কলকাতার আকাশে ফের বর্ষার ঘনঘটা। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর সৃষ্টি হয়েছে সুস্পষ্ট নিম্নচাপ, যা দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে আনতে চলেছে প্রবল বর্ষা ও দমকা হাওয়া। ভারতের আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কলকাতা সহ একাধিক জেলায় হতে পারে ৭–১১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি। সঙ্গে বইতে পারে ঘণ্টায় ৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া। বুধবারই শহরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫˚C কমে গেছে। জলজট, ট্র্যাফিক ও জনজীবনে বিঘ্নের আশঙ্কা। সতর্কতা জারি, চোখ এখন আকাশের দিকে।

📌 স্টোরি হাইলাইটস

  • গাঙ্গেয় বাংলায় সুস্পষ্ট নিম্নচাপ সৃষ্টি

  • প্রতি ঘণ্টায় ২–৩ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হতে পারে কলকাতায়

  • দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা

  • বুধবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮.৪˚C—স্বাভাবিকের চেয়ে ৫˚C কম

  • সর্বাধিক আর্দ্রতা ছুঁয়েছে ৯৯ শতাংশ

  • ঘণ্টায় ৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা

  • ২০–২২ জুন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে

  • পরবর্তী সপ্তাহে ফের বৃষ্টির আশঙ্কা

  • উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ জারি

কলকাতাবাসী আবারও প্রস্তুত হচ্ছেন এক প্রবল বর্ষার দিনে পা রাখতে। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে যখন শহর একটু একটু করে বর্ষার স্বাদ পেতে শুরু করেছিল, তখনই ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের (IMD) তরফে প্রকাশিত এক সতর্কবার্তা যেন অনেককেই আশঙ্কায় ফেলেছে। বুধবার প্রকাশিত সর্বশেষ রিপোর্টে জানানো হয়েছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর একটি সুস্পষ্ট নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে, যার প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণবঙ্গজুড়ে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশে যে নিম্নচাপটি সৃষ্টি হয়েছিল, তা আরও শক্তি সঞ্চয় করে বর্তমানে গাঙ্গেয় বাংলার উপর স্থায়ী হয়েছে। এটি এখন পশ্চিম-উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঝাড়খণ্ডের দিকে সরে যেতে পারে। তবে ততদিন পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা, বিশেষ করে কলকাতা, থাকবে প্রবল বৃষ্টিপাতের কবলে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, এই ধরনের নিম্নচাপ বৃষ্টিপাতের ঘনঘটা নিয়ে আসে বর্ষার শুরুর দিকেই। শহরে বুধবার থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে, যার ফলে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে এসেছে ২৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে—স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫ ডিগ্রি কম। দিনের শুরু থেকে আকাশ ছিল মেঘলা, বাতাসে ছিল প্রচণ্ড আর্দ্রতা, যা সর্বোচ্চ পৌঁছেছে ৯৯ শতাংশে। দিনের বেলায় সূর্যের দেখা মেলেনি বললেই চলে, আর রাতের দিকে বৃষ্টিপাত আরও জোরদার হয়।

কলকাতা ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ—এই জেলাগুলিতে ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ঘণ্টায় ৪০ কিমি বেগে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া।

বৃষ্টি যেমন স্বস্তি আনতে পারে গরম থেকে, তেমনই অতিরিক্ত বৃষ্টিতে শহরের রাস্তাঘাটে জলজটের সম্ভাবনা থেকেই যায়। আবহাওয়া দফতরের সতর্কবার্তায় স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, অতিবৃষ্টির কারণে শহরের নিচু এলাকায় জল জমে যেতে পারে, যার ফলে ট্র্যাফিক ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। সেই সঙ্গে হ্রাস পেতে পারে দৃশ্যমানতা, এবং ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কাঁচা রাস্তা ও কৃষিজমি।

তবে আশার খবর হল, আগামী শুক্রবার অর্থাৎ ২০ জুন থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। ভারী বৃষ্টির প্রবণতা কমে গিয়ে হালকা বৃষ্টি এবং মেঘলা আকাশের দিকেই ঝুঁকবে আবহাওয়া। তবে ২২ তারিখ পর্যন্ত বড় কোনো সতর্কতা জারি হয়নি।

যদিও সাময়িক স্বস্তির এই পরিস্থিতি খুব বেশি দিন থাকবে না বলেই মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। পরবর্তী সপ্তাহের শুরুতেই আবার এক নতুন বৃষ্টিপাতের দফা আসতে পারে। বিশেষ করে দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ফের ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

এদিকে, সমুদ্রের দিকেও নজর রাখছে প্রশাসন। বঙ্গোপসাগরের উত্তরাঞ্চল এবং পশ্চিমবঙ্গ–ওড়িশা উপকূল বরাবর সাগর উত্তাল থাকার সম্ভাবনা থাকায় মৎস্যজীবীদের ১৯ জুন পর্যন্ত সমুদ্রে না যাওয়ার কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জরুরি পরিষেবা চালু রাখতে প্রশাসন প্রস্তুত বলেই জানা গেছে। বাসিন্দাদেরও অনুরোধ করা হয়েছে, বৃষ্টির সময় উন্মুক্ত জায়গায় না যেতে এবং জলমগ্ন এলাকা এড়িয়ে চলতে। এমনকি আবহাওয়া পরিস্থিতির উপর নিয়মিত নজর রেখে চলার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

এই মুহূর্তে শহরবাসীর নজর এখন একটাই—আকাশের মুখের দিকে। কারণ কলকাতার বর্ষা মানেই এক অনিশ্চয়তা, যার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আনন্দ, আতঙ্ক এবং কিছুটা বিড়ম্বনার গল্পও।

আকাশের রূপ বদলাচ্ছে, সঙ্গে বদলাচ্ছে শহরের ছন্দও। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের নিম্নচাপ কলকাতায় এনেছে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা ও তাপমাত্রার পতনের সম্ভাবনা। আগামী ২৪ ঘণ্টা শহরবাসীর জন্য হতে পারে বৃষ্টির পরীক্ষার সময়। আবহাওয়া দফতরের সতর্কবার্তা অনুযায়ী, নাগরিকদের উচিত সাবধানতা অবলম্বন করা, জলমগ্ন এলাকা এড়িয়ে চলা এবং আবহাওয়ার আপডেটের উপর নিয়মিত নজর রাখা। যদিও শুক্রবারের পর পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে, তবুও আগামী সপ্তাহের সম্ভাব্য বৃষ্টির জন্য প্রস্তুতি জরুরি। প্রকৃতির আচরণ যেমন অনির্দিষ্ট, তেমনি শহরের প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে সচেতনতার উপর।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply