দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশে যে নিম্নচাপটি সৃষ্টি হয়েছিল, তা আরও শক্তি সঞ্চয় করে বর্তমানে গাঙ্গেয় বাংলার উপর স্থায়ী হয়েছে। এটি এখন পশ্চিম-উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঝাড়খণ্ডের দিকে সরে যেতে পারে। তবে ততদিন পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা, বিশেষ করে কলকাতা, থাকবে প্রবল বৃষ্টিপাতের কবলে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, এই ধরনের নিম্নচাপ বৃষ্টিপাতের ঘনঘটা নিয়ে আসে বর্ষার শুরুর দিকেই। শহরে বুধবার থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে, যার ফলে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে এসেছে ২৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে—স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫ ডিগ্রি কম। দিনের শুরু থেকে আকাশ ছিল মেঘলা, বাতাসে ছিল প্রচণ্ড আর্দ্রতা, যা সর্বোচ্চ পৌঁছেছে ৯৯ শতাংশে। দিনের বেলায় সূর্যের দেখা মেলেনি বললেই চলে, আর রাতের দিকে বৃষ্টিপাত আরও জোরদার হয়।
কলকাতা ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ—এই জেলাগুলিতে ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ঘণ্টায় ৪০ কিমি বেগে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া।
বৃষ্টি যেমন স্বস্তি আনতে পারে গরম থেকে, তেমনই অতিরিক্ত বৃষ্টিতে শহরের রাস্তাঘাটে জলজটের সম্ভাবনা থেকেই যায়। আবহাওয়া দফতরের সতর্কবার্তায় স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, অতিবৃষ্টির কারণে শহরের নিচু এলাকায় জল জমে যেতে পারে, যার ফলে ট্র্যাফিক ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। সেই সঙ্গে হ্রাস পেতে পারে দৃশ্যমানতা, এবং ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কাঁচা রাস্তা ও কৃষিজমি।
তবে আশার খবর হল, আগামী শুক্রবার অর্থাৎ ২০ জুন থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। ভারী বৃষ্টির প্রবণতা কমে গিয়ে হালকা বৃষ্টি এবং মেঘলা আকাশের দিকেই ঝুঁকবে আবহাওয়া। তবে ২২ তারিখ পর্যন্ত বড় কোনো সতর্কতা জারি হয়নি।
যদিও সাময়িক স্বস্তির এই পরিস্থিতি খুব বেশি দিন থাকবে না বলেই মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। পরবর্তী সপ্তাহের শুরুতেই আবার এক নতুন বৃষ্টিপাতের দফা আসতে পারে। বিশেষ করে দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ফের ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
এদিকে, সমুদ্রের দিকেও নজর রাখছে প্রশাসন। বঙ্গোপসাগরের উত্তরাঞ্চল এবং পশ্চিমবঙ্গ–ওড়িশা উপকূল বরাবর সাগর উত্তাল থাকার সম্ভাবনা থাকায় মৎস্যজীবীদের ১৯ জুন পর্যন্ত সমুদ্রে না যাওয়ার কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জরুরি পরিষেবা চালু রাখতে প্রশাসন প্রস্তুত বলেই জানা গেছে। বাসিন্দাদেরও অনুরোধ করা হয়েছে, বৃষ্টির সময় উন্মুক্ত জায়গায় না যেতে এবং জলমগ্ন এলাকা এড়িয়ে চলতে। এমনকি আবহাওয়া পরিস্থিতির উপর নিয়মিত নজর রেখে চলার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
এই মুহূর্তে শহরবাসীর নজর এখন একটাই—আকাশের মুখের দিকে। কারণ কলকাতার বর্ষা মানেই এক অনিশ্চয়তা, যার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আনন্দ, আতঙ্ক এবং কিছুটা বিড়ম্বনার গল্পও।