ভারতের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে এক আশাব্যঞ্জক বার্তা উঠে এসেছে—দেশের খুচরো মূল্যস্ফীতি জুন মাসে নেমে এসেছে ২.১০ শতাংশে, যা গত ছয় বছরে সর্বনিম্ন। খাদ্যপণ্যের মূল্যে লাগাতার পতনই এই নাটকীয় হ্রাসের মূল কারিগর। শাকসবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামে বড় ধাক্কা পড়ায় সাধারণ ভোক্তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। এই পরিস্থিতি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আরবিআই-কে নীতিগত শিথিলতার দিকে এগোবার এক নতুন দরজা খুলে দিল। বাজারে মনোযোগ এখন স্থিতিশীল মূল্যনীতির পাশাপাশি আর্থিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার দিকেও।

📌 STORY HIGHLIGHTS

  • মূল্যস্ফীতি ২.১০ শতাংশে, ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

  • শাকসবজির দাম বছরে ১৯ শতাংশ কমেছে

  • খাদ্যপণ্যের দাম হ্রাস পেয়েছে ১.০৬ শতাংশ

  • আরবিআই রেপো রেট কমিয়েছে ৫০ বেসিস পয়েন্ট

  • ২০২৬ সালের জন্য আরবিআই-এর মূল্যস্ফীতি পূর্বাভাস ৩.৭ শতাংশ

  • মূল মূল্যস্ফীতি এখনো রয়েছে ৪.৪–৪.৫ শতাংশে

ভারতের অর্থনীতির আকাশে ছড়ানো চাপের মেঘের ফাঁক দিয়ে যেন এক টুকরো রোদ উঠেছে—জুন মাসে দেশের খুচরো মূল্যস্ফীতি হঠাৎই কমে এসে দাঁড়িয়েছে ২.১০ শতাংশে। গত ছয় বছরের মধ্যে এই হার সর্বনিম্ন, যা রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)-এর নির্ধারিত ২–৬ শতাংশের সীমার নীচের ধারে ঠেকেছে। এই নাটকীয় পতনের মূল চালিকাশক্তি—খাদ্যপণ্যের দাম কমে যাওয়া।

এই দৃশ্যপটের বদল বহুদিন পর বাজারে ও নীতিনির্ধারকদের মনে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। আরবিআই এখন মূল্যস্ফীতির চাপমুক্ত হয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নতুন করে গতি দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ভাবতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

খাদ্যদ্রব্যে স্বস্তির হাওয়া

খাদ্যপণ্য, যা দেশের ভোক্তা মূল্যসূচক বা সিপিআই ঝুঁড়ির প্রায় অর্ধেক জায়গা জুড়ে আছে, তার দাম জুন মাসে বছরে ১.০৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। মে মাসে যেখানে এই হারে ০.৯৯ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল, সেখানে এই পতন নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক।

সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন দেখা গেছে শাকসবজির বাজারে—এক বছরে দাম কমেছে ১৯ শতাংশ। এর আগের মাস, মে-তেও তা কমেছিল ১৩.৭ শতাংশ। ফলস্বরূপ, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সামান্য হলেও নাগালের মধ্যে এসেছে।

এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ সাক্ষী গুপ্ত বলেন,
“সিপিআই মূল্যস্ফীতি জুনে আরও নিচে নেমেছে খাদ্যপণ্যের দামের পতনের ফলে।”

সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তরের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, জুন মাসে হেডলাইন এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি—উভয়ই ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর সর্বনিম্ন।

মূল্যস্ফীতির পতনে নীতিগত আলোর দিশা

ভারতের অর্থনৈতিক চক্রে যেখানে মন্দার ছায়া কিছুটা তীব্র হয়েছে, সেখানে মূল্যস্ফীতির এই হ্রাস যেন একটি স্বস্তিদায়ক সন্ধেবেলা। মনসুনের সময়মতো আগমন এবং চাষাবাদে ইতিবাচক প্রভাব খাদ্য সরবরাহকে স্বাভাবিক করে তুলেছে, যার ফলে বাজারে পণ্যের চাপ কমেছে।

আরবিআই-এর কাজের মধ্যে অন্যতম মূল লক্ষ্য হচ্ছে—মূল্যস্ফীতি তিনটি ধারাবাহিক প্রান্তিকে ২–৬ শতাংশের মধ্যে রাখা। এই মুহূর্তে সেই সীমার নিম্নসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে সিপিআই। এই পরিসংখ্যান নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে যে, অর্থনীতিকে বাঁচাতে সুদের হার কমানোর পথে আবার পা বাড়ানো যেতে পারে।

জুন মাসে আরবিআই একটি বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত নিয়ে রেপো রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে দেয়, যা বাজারকে খানিকটা অবাক করলেও, একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়—আরবিআই এখন প্রবৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিতে প্রস্তুত।

আগামী দিনের প্রত্যাশা ও পরিকল্পনা

আরবিআই আগামী ২০২৬ অর্থবছরের জন্য খুচরো মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩.৭ শতাংশ করেছে। এটি করেছে বর্ষার আগমনের সময় এবং সম্ভাব্য শক্তিশালী ফসল উৎপাদনের আশায় ভর করে। এই পরিস্থিতি আরও উন্নত হলে, নীতিগত শিথিলতার জন্য নতুন জায়গা তৈরি হবে বলে মত বিশ্লেষকদের।

রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্র জানিয়েছেন,
“যদি মূল্যস্ফীতি আমাদের অনুমানের চেয়েও কমে যায়, তাহলে নীতিগত ছাড়ের আরও সুযোগ তৈরি হতে পারে।”

সতর্কতাও কিন্তু উপেক্ষা করা যাবে না

যদিও সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির এই স্বস্তিদায়ক পতন বাজারকে আশান্বিত করেছে, তবুও সতর্কতাও রয়ে যাচ্ছে। কারণ মূল মূল্যস্ফীতি, অর্থাৎ খাদ্য ও জ্বালানি বাদে অন্যান্য খাতে মূল্যচাপ এখনও যথেষ্ট জাঁকিয়ে বসে আছে।

জুন মাসে এই মূল মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৪.৪ থেকে ৪.৫ শতাংশের মধ্যে, যা মে মাসের ৪.১৭–৪.২০ শতাংশ থেকে কিছুটা বেশি। যদিও সরকারি পরিসংখ্যানে এই তথ্য প্রকাশ করা হয় না, তবুও বিশ্লেষকরা একে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করেন।

কোটাক মহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ উপাসনা ভরদ্বাজ বলেন,
“যদিও মূল্যস্ফীতি আরামদায়ক অবস্থানে এসেছে, তবুও আমরা মনে করি আরবিআই আগামী এক–দুটি বৈঠকে বিরতি দেবে এবং বাস্তব প্রতিক্রিয়া ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার উপর নজর রাখবে।”

 স্থিতিশীলতার মাঝে সম্ভাবনার দিগন্ত

জুন মাসের মূল্যস্ফীতির এই হ্রাস ভারতের অর্থনীতির জন্য একটি বিরল স্বস্তির বার্তা। এক বছরের দীর্ঘ যুদ্ধের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন একটু শ্বাস ফেলার সুযোগ পাচ্ছে।

তবে মূল মূল্যস্ফীতি এখনো উচ্চমাত্রায়, এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহু অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। ফলে আরবিআই সামনের পথ চলবে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা ও ভারসাম্য রক্ষা করে। মূল্যস্থিতি এবং প্রবৃদ্ধির মধ্যে সেই সূক্ষ্ম সেতুবন্ধনই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক ছন্দ।

মূল্যস্ফীতি এখন স্বস্তির পথে হাঁটলেও, আরবিআই-এর জন্য এই সফর এখনো শেষ হয়নি। বরং এটি একটি নতুন অধ্যায়ের শুরু, যেখানে সূক্ষ্ম বিচারবুদ্ধিই হবে মূল চালিকাশক্তি।

খাদ্যপণ্যের দামে বিপুল হ্রাসের প্রেক্ষিতে ভারতের মূল্যস্ফীতি ছয় বছরের সর্বনিম্নে নামা নিঃসন্দেহে এক ইতিবাচক বার্তা। এই পরিসংখ্যান দেশের অর্থনীতিকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও, আরবিআই-এর সামনে এখন ভারসাম্যের সূক্ষ্ম খেলা—প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহ দেওয়া, অথচ মূল্যস্থিতিও বজায় রাখা। ভবিষ্যতের নীতিগত পদক্ষেপে তাই থাকবে সংযম, দূরদর্শিতা এবং জাগ্রত দৃষ্টি। মূল্যস্ফীতি কমার এই মুহূর্ত শুধুমাত্র স্বস্তির নয়, বরং সঠিক পথে হাঁটার জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ।

খাদ্যপণ্যের দামে বিপুল হ্রাসের প্রেক্ষিতে ভারতের মূল্যস্ফীতি ছয় বছরের সর্বনিম্নে নামা নিঃসন্দেহে এক ইতিবাচক বার্তা। এই পরিসংখ্যান দেশের অর্থনীতিকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও, আরবিআই-এর সামনে এখন ভারসাম্যের সূক্ষ্ম খেলা—প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহ দেওয়া, অথচ মূল্যস্থিতিও বজায় রাখা। ভবিষ্যতের নীতিগত পদক্ষেপে তাই থাকবে সংযম, দূরদর্শিতা এবং জাগ্রত দৃষ্টি। মূল্যস্ফীতি কমার এই মুহূর্ত শুধুমাত্র স্বস্তির নয়, বরং সঠিক পথে হাঁটার জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Reply