ্গালুরুতে।
তাঁর জীবনের প্রতিটি সকাল শুরু হতো গীতা পাঠ দিয়ে, কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি সবকিছুতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

“কেউ খেয়াল করত না যে আমি একা নই, আমি নিঃশেষও,” বলেছিলেন তিনি।

একদিন প্রতিবেশী মীনাক্ষী তাঁর ঘরের আলো কয়েকদিন ধরে জ্বলতে দেখে সন্দেহ করেন। ডাক্তারি পরীক্ষা হলে দেখা যায় তিনি চরম ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে ভুগছেন। এখন তিনি একটি স্থানীয় প্রবীণ মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা কেন্দ্র থেকে থেরাপি নেন, ও ধীরে ধীরে আগের মত হয়ে উঠছেন।

Over 65% elderly feel lonely amid rising adoption of tech among youth:  Survey | Today News

 তথ্য-চমক: আপনি জানেন কি?

  • ভারতে ৬০ ঊর্ধ্বদের মধ্যে প্রায় ২০% প্রবীণ মানসিক অসুস্থতা ভোগ করেন, যার ৭০% কখনো চিকিৎসাই পান না।

  • পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা-র অপ্রতুলতা এই সমস্যা আরো তীব্র করে তোলে।

  • WHO এর তথ্য অনুযায়ী, ‘মানসিক স্বাস্থ্যহীনতা হল গ্লোবাল সাইলেন্ট কিলার’—যা প্রবীণদের মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত।

 সমাধানের পথ: গড়ে তুলুন মানসিক স্বাস্থ্যবান বার্ধক্য

✔️  পরিবারে মনোযোগ বাড়ান
  • শুধু ওষুধ ও খাবার নয়, প্রতিদিন ১৫ মিনিট আলাপ-আলোচনা হতে পারে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের অন্যতম চাবিকাঠি

✔️  মানসিক স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক করুন
  • সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে বছরে অন্তত একবার প্রবীণদের মানসিক অবস্থা নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত।

  • পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা যদি নিয়মিত হয়, তাহলে অনায়াসে ধরা যাবে অবসাদ বা উদ্বেগের লক্ষণ।

✔️  থেরাপি এবং কাউন্সেলিং সেশন সহজলভ্য করুন
  • অনেক প্রবীণ ‘কাউন্সেলিং’ শব্দটাকেই অপমান মনে করেন। সচেতনতা ছাড়া এই ধ্যানধারণা ভাঙা যাবে না।

  • প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা অভিযান চালানো জরুরি।

পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য এখন আর অগ্রাহ্য করার মতো নয়।মানসিক সুস্থতা ছাড়া শারীরিক সুস্থতা অসম্ভব।একজন প্রবীণের হাসি শুধু পরিবারের নয়, সমাজেরও আয়না।প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব নিয়ে যত বেশি আলোচনা হবে, তত দ্রুত বদলাবে এই চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা

পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা এখনও প্রান্তিক অবস্থানে। মানসিক স্বাস্থ্য মানেই যেন একটি অদৃশ্য অরণ্য, যেখানে প্রবেশ করতে সাহস করে না সমাজের মূলধারা। অথচ এই অরণ্যের মধ্যেই হারিয়ে যাচ্ছে হাজারো রাধারানী, বিজয় কৃষ্ণ কিংবা জহর বাবু।

 বর্তমানে কী আছে পশ্চিমবঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবায়?

📍  সরকারি পরিকাঠামো
  • রাজ্যে প্রায় ১৫টি সরকারি মনোরোগ হাসপাতাল আছে, তবে মাত্র ৩টিতে রয়েছে প্রবীণদের উপযোগী বিশেষ ব্যবস্থা।

  • পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ অপ্রতুল।

  • মেন্টাল হেলথ অ্যাক্ট ২০১৭ অনুযায়ী প্রবীণদের জন্য পৃথক ইউনিট থাকা উচিত হলেও বেশিরভাগ হাসপাতালে তা অনুপস্থিত।

📍  বেসরকারি উদ্যোগ
  • কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন ‘ইশান থেরাপি সেন্টার’ বা ‘সারথি ফাউন্ডেশন’ ধীরে ধীরে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দিচ্ছে।

  • তবে এই সেবাগুলি খরচসাপেক্ষ এবং অনেক প্রবীণই তা বহন করতে পারেন না।

 চিত্রে চমক: কোথায় কতটা ঘাটতি?

পরিষেবামোট সংখ্যা (2024 অনুযায়ী)প্রবীণদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাঅভাবের পরিমাণ
সরকারি মানসিক হাসপাতাল153অধিকাংশে প্রবীণ ইউনিট নেই
ট্রেন্ড সাইকোলজিস্ট~125<20 প্রবীণ বিশেষজ্ঞবিশাল ঘাটতি
জেলাভিত্তিক প্রবীণ থেরাপি সেন্টার23 জেলা4 জেলা৮০% জেলায় পরিষেবা নেই

👉 এই চার্ট থেকেই বোঝা যায়, পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা কতটা অসম্পূর্ণ।

Addressing Loneliness Among Older Adults: Community and Market Solutions

 একটি সত্য ঘটনা: “জহরবাবুর অবহেলিত নিঃসঙ্গতা”

জহর পাল, দক্ষিণ ২৪ পরগণার একজন ৭৬ বছর বয়সী প্রাক্তন রেলকর্মী। স্ত্রী মারা গেছেন, ছেলেমেয়ে বিদেশে। ধীরে ধীরে তাঁর কথা কমে যায়, হাসি হারিয়ে যায়, একা একা বিড়বিড় করেন।

প্রতিবেশীরা ভাবেন, “বুড়ো বোধহয় স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে গেছে।”
কিন্তু সত্যি তা ছিল সিনিয়র কগনিটিভ ডিজঅর্ডার

বসিরহাটের এক NGO স্বেচ্ছায় তাঁকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যায়। সেখানেই ধরা পড়ে, তিনি মাইল্ড সাইকোঅ্যাক্টিভ ডিসঅর্ডার-এ ভুগছেন, যার জন্য প্রয়োজন ছিল কগনিটিভ থেরাপি—not চিকিৎসা নয়, শুধু কথা বলা!

👉 আজ জহরবাবু প্রতি সপ্তাহে দুইবার ‘থেরাপি কনভার্সেশন সেশন’ পান, যা পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা-র একটি বিরল সাফল্যের গল্প।

 কীভাবে পরিষেবার উন্নতি সম্ভব?

✔️  মোবাইল মানসিক স্বাস্থ্য ইউনিট
  • প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে প্রবীণদের মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারে এই ইউনিট।

  • এমন ব্যবস্থা কেরালা ও মহারাষ্ট্রে চালু হয়েছে—পশ্চিমবঙ্গেও এর জরুরি প্রয়োজন

✔️  থানা ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে স্ক্রিনিং
  • প্রতি মাসে একদিন প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক করতে হবে।

  • এতে একদিকে যেমন পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন হবে, তেমনই সচেতনতা বাড়বে।

✔️  কমিউনিটি থেরাপি ক্লাব
  • একটি অভিনব ধারণা—পাড়ায় পাড়ায় ‘থেরাপি আড্ডা’ বা ‘মন কথা’ ক্লাব তৈরি করে সপ্তাহে ১ দিন কথা বলার জায়গা করে দেওয়া।

  • কথা বলাটাই অনেক সময় মানসিক ওষুধের কাজ করে।

 কিছু অপ্রচলিত অথচ কার্যকর উদ্যোগ

  • Radio Therapy Program: বয়স্কদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কথোপকথন রেডিও-তে চালু করা যেতে পারে।

  • E-Therapy Tablet Scheme: রাজ্যের প্রবীণদের মধ্যে সরকারি ট্যাব বিলি করে তাতে ইনস্টল করা থাকবে “থেরাপি অ্যাপ”—যেখানে ভিডিও কলে কাউন্সেলিং পাবেন।

  • Mental Wellness Card: স্বাস্থ্যবিমার সঙ্গে যুক্ত থাকবে একটি মানসিক স্বাস্থ্য কার্ড, যাতে প্রবীণরা নিয়মিত থেরাপি পেতে পারেন।

পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা এখন ‘লাক্সারি’ নয়, একেবারে মৌলিক প্রয়োজন।

সামাজিক উদ্যোগ ও সচেতনতা

যেখানে সরকার থেমে যায়, সেখানেই শুরু হয় সামাজিক উদ্যোগ। আর এই উদ্যোগগুলির উপরই আজ অনেকাংশে নির্ভর করছে পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ও তাঁদের মনঃসংযোগ সংরক্ষণ। এই প্রবণতা নিছক দয়া নয়—এ এক সামাজিক দায়িত্ব, যেটি একান্তভাবে প্রয়োজন পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায়।

 অনন্য ও সক্রিয় উদ্যোগগুলির খতিয়ান

📌  ‘সাথী ছায়া’ – ব্যারাকপুরের আলো
  • এই NGO শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে মাত্র তিনজন স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে।

  • লক্ষ্য ছিল, একাকী প্রবীণদের সাথে সপ্তাহে অন্তত একদিন সময় কাটানো ও মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা।

  • আজ এই সংগঠনের অধীনে ৪৭ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী, যাঁরা প্রতি মাসে ৯৫ জন প্রবীণের সাথে থেরাপিউটিক কথোপকথন করেন।

  • এই উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা-র এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।

📌  ‘মনরেখা’ – সাইকোড্রামা গ্রুপ থেরাপি
  • দক্ষিণ কলকাতার একটি থিয়েটারভিত্তিক সংস্থা যেখানে প্রবীণরা থিয়েটারের মাধ্যমে নিজেদের মানসিক যন্ত্রণা প্রকাশ করেন।

  • গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের “সাইকোড্রামা”-র ফলে হতাশা ৩২% পর্যন্ত হ্রাস পায়।

  • এটি একটি অপ্রচলিত কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি—বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে।

 সত্য ঘটনা: “চুপচাপ চিঠি – শ্যামলাদির গল্প”

শ্যামলা চক্রবর্তী, শিয়ালদহর কাছে এক পুরনো বাড়িতে একা থাকতেন। একসময় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। বয়স ৭৮।
তিনি কারোর সঙ্গে কথা বলতেন না, হঠাৎ একদিন তাঁর পোষা বিড়ালটির গলায় একটি চিরকুট পাওয়া যায়:
“কেউ কি একটু কথা বলবে?”

এই ঘটনার পর ‘মন কথা’ নামে এক যুব সংঘ তাঁকে সপ্তাহে তিনদিন ফোন করত। ধীরে ধীরে শ্যামলাদির কথার অভাব দূর হয়।
আজ তিনিই ‘মন কথা’-র অন্যতম স্বেচ্ছাসেবক।

➡️ এই গল্প একটিই কথা বলে—পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা-র জন্য মানুষের সময় দেওয়া হতে পারে সবচেয়ে বড় চিকিৎসা।

 সচেতনতা গঠনে করণীয় পদক্ষেপ

✅  “মন কথা” সপ্তাহ – কমিউনিটি ক্যালেন্ডার
  • প্রতিটি ব্লকে বছরে অন্তত এক সপ্তাহ প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা অভিযান চালানো উচিত।

  • এই সপ্তাহে থেরাপি, আলাপচারিতা, সাইকো টেস্টিং ও ওয়ার্কশপ থাকবে।

  • এতে করে পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সামাজিক ধারণা ভাঙবে।

✅  স্কুল ও কলেজ স্তরে আন্তঃপ্রজন্মীয় সংযোগ
  • স্কুলের NSS ইউনিট দ্বারা প্রবীণদের সঙ্গে আলাপচারিতা কর্মসূচি চালু করা যেতে পারে।

  • গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব প্রবীণ প্রজন্মের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাঁদের মধ্যে কগনিটিভ ফাংশনিং অনেক বেশি স্থিতিশীল হয়।

  • এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী উপায় পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা-কে সামাজিক কাঠামোয় ঢুকিয়ে দেওয়ার।

✅  মিডিয়া ও টেলিভিশনের ভূমিকায় পরিবর্তন
  • সিরিয়াল বা খবরের মধ্যেও প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক থিম অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

  • “সংবাদ মানসিক স্বাস্থ্য”-র মতো প্রাইম টাইম সেগমেন্ট চালু হলে সচেতনতা বিস্তার হবে বহু গুণে।

 চিত্রে বিশ্লেষণ: কাদের কারণে সচেতনতা বাড়ছে?

উদ্যোগের ধরণপ্রভাবিত মানুষের সংখ্যা (2023)ফলাফলভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
NGO ভিত্তিক প্রবীণ আলাপন৩০০০+একাকীত্ব হ্রাস, মনোবল বৃদ্ধিরাজ্যজুড়ে সম্প্রসারণ সম্ভব
সাইকো-থিয়েটার কার্যক্রম৫০০+আবেগ প্রকাশে উৎসাহনতুন জেলা যুক্ত করার প্রস্তাব
তরুণ-প্রবীণ সংযোগ৮০০+পারস্পরিক বোঝাপড়া উন্নতশিক্ষা নীতিতে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ

আজ যখন সমাজ ‘ইনস্ট্যান্ট’ সম্পর্ক ও লাভের দিকে ছুটছে, তখন কিছু মানুষ নীরবে-নিভৃতে পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা-কে আলোর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।তাঁরা হয়তো পত্রিকায় আসেন না, কিন্তু তাঁদের প্রতিটি কাজেই রয়েছে সমাজ রচনার বীজ।পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা যদি প্রতিটি পরিবারের আলোচনার বিষয় হয়—তবেই গড়ে উঠবে এক সহানুভূতিশীল ও সুস্থ সমাজ।

How does retirement affect the mental health of senior citizens?

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য যদি একটি ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি হয়, তাহলে আজই তার ছাইচাপা আগুন বুঝে নেওয়ার সময়। কারণ সমস্যা যে কেবল ব্যক্তিগত নয়—তা এখন এক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় চ্যালেঞ্জ। তাই প্রয়োজন এমন দৃষ্টিভঙ্গি যা পুরনো পদ্ধতিকে বদলে নতুন ও বাস্তবসম্মত দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

 প্রযুক্তি-ভিত্তিক সমাধান: ডিজিটাল থেরাপি প্ল্যাটফর্ম

 AI-বেসড কাউন্সেলিং অ্যাপ
  • পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে তৈরী অ্যাপ, যেখানে প্রবীণরা ভয়েস বেসড চ্যাটবট-এর মাধ্যমে মানসিক সমস্যার প্রাথমিক বিশ্লেষণ পেতে পারেন।

  • এই ধরনের অ্যাপ ‘অনুপ্রাণা’-এর মতো প্রকল্প পশ্চিম মেদিনীপুরে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এতে প্রবীণরা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর রিস্ক স্কোর পেয়ে যান।

 টেলি-সাইকোলজি পরিষেবা
  • দূরবর্তী এলাকায় থাকা প্রবীণরা ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে সাইকোথেরাপিস্টদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন।

  • পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গ্রামাঞ্চলে যে অজ্ঞতা রয়েছে, তার একমাত্র সমাধান এই প্ল্যাটফর্ম ভিত্তিক মডেল।

 একত্রিত স্বাস্থ্য কাঠামো: শরীর ও মন একসঙ্গে

 মেডিকেল কলেজে মনোবিজ্ঞান বিভাগ বাধ্যতামূলক
  • পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা তখনই কার্যকর হবে, যখন প্রতিটি মেডিকেল কলেজে মনোচিকিৎসা বিভাগ থাকবে প্রবীণদের জন্য আলাদা ইউনিট সহ।

  • এখনও পর্যন্ত রাজ্যের মাত্র ৩টি সরকারি কলেজে এই সুবিধা আংশিকভাবে বিদ্যমান।

 জেনারেল ফিজিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ
  • অধিকাংশ প্রবীণ তাঁদের মানসিক অবস্থা নিয়ে মনোবিশেষজ্ঞের কাছে যান না; তাঁরা যান জেনারেল ফিজিশিয়ানের কাছে।

  • তাই এই চিকিৎসকদের জন্য ‘জেরিয়াট্রিক সাইকিয়াট্রি’-তে এক মাসের অনলাইন কোর্স বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।

  • এতে করে পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য বিশ্লেষণ আরও সূক্ষ্ম ও সময়োপযোগী হবে।

 সরকারি নীতি ও পরিকল্পনায় উদ্ভাবন

 “Senior Minds” প্রকল্প
  • একটি সম্ভাব্য প্রকল্প যেখানে প্রতিটি ব্লক হাসপাতালে একদিন শুধু প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য বিশ্লেষণের জন্য বরাদ্দ থাকবে।

  • সরকারি উদ্যোগে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা অনেক বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।

 পেনশন সংযুক্ত থেরাপি বোনাস
  • প্রবীণ নাগরিকরা যদি বছরে অন্তত ৩ বার মানসিক থেরাপি গ্রহণ করেন, তবে তাঁদের জন্য আলাদা “মানসিক সুস্থতা ভাতা” চালু করা যেতে পারে।

  • এই উদ্যোগ তাঁদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা ও অংশগ্রহণ উভয়ই বাড়াবে।

 শিক্ষা ও গবেষণাভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি

 বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘Geriatric Psychology’ কোর্স
  • মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উচ্চশিক্ষার পর্যায়ে প্রবীণদের সমস্যাগুলোকে আলাদা কোর্সের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।

  • বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে এমন কোর্স একমাত্র ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির অধীনে অল্প পরিসরে চালু রয়েছে।

 থিসিস ভিত্তিক প্রজেক্ট: রাজ্য স্তরের মানসিক স্বাস্থ্য মানচিত্র
  • প্রতিটি জেলার প্রবীণদের মানসিক অবস্থার উপর সমীক্ষা করে একটি “Mental Health Atlas of Elderly Bengal” তৈরি করা যেতে পারে।

  • এতে করে পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকল্পনা করা আরও তথ্যভিত্তিক ও সুনির্দিষ্ট হবে।

 আন্তঃপ্রজন্মীয় উদ্যোগ ও সামাজিক সংহতি

 ইউনিভার্সিটি-বয়স্ক মেন্টরিং প্রোগ্রাম
  • তরুণ ছাত্রদের সঙ্গে প্রবীণদের যুক্ত করে এমন একটি “Mentor-Mentee” প্রোগ্রাম চালু করা উচিত, যেখানে দু’পক্ষই মানসিক সমর্থন পাবে।

  • এই রকম এক প্রকল্প ‘মনবন্ধু’ নামে যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে ২০২৪ সালে পাইলট পর্যায়ে চালু হয়েছে এবং প্রবীণদের মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তা ৪৮% কমেছে।

📊 চিত্র: ভবিষ্যতের কৌশলগত পরিকল্পনা

বিভাগপ্রস্তাবিত পদক্ষেপসম্ভাব্য প্রভাব
প্রযুক্তিAI কাউন্সেলিং অ্যাপ, টেলি-সাইকোলজিমানসিক থেরাপির সহজলভ্যতা বৃদ্ধি
চিকিৎসা ব্যবস্থামনোবিজ্ঞান বিভাগ, GP প্রশিক্ষণসঠিক ও দ্রুত নির্ণয়
নীতিমালাথেরাপি সংযুক্ত পেনশন, Senior Mindsসচেতনতা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি
শিক্ষাGeriatric Psychology কোর্স, Mental Mapগবেষণাভিত্তিক পরিকল্পনা
সামাজিক সংহতিMentor-Mentee প্রোগ্রামআন্তঃপ্রজন্মীয় বোঝাপড়া ও মানসিক স্থিতি

পশ্চিমবঙ্গে বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা কেবল নীতিমালা বা বাজেট নয়—এ এক সাংস্কৃতিক রূপান্তর। যেখানে প্রযুক্তি, মানবিক সংযোগ এবং সচেতন পরিকল্পনার সমন্বয়ে গড়ে উঠবে এক মনোস্থির ও সহানুভূতিশীল সমাজ।

এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে একদিন পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা হবে দেশের মডেল।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply