কলকাতার ব্যস্ত রাস্তায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কি বাস পরিষেবায় সত্যিই স্বস্তি পান? অফিস টাইমে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, ঠাসাঠাসি ভিড়ে শ্বাস নেওয়ার কষ্ট, কিংবা সময়মতো বাস না পাওয়ার যন্ত্রণা – এসবই কি আজও নিত্যদিনের বাস্তবতা?  “ব্যস্ত সময়ে কলকাতার বাস পরিষেবার অবস্থা” কি যাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে?

সূচিপত্র

কলকাতায় বাস মানেই নিত্যদিনের সংগ্রাম!

সকালবেলা অফিসে বেরোচ্ছেন, হাতে সময় কম, আর সামনে গিজগিজে বাস স্টপেজ। বাস এলেও উঠতে পারবেন কিনা, সেটাই চিন্তা! দুপুরের পর একটু ফাঁকা হলেও সন্ধ্যায় ফেরার সময় আবার সেই একই যুদ্ধ। “ব্যস্ত সময়ে কলকাতার বাস পরিষেবার অবস্থা” এমনই যে, বেশিরভাগ যাত্রীকে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়।

কিন্তু, জানেন কি? কলকাতার বাস পরিষেবা শুধু গাড়িঘোড়ার বাহন নয়, এটি শহরের প্রাণভোমরা। সরকারি থেকে বেসরকারি, এসি থেকে নন-এসি, ইলেকট্রিক বাস থেকে নাইট বাস – এক বিশাল নেটওয়ার্ক আমাদের শহর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। আজকের এই লেখায় জানবো, কলকাতা বাস পরিষেবা এবং এর যাত্রী সুবিধার বর্তমান অবস্থা।

কলকাতা বাস পরিষেবার ধরণ: পথচলার নিত্যসঙ্গী নাকি এক বিষণ্ণ বাস্তবতা?

কলকাতা, এক বহুমুখী শহর। তার হৃদস্পন্দন জুড়ে রয়েছে বাস পরিষেবা। সরকারি হোক বা বেসরকারি, এসি হোক বা নন-এসি—প্রতিটি বাস যেন শহরের ধমনীতে বয়ে চলা রক্তের প্রবাহ। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই পরিষেবা কি আজও যাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণ করছে? নাকি তা হয়ে উঠেছে এক অনিবার্য বিড়ম্বনা?

Kolkata Bus Commuters Can Now Buy Tickets Through An App

সরকারি বনাম বেসরকারি বাস: পরিষেবায় কতটা ফারাক?

  • সরকারি বাস:
    – বেশিরভাগ সরকারি বাসের অবস্থা জরাজীর্ণ। বাহ্যিক রংচটা চেহারা আর অভ্যন্তরে নষ্ট হয়ে যাওয়া সিট যাত্রীদের হতাশ করে।
    – নির্দিষ্ট টাইম টেবিল থাকলেও বেশিরভাগ বাস সময়মতো চলে না। ব্যস্ত সময়ে তো দেখা পাওয়াই দুষ্কর!
    – বৃদ্ধ, মহিলা ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকলেও, প্রায়ই তা মানা হয় না।

  • বেসরকারি বাস:
    – তুলনামূলকভাবে বেশি চলাচল করে, বিশেষত ব্যস্ত সময়ে।
    – তবু অনেক চালক ও কন্ডাক্টরের ‘রেস’ করার প্রবণতা যাত্রীদের নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে।
    – ভাড়ার অসঙ্গতি এখনও রয়ে গেছে। একই রুটে কখনও বেশি, কখনও কম ভাড়া আদায়ের অভিযোগ শোনা যায়।

Kolkata bus-o-pedia - An important AC bus route of Garia❤️ Route: AC6 - Howrah Station to Garia Bus Stand, via Esplanade, Exide, Rashbehari, Tollygunge, Naktala. Follow Kolkata Bus-o-pedia for more. | Фејсбук

এসি বনাম নন-এসি বাস: স্বস্তির যাত্রা নাকি রেস্তোর খরচ?

  • এসি বাস:
    – কলকাতায় এসি বাসের সংখ্যা বাড়লেও, এখনো তা সীমিত।
    – বেশিরভাগ এসি বাসে আধুনিক সুবিধা থাকলেও, মাঝেমধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ কাজ না করায় যাত্রীরা বিরক্ত হন।
    – ভাড়া তুলনামূলক বেশি। তবে অফিস টাইমে এসি বাসেও ঠাসাঠাসি ভিড় দেখা যায়।

  • নন-এসি বাস:
    – যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে পরিচিত ও সহজলভ্য যানবাহন।
    – অধিকাংশ বাসের সিট ছেঁড়া, জানালা ভাঙা, এমনকি হাতলও নড়বড়ে।
    – অফিস টাইমে এতটাই ঠাসাঠাসি হয় যে, গায়ে গায়ে ঠেসে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না।

ইলেকট্রিক বাস: ভবিষ্যতের পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ, তবুও প্রশ্নবিদ্ধ

  • ইলেকট্রিক বাস চালু হয়েছে শহরের পরিবেশ দূষণ কমানোর লক্ষ্যে।

  • শব্দদূষণহীন, ধোঁয়াহীন, আরামদায়ক এই বাস পরিষেবা এখনো পর্যাপ্ত নয়।

  • চার্জিং স্টেশনের অপ্রতুলতা ও বাসের সংখ্যা সীমিত হওয়ায় যাত্রীরা এখনও এই পরিষেবার পুরো সুবিধা পাচ্ছেন না।

নাইট বাস পরিষেবা: সত্যিই কার্যকর নাকি নামমাত্র উদ্যোগ?

  • রাত ১১টার পর থেকে কলকাতায় নাইট বাস পরিষেবা শুরু হলেও, বাস্তবে তার উপস্থিতি প্রায় অদৃশ্য।

  • বেশিরভাগ স্টপেজে নাইট বাসের দেখা মেলে না।

  • নিরাপত্তার অভাবে অনেক মহিলা যাত্রী নাইট বাস এড়িয়ে চলেন।

বাসে যাত্রীসেবা: বাস্তবে কি শুধুই নামকাওয়াস্তে?

  • বাসে মোবাইল চার্জিং পোর্ট থাকলেও বেশিরভাগই অকেজো।

  • প্রবীণ নাগরিক বা প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসন অকারণে দখল করে রাখেন অন্য যাত্রীরা।

  • চালক ও কন্ডাক্টরের ব্যবহারে ভিন্নতা দেখা যায়—কেউ অমায়িক, কেউ রূঢ়।

বাসে ভাড়া বৃদ্ধি: জনতার রোষ আর নীরব সহ্য

  • বারবার বাস ভাড়া বৃদ্ধি যাত্রীদের পকেটের বোঝা বাড়িয়েছে।

  • ভাড়া বৃদ্ধি হলেও পরিষেবার মানের উন্নতি তেমন চোখে পড়ে না।

  • এসি ও নন-এসি বাসের ভাড়ার পার্থক্য এতটাই বেশি যে, মধ্যবিত্তদের এসি বাসে চড়া যেন স্বপ্নের মতো।

 কলকাতার বাস পরিষেবা এখনো নাগরিক জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ, তবুও “ব্যস্ত সময়ে কলকাতার বাস পরিষেবার অবস্থা” যেন এক দীর্ঘশ্বাসের নাম।

CCTV cameras | State government decides to reinstall CCTV cameras in buses for security of the passengers - Telegraph India

ব্যস্ত সময়ে কলকাতার বাস পরিষেবার অবস্থা: নিত্যযাত্রায় ভোগান্তির সমার্থক শব্দ?

ব্যস্ত সময়ে কলকাতার বাস পরিষেবার হাল যেন এক বিচিত্র ধাঁধা—কখনও অনন্ত অপেক্ষা, কখনও তীব্র রেষারেষি, আর কখনও নৈরাজ্যের চিত্র। অফিস টাইমে শহরের রাস্তায় নামলেই বোঝা যায়, এই বাসের ধকল মানেই দৈনন্দিন লড়াই।

Kolkata: State-wide bus strike on Monday

অপেক্ষার দীর্ঘশ্বাস: ঘড়ির কাঁটায় আটকে থাকা সময়

  • অফিস টাইমে বাসের জন্য অপেক্ষা করা যেন এক অন্তহীন ধৈর্যের পরীক্ষা।

  • প্রায়শই নির্ধারিত সময়ে বাস না পৌঁছনোর কারণে যাত্রীরা অস্থির হয়ে পড়েন।

  • বাস স্টপে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের ভিড় ক্রমশ জমাট বাঁধতে থাকে, অথচ পরপর কয়েকটি বাসের দেখা নেই।

  • কখনও আবার একই রুটের তিন-চারটি বাস একসঙ্গে এসে ঠাসাঠাসি যাত্রী নিয়ে ছুটে যায়।

ভিড়ের সমুদ্র: নিঃশ্বাস নেওয়াও দুষ্কর

  • ব্যস্ত সময়ে কলকাতার বাস যেন চলমান হিউম্যান ক্যাপসুল।

  • দরজার হ্যান্ডেলে ঝুলে থাকা, জানালা দিয়ে মাথা বের করে শ্বাস নেওয়া—এসব দৃশ্য নিত্যদিনের চেনা ছবি।

  • গরমের দিনে ঘামে ভেজা গা ঘেঁষাঘেঁষি আর ঠেলাঠেলিতে অস্বস্তি চরমে পৌঁছয়।

  • নন-এসি বাসে পাখা থাকলেও, তা ঘোরে নামমাত্র। অনেক বাসে পাখা অকেজো পড়ে থাকে মাসের পর মাস।

চালক-পরিচালকের রেষারেষি: যাত্রী সুরক্ষার শিকেয়

  • ব্যস্ত সময়ে চালকদের মধ্যে আগেভাগে যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা নিত্যদিনের ঘটনা।

  • রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে ওভারটেকিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।

  • অনেক বাসে হঠাৎ ব্রেক কষার কারণে যাত্রীরা ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান।

  • অপ্রশিক্ষিত বা অনভিজ্ঞ চালকের হাতে স্টিয়ারিং থাকায় নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ছে।

পরিষেবা মান: সময়মতো পৌঁছানো স্বপ্ন মাত্র

  • অফিস টাইমে বাস চলাচলের নির্দিষ্ট কোনও শৃঙ্খলা নেই।

  • নির্ধারিত রুটে যথাযথ বাসের সংখ্যা কম থাকায় যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।

  • অনেক বাসে স্টপেজ অতিক্রম করে সোজা ছুটে যাওয়া এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার, যার ফলে যাত্রীরা মাঝপথে নেমে পড়তে বাধ্য হন।

46 private bus routes stop operations, curtail routes; north-south connectors worst hit in Kolkata: Survey | Kolkata News - Times of India

অ্যাপ ও ট্র্যাকিং পরিষেবার গড়িমসি: বাস্তব আর প্রচারণার ফারাক

  • বাস ট্র্যাকিং অ্যাপ থাকলেও, তার কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ।

  • অধিকাংশ বাসেই জিপিএস ট্র্যাকার অকেজো থাকায় যাত্রীরা লাইভ আপডেট পান না।

  • সময়ানুবর্তিতার অভাবে অ্যাপের তথ্যের সঙ্গে বাস্তব বাস চলাচলের মিল নেই।

বাসে মহিলাদের সুরক্ষা: ব্যস্ত সময়ে অনুপস্থিত নিরাপত্তা

  • অফিস টাইমে মহিলা যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত আসনও প্রায়ই দখল হয়ে থাকে।

  • বেশিরভাগ বাসে কোনও মহিলা কন্ডাক্টর নেই, ফলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।

  • সন্ধ্যার পর নাইট বাসের অভাবে মহিলাদের যাতায়াতে সমস্যা আরও বাড়ে।

ভাড়ার ভার: পরিষেবা নিম্নমানের, তবু দাম বাড়ছে

  • নিয়মিত ভাড়া বৃদ্ধি হলেও পরিষেবার উন্নতি নেই বললেই চলে।

  • অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে ভাড়া বাবদ যাত্রীদের পকেটও হালকা হচ্ছে।

  • এসি বাসের ভাড়া তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বেশিরভাগ সময়ে অকার্যকর।

ব্যস্ত সময়ে কলকাতার বাস পরিষেবার অবস্থা এখন নাগরিক জীবনের নিত্য দুর্ভোগের প্রতীক।“গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য প্রার্থনা করুন”—এটাই যেন ব্যস্ত সময়ে বাসযাত্রার মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছে!

West Bengal: Commuters suffer as number of bus services from Sinthee dips | Kolkata News - Times of India

ইলেকট্রিক বাস পরিষেবা: পরিবহণে নবযুগের সূচনা

কলকাতার রাস্তায় ইলেকট্রিক বাসের আবির্ভাব যেন পরিবহণ ব্যবস্থায় এক নীরব বিপ্লব। শব্দহীন, ধোঁয়াহীন এই বাসগুলি শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, বরং যাত্রীসেবার মানকেও নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। তবে বাস্তবে এর কার্যকারিতা কি সত্যিই এতটাই আশাব্যঞ্জক?

নিরব যাত্রা: দূষণহীন কলকাতার স্বপ্ন

  • ইলেকট্রিক বাসের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য এর শব্দহীন গতি।

  • ডিজেলচালিত বাসের গর্জন আর কালো ধোঁয়ার বিপরীতে ই-বাস চলে প্রায় নিঃশব্দে, ফলে শব্দদূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।

  • শহরের বুকে যানবাহনের শব্দ কমানোর ক্ষেত্রে এই বাসগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

  • রাস্তার ধারে স্কুল, হাসপাতাল বা আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা এই নীরব বাসে স্বস্তি পাচ্ছেন।

যাত্রীস্বাচ্ছন্দ্য: আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া

  • ইলেকট্রিক বাসে ডিজেলের গন্ধ নেই, নেই কম্পনের ঝাঁকুনি।

  • এসি-যুক্ত ই-বাসে গ্রীষ্মের দাবদাহেও যাত্রীরা পাচ্ছেন স্বস্তির পরশ।

  • বাসের ভেতরেই রয়েছে মোবাইল চার্জিং পয়েন্ট, যা দীর্ঘ যাত্রায় বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে।

  • স্বয়ংক্রিয় দরজা ও মসৃণ যাত্রার জন্য যাত্রীরা এই পরিষেবাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছেন।

বাস রুট ও সংখ্যা: প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত

  • বর্তমানে কলকাতায় ইলেকট্রিক বাসের সংখ্যা প্রায় ৮০০ হলেও, তা শহরের চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট কম।

  • বেহালা, গড়িয়া, যাদবপুর, দমদম ইত্যাদি এলাকায় বেশ কয়েকটি রুটে ই-বাস চললেও শহরতলির রুটে এর পরিষেবা নেই বললেই চলে।

  • অফিস টাইমে ই-বাসের সংখ্যাবৃদ্ধি না হওয়ায় যাত্রীরা এখনও চিরাচরিত ডিজেল বাসের উপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন।

চার্জিং সমস্যা: পরিকাঠামোর দুর্বলতা

  • ইলেকট্রিক বাস চলাচলের ক্ষেত্রে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল চার্জিং পরিকাঠামো।

  • কলকাতায় বেশিরভাগ চার্জিং স্টেশন কেন্দ্রস্থল বা ডিপোতে অবস্থিত, ফলে বাসের দীর্ঘক্ষণ চার্জ নেওয়া সময়সাপেক্ষ।

  • পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন না থাকায় বেশিরভাগ ই-বাসকে নির্দিষ্ট কিছু রুটেই সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে।

  • ব্যস্ত সময়ে চার্জিংয়ের জন্য বাসগুলো দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে, ফলে যাত্রীরা বাসের অভাবে দুর্ভোগে পড়েন।

পরিষেবার মান: বাস্তব আর প্রচারের ফারাক

  • ই-বাস চালুর সময় বহু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে তা পুরোপুরি রক্ষিত হয়নি।

  • অধিকাংশ ই-বাসে এসি চালু থাকলেও, গ্রীষ্মের দিনে কুলিং ব্যবস্থা যথাযথ হয় না।

  • নির্ধারিত রুটে ই-বাসের সংখ্যা কম থাকায় যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।

  • অনেক বাসে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে মাঝপথেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।

পরিবেশ ও অর্থনীতি: লাভ-ক্ষতির হিসেব

  • ইলেকট্রিক বাসের মাধ্যমে শহরের কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে, যা পরিবেশের জন্য ইতিবাচক।

  • তবে বিদ্যুৎচালিত হলেও, ব্যাটারি তৈরির জন্য ব্যবহৃত লিথিয়াম ও কোবাল্ট খননের কারণে পরিবেশে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

  • সরকারি ভর্তুকি সত্ত্বেও ই-বাস পরিষেবা বজায় রাখার খরচ ডিজেল বাসের তুলনায় বেশি।

  • চার্জিং ব্যয়ের কারণে ই-বাস রুট সম্প্রসারণে বিলম্ব হচ্ছে।

কলকাতায় ইলেকট্রিক বাস পরিষেবা নিঃসন্দেহে ভবিষ্যৎ পরিবহণের পথপ্রদর্শক।
তবে চার্জিং পরিকাঠামো এবং রুট সম্প্রসারণে আরও মনোযোগ না দিলে, এটি শুধুই শহরের কেন্দ্রস্থলে সীমাবদ্ধ একটি ‘অপ্রাপ্ত স্বপ্ন’ হয়েই থেকে যাবে!

Online Bus Tickets Booking, Online Bus Ticketing Agents in Kolkata

অনলাইন বাস টিকিট এবং ট্র্যাকিং সুবিধা: আধুনিক শহরের স্মার্ট পরিবহণ

কলকাতার যানবাহনে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে অনলাইন বাস টিকিট বুকিং এবং লাইভ ট্র্যাকিং ব্যবস্থায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নগরবাসী এখন আর স্টপেজে দাঁড়িয়ে বাসের প্রতীক্ষায় ক্লান্ত হচ্ছেন না। স্মার্টফোনে কয়েক ক্লিকেই জানা যাচ্ছে বাসের অবস্থান, এমনকি অনলাইনে টিকিট বুকও করা যাচ্ছে। কিন্তু এই সুবিধার বাস্তব চিত্র কতটা কার্যকর?

টিকিট বুকিং: লাইনে দাঁড়ানোর দিন শেষ

  • ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যাত্রীরা এখন বাড়ি থেকেই অনলাইন বাস টিকিট বুক করতে পারছেন।

  • বিশেষ করে অফিস টাইমে টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলেছে।

  • অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটে পছন্দমতো রুট, সময় এবং বাসের ধরন (এসি/নন-এসি) নির্বাচন করা যাচ্ছে।

  • তবে অনেক বাস রুটেই এখনো অনলাইন টিকিট ব্যবস্থা নেই, ফলে বেশিরভাগ যাত্রী বাধ্য হয়ে পুরনো পদ্ধতিতেই টিকিট কাটছেন।

বাস ট্র্যাকিং: অদৃশ্য রুট এখন দৃশ্যমান

  • কলকাতার ইলেকট্রিক বাস এবং সরকারি বাসের অধিকাংশেই এখন GPS ট্র্যাকিং ব্যবস্থা রয়েছে।

  • যাত্রীরা মোবাইল অ্যাপে বাসের বর্তমান অবস্থান দেখতে পাচ্ছেন, যা সময় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কমাচ্ছে।

  • ব্যস্ত সময়ে বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে থেকে ধৈর্য হারানোর বদলে, অ্যাপের মাধ্যমে আগেভাগেই বাসের অবস্থান জেনে বের হওয়া যাচ্ছে।

  • তবে অধিকাংশ বেসরকারি বাসে এখনো এই ট্র্যাকিং ব্যবস্থা নেই, যা যাত্রীদের জন্য বড় অসুবিধা।

Live Bus Tracking: Bus Tracking for Passengers | AbhiBus

অ্যাপের নির্ভুলতা: প্রযুক্তির ওপর কতটা ভরসা?

