পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে Matua Community আবার আলোচনার কেন্দ্রে। বহুদিন ধরে বিজেপি ও তৃণমূলের টানাটানির মাঝে এবার একাংশ মতুয়া কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকছে। সম্প্রতি বিহারে কংগ্রেস নেতা Rahul Gandhi-র সঙ্গে তাদের বৈঠক নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। নাগরিকত্ব ইস্যু ঘিরে এই পদক্ষেপ রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

Story Highlights

  • Matua Community পশ্চিমবঙ্গের বড় ভোটব্যাংক

  • বিজেপি ও তৃণমূলের উপর ভরসা কমছে একাংশের

  • বিহারে Rahul Gandhi-র সঙ্গে বৈঠক, দাবিগুলি জানালো মতুয়ারা

  • ঠাকুর পরিবারের দ্বন্দ্বে বাড়ছে অনিশ্চয়তা

  • নাগরিকত্ব ইস্যুই মূল কেন্দ্রবিন্দু

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই Matua Community একটি নির্ধারক শক্তি। নামশূদ্র জাতিভুক্ত এই সম্প্রদায়কে ঘিরেই একাধিক নির্বাচনের সমীকরণ গড়ে উঠেছে। তৃণমূল কংগ্রেস হোক কিংবা বিজেপি—দুই প্রধান শক্তিই দীর্ঘদিন ধরে এই ভোটব্যাংককে পাশে টানার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এবার সমীকরণে নতুন মোড়।

সম্প্রতি বিহারে কংগ্রেসের নেতা Rahul Gandhi-র সঙ্গে বৈঠক করেছে মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি প্রতিনিধি দল। তারা দাবি করছে, তৃণমূল ও বিজেপি—দুই শাসকদলের উপরেই মানুষের আস্থা কমেছে। নাগরিকত্ব থেকে শুরু করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি—এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তাদের কথা কেউ শোনেনি।

অধীর রঞ্জনের বক্তব্য

প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী জানান,

“মুর্শিদাবাদে আমার সঙ্গে কিছু মতুয়া দেখা করেন। তাদের বক্তব্য, বিজেপি ও তৃণমূল দুই দলই শুধু নির্বাচনের সময় Matua Community-কে ব্যবহার করেছে। আসল সমস্যা—নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা—সে বিষয়ে গুরুত্ব কেউ দেয়নি।”

তিনি আরও বলেন,

“আমি রাহুলজিকে বিষয়টি জানাই এবং তাদের বিহারে পাঠাই। সেখানে তারা Rahul Gandhi-র যাত্রায় যোগ দেন ও সরাসরি দাবি তুলে ধরেন।”

রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক

আগস্ট ৩০ তারিখে বিহারের সারন জেলার একমা শহরে ২৪ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল Rahul Gandhi-র সঙ্গে দেখা করে। প্রায় ১৫ মিনিটের বৈঠকে মতুয়ারা তাদের সমস্ত উদ্বেগ ব্যক্ত করেন।

প্রতিনিধি দলের এক সদস্য জানিয়েছেন,

“উনি আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন এবং আশ্বাস দিলেন, ভবিষ্যতেও পাশে থাকবেন।”

ওই দল নিজেদের পরিচয় দেয় ওয়েস্ট বেঙ্গল মতুয়া মহাসংঘ নামে। বৈঠকের শেষে Rahul Gandhi-র সঙ্গে ছবি তোলে এবং একটি ব্যানার প্রদর্শন করে: “রাহুল দাদা, বাংলায় এসো.. SIR-ই বিপদ, কংগ্রেস-ই নিরাপদ”

ঠাকুর পরিবারের ভাঙন

এই সময়েই Matua Community-র নেতৃত্বে থাকা ঠাকুর পরিবার বিভাজনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর ও তাঁর ভাই বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরের মধ্যে পরিচয়পত্র শিবির নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। সুব্রত ঠাকুর তৃণমূলপন্থী সাংসদ মমতা বালা ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করার পর শান্তনু অভিযোগ করেন, তাঁর ভাই আসলে শাসকদলে যোগ দিতে চাইছেন।

এতে রাজনীতির সমীকরণ আরও জটিল হচ্ছে। কারণ ঠাকুর পরিবারের প্রভাব এখনও Matua Community-র মধ্যে প্রবল।

বিজেপির অস্বস্তি

সবচেয়ে বড় চমক—এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজেপির স্থানীয় কর্মী তপন হালদার। ২০১৯ লোকসভা ভোটে Matua Community-র সমর্থনেই বিজেপি ১৮টি আসন জিতেছিল। নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতিই ছিল সেই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

শান্তনু ঠাকুর বলেন,

“মতুয়াদের ভুল বুঝিয়ে বিহারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কংগ্রেস ভাড়া খরচ বহন করেছে। কিন্তু তারা সফল হবে না।”

বিজেপির বঙ্গনগর জেলা সভাপতি বিকাশ ঘোষও হালদারকে কারণ দর্শাতে বলেছেন।

কংগ্রেসের পাল্টা দাবি

অন্যদিকে, কংগ্রেস মুখপাত্র কেতন জয়সওয়াল জানান,

“শান্তনুর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আসলে মানুষ বিজেপি ও তৃণমূলের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে বিরক্ত। Matua Community এখন নতুন দিশা খুঁজছে, আর সেই কারণেই তারা Rahul Gandhi-র দিকে তাকাচ্ছে।”

নাগরিকত্বই মূল প্রশ্ন

ইতিহাস বলছে, দেশভাগের সময় এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধে বিপুলসংখ্যক মতুয়া বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসেন। সেই থেকেই নাগরিকত্ব তাদের দীর্ঘদিনের দাবি।

প্রথমে কংগ্রেস সরকার পুনর্বাসন করলেও নাগরিকত্ব মেলেনি। বাম আমলে রেশন কার্ড ও ভোটার তালিকা থাকলেও নাগরিকত্ব অমীমাংসিত থাকে। ২০০৩ সালের ভাজপেয়ী সরকারের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন এবং এনআরসি কাঠামো এই সমস্যাকে আরও জটিল করে।

২০০৯ সালের পর থেকে তৃণমূল ঠাকুর পরিবারকে পাশে টানে। একাংশ তৃণমূলের সঙ্গে থেকে পরিচয়পত্রের সুবিধা পায়। অন্যদিকে, বিজেপি ২০১৯-এ Matua Community-কে নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তার ফলও পায়।

কিন্তু সারা দেশজুড়ে এনআরসি, সিএএ ও এখনকার SIR (Status Inquiry Report) নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। আজও নাগরিকত্ব ইস্যুই Matua Community-র রাজনীতির কেন্দ্রে।

সর্বোপরি স্পষ্ট, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে Matua Community-র অবস্থান এখনও নির্ধারক। নাগরিকত্ব ইস্যু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক আনুগত্য অস্থিরই থাকবে। বিজেপি ও তৃণমূলের প্রতিশ্রুতির বাইরে এসে একাংশ এবার কংগ্রেস ও Rahul Gandhi-র দিকে তাকাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে এই পরিবর্তন রাজ্য রাজনীতির সমীকরণ বদলে দিতে পারে।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply