নাইটলাইফ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ কলকাতায়, বাড়ছে অস্থিরতা
কলকাতার রাতজাগা রূপ আজ আতঙ্কের ছায়ায় ঢাকা। Salt Lake, Bhowanipore, Park Street-সহ একাধিক এলাকায় ক্রমশ বেড়ে চলেছে অশান্তি, হেনস্তা ও নিয়মভঙ্গের ঘটনা। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শহরের নাগরিকেরা আজ নিরাপত্তাহীনতার বাস্তবতায় দিশেহারা। নাইটলাইফের বেড়ে ওঠা যেন আশীর্বাদ নয়, অভিশাপ হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলার ভাঙন, প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা আর সামাজিক উদাসীনতা মিলিয়ে এক আশঙ্কাজনক ছবি তুলে ধরেছে এই অবস্থা। প্রশ্ন উঠছে—বিনোদনের মোড়কে লুকিয়ে থাকা এই অন্ধকারে, শহর কি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনছে?
📌 STORY HIGHLIGHTS READ BOX
Salt Lake-এ পাবের বাইরে দম্পতিকে ঘিরে চাঞ্চল্যকর হামলার অভিযোগ
DJ, কনটেন্ট ক্রিয়েটর সহ রাতের কাজের সঙ্গে যুক্ত মহিলারা সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কিত
Bhowanipore-এর ঢাবা-সংলগ্ন এলাকায় বেআইনি কার্যকলাপ ও আগ্রাসী আচরণ
Park Street-সহ বিভিন্ন নাইটস্পট ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রশ্ন
রাত নয়, মানসিকতার অন্ধকারেই দিশাহীন শহর, বলছেন নাগরিকেরা
কলকাতা—যে শহরকে একসময় বলা হতো ‘রাত জাগা রাণী’, আজ সেই শহরের রাতেই ধীরে ধীরে জমছে আতঙ্কের ছায়া। রাত যত গাঢ় হয়, ক্লাব-বারে আলোর ঝলক যত বেড়ে ওঠে, ততই যেন শহরের অলিগলিতে স্পষ্ট হতে থাকে অস্থিরতার স্পন্দন। নানা মুখের অভিজ্ঞতা, নানা পেশার মানুষের উদ্বেগ—সব মিলিয়ে উঠছে একটি প্রশ্ন, “এই কলকাতা কি আর আগের মতো নিরাপদ?”
“নিয়মভাঙার অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে শহর”
স্নেহা দত্ত, এক অভিজ্ঞ কমিউনিকেশনস পেশাজীবী। নিজেই রাতে ড্রাইভ করে বাড়ি ফেরেন, আর তাই চোখে পড়ে শহরের অনিয়মের নিত্যচিত্র। তাঁর কথায়,
“এই শহরের আইনশৃঙ্খলা কেবল রাতেই নয়, দিনে-দুপুরেও হুমকির মুখে। তবে রাত যেন মানুষকে দেয় এমন এক মনের স্বাধীনতা, যেখানে নিয়ম মানা আর বাধ্যতামূলক নয়। বাইকে হেলমেট নেই, গাড়ির ভিতরে বসে চলেছে মদ্যপান—সবই যেন স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।”
স্নেহা আরও বলেন,
“এটা কোনো বিশেষ শ্রেণির সমস্যা নয়। এটা মননের গভীরে গাঁথা এক বিকার। যতক্ষণ না সমাজ নিজেই তার চোখে চোখ রাখবে, ততক্ষণ কিছুই বদলাবে না।”
“নিরাপত্তার সংজ্ঞা কি কেবল নারীদের জন্য?”
বর্তমান সময়ে, কলকাতার রাতের রাস্তায় চলাফেরা করা যেন এক সাহসিক অভিযানের নামান্তর। কনটেন্ট ক্রিয়েটর এরিকা সর্দারের মতে,
“এই শহরে এখন নিরাপত্তাহীনতা শুধু নারীদের নয়, সকলের বাস্তবতা। আমি নিজেও এখন বন্ধুর বাড়িতে থেকে যাই বা পরিচয়পত্রযুক্ত ড্রাইভার নিই। কারণ, রাতে বের হওয়া মানেই আজ নিজেকে ঝুঁকির মুখে ফেলা।”
অনেক সময়েই এই হেনস্তাগুলি চাপা পড়ে যায় প্রভাবশালীদের প্রভাবে—এই অভিযোগও তুলেছেন এরিকা। তাঁর মতে,
“আমরা যারা নিয়মিত বাইরে যাই, তারা জানি কীভাবে ঘটনাগুলি চোখের আড়ালেই থেকে যায়। অথচ সমাজে তোলপাড় তো দূরের কথা, প্রশাসনের নীরবতা আরও ভয়ঙ্কর।”
“আলোকময় ক্লাবের ভিতরেই লুকিয়ে অন্ধকার”
কলকাতার নাইট স্পটগুলি—Salt Lake, Park Street, Topsia, এমনকি Bhowanipore—এখন কেবল বিনোদনের কেন্দ্র নয়, আতঙ্কের উৎস হয়ে উঠছে। DJ হিসেবে কাজ করা এক পারফর্মার বললেন,
“আমি নিজের জন্য নিরাপত্তা রাখি, তবু কিছু বলার নেই। বন্ধুরা মার খেয়েছে, শুধু ভুল সময়ে, ভুল জায়গায় থাকার জন্য। এই শহরে আনন্দ করতে গেলেও এখন রক্ষাকবচ দরকার।”
Salt Lake থেকে Bhowanipore—নিরাপত্তার ভরসাহীন মানচিত্র
আইটি পেশাজীবী অরিত্র ঘোষ তুলে ধরলেন Salt Lake Sector V-এ ঘটে যাওয়া এক অভিজ্ঞতা,
“আমরা পার্টি করি অনেকবার। কিন্তু রাত দশটার পর ক্যাব পাওয়া কঠিন। আর যদি গন্তব্য হয় Garia বা Behala, তাহলে তো কথা নেই। এক সহকর্মী সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ছিলেন, হঠাৎ বাইকে চড়া কয়েকজন কটূক্তি ছুঁড়ল। জানালা বন্ধ করে বসে থাকাই ছিল একমাত্র আশ্রয়।”
Bhowanipore-এর রাত্রিকালীন ঢাবা স্ট্রেচও এখন আর আগের মতো নিরাপদ নয়। সেখানে খুলে বসেছে ‘ছায়া ব্যবসা’, চলেছে প্রকাশ্য মদ্যপান, ডাবল পার্কিং, কাকভোর অবধি কোলাহল। এক গারিয়া নিবাসী মহিলা বলেন,
“একবার ঢাবায় গিয়ে দেখলাম, পাশের এক ব্যক্তি অশালীন ভাবে তাকাচ্ছেন। প্রতিবাদ করতেই স্টাফরা আমাদেরই হুমকি দেয়। তারা রেস্টোরাঁ চালায় না, যেন গুণ্ডারাজ চলে।”
“কার্ফু নয়, দরকার জবাবদিহি”
এই সব সমস্যার কেন্দ্রে প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা ও সামাজিক উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন বহুজন। knee-jerk প্রতিক্রিয়ার বিরোধিতা করে স্নেহা বলেন,
“নারীকে ঘরে থাকতে বলা কোনো সমাধান নয়। যদি শহর নিরাপদ রাখতে না পারেন, তবে সেটা স্বীকার করুন। আমরা সবাই মিলে এই মানসিকতাকে ভাঙতেই হবে। নয়তো রাতের শহর শুধু আতঙ্কই হয়ে থাকবে।”
“মারামারি আমাদের পেশার অঙ্গ”—মনোভাবেও প্রশ্ন
Corridor Bar and Kitchen, Canteen Pub and Grub, Traffic Gastropub-এর কর্ণধার স্বস্তিক নাগের ভাষায়,
“Pub-এর মারামারি তো যেন অতিরিক্ত পরিষেবা! লোকজন মদ খেয়ে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে—এটা প্রায় নিয়মিত ঘটনা। আমরা প্রথমে ঠান্ডা মাথায় কথা বলার চেষ্টা করি, ম্যানেজার বা বাউন্সার ঢোকেন। কিন্তু সীমা ছাড়ালে পুলিশ ডাকা ছাড়া উপায় থাকে না।”
কলকাতার নাইটলাইফ দীর্ঘদিন ধরেই ছিল শহরের গর্ব, আধুনিকতার পরিচয়। কিন্তু আজ সেই গর্বের অন্তরালে জমে উঠছে ভয়, অনিরাপত্তা আর অসচেতনতার অন্ধকার। Salt Lake ও Bhowanipore-এ ঘটে চলা ঘটনা শুধু কয়েকটি isolated ঘটনা নয়, বরং বৃহত্তর সমস্যার ইঙ্গিত। রাতের শহর কেবল আলোয় নয়, দায়িত্বে জ্বলতে হয়। নাগরিক সচেতনতা, প্রশাসনিক তৎপরতা ও সামাজিক সহনশীলতা—এই ত্রিমুখী প্রয়াস ছাড়া রাতের কলকাতা হয়তো আর নিরাপদের তালিকায় ফিরতে পারবে না। এখনই সময়, আলো ও আশার পথ বেছে নেওয়ার।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো