আবারও আলোচনায় কুণাল ঘোষ—প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ ও মুখপাত্র। কলকাতা হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি করেছে। মামলার সূত্র ২৫ এপ্রিলের ঘটনায়, যেখানে এক আইনজীবীর চেম্বারে হামলার অভিযোগ ওঠে এবং ঘোষের বিরুদ্ধে উস্কানির ইঙ্গিত মেলে। তাঁকে ১৬ জুন দুপুর ১২:৩০-এ হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং অনুমতি ছাড়া আদালত ত্যাগের নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়েছে। বিচারপ্রক্রিয়ায় দোষী প্রমাণিত হলে জেলের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই ঘটনায় রাজনৈতিক ও আইনজগতে উত্তেজনার সঞ্চার ঘটেছে।
📌 STORY HIGHLIGHTS
আদালত অবমাননার অভিযোগে কুণাল ঘোষ সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে নোটিশ
১৬ জুন তিন বিচারপতির বেঞ্চের সামনে হাজিরার নির্দেশ
বেঞ্চের অনুমতি ছাড়া আদালত চত্বর ত্যাগ নিষিদ্ধ
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের চেম্বারে হামলার সূত্র ধরে মামলা
অভিযোগ, কুণাল ঘোষ সংবাদ সম্মেলনে হামলার পরোক্ষ উস্কানি দেন
দোষী প্রমাণিত হলে আদালত থেকেই হতে পারে কারাবাসের নির্দেশ
রাজ্য রাজনীতির পরিচিত মুখ, প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ এবং দলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ আবারও চর্চার কেন্দ্রে। এবার তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জারি হয়েছে শোকজ নোটিশ। পুরো বিষয়টি ঘিরে আইনি মহল এবং রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই এক ধরনের উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৫ এপ্রিল, যখন প্রবীণ আইনজীবী এবং রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এক গুরুত্বপূর্ণ মামলা দায়ের করেন। মামলার মূল বিষয় ছিল রাজ্য মন্ত্রিসভার ২০২১ সালের সিদ্ধান্ত, যেখানে বিদ্যালয়ের অস্থায়ী কর্মীদের জন্য অতিরিক্ত (supernumerary) পদ সৃষ্টি করা হয়। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এই পিটিশনের গ্রহণযোগ্যতা স্বীকার করেন এবং মামলার শুনানি শুরু হয়।
কিন্তু সেদিন রাতেই এক বিতর্কিত ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, রাজ্য সরকারের ওই সিদ্ধান্তে যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে লাভবান হয়েছেন, সেই শিক্ষকদের একাংশ আদালতের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে বিকাশরঞ্জনের চেম্বারে হামলা চালান। তাঁকে ও তাঁর জুনিয়র সহকর্মীদের হেনস্থা করা হয়। আদালতের চত্বরে এই ধরনের হুমকি এবং হামলার ঘটনা নজরে আসার পরপরই একাংশ আইনজীবী প্রধান বিচারপতি টি. এস. শিবগননমের বেঞ্চের কাছে হস্তক্ষেপের আবেদন করেন।
আইনজীবীদের অভিযোগ ছিল, হামলার ঘটনার আগে কুণাল ঘোষ একটি সংবাদ সম্মেলন করেন, যেখানে তাঁর বক্তব্যে এমন কিছু ইঙ্গিত ছিল যা অভিযুক্তদের প্ররোচিত করতে পারে। সেই বক্তব্যকেই আদালতের অবমাননার প্রসঙ্গে বিচারাধীন হিসেবে দেখা হয়েছে।
পরবর্তী পর্যায়ে, গত ১৯ মে বিচারপতি অরিজিৎ ব্যানার্জি, সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং রাজর্ষি ভরদ্বাজের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ কুণাল ঘোষ ও আরও আটজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নিয়ম জারি করেন। যদিও অভিযুক্তদের কেউই ওইদিন আদালতে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হননি, কেবল কুণাল ঘোষের পক্ষে একজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
আইন অনুযায়ী, যদি এই তিন বিচারপতির বেঞ্চ ঘোষকে দোষী সাব্যস্ত করেন, তবে তাঁকে আদালত প্রাঙ্গন থেকেই আটক করে সরাসরি জেলে পাঠানো হতে পারে। আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
উল্লেখযোগ্য, কুণাল ঘোষ ইতিপূর্বে বহু আলোচিত সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারির মামলায়ও গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং দীর্ঘ সময় বিচারাধীন অবস্থায় কারাবাসে ছিলেন। রাজনৈতিক জগতে তাঁর বিতর্কিত অবস্থান এবং বক্তব্যের জন্য তিনি বহুবার শিরোনামে এসেছেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হচ্ছে, আদালতের অবমাননাকে এখন আর শুধুই আইনি ব্যাপার বলে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই—বরং এটি এক গভীর সামাজিক এবং রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। এখন দেখার, ১৬ জুন হাইকোর্টে কী পরিণতি অপেক্ষা করছে কুণাল ঘোষের জন্য।
আদালত অবমাননার মতো সংবেদনশীল মামলায় কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে জারি হওয়া নোটিশ নিঃসন্দেহে রাজ্য রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আইন ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে হাইকোর্টের কড়া অবস্থান এবং উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে সরাসরি কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পদক্ষেপ প্রশাসনিক শৃঙ্খলার বার্তা দিচ্ছে। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে ১৬ জুনের শুনানিতে ঘোষের বক্তব্য ও আদালতের রায়ের উপর। আদালতের রায়ের দৃষ্টিপথে রাজনীতির ভাষা ও দায়িত্ব কতটা সংযত হওয়া উচিত—তা নিয়ে আলোচনা এখন তীব্রতর।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো