কসবাল’ কলেজ বিতর্কে তীব্র আলোড়ন তৈরি করেছে বিজেপির ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্ট, যা দলীয় সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে উঠে এসেছে পুলিশি গাফিলতি, তথ্য গোপন, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও প্রভাবশালীদের রক্ষার সম্ভাব্য চক্রান্তের ইঙ্গিত। অভিযোগ, নির্যাতিতার সঙ্গে পরিবারকে দেখা করতে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং বিতর্কিত ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা সত্ত্বেও কিছু নিয়োগ হয়েছে। কমিটি স্বচ্ছ তদন্তের দাবিতে কেন্দ্রীয় সংস্থা বা নিরপেক্ষ কমিটির হস্তক্ষেপ চেয়েছে। রাজনীতি উত্তপ্ত, তৃণমূলের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ঝড় সামাজিক মাধ্যমে।
📌 STORY HIGHLIGHTS
🔹 পুলিশ তদন্তে বাধা দেওয়ার অভিযোগ
🔹 প্রভাবশালী মহলকে বাঁচাতে চেষ্টার ইঙ্গিত
🔹 বিতর্কিত পটভূমি থাকা সত্ত্বেও কলেজে নিয়োগ
🔹 নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগে বাধা
🔹 কেন্দ্রীয় বা স্বাধীন সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের দাবি
কসবা ল’ কলেজের সাম্প্রতিক বিতর্ককে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন দেখা দিয়েছে। ঘটনার তদন্তে নিযুক্ত বিজেপির একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার কাছে। রিপোর্টে স্পষ্ট অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, গোটা ঘটনাটি শুরু থেকে ভুলভাবে সামাল দেওয়া হয়েছে এবং প্রশাসনিক স্তরে একাধিক ত্রুটি ও গাফিলতি ঘটেছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, তদন্তে নিযুক্ত কমিটি মনে করছে যে পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে তদন্তে বাধা সৃষ্টি করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কমিটির সূত্র অনুসারে, এমন কিছু ব্যক্তি আছেন যাঁদের রাজনৈতিক অথবা প্রশাসনিক প্রভাব রয়েছে এবং এই প্রভাবের কারণেই তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
এছাড়াও, তদন্ত রিপোর্টে কলেজের প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কিছু ব্যক্তির পূর্ববর্তী বিতর্কিত ভূমিকা সম্পর্কে জেনেও তাঁদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ করা হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলেছে কমিটি।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণভাবে, রিপোর্টে বলা হয়েছে, নির্যাতিতা তরুণীর সঙ্গে তাঁর পরিবারের এবং শুভানুধ্যায়ীদের যোগাযোগে বাধা সৃষ্টি করেছে কর্তৃপক্ষ। কমিটির দাবি, এই ধরনের পদক্ষেপ তদন্ত ও ন্যায়বিচারের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে। সেই কারণেই তারা কেন্দ্রীয় সংস্থা বা একটি উচ্চপর্যায়ের নিরপেক্ষ কমিটির মাধ্যমে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কলেজ প্রশাসন বা স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে রিপোর্ট সামনে আসার পর রাজনৈতিক মহলে উত্তাপ বেড়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।
এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন—
“সত্যপাল সিং কতটা নির্লজ্জ হলে নির্যাতিতার পরিবারকেই দোষারোপ করতে পারেন, বলছেন পরিবারের সদস্যরা ফোন ধরেননি।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন—
“আমার প্রিয় সংবাদমাধ্যমের বন্ধুদের বলছি— আপনাদেরও রেহাই দেয়নি বিজেপির বহিরাগত নেতারা, দিল্লি থেকে এসে আপনাদের ‘দর্পোক’ বলে গালাগালি দিয়েছে।”
এখানেই থামেননি কুণাল ঘোষ। তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে পুলিশকে দোষারোপ করার কৌশল নিয়েও তোপ দেগে বলেন—
“সে ভুলে গেছে, এই কলকাতা পুলিশই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে এবং তৃণমূল কংগ্রেস শুরু থেকেই দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে এসেছে। অন্যদিকে, বিজেপি বরং ধর্ষকদের বাঁচাতে আদালতে মামলা দায়ের করে।”
এছাড়া, তিনি প্রশ্ন তোলেন বিজেপির প্রতিনিধি দলের উদ্দেশে—
“এই প্রতিনিধি দল নির্যাতিতা, যাকে কার্তিক মহারাজ ধর্ষণ ও মারধর করেছে এবং জোর করে গর্ভপাত করিয়েছে, তার সঙ্গে দেখা করল না কেন?”
প্রাক্তন ত্রিপুরা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের মন্তব্য নিয়েও তিনি আক্রমণ করেন—
“বিপ্লব দেবের কথা শুনে হাসি পায়। গোটা দেশ জানে ত্রিপুরায় কীভাবে নারী নিপীড়ন, হিংসা আর গুণ্ডা রাজ চলেছে তাঁর শাসনে। তাই তো দল তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন—
“সত্যপাল সিং বরং গিয়ে দেখে আসুন, আজই উত্তরপ্রদেশে এক নারীকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে। কিছুদিন আগে সেখানকার পুলিশই এক মহিলাকে ধর্ষণ করেছে। তখন কি তিনি উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন?”
তৃণমূল কংগ্রেস তাদের পক্ষ থেকে এক্স হ্যান্ডেলে আরও সরাসরি প্রশ্ন তোলে—
“@JPNadda: মণিপুরে যখন নারীদের বিবস্ত্র করে হাঁটানো হয়েছিল, তখন কি আপনার ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিম রিপোর্ট জমা দিয়েছিল? ‘ডাবল ইঞ্জিন’ রাজ্যগুলিতে প্রতিদিন মেয়েরা ধর্ষিত হচ্ছে— তখন নারী সুরক্ষা নিয়ে আপনার দলের উদ্বেগ কোথায় থাকে?”
কসবা ল’ কলেজ বিতর্ক এখন শুধুমাত্র এক কলেজ বা নির্দিষ্ট ঘটনার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই। তা রাজনৈতিক শিবিরে একে অপরকে দোষারোপের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য রাজনীতির বড় আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। বিজেপির রিপোর্ট, তৃণমূলের পাল্টা প্রতিক্রিয়া— সবমিলিয়ে এটি এখন এক নতুন রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কসবায় ল’ কলেজ ঘিরে ঘটনার তদন্তে বিজেপির রিপোর্ট নতুন করে বিতর্কের ঝড় তুলেছে রাজ্য রাজনীতিতে। তদন্তে গাফিলতি, প্রভাবশালীদের রক্ষার চেষ্টা এবং প্রশাসনিক দুর্বলতা নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা স্বচ্ছ বিচারপ্রক্রিয়ার ওপর বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলেছে। একদিকে কেন্দ্রীয় তদন্তের দাবি, অন্যদিকে পাল্টা রাজনৈতিক আক্রমণ—সব মিলিয়ে কাণ্ডটি এখন শুধুই আইনগত নয়, রাজনৈতিক গুরুত্বেও স্পর্শ করেছে নতুন মাত্রা। এখন দেখার বিষয়, সত্য উদঘাটনে আদৌ নিরপেক্ষতা বজায় রাখা যায় কি না।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো