পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে ছায়া ফেলে দিল করোনা, সামনে এল JN.1 ভ্যারিয়েন্ট
এক সময়ের ত্রাস ফিরে এল নয়া চেহারায়। পশ্চিমবঙ্গে ফের উঁকি দিচ্ছে করোনা ভাইরাস, এইবার এক নতুন নাম—JN.1। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ১০৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন, কলকাতায় একজনের মৃত্যু হয়েছে এই ভ্যারিয়েন্টে। যদিও উপসর্গ তুলনামূলক হালকা, তবু চিকিৎসকেরা সতর্ক। কলকাতা পুরসভা চালু করেছে সচেতনতামূলক প্রচার। বৃষ্টি-ভেজা শহরের ভিড়ে ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে এক অদৃশ্য আতঙ্ক—এ যেন পুরনো ছায়ারই নতুন আগমন।
📌 STORY HIGHLIGHTS:
রাজ্যে ফের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, নতুন করে ১০৬ জন আক্রান্ত
সক্রিয় কেস ৫০০ পেরিয়ে, সুস্থতা সত্ত্বেও আতঙ্ক বাড়ছে
কলকাতায় প্রথম JN.1 সংক্রমণে একজনের মৃত্যু
উপসর্গ হালকা হলেও, কোমর্বিড রোগীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে
স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শের অপেক্ষায় রাজ্যবাসী
কলকাতা পুরসভার সচেতনতামূলক পদক্ষেপ শুরু
দীর্ঘ সময় সংক্রমণ কম থাকলেও ফের একবার চিন্তার ভাঁজ পড়ছে স্বাস্থ্যদফতরের কপালে। পশ্চিমবঙ্গে আবারও কোভিড সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। বৃহস্পতিবার সকালে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে ১০৬ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। আপাতদৃষ্টিতে সংখ্যা খুব বেশি মনে না হলেও, এই ধরণের বাড়বাড়ন্তকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় বলেই মনে করছেন চিকিৎসক মহল।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাজ্যে মোট সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩৮। একই সময়ে ৬১ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলেও রিপোর্টে উল্লেখ। তবে স্বস্তির খবর, এই সময়ে নতুন করে কোনও মৃত্যু ঘটেনি। মৃত্যুর সংখ্যা আগের মতোই স্থির রয়েছে একটিতে। কিন্তু এই একটি মৃত্যু ঘিরেই নতুন করে উদ্বেগ বাড়ছে, কারণ কলকাতায় যে রোগীটি প্রাণ হারিয়েছেন, তিনি ছিলেন JN.1 স্ট্রেনে আক্রান্ত।
JN.1 স্ট্রেন: কী আছে নতুন এই ভ্যারিয়েন্টে?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, JN.1 আসলে ওমিক্রনেরই একটি রূপান্তরিত সংস্করণ। তবে আগের স্ট্রেনগুলির তুলনায় এটিতে একটি অতিরিক্ত মিউটেশন লক্ষ্য করা গেছে স্পাইক প্রোটিনে। এই স্পাইক প্রোটিনই ভাইরাসকে মানব কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। ফলে এই ভ্যারিয়েন্ট আগের তুলনায় দ্রুত ছড়াতে পারে কি না, তা নিয়ে চিন্তা তৈরি হয়েছে বৈজ্ঞানিক মহলে। তবে এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি।
JN.1 নিয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে সম্প্রতি কলকাতায়। ৪৩ বছর বয়সী ওই মহিলা করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি অ্যাকিউট করোনারি সিনড্রোম, সেপটিক শক ও কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। এই কোমর্বিড অবস্থাই হয়তো তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
উপসর্গ: হালকা, তবে সতর্ক না হলে বিপদ
JN.1 ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণত হালকা জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, নাক বন্ধ বা সর্দির মতো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ ক্লান্তি ও শরীরব্যথার কথাও জানাচ্ছেন। উপসর্গগুলি শুনলে মনে হতে পারে এটি সর্দি-জ্বর বা সিজনাল ফ্লু-র মতোই, কিন্তু সংক্রমণ যদি কোমর্বিড ব্যক্তি বা বয়স্কদের শরীরে প্রবেশ করে, তাহলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।
কী ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন?
এই মুহূর্তে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশিকা জারি না হলেও, কলকাতা পুরসভা একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যানার টাঙানো হচ্ছে যেখানে মাস্ক পরা, হাত ধোওয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো বার্তা দেওয়া হয়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা এলাকায় এলাকায় ঘুরে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন এবং উপসর্গযুক্ত বা কোমর্বিড রোগীদের খোঁজ নিচ্ছেন।
এছাড়াও, চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, বিশেষ করে যাঁরা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন— যেমন বয়স্ক নাগরিক, ডায়াবেটিস, কিডনি, হার্ট অথবা ক্যান্সার রোগীরা। শহরের হাসপাতালগুলোতেও কোভিড-সহ অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জা-সদৃশ উপসর্গে ভর্তি রোগীদের নজরে রাখা হচ্ছে।
কোভিড নিয়ে আতঙ্ক নয়, বরং সচেতনতার দরকার রয়েছে এখন। JN.1 স্ট্রেন আপাতদৃষ্টিতে বড় বিপদের মতো না দেখালেও, অতীতের অভিজ্ঞতা আমাদের জানিয়েছে— ভাইরাসের গতি ও চরিত্র দ্রুত বদলে যেতে পারে। তাই সংক্রমণ যত কম হোক না কেন, সাবধানতা অবলম্বন করাই একমাত্র সুরক্ষা। প্রতিরোধের চাবিকাঠি আমাদের নিজেদের হাতে। মাস্ক, ভ্যাকসিন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই এখন সর্বোত্তম উপায়।