  • অনলাইন টিকিট এবং ট্র্যাকিং অ্যাপ ব্যবহারে যাত্রীরা নির্ভরতা বাড়ালেও, অ্যাপের সঠিকতা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।

  • অনেক সময় অ্যাপে বাসের অবস্থান ভুল দেখায়, ফলে যাত্রীদের বিভ্রান্ত হতে হয়।

  • বিশেষত বৃষ্টি বা ট্রাফিক জ্যামের কারণে বাসের গতিবেগ কমে গেলে অ্যাপের তথ্য আপডেট হতে দেরি হয়।

  • বাসের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী টিকিট কেটে যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে না পারার ঘটনাও ঘটছে।

অনলাইন পেমেন্ট: সুবিধা নাকি বিপদ?

  • অনলাইন টিকিট কাটতে ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড বা UPI ব্যবহার করতে হয়, যা নগদহীন লেনদেনকে সহজ করেছে।

  • তবে কিছু ক্ষেত্রে অ্যাপে পেমেন্ট ব্যর্থ হলেও টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

  • টিকিট বুকিংয়ের পর মাঝেমধ্যে বাসের সময়সূচি বদলে গেলে, অনলাইনে ফেরত টাকা পেতে দেরি হয়।

  • প্রবীণ যাত্রী বা প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত নন, এমন মানুষদের জন্য অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি এখনও জটিল।

বাসে ডিজিটাল পরিষেবার অভাব: আধুনিক ব্যবস্থায় গাফিলতি

  • যদিও অনলাইন টিকিট বুকিং এবং ট্র্যাকিং পরিষেবা চালু হয়েছে, তবুও অধিকাংশ বাসে ডিজিটাল ডিসপ্লে বা রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং স্ক্রিন নেই।

  • বিদেশি শহরে বাসের ভিতরে রুট, সময় এবং পরবর্তী স্টপেজের ডিজিটাল আপডেট পাওয়া গেলেও, কলকাতার বাসে তা বিরল।

  • এমনকি অনলাইন টিকিট কাটা হলেও, বাসে কন্ডাক্টরের কাছে টিকিট যাচাই করার ঝামেলা পোহাতে হয়।

  • অনেক বাসে QR কোড স্ক্যানারের ব্যবস্থা নেই, ফলে অনলাইন টিকিট কেটেও যাত্রীদের অসুবিধায় পড়তে হয়।

অনলাইন টিকিট এবং ট্র্যাকিং পরিষেবা কলকাতার বাস পরিষেবায় প্রযুক্তির নতুন মাত্রা যোগ করেছে ঠিকই, তবে তা এখনো সম্পূর্ণভাবে কার্যকর নয়।
বেসরকারি বাসে এই সুবিধা প্রায় অনুপস্থিত, আর অ্যাপের ভুল তথ্য যাত্রীদের বিভ্রান্ত করছে। ডিজিটাল ব্যবস্থা যথাযথ না হলে, এই আধুনিকতার সুবিধা শহরবাসীর কাছে সীমিতই থেকে যাবে।

zingbus: Seeing substantial digitisation in intercity bus travel space: zingbus - The Economic Times

মহিলা ও প্রবীণদের জন্য বিশেষ সুবিধা: নিরাপত্তা না কেবল আনুষ্ঠানিকতা?

কলকাতা বাস পরিষেবায় মহিলা ও প্রবীণ যাত্রীদের জন্য বিশেষ কিছু সুবিধা থাকলেও, বাস্তবে তার কতটা প্রয়োগ হয়? সরকারি ঘোষণা এবং বাসের গায়ে লেখা “মহিলা ও প্রবীণদের জন্য সংরক্ষিত আসন” সত্যিই তাঁদের জন্য কতটা কার্যকর? এই বিশেষ পরিষেবার সুফল ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে একটু গভীর বিশ্লেষণ করা যাক।

মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন: নিরাপদ নাকি প্রতীকী?

  • সরকারি বাস এবং বেশ কিছু বেসরকারি বাসে মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট আসন সংরক্ষিত রয়েছে। সাধারণত সামনের সারিতেই এই আসন রাখা হয়, যাতে তারা সহজে উঠতে ও নামতে পারেন।

  • তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ব্যস্ত সময়ে এই আসনে অনেক সময় পুরুষ যাত্রী বসে পড়েন। অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে, আবার কেউ কেউ না জেনেই।

  • সংরক্ষিত আসনে বসা নিয়ে প্রায়শই বচসা হয়, কিন্তু কন্ডাক্টররা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নীরব থাকেন।

  • সন্ধ্যা বা রাত্রিকালীন সময়ে মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেই। নৈশ বাস পরিষেবায় হেল্পলাইন নম্বর থাকলেও, তা অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর নয়।

প্রবীণদের জন্য আসন সংরক্ষণ: সম্মান না অবহেলা?

  • প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সরকারি বাসে নির্দিষ্ট আসন বরাদ্দ রয়েছে।

  • অনেকে স্বেচ্ছায় প্রবীণদের জন্য আসন ছেড়ে দেন, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই যুবকরা সেই আসনে বসে থাকেন।

  • বেসরকারি বাসে প্রবীণদের জন্য আসন সংরক্ষণের নিয়ম প্রায় নেই বললেই চলে।

  • সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রবীণ নাগরিকদের বাস ভাড়ায় ছাড় দেওয়ার কথা থাকলেও, অনেক বাসে তা মানা হয় না। ভাড়া ছাড়ের জন্য আইডি কার্ড দেখানোর পরও প্রবীণরা অপমানিত হন।

বাসে মহিলা ও প্রবীণদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা: প্রচার বেশি, প্রস্তুতি কম

  • সরকারি বাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর এবং GPS ট্র্যাকিং ব্যবস্থা থাকলেও, তা বাস্তবে কার্যকর নয়।

  • বেসরকারি বাসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনোরকম হেল্পলাইন নম্বর বা বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।

  • রাত্রিকালীন সময়ে মহিলা যাত্রীদের জন্য আলাদা বাস বা বিশেষ ব্যবস্থা প্রায় অনুপস্থিত।

  • প্রবীণ যাত্রীদের জন্য বাসে চড়া বা নামার সময় কন্ডাক্টরদের সহযোগিতার কথা থাকলেও, অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা উদাসীন থাকেন।

বিশেষ বাস পরিষেবা: কেবল সরকারি বিজ্ঞাপন?

  • কলকাতায় মহিলা ও প্রবীণদের জন্য বিশেষ বাস পরিষেবার কথা বলা হলেও, তা নামমাত্র।

  • অফিস টাইমে “শুধুমাত্র মহিলা যাত্রীদের জন্য” কয়েকটি বাস থাকলেও, রুট সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত।

  • প্রবীণদের জন্য আলাদা বাস পরিষেবা নেই, যা তাঁদের চলাচলে সমস্যার কারণ হয়।

  • শহরের ব্যস্ত এলাকায় প্রবীণদের জন্য বিশেষ পাস ব্যবস্থা থাকলেও, অনলাইন পাস আবেদন প্রক্রিয়া জটিল, যা তাঁদের জন্য অসুবিধাজনক।

বাস পরিষেবায় মহিলা ও প্রবীণদের জন্য বিশেষ সুবিধার কথা থাকলেও, বাস্তবে তা এখনো অনেকটাই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ।
সংরক্ষিত আসনে পুরুষ যাত্রীদের বসা, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ফাঁকফোকর এবং প্রবীণদের প্রতি অবহেলা – সব মিলিয়ে বিশেষ পরিষেবা এখনো বহু যাত্রীর কাছে অধরা।

West Bengal Launches Women-Only Buses To Enhance Safety In North Bengal

নাইট বাস পরিষেবা: রাতের শহরের রহস্যময় সহায়ক নাকি বিভীষিকা?

কলকাতা শহরের রাত মানেই যেন এক অন্যরকম মোহ। দিনশেষে ব্যস্ততা ঝেড়ে ফেলে শহর যখন নিস্তব্ধ হয়, তখনও কিছু বাস দুলে চলে শহরের রাস্তায়। নাইট বাস পরিষেবা প্রথমে শুনতে রোমাঞ্চকর লাগলেও বাস্তবের ছবিটা ততটা মসৃণ নয়। চলুন, এই পরিষেবার আলোক-অন্ধকার একটু খুঁটিয়ে দেখা যাক।

Shuttles run late-night show in 75-minutes transport vacuum | Kolkata News - Times of India

নাইট বাসের সংখ্যা: হাতে গোনা, তাও অনিশ্চিত

  • সরকারি বাস পরিষেবায় রাত ১১টার পর থেকে কিছু নির্দিষ্ট রুটে নাইট বাস চালানো হয়। তবে এই সংখ্যা এতই সীমিত যে অপেক্ষারত যাত্রীদের ধৈর্য হারিয়ে ফেলার উপক্রম হয়।

  • মধ্যরাতে বাসের দীর্ঘ বিরতি সাধারণ যাত্রীদের কাছে এক দুঃস্বপ্নের মতো। অনেক সময় ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করেও দেখা মেলে না বাসের।

  • অনেক রুটেই ঘোষণার তুলনায় বাসের সংখ্যা কম থাকে, যার ফলে যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

নিরাপত্তা: নামমাত্র ব্যবস্থাই কি যথেষ্ট?

  • নাইট বাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রায় অপ্রতুল। মহিলা যাত্রীদের জন্য আলাদা কোনও বিশেষ নিরাপত্তা নেই, যা তাঁদের পক্ষে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।

  • অনেক বাসে CCTV ক্যামেরা থাকার কথা থাকলেও, তা হয় অচল থাকে, নয়তো কোণায় এমনভাবে বসানো থাকে যে তাতে কিছুই ধরা পড়ে না।

  • অনেক ক্ষেত্রেই কন্ডাক্টর এবং ড্রাইভার ছাড়া আর কোনও বাস কর্মী থাকেন না, ফলে জরুরি পরিস্থিতিতে যাত্রীদের অসহায় হয়ে পড়তে হয়।

নাইট বাসের রুট এবং সময়সূচি: যাত্রীদের বিভ্রান্তি বাড়ায়

  • নাইট বাসের নির্দিষ্ট কোনও সময়সূচি সাধারণ যাত্রীদের জানা থাকে না।

  • বাসস্টপে রুট বা সময়ের কোনও তথ্য থাকে না, যার ফলে বহু যাত্রী অন্ধকারে অপেক্ষা করেন অনিশ্চয়তার সঙ্গে।

  • প্রায়শই নির্দিষ্ট সময়ের পর বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, অথচ কোনও আগাম ঘোষণা থাকে না।

  • অনলাইন বাস ট্র্যাকিং অ্যাপ এই ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নয়, কারণ নাইট বাসের ট্র্যাকিং ডেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রদর্শিত হয় না।

রাত্রিকালীন পরিষেবা: জরুরি যাত্রীদের জন্য ভরসা নাকি ফাঁপা প্রতিশ্রুতি?

  • নাইট শিফটে কাজ করা কর্মজীবী মানুষ বা বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের জন্য এই পরিষেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • তবে রাত ১২টার পর নাইট বাসের সংখ্যা এতটাই নগণ্য যে যাত্রীরা বাধ্য হয়ে ক্যাব বা অটোরিকশার দ্বারস্থ হন, যার খরচ বহন করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়।

  • বিশেষ করে উৎসবের রাতে বা বড় ইভেন্ট চলাকালীন বাসের সংখ্যা না বাড়ায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

নাইট বাসে ভাড়া: রাত বাড়লে ভাড়াও বাড়ে?

  • কিছু রুটে নাইট সার্ভিসে ভাড়া বেশি রাখা হয়, যদিও এটি সরকারি নিয়ম নয়।

  • অনেকে এই সময়ে বাসের ভাড়ার নামে অনৈতিকভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন, যা যাত্রীদের কাছে বিরক্তিকর ও অসুবিধাজনক।

  • বেসরকারি বাসের ক্ষেত্রে নির্ধারিত নাইট সার্ভিস না থাকলেও, অনেক বাসচালক অনানুষ্ঠানিকভাবে রাতের পরিষেবা চালান এবং যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ বা ত্রিগুণ ভাড়া নেন।

রাত্রিকালীন বাস পরিষেবা সাধারণ মানুষের জন্য যেমন আশার আলো, তেমনই অন্ধকারের ছায়াও বয়ে আনে।
বাসের সংখ্যা কম, নিরাপত্তার অভাব, এবং সময়সূচির অনিশ্চয়তা – সব মিলিয়ে এই পরিষেবা এখনও অনেকটাই অপরিপূর্ণ। শহর রাতের দুঃখ না হয়ে আনন্দের যাত্রাপথ হোক, এটাই সকলের প্রত্যাশা।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: স্বপ্নের নগরী নাকি অসম্পূর্ণ আশ্বাস?

কলকাতার বাস পরিষেবাকে ভবিষ্যতে আরও গতিশীল এবং যাত্রীবান্ধব করে তুলতে একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, এসব পরিকল্পনা কি বাস্তবে রূপ পাবে নাকি শুধুই খাতায়-কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে? আসুন, এই পরিকল্পনাগুলির খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করা যাক।

How Kolkata with electric buses and ferries plans to fight air pollution

ই-বাস: সবুজ শহরের দিকে এগিয়ে চলা

  • কলকাতায় ধোঁয়াশাচ্ছন্ন সকাল ক্রমেই স্বাভাবিক দৃশ্য হয়ে উঠছে। দূষণ কমাতে ভবিষ্যতে ইলেকট্রিক বাসের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

  • বর্তমানে কিছু ই-বাস চালু হলেও সংখ্যায় তা নগণ্য। সরকার আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ১,০০০টি ই-বাস নামানোর প্রকল্প নিয়েছে, যা শহরের পরিবেশ সংরক্ষণে বড় ভূমিকা নেবে।

  • ই-বাসের নির্দিষ্ট চার্জিং পয়েন্ট থাকলেও, তা সীমিত হওয়ায় প্রায়শই ব্যাটারি চার্জ সংক্রান্ত সমস্যার কারণে বাস রাস্তায় নামতে পারে না। এ বিষয়ে সমাধানের প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে তা ধীরগতিতে এগোচ্ছে।

বাস ট্র্যাকিং অ্যাপ: প্রযুক্তির আশীর্বাদ নাকি বিভ্রান্তি?

  • ভবিষ্যতে কলকাতার বাস পরিষেবাকে আরও স্মার্ট করতে ‘বাস ট্র্যাকিং অ্যাপ’ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে বাসের লাইভ লোকেশন, আসন খালি থাকার তথ্য এবং সম্ভাব্য পৌঁছানোর সময় জানা যাবে।

  • তবে বর্তমানে যে অ্যাপগুলি চালু রয়েছে, সেগুলির তথ্য প্রায়শই বিভ্রান্তিকর বা ভুল থাকে। ভবিষ্যতে এই অ্যাপের কার্যকারিতা কতটা নির্ভরযোগ্য হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

  • যাত্রীদের অভিযোগ অনুযায়ী, অ্যাপে বাসের গতি ও অবস্থান ঠিকমতো আপডেট হয় না, ফলে লাইভ ট্র্যাকিং ব্যবস্থা কার্যকর হলেও তা বাস্তবের সঙ্গে মিল খায় না।

ডিজিটাল পেমেন্ট ও স্মার্ট কার্ড: নগদহীন যাত্রার দিশা

  • ভবিষ্যতে কলকাতার বাস পরিষেবায় স্মার্ট কার্ড ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে যাত্রীরা নগদ টাকা ছাড়াই ডিজিটাল মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন।

  • মেট্রোর মতোই স্মার্ট কার্ডে টাকা রিচার্জ করে সহজে যাতায়াতের ব্যবস্থা চালু করা হবে। এতে খুচরো পয়সা নিয়ে সমস্যার অবসান ঘটবে।

  • তবে, বেশ কিছু বাসকর্মীর ডিজিটাল পেমেন্ট বিষয়ে অজ্ঞতা এবং প্রযুক্তিগত সমস্যা এই পরিষেবা বাস্তবায়নে বড় বাধা হতে পারে।

ফ্লিট সম্প্রসারণ: রুট বাড়ানো নাকি চেনা গণ্ডিতে ঘুরপাক?

  • বাস পরিষেবাকে আরও গতিশীল করতে কলকাতায় নতুন রুট যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। শহরতলির যাত্রীরা যাতে রাতেও সহজে বাস পেতে পারেন, সেদিকেও বিশেষ জোর দেওয়া হবে।

  • কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, নতুন রুট চালুর প্রতিশ্রুতি দিলেও, তা কার্যকর করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।

  • অনেক ক্ষেত্রেই লোকসানের অজুহাতে নতুন রুট বাতিল বা সীমিত করে দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটলে তবেই প্রকল্পটি সফল হবে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা: প্রতিশ্রুতির ফাঁপা ঢোল?

  • যাত্রী নিরাপত্তা বাড়াতে সরকারি বাসে CCTV ক্যামেরা, মহিলা যাত্রীদের জন্য আলাদা সিট, এবং জরুরি সহায়তা হেল্পলাইন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

  • যদিও শহরের বেশিরভাগ বাসেই এখনও পর্যন্ত CCTV ঠিকঠাক কাজ করে না। জরুরি পরিস্থিতিতে চালক বা কন্ডাক্টরের হাতে কোনও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে না।

  • ভবিষ্যতে এই পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়, কারণ নিরাপত্তার নামে অতীতেও বহু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেগুলি পূর্ণতা পায়নি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার আঁচে আশার আলো ফুটলেও, বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে তার শিকড় কতটা দৃঢ় হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।
যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ানোর স্বপ্ন দেখানো হলেও, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কতটা হবে, সেটাই দেখার বিষয়। কলকাতার বাস পরিষেবা কি সত্যিই একদিন বিশ্বমানের হবে, নাকি শুধু ঘোষণা দিয়েই থেমে যাবে – সেটাই বড় প্রশ্ন।

50 new Electric Buses for Kolkata by 2020 – News Sense

উপসংহার: শহরের নাড়ির স্পন্দন বাস পরিষেবা

কলকাতার বাস পরিষেবা শুধু একটি পরিবহণ মাধ্যম নয়, এটি শহরের জীবনযাত্রার অপরিহার্য অংশ। “ব্যস্ত সময়ে কলকাতার বাস পরিষেবার অবস্থা” যদিও এখনও চ্যালেঞ্জিং, তবুও যাত্রীদের জন্য কিছু উন্নতি হয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো আরও পরিকল্পিত রুট, ইলেকট্রিক বাস এবং অনলাইন পরিষেবা চালু হলে এই অবস্থার উন্নতি হবে।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply