কলকাতার স্ট্রিট ফুড এখন আর কেবলমাত্র ফুচকা, বেলপুরি বা রোলের সীমায় আবদ্ধ নয়। শহরের রাস্তায় আজ মিলছে লোটাস বিস্কফ চিজকেক, চিজি কর্নডগ, শওবান, কেবাব এবং কেএফসি-স্টাইল ফ্রাইড চিকেনের মতো নানা বৈচিত্র্যময় খাদ্যরস। নতুন প্রজন্মের রুচি, ভোজনরসিকদের চাহিদা এবং ফিউশন স্বাদের কৌতূহলেই এই রূপান্তর। স্বল্পমূল্যে, অভিনব পরিবেশনে এইসব খাবার হয়ে উঠছে নাগরিক জীবনের প্রিয় স্বাদ। কলকাতার স্ট্রিট ফুড সংস্কৃতিতে তাই দেখা যাচ্ছে এক নতুন উজ্জ্বল অধ্যায়, যা বিনোদনের মতোই মন মাতায়, আর সহজেই মন জয় করে।
সূচিপত্র
ToggleSTORY HIGHLIGHTS
ফিউশন ও বিদেশি স্বাদের স্ট্রিট ফুডে এখন ভরপুর কলকাতা
মধ্যপ্রাচ্য, কোরিয়া এবং ইউরোপিয়ান স্বাদ শহরের নানা কোণে
নিউ টাউনের চিজকেক থেকে যাদবপুরের কর্নডগ—স্বাদের রঙিন মানচিত্র
তরুণ প্রজন্ম ও সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্রিট ফুড সংস্কৃতিকে পৌঁছে দিচ্ছে নতুন উচ্চতায়
ফুচকা, বেলপুরি কিংবা ডিমরোল—এই তিন শব্দ শুনলেই অনেকেই বুঝে ফেলেন, আলোচনা চলছে কলকাতার স্ট্রিট ফুড নিয়ে। এক সময়ে শহরের রাস্তার ধারের খাবার বলতে বোঝাত ঐসব চেনা স্বাদের নির্দিষ্ট গণ্ডি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন এই খাবারের জগতে ঢুকে পড়েছে বৈচিত্র্য, ঢুকে পড়েছে ভিন্ন দেশের স্বাদ, স্টাইল এবং স্ট্রিট ফুড সংস্কৃতির ফিউশন। শহরের প্রতিটি অঞ্চলে, বড় রেস্তোরাঁর বাইরেও, গজিয়ে উঠছে ছোট ছোট দোকান বা স্টল, যেখান থেকে উঠে আসছে একের পর এক আকর্ষণীয় খাবারের তালিকা।
স্ট্রিট ফুড এখন শুধু ক্ষুধা মেটানোর উপায় নয়—এটা এখন এক সামাজিক সংস্কৃতি, ট্রেন্ড, এমনকি অনেকের কাছে রসনার নতুন এক আবিষ্কার। কলকাতার এই পরিবর্তিত স্ট্রিট ফুড চিত্র ঘুরে দেখতে বেরিয়েছিল SAMBAD BANGLA, আর তারা খুঁজে পেয়েছে এমন পাঁচটি খাবার ও দোকান, যেগুলির কথা না বললেই নয়।
শওয়ার্মা ওয়ালার শওবানস: মধ্যপ্রাচ্যের স্বাদ ভবানীপুরে
শওয়ার্মা ওয়ালার ‘শওবান’ খাওয়ার অভিজ্ঞতা যেন একে বারেই অন্যরকম। ভবানীপুরের ছোট্ট এই দোকানটির মেনুতে ‘শওবান’ নামক এক নতুন ধরনের ফ্ল্যাটব্রেড-ভিত্তিক শওয়ার্মা পাওয়া যায়। নরম, হালকা ও সামান্য চিবোনো রুটির মধ্যে থাকে রসালো গ্রিলড চিকেন, টাটকা সবজি, আচারের কুচি আর সেই বিশেষ সস—টাহিনি বা গারলিক টৌম। এগুলো উচ্চ তাপে বেক করা হয়, যার ফলে ভিতরে তৈরি হয় একধরনের প্রাকৃতিক পকেট, যা শওয়ার্মা পুরে পরিবেশনের জন্য একদম আদর্শ।
মূল্য: ₹১৩৯
ঠিকানা: ৩৪, আশুতোষ মুখার্জি রোড, ভবানীপুর
কেক মখবিজ-এর লোটাস বিস্কফ চিজকেক: ইউরোপের স্বাদ নিউ টাউনে
ডেজার্ট প্রেমীদের কাছে কেক মখবিজ এখন এক পরিচিত নাম। নিউ টাউনের এই দোকানটি পরিবেশন করছে এমন এক চিজকেক, যা বিস্কফ বিস্কুট এবং লোটাস স্প্রেডের কারণে এক ব্যতিক্রমী স্বাদ তৈরি করে। উপরের স্তরে চিজের ঘনত্ব, তার নিচে বিস্কুট বেস, আর সঙ্গে সঙ্গে টপিং হিসেবে বিস্কফ কুচি—মিলে একেবারে অনবদ্য এক কম্বিনেশন। চামচে একবার মুখে দিলেই বোঝা যায় এর ক্রিমিনেস, ক্যারামেলাইজড টোন এবং স্নিগ্ধ মিষ্টতা ঠিক কতটা ব্যতিক্রমী।
মূল্য: ₹১২৯ প্রতি স্লাইস
ঠিকানা: মাদার্স ওয়্যাক্স মিউজিয়াম বাসস্টপ, সার্ভিস রোড, নিউ টাউন
কেবাব চা-র কাবাব: কসবার গলিতে গন্ধ ছড়ানো সিজলিং স্বাদ
কোলকাতার কাবাব ইতিহাস মূলত জাকারিয়া স্ট্রিটের গলি ঘেঁষা। সেই গন্ধই এখন কসবার কেবাব চা-র দোকানে পৌঁছে গেছে। এখানে শুধু মাংস নয়, পনিরও পাওয়া যায়, আর সব কাবাবই এমনভাবে ম্যারিনেট করা যে প্রতিটি কামড়ে আলাদা স্বাদের ছোঁয়া মেলে। মশলার ভারসাম্য, আগুনে গ্রিলের খটখটে চিহ্ন এবং পুদিনা চাটনির টান—এই সব কিছু মিলিয়ে এক আদর্শ সন্ধ্যার সঙ্গী হতে পারে এই কাবাবগুলো।
মূল্য: ₹২৩০ থেকে
ঠিকানা: ১০৪, বসুপুকুর পূর্ব পাড়া রোড, সরৎ পার্ক, কসবা
বেন্টো-র চিজি কর্নডগ: দক্ষিণে কোরিয়ান স্বাদের নতুন ঠিকানা
যারা কোরিয়ান ড্রামা বা কপপ পছন্দ করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই কর্নডগ নামটা শুনেছেন। কিন্তু কলকাতার যাদবপুরে, বেন্টো-তে পাওয়া যায় এমন কর্নডগ, যা শুধু চিজি নয়—আক্ষরিক অর্থেই চিজে ঠাসা। ভিতরে সসেজ, তার চারপাশে মোজারেল্লা চিজ, তারপর ব্যাটারে ডুবিয়ে তেলে ভাজা। কামড় বসালেই সেই চিজ স্ট্রেচ যেন চোখে পড়ার মতো! এর ওপরের দিকে দেওয়া হয় কেচাপ ও মাস্টার্ড, যা স্বাদকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে।
মূল্য: ₹৯৯
ঠিকানা: ৫৬, সেন্ট্রাল রোড, বিধানপল্লি, যাদবপুর
এসপ্ল্যানেডের কেএফসি স্টাইল ফ্রাইড চিকেন: মধ্য কলকাতার ক্রিস্পি চমক
অনাদি কেবিনের ঠিক উলটো দিকে, ছোট্ট একটি দোকানে পাওয়া যায় এমন এক স্টাইলের ফ্রাইড চিকেন যা মনে করিয়ে দেয় কেএফসি-র ক্লাসিক স্বাদ। বাইরের দিকটা কড়কড়ে আর ভিতরের মাংসটি একেবারে কোমল ও রসালো। কড়া করে ভাজা হলেও এর ব্যাটারে থাকে এমন কিছু মশলার ছোঁয়া—যেমন গোলমরিচ, রসুন, প্যাপরিকা—যা স্বাদে এনে দেয় ব্যতিক্রম।
মূল্য: ₹৮০ (প্রতি পিস)
ঠিকানা: আনন্দি কেবিনের বিপরীতে, এসপ্ল্যানেড
কলকাতার স্ট্রিট ফুড মানেই এখন নতুন নতুন স্বাদের এক অ্যাডভেঞ্চার। এই শহরের প্রতিটি রাস্তায় আজ স্বাদ, সংস্কৃতি আর বৈচিত্র্য মিলেমিশে এক নতুন পরিচয় তৈরি করছে স্ট্রিট ফুডের মাধ্যমে। খাদ্যপ্রেমীদের কাছে এই অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে এক রসনার ভ্রমণ।
কলকাতার স্ট্রিট ফুড সংস্কৃতি এক নতুন দিগন্তে পৌঁছেছে, যেখানে ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈচিত্র্য ও গুরমে স্বাদের ছোঁয়া। কম দামে অসাধারণ স্বাদ উপভোগের সুযোগ এই শহরের প্রতিটি খাদ্যপ্রেমীর জন্য নিঃসন্দেহে এক আনন্দের বার্তা। শওবান থেকে চিজকেক, কর্নডগ থেকে কাবাব—প্রতিটি পদ যেন শহরের বদলানো রুচি ও সাহসী খাদ্য-পরীক্ষার প্রতিচ্ছবি। স্বাদের এই যাত্রা নিছক আহার নয়, বরং এটি কলকাতার রাস্তায় রসনার এক রঙিন উৎসব, যা সহজে মন জয় করে এবং বারবার টানে ফিরে আসতে।