কলেজ চত্বরেই এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে ফের নাড়িয়ে দিল কলকাতার সামাজিক বিবেক। দক্ষিণ কলকাতার এক নামী আইন কলেজে এক ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার “অপরাধে” গার্ডরুমে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে ঘটনার দৃশ্য, যা তদন্তে নতুন মোড় এনেছে। মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের যুব শাখার সদস্য হলেও, প্রশাসন বলছে আইনের চোখে সবাই সমান। একদিকে নেতানেত্রীদের বিতর্কিত মন্তব্য, অন্যদিকে প্রতিবাদ আর রাজনীতি—এই ঘটনার আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা রাজ্যে।

▌STORY HIGHLIGHTS | QUICK READ:

  • ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজে, ২৫ জুন

  • ছাত্রীকে জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় গার্ডরুমে

  • অভিযুক্ত: মনোজিত মিশ্র (প্রাক্তনী), প্রমিত মুখার্জি, জায়েদ আহমেদ এবং গার্ড

  • মনোজিতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, বাকি দুজন ভিডিও তোলে বলে অভিযোগ

  • বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়াতেই প্রতিশোধমূলক গ্যাংরেপ সন্দেহ

  • মনোজিত তৃণমূলের যুব শাখার সদস্য, দল জানিয়েছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে

  • দলের দুই নেতার মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক, দল স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে সেই মন্তব্য

  • মহুয়া মৈত্রের কড়া নিন্দা: “মহিলাবিরোধী মানসিকতার কোনো স্থান নেই”

  • SIT তদন্ত শুরু, রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ

  • বিজেপি তদন্ত কমিটি গঠন করে রাজ্যে পাঠাচ্ছে প্রতিনিধি দল

কলকাতার বুকে ফের নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী আইন কলেজের চাঞ্চল্যকর ঘটনা। কলেজ চত্বরে এক আইনের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে উত্তাল হয়েছে গোটা রাজ্য। এবার সেই অভিযোগের দৃঢ় ভিত্তি হিসেবে উঠে এসেছে একটি সিসিটিভি ফুটেজ, যা সরাসরি ঘটনার প্রমাণ দিচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঘটনাটি ঘটেছে ২৫ জুন। অভিযোগ, দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজের ২৪ বছর বয়সী এক ছাত্রীকে কলেজ প্রাঙ্গণে অবস্থিত গার্ডরুমে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে তারই দুই সিনিয়র এবং এক প্রাক্তনী। অভিযুক্তরা হলেন মনোজিত মিশ্র, প্রমিত মুখার্জি এবং জায়েদ আহমেদ। গার্ডরুমে এই অপরাধ সংগঠিত হয় বলে অভিযোগ, যেখানে নিরাপত্তারক্ষীর ভূমিকা নিয়েও উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে ওই ছাত্রীকে কলেজ গেট থেকে জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

Kolkata College Horror: Ex Student, 2 Students Arrested

সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আসার পর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,

“ফুটেজটি ভিকটিমের অভিযোগকে যথাযথভাবে সমর্থন করছে। অভিযুক্ত তিনজন, ভুক্তভোগী ও নিরাপত্তারক্ষীর গতিবিধি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি।”
– কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক

পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, প্রধান অভিযুক্ত মনোজিত মিশ্র ওই ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়াতেই প্রতিশোধ নিতে এই নৃশংস অপরাধ করা হয়েছে বলে আশঙ্কা। মনোজিতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, আর বাকি দুজন ভিডিও রেকর্ড করে পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেলের চেষ্টা চালায় বলেও FIR-এ অভিযোগ।

মনোজিত মিশ্র সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের যুব শাখার একজন সদস্য। তবে দলের তরফে সাফ জানানো হয়েছে,

“আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়। এই ঘটনায় অপরাধ প্রমাণিত হলে, দলীয় পরিচয় দিয়ে কাউকে রক্ষা করা হবে না।”
– তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র

তবে দলের অন্দরেই এই ঘটনা ঘিরে মতবিরোধ প্রকাশ পায়। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করে।

“এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে ধর্ষণ করলে আপনি কীভাবে নিরাপত্তা দেবেন? স্কুলে পুলিশ বসাবেন? ছাত্ররা একে অপরের সঙ্গে যা করেছে, তার দায় কে নেবে?”
– কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ

আরও এক ধাপ এগিয়ে মন্তব্য করেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। তিনি বলেন,

“কলেজ বন্ধ থাকাকালীন কেউ ডাকলে, মেয়েদের যাওয়া উচিত নয়। গেলে এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। ওই মেয়ে সেখানে না গেলে, এই ঘটনা ঘটত না।”
– মদন মিত্র, বিধায়ক

এই ধরনের মন্তব্য ঘিরে যখন রাজ্যের নারী সংগঠনগুলির প্রতিবাদ ক্রমেই জোরালো হচ্ছে, তখন দলের আরেক নেত্রী ও সাংসদ মহুয়া মৈত্র কড়া ভাষায় এই মন্তব্যগুলোর নিন্দা করেন।

“ভারতে নারীবিরোধী মানসিকতা দলমত নির্বিশেষে ছড়িয়ে আছে। তবে তৃণমূলের বিশেষত্ব হল, আমরা এমন জঘন্য মন্তব্যকে কেউ করুক না কেন, তার প্রতিবাদ করি।”
– মহুয়া মৈত্র, সাংসদ

ঘটনার তদন্তে ইতিমধ্যে একটি পাঁচ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) গঠন করা হয়েছে। একজন সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে দলটি কাজ করছে। অভিযুক্ত চারজন — মনোজিত মিশ্র, প্রমিত মুখার্জি, জায়েদ আহমেদ ও গার্ড — কে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ছাত্রীকে নিয়ে পুলিশ শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে পুনর্গঠন করে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছে।

'He Threatened To Kill Me & My Boyfriend': NDTV Accesses Kolkata Student's  Complaint

ঘটনাটি সামনে আসার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে নানা জায়গায় প্রতিবাদ, মিছিল এবং বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় রাজনীতিও এই ঘটনায় সরব হয়েছে। বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা একটি চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন, যারা রাজ্যে এসে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে।

“তৃণমূল শাসিত রাজ্যে নারী নিরাপত্তা কোথায়? আমরা বিষয়টি নিয়ে মাঠে নামছি।”
– সম্বিত পাত্র, বিজেপি মুখপাত্র

এই ঘটনাকে ঘিরে রাজ্যে আইনের শাসন, ছাত্র রাজনীতি, এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রশ্নে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধছে। আইনি প্রক্রিয়া কীভাবে অগ্রসর হয়, সেটাই এখন দেখার।

সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া এই ঘটনা শুধুমাত্র এক ছাত্রীর যন্ত্রণার নয়, বরং সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের নগ্ন উদাহরণ। কলেজের মতো শিক্ষাঙ্গন, যেখানে নিরাপত্তা ও সম্মান পাওয়ার কথা, সেখানেই যদি এমন পাশবিকতা ঘটে—তবে প্রশ্ন ওঠে, কোথায় দাঁড়িয়ে আছে আমাদের শিক্ষা ও আইনব্যবস্থা? অভিযোগ যতই রাজনৈতিক রং পাক, বিচারের দাবি যেন সত্যের পথে অবিচল থাকে। নিরপেক্ষ তদন্ত, কঠোর শাস্তি ও নারীর সম্মান রক্ষাই এখন এই ঘটনার প্রকৃত উত্তর হতে পারে।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply