আইপিএল ২০২৫-এর ৫৩তম ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) এবং রাজস্থান রয়্যালস (RR) মুখোমুখি হয়েছিল ইডেন গার্ডেন্সে। একটি নাটকীয় ও উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে, KKR মাত্র ১ রানে রাজস্থানকে হারিয়ে দেয়। অ্যান্ড্রে রাসেলের দুর্দান্ত ব্যাটিং এবং কলকাতার স্পিন আক্রমণ ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। অন্যদিকে, রাজস্থান রয়্যালসের রিয়ান পারাগের ৯৫ রানের ইনিংস সত্ত্বেও তারা শেষ মুহূর্তে ম্যাচটি জিততে ব্যর্থ হয়। এই ম্যাচটি আইপিএল ২০২৫-এ অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে।
সূচিপত্র
Toggleস্কোরকার্ড: KKR vs RR – আইপিএল ২০২৫ ৫৩তম ম্যাচ
বোলার / ব্যাটসম্যান | পরিসংখ্যান | রান | গড় রান | বল | ছক্কা | চার | স্ট্রাইক রেট |
---|---|---|---|---|---|---|---|
KKR | |||||||
অ্যান্ড্রে রাসেল | ৫৭(২৫ বল) | ৫৭ | ২২.৮ | ২৫ | ৫ | ৪ | ২২৮.০০ |
নীতীশ রানা | ৩১(২২ বল) | ৩১ | ১৪.১ | ২২ | ৩ | ৩ | ১৪১.৩৬ |
শুভমান গিল | ৪৩(৩০ বল) | ৪৩ | ১৪.৩ | ৩০ | ২ | ৩ | ১৪৩.৩৩ |
উমেশ যাদব | ১১(৮ বল) | ১১ | ১০.৯ | ৮ | ১ | ১ | ১৩৭.৫০ |
রাজস্থান রয়্যালস | |||||||
রিয়ান পারাগ | ৯৫(৪৫ বল) | ৯৫ | ২১.১ | ৪৫ | ৫ | ৭ | ২১১.১১ |
যশস্বী জয়সওয়াল | ১২(৮ বল) | ১২ | ১২.০ | ৮ | ১ | ২ | ১৫০.০০ |
ধ্রুব জুরেল | ১৮(১৮ বল) | ১৮ | ৯.০ | ১৮ | ০ | ২ | ১০০.০০ |
🔢 সংক্ষেপে ম্যাচের মূল পরিসংখ্যান:
কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR): ২০ ওভারে ১৭০ রান।
রাজস্থান রয়্যালস (RR): ২০ ওভারে ১৬৯ রান।
ম্যাচের ফলাফল: KKR ১ রানে জয়ী।
📊 উল্লেখযোগ্য স্ন্যাপশট
KKR-এর অ্যান্ড্রে রাসেল এক হাতে ম্যাচের গতি পাল্টে দেন। তার ৫৭ রান ২৫ বলের মধ্যে ২২৮ স্ট্রাইক রেট নিয়ে ছিল ম্যাচের মূল আকর্ষণ।
রাজস্থান রয়্যালস-এর রিয়ান পারাগ তার অসাধারণ ৯৫ রানের ইনিংস দিয়ে দলের জন্য ম্যাচকে তোলার চেষ্টা করেন, তবে তার আউট হওয়ার পর দল ম্যাচে ফিরতে ব্যর্থ হয়।
কলকাতা নাইট রাইডার্স-এর বোলিং আক্রমণ, বিশেষত সুনীল নারাইন এবং হর্ষিত রানা রাজস্থান রয়্যালসের রানের গতি আটকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
🏏 পরিসংখ্যানের বিশ্লেষণ
১. ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট:
রাসেল এবং পারাগ উভয়ের স্ট্রাইক রেট ছিল অত্যন্ত উঁচু, বিশেষ করে রাসেল ২২৮.০০ স্ট্রাইক রেটের সাথে বড় রান সংগ্রহ করেছেন।
২. ফিল্ডিং:
এই ম্যাচে কোনো বড় ক্যাচের ঘটনা না ঘটলেও, ফিল্ডিং ছিল যথেষ্ট কার্যকরী। সময়মতো রানের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।
৩. বোলিং:
সুনীল নারাইন এবং হর্ষিত রানা রাজস্থান রয়্যালসকে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য সফলভাবে বোলিং করেন। তাদের বোলিং কৌশলই রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে ফেলে।
এই স্কোরকার্ড এবং বিশ্লেষণ আইপিএল ২০২৫ এর এক উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচের কার্যকরী এবং মূল দিকগুলো তুলে ধরেছে, যা দর্শকদের এবং ক্রিকেট প্রেমীদের জন্য একটি চিরস্থায়ী স্মৃতি হয়ে থাকবে।
প্রথম ইনিংস: KKR-এর দৃঢ় শুরু
আইপিএল ২০২৫-এর ৫৩তম ম্যাচে, কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) প্রথমে ব্যাট করতে নেমে তাদের ইনিংস শুরু করে। ম্যাচের প্রথম কিছু ওভার থেকেই তাদের ব্যাটসম্যানরা আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন, যা দলকে শক্তিশালী শুরু দিতে সহায়ক ছিল। KKR-এর ইনিংসের শুরুটা ছিল বেশ দৃঢ়, এবং তাদের ব্যাটিং লাইনআপ প্রথম থেকেই নির্ধারিত লক্ষ্য নির্ধারণে মনোযোগী ছিল।
অ্যান্ড্রে রাসেল:
প্রথম ইনিংসের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে উল্লিখিত, রাসেল ২৫ বলে ৫৭ রান করে দলের স্কোরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তার ব্যাটিং ছিল খুবই আক্রমণাত্মক, যেখানে তিনি ৫টি ছক্কা এবং ৪টি চারের সাহায্যে দ্রুত রান সংগ্রহ করেন। এই ইনিংসটি বিশেষ করে ম্যাচের উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়, কারণ একদিকে যখন রাজস্থান রয়্যালসের বোলাররা চেষ্টা করছিলেন কিপার হওয়ার, তখন রাসেল অপরাধের মতো রান করতে থাকেন। তার দুর্দান্ত ইনিংস KKR-কে চ্যালেঞ্জিং স্কোর দিতে সাহায্য করে।রিংকু সিংহ:
রিংকু সিংহও এক ধরনের ঝলমলে ব্যাটিং প্রদর্শন করেন, ১২ বলে ২২ রান করেন। তার ব্যাটিং ছিল নির্দিষ্টভাবে সময়মতো, বিশেষ করে শেষের দিকে। ১২ বলের মধ্যে ২২ রান তার তীব্রতার পরিচয় দেয় এবং সেই রানগুলো KKR-এর স্কোরটি বাড়াতে সহায়ক ছিল।অ্যাঞ্জ্রিশ রাঘুবংশী:
তিনি ১৭ বলের মধ্যে ২২ রান করেন এবং দলকে বিপদমুক্ত করেন। যদিও তার ইনিংসের মাঝে বেশ কয়েকটি অল্প রান ছিল, তবে তার পরিকল্পনা ছিল দলের ইনিংসের রেট বাড়িয়ে দেওয়া।আজিঙ্কা রাহানে:
আজিঙ্কা রাহানে ১৫ বলে ১৮ রান করেন। যদিও তার ইনিংসটি তেমন বড় কিছু না, তবে তার স্ট্রাইক রেট দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ তিনি মিডল অর্ডারে ব্যাট করে উইকেটটিকে মজবুত করতে সাহায্য করেন।
KKR-এর প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানরা রান তোলার পাশাপাশি তাদের উইকেট বজায় রাখার চেষ্টা করেন। দলের ইনিংসটি শেষ হয় ২০৬/৪ স্কোরে, যেখানে অ্যান্ড্রে রাসেলের আক্রমণাত্মক ইনিংস KKR-কে বড় স্কোরের দিকে নিয়ে যেতে সহায়ক ছিল।
এই ইনিংসে KKR-এর স্পিন এবং পেস বোলিং আক্রমণের জন্যও দুর্দান্ত প্রস্তুতি ছিল, কারণ তারা জানতেন রাজস্থান রয়্যালসের দলের মধ্যে কী ধরনের বিপদ আসতে পারে।
দ্বিতীয় ইনিংস: রাজস্থান রয়্যালসের লড়াই
রাজস্থান রয়্যালস (RR) যখন তাদের ইনিংস শুরু করে, তখন তাদের সামনে ছিল একটি চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য — ২০৭ রান। KKR-এর প্রথম ইনিংসে ২০৬ রান সংগ্রহের পর, রাজস্থান রয়্যালসের সামনে ছিল সেরা পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে ম্যাচটি জেতার সুযোগ। তবে, এই লক্ষ্য অর্জন সহজ ছিল না, কারণ কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলিং আক্রমণ ছিল শক্তিশালী এবং তারা দ্রুতই রানের গতি থামানোর জন্য প্রস্তুত ছিল।
রিয়ান পারাগের অসাধারণ ইনিংস
রাজস্থান রয়্যালসের ইনিংসের প্রধান স্তম্ভ হিসেবে উঠে আসে রিয়ান পারাগ। তিনি ম্যাচের একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি KKR-এর বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তার ৯৫ রানের ইনিংস ছিল রাজস্থানের জন্য এক ধরনের আশার আলো। পারাগের ব্যাটিং ছিল আক্রমণাত্মক, তিনি ৪৫ বলে ৯৫ রান করেন, যেখানে ৫টি ছক্কা এবং ৭টি চার ছিল।
পারাগের ইনিংসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ তিনি দলের রানের গতি বজায় রাখতে সক্ষম হন এবং একাধিক বড় শটের সাহায্যে পেস এবং স্পিন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তার ছক্কাগুলি ছিল খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া, যা রাজস্থান রয়্যালসকে জয়ের জন্য একটি সম্ভাবনা দেয়।
যশস্বী জয়সওয়ালের ভালো শুরু
যশস্বী জয়সওয়াল ওয়ানডে ফরম্যাটে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর, টু-টাইম আইপিএল-এ আসার পরও রাজস্থান রয়্যালসের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে সপ্রতিভ ছিলেন। ২৪ বলে ২৯ রান করার সময়, তিনি তার বোলারদের জন্য বেশ কিছু বড় শট মারেন, কিন্তু কপাল খারাপ ছিল। তার ইনিংসটি ছোট হলেও এটি রাজস্থান রয়্যালসের প্রথম দিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করতে সহায়ক ছিল।
ধ্রুব জুরেলের লড়াই
রাজস্থান রয়্যালসের ধ্রুব জুরেল ইনিংসে আরও একটি দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তিনি ২৮ বলে ৩৩ রান করে দলের স্কোরে বড় অবদান রাখেন। তবে, তার ইনিংসটি মূলত পারাগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে খেলতে শুরু করেন, কিন্তু কিপারের মতো সতর্কতা অবলম্বন করার সময়, তিনি শেষমুহূর্তে আউট হয়ে যান, যা রাজস্থান রয়্যালসের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল।
KKR-এর বোলিং আক্রমণ
রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটিংয়ের বিপক্ষে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলিং আক্রমণ ছিল অত্যন্ত প্রতিরোধী। তারা বল হাতে কৌশলী ছিল এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট তুলে নিয়েছিল। বিশেষ করে হর্ষিত রানা এবং সুনীল নারাইন তাদের স্পিন বোলিংয়ের মাধ্যমে রাজস্থান রয়্যালসের রানের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখে।
নারাইন তার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পারাগের শটগুলো আটকানোর চেষ্টা করেন এবং পরবর্তীতে পারাগকে আউট করেন। যদিও রাজস্থান রয়্যালস তাদের শেষ পর্যন্ত এক ভরসাযোগ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল, তাদের আরও কিছু বড় শট এবং রান করার সুযোগ ছিল। তবে শেষের দিকে আক্রমণ না করতে পারার কারণে রাজস্থান শেষ পর্যন্ত ২০৫ রানেই আটকে যায়।
রাজস্থান রয়্যালসের পক্ষে রিয়ান পারাগের ৯৫ রানের অসাধারণ ইনিংস সত্ত্বেও, তারা শেষ পর্যন্ত ২০৫ রানেই অল আউট হয়ে যায় এবং মাত্র ১ রানে পরাজিত হয়। ম্যাচটি একদিকে যেমন পারাগের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের জন্য মনে থাকবে, তেমনি কলকাতা নাইট রাইডার্সের কৌশলী বোলিং এবং শেষ মুহূর্তের লড়াইটি ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে তুলেছে। KKR-এর কিপিং-এ স্পিন আক্রমণ রাজস্থানকে বড় শট নিতে বাধ্য করেছিল এবং ম্যাচটি এক ধরনের ক্রীড়া নাটকীয়তা হিসেবে শেষ হয়।
এই ম্যাচটি আইপিএল ২০২৫-এর অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে, যেখানে দুটো দল নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে লড়াই করেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কলকাতা নাইট রাইডার্স জয়ী হিসেবে উঠে এসেছে।
ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট: একে একে নাটকীয় মুহূর্তগুলি
আইপিএল ২০২৫-এর ৫৩তম ম্যাচটি শুরু থেকেই উত্তেজনা আর নাটকীয়তায় ভরপুর ছিল। যদিও রাজস্থান রয়্যালস (RR) তাদের ইনিংসে ভালো অবস্থানে ছিল, কিন্তু কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) প্রতিটি বোলিং পরিবর্তন এবং সঠিক মুহূর্তে আক্রমণের কারণে ম্যাচটির ফলাফল একেবারে বদলে যায়। আসুন, বিশ্লেষণ করি সেই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো, যেগুলো ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়।
রাসেলের দুর্দান্ত ব্যাটিং পারফরম্যান্স
প্রথম ইনিংসে কলকাতা নাইট রাইডার্সের স্কোরবোর্ডটি যখন ৪ উইকেটে ১২৫ রান ছিল, তখন মনে হচ্ছিল তারা নির্ধারিত লক্ষ্যটি সহজে পূর্ণ করতে পারবে না। তবে, অ্যান্ড্রে রাসেল এক হাতে ম্যাচের গতি পরিবর্তন করে দেন। তার শক্তিশালী ৫৭ রানের ইনিংস KKR-কে একটি চ্যালেঞ্জিং স্কোরে পৌঁছে দেয়। রাসেল তার ব্যাটিং শৈলীতে বোলারদের উপর চাপ সৃষ্টি করে, যেখানে তিনি ২৫ বলে ৫৭ রান করেন, ৫টি ছক্কা ও ৪টি চারের সাহায্যে। এই ইনিংসটি ছিল পুরো ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট, কারণ এই রানগুলির মাধ্যমে রাজস্থান রয়্যালসের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়।
রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটিংয়ে পারাগের তাণ্ডব
রাজস্থান রয়্যালসের ইনিংসে যখন তার প্রয়োজন ছিল বড় কিছু, তখন রিয়ান পারাগ সবার নজর কাড়েন। ৪৫ বলে ৯৫ রান করার সময়, পারাগ একের পর এক দুর্দান্ত শট মারতে থাকেন, বিশেষ করে কলকাতা নাইট রাইডার্সের স্পিন আক্রমণের বিরুদ্ধে। পারাগের ব্যাটিং ছিল একেবারে আক্রমণাত্মক, যেখানে ৫টি ছক্কা এবং ৭টি চার ছিল। তবে, এক সময় তার আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে নারাইনের বোলিংয়ে আউট হন, এবং এই মুহূর্তটি ছিল ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট। তার আউট হওয়ার পর, রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়ে, এবং তারা আর কোনো বড় ইনিংস তৈরি করতে সক্ষম হয়নি।
KKR-এর বোলিং কৌশল
KKR-এর বোলিং আক্রমণ, বিশেষত সুনীল নারাইন ও হর্ষিত রানা, ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল। নারাইন, তার বোলিংয়ে অনেক সময় এমন স্পিন করেন যা ব্যাটসম্যানদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। পারাগের মতো একজন আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান যখন পজিটিভ শট নিতে গিয়ে আউট হন, তখন রাজস্থান রয়্যালসের রানের গতি হ্রাস পায় এবং এই মুহূর্তেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ KKR-এর হাতে চলে আসে। নারাইন এর আগে রাজস্থান রয়্যালসের ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলেছিলেন, এবং তার একটি উইকেট রাজস্থান রয়্যালসের জন্য খুবই বিপজ্জনক ছিল।
রাজস্থান রয়্যালসের মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা
রাজস্থান রয়্যালসের মিডল অর্ডার, বিশেষত ধ্রুব জুরেল এবং যশস্বী জয়সওয়াল-এর মধ্যে ব্যর্থতা ম্যাচের শেষের দিকে বড় ধাক্কা দেয়। যদিও তারা কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তবে ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা এবং কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে ভুল শট নেওয়া, ম্যাচটিকে রাজস্থান রয়্যালসের জন্য অনেক কঠিন করে দেয়। কিপিংয়ের সাথে সম্পর্কিত বোলিং পরিবর্তন এবং সঠিক সময়ে আক্রমণ চালানোর কারণে KKR কেবল রাজস্থান রয়্যালসের ভেতরের দুর্বলতাগুলোই চিনে নিয়েছিল, এবং এটি ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেয়।
শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তা: এক রানে জয়
শেষদিকে, রাজস্থান রয়্যালসের জন্য সবকিছু চূড়ান্তভাবে কেমন ছিল তা ছিল নির্ধারিত। তাদের ম্যাচের স্কোর তোলার সময় ২০৫ রান হয়ে গেলেও, তারা ১ রানে পরাজিত হয়। KKR-এর বোলিং আক্রমণ এমনভাবে কাজ করেছে যে রাজস্থান রয়্যালস তাদের প্রয়োজনীয় রান তোলার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল। এক রানের জয় এমন একটি অবিস্মরণীয় মুহূর্ত ছিল যা পুরো ম্যাচকে নাটকীয়তায় পূর্ণ করে তোলে।
এই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল একাধিক দিক থেকে। প্রথমে রাসেলের আক্রমণ, এরপর পারাগের অসাধারণ ইনিংস, কিন্তু শেষমেশ রাজস্থান রয়্যালসের মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা এবং KKR-এর বোলিং কৌশলই ছিল ম্যাচের মূল ভরসা। এক রানে জয়টি সত্যিই আইপিএল ২০২৫-এর অন্যতম স্মরণীয় ম্যাচ হিসেবে গণ্য হবে, এবং এটি ভবিষ্যতে অনেক আলোচনা সৃষ্টি করবে।
ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়: রিয়ান পারাগ
এই আইপিএল ২০২৫-এর ৫৩তম ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে উঠে এসেছে রিয়ান পারাগ। রাজস্থান রয়্যালসের দলের হয়ে তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সই ছিল দলের আশা এবং স্বপ্নের একমাত্র ভরসা। তার খেলার ধরন এবং ম্যাচে আসল ভূমিকা পর্যালোচনা করা যাক:
আক্রমণাত্মক ব্যাটিং: এক পিচ্ছিল শটের প্রতিযোগিতা
রিয়ান পারাগ ৪৫ বলে ৯৫ রান করে ম্যাচের একেবারে পুরোভাগে ছিলেন। তার ইনিংসটি ছিল এক ধরনের বিধ্বংসী আক্রমণ, যেখানে প্রতিটি বলেই তিনি কেবল রানই সংগ্রহ করেননি, বরং ভক্তদের জন্য উত্তেজনা তৈরী করেছিলেন। পাঁচটি ছক্কা ও সাতটি চারের সাহায্যে, তিনি শেষপর্যন্ত রাজস্থান রয়্যালসের ইনিংসের ভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হন। তার ব্যাটিং ছিল দারুণ ইন্টেন্স, যেখানে প্রতিটি শট ছিল লক্ষ্যভেদী এবং নিখুঁত timing-এর সাথে।
প্রতিরোধ এবং চাপের মধ্যে চিত্তাকর্ষক পারফরম্যান্স
যখন রাজস্থান রয়্যালসের অন্য ব্যাটসম্যানরা একের পর এক আউট হচ্ছিল, তখন পারাগ ছিলেন একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি অটল ছিলেন। প্রথমে যশস্বী জয়সওয়াল, তারপর ধ্রুব জুরেল—এই ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার পর পারাগ একাই চাপের মুখে ছিলেন এবং তার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যখন প্রতিপক্ষের বোলাররা চাপ সৃষ্টি করছিল, পারাগ অত্যন্ত শান্তভাবে রানের গতি ধরে রাখেন এবং মাঠের চারপাশে বড় শট খেলেন।
খেলার পরিস্থিতি অনুযায়ী শট নির্বাচন
পারাগের খেলা ছিল অত্যন্ত কৌশলী। তিনি জানতেন কখন এবং কোথায় বড় শট খেলতে হবে, আর কখন ছোট ডট বল খেলে চাপ হালকা করতে হবে। তার শটগুলো ছিল কেবল আক্রমণাত্মক নয়, কৌশলীও। কিছু শট ছিল ব্যাকফুটে এসে খেলানো, কিছু শট ছিল পূর্ণ length বোলিংয়ের বিরুদ্ধে। তার শটের বৈচিত্র্য এবং স্ট্রাইক রোটেট করার দক্ষতা তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দিয়েছে।
পারাগের শটগুলো: একাধিক ‘Game-Changer’
প্রতিটি বোলারের বিরুদ্ধে পারাগের শটগুলো ছিল গেম চেঞ্জার। বিশেষত, নারাইন এবং রানা, যাদের আক্রমণ এমন ছিল যা একে একে রাজস্থান রয়্যালসকে চাপে ফেলছিল। তবে, পারাগ তাদের বিরুদ্ধে ব্যাটিং করে একটি ভিন্ন অবস্থান তৈরি করেন। তার পাঁচটি ছক্কা কেবল ম্যাচের গতি পরিবর্তনই করেনি, বরং রাজস্থানকে ম্যাচের শেষ পর্যন্ত একটা সম্ভাবনা জোগায়। পারাগের ইনিংসটি ছিল এক ধরনের “ক্রিকেটের আধুনিক অঙ্গ” যা অন্যদের জন্য প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়।
আউট হওয়া: এক টার্নিং পয়েন্ট
অবশ্যই, পারাগের ইনিংসটি তার অসাধারণ ব্যাটিংয়ের জন্য স্মরণীয় হবে, তবে শেষ মুহূর্তে তার আউট হওয়ার পর রাজস্থান রয়্যালসের জন্য রান তোলা কঠিন হয়ে পড়ে। নারাইন ও রানের বোলিংয়ের মধ্যে পারাগের আউট হয়ে যাওয়ার পর রাজস্থান রয়্যালস আর কোনো বড় ইনিংস তৈরি করতে পারেনি এবং তাদের রানের গতি কমে যায়। এই আউট হওয়ার ঘটনা ম্যাচের গতি পাল্টে দেয় এবং কেকেআর-এর বোলিং পরিকল্পনা সঠিকভাবে সফল হয়।
পরিসংখ্যানের দিক থেকে পারাগের ভূমিকা
পারাগের ইনিংসটি শুধুমাত্র দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, বরং পরিসংখ্যানের দিক থেকে এমন একটি ইনিংস ছিল যা অনেকগুলো দিক থেকেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ৪৫ বলে ৯৫ রান, ৫টি ছক্কা এবং ৭টি চার—এসবই প্রমাণ করে যে, আইপিএলের মতো বড় মঞ্চে একজন ব্যাটসম্যান কীভাবে তার প্রতিভা এবং দক্ষতা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারে। এই ইনিংসের মাধ্যমে, পারাগ তার দলের হয়ে সেরা পারফরম্যান্স দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
পারাগের ভবিষ্যৎ: পরবর্তী ম্যাচে তার ভূমিকা
এটি নিঃসন্দেহে তার এক রকমের আত্মবিশ্বাসী পারফরম্যান্স ছিল। তার ভবিষ্যত পারফরম্যান্স, বিশেষত আইপিএল ২০২৫-এর বাকি ম্যাচগুলির জন্য, রাজস্থান রয়্যালসের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তার ব্যাটিং স্টাইল এবং সামর্থ্য আগামী দিনে দলকে আরও বড় জয় এনে দিতে পারে। বিশেষ করে বড় লক্ষ্য তাড়ার সময় পারাগের মতো একজন শক্তিশালী ব্যাটসম্যান রাজস্থান রয়্যালসের জন্য এক প্রকারের ‘x-factor’ হয়ে উঠতে পারে।
রিয়ান পারাগের ব্যাটিং ইনিংস ছিল রাজস্থান রয়্যালসের জন্য এক ধরনের আশার আলো, তবে শেষ পর্যন্ত তার অসাধারণ পারফরম্যান্সও দলকে জিতাতে পারেনি। তার ইনিংস ছিল একেবারে খেলার মূল আকর্ষণ, এবং এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আইপিএল ২০২৫-এর এই ম্যাচটি দীর্ঘদিন ধরে স্মরণীয় থাকবে।
এই ম্যাচটি আইপিএল ২০২৫-এর অন্যতম উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ হিসেবে চিহ্নিত হবে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের স্পিন আক্রমণ এবং অ্যান্ড্রে রাসেলের ব্যাটিং পারফরম্যান্স তাদের জয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। রাজস্থান রয়্যালসের রিয়ান পারাগের অসাধারণ ইনিংস সত্ত্বেও, তারা শেষ মুহূর্তে ম্যাচটি জিততে পারেনি